প্রপার্টি

ফিরে দেখা ২০২০ঃ যেমন ছিল বাংলাদেশের প্রপার্টি মার্কেট এবং সম্ভাবনাময় ২০২১

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট মার্কেট-কে দেশের বড় অংশের জনগণের আর্থিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বিবেচনা করলে এই মুহূর্তে বেশ স্থিতিশীল এবং প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ বলা যেতে পারে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিষদ আকারে অভ্যন্তরীণ কন্সট্রাকশনের কাজ, সুদের হার কমানো, এবং ফ্ল্যাট বা জমি ক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ এই খাত কে প্রবাহমান রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরে এই ইন্ডাস্ট্রি বর্তমান অবস্থার প্রায় ২৫% আকারে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালে দেশের সামগ্রিক জিডিপিতে রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাতের সরাসরি অবদান প্রায় ৭.৮% বা ১.৪১৫ ট্রিলিয়ন টাকা। 

আজকের দিনে যখন মধ্যম আয়ের মানুষজনও আবাসন খাতের প্রতি তাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে তখন মার্কেটকেও তাদের গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সরকার-ও বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উদ্যোগের মাধ্যমে এই খাতকে ক্রমাগত গতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। 

চলুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জেনে নেওয়া যাক গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে কেমন ছিল দেশের আবাসন খাতের হালচাল এবং কি অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে। 

ঢাকায় প্রপার্টি বিক্রির জন্য সেরা কিছু লোকেশন 

ঢাকায় প্রপার্টি বিক্রির জন্য সেরা কিছু লোকেশন

প্রায় ২ কোটি মানুষের আবাসস্থল হওয়ার পাশাপাশি ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম জনঘনত্বপূর্ণ শহর। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় কাজ বা পড়াশোনার জন্যে এসে বসবাস করাও একে চাহিদাপূর্ণ শহরের তালিকায় একেবারে উপরে নিয়ে গেছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী চাহিদাপূর্ণ কিছু এলাকা উঠে এসেছে। 

সর্বাধিক বেচা-কেনার লোকেশনের তালিকায় শুরুতেই প্রায় ১২% জায়গা নিয়ে রয়েছে মিরপুর। বিগত বহু বছর ধরেই এই এলাকা ফ্ল্যাট, জমি, বা বাসা কেনার জন্য হটস্পট হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এর পরপরই রয়েছে যথাক্রমে বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মাদপুর এবং রামপুরা। আপনিও কি প্রপার্টি কিনতে বা বিক্রি করতে চান? তাহলে মাথায় রাখতে পারেন এই এলাকাগুলো। 

ঢাকার বাইরে প্রপার্টি বিক্রির জন্য সেরা কিছু লোকেশন 

ঢাকার বাইরে প্রপার্টি বিক্রির জন্য সেরা কিছু লোকেশন

ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট বিক্রি নিয়ে ভাবছেন? দেখে নিতে পারেন ঢাকার বাইরে কোন কোন জেলায় প্রপার্টি বিক্রির চাহিদা কীরকম। 

Bikroy-এর তথ্যানুযায়ী, ঢাকার পরপরই প্রপার্টি কেনাবেচার জন্য প্রায় ৫২.৫% বিজ্ঞাপন জুড়ে সর্বাধিক জনপ্রিয় লোকেশনের একেবারে উপরে আছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নাম। এছাড়াও এর পরপরই রয়েছে যথাক্রমে রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, এবং রংপুর। 

ঢাকায় প্রপার্টি ভাড়ার জন্য সেরা কিছু লোকেশন 

ঢাকায় প্রপার্টি ভাড়ার জন্য সেরা কিছু লোকেশন

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই শহরে নিজের পছন্দসই একটি ফ্ল্যাট বা বাসা খুঁজে পাওয়া সত্যিই শ্রমসাধ্য আবার আপনার ফ্ল্যাটের জন্য জুতসই ভাড়াটে খুঁজে পাওয়াটাও ঠিক তাই। তবে, আপনার সমস্যা লাঘবের জন্য আপনি দেখে নিতে পারেন Bikroy-থেকে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ। 

ফ্ল্যাট বা অন্যান্য প্রপার্টি ভাড়ার জন্য সর্বাধিক সংখ্যার বিজ্ঞাপনগুলো হচ্ছে গুলশান এলাকায়। কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে গুলশান এলাকায় রয়েছে ঢাকার বেশ কিছু অভিজাত রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন দেশের হাই-কমিশন, এবং ক্লাবগুলো। গুলশানের পরপরই রয়েছে যথাক্রমে উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, এবং বনানী।   

ঢাকার বাইরে প্রপার্টি ভাড়ার জন্য সেরা কিছু লোকেশন 

ঢাকার বাইরে প্রপার্টি ভাড়ার জন্য সেরা কিছু লোকেশন

শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই নয় দেশের অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরগুলোতেও তুলনামূলক ভাবে বেড়ে চলেছে আবাসন এবং কর্মসংস্থান দুই-ই। তাই একজন প্রপার্টি মালিক হিসেবে আপনাকে ভাড়া নিয়ে বেশি চিন্তিত হতে হবেনা। শুধুমাত্র Bikroy.com-এ পোস্ট করার মাধ্যমেই পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সহজ সমাধান। 

পরিসংখ্যান মতে, ঢাকার বাইরে প্রায় ৮০.১% প্রপার্টি ভাড়ার বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রথমেই আছে চটগ্রাম শহর। এর পরপরই এই তালিকায় রয়েছে সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, ও বরিশাল। 

দাম অনুযায়ী প্রপার্টির তালিকা 

ভাড়ার জন্য 

দাম অনুযায়ী প্রপার্টির তালিকা (ভাড়ার জন্য)

উপরোক্ত তথ্যসমূহ ঢাকা শহরে ২০২০ সালে ভাড়ার ক্ষেত্রে মূল্যসীমা বিবেচনায় সর্বাধিক তালিকাভুক্ত প্রপার্টির একটি সাময়িক চিত্র তুলে ধরেছে। যদিও কন্সট্রাকশনের বাড়তি খরচ প্রায় সারা বছর জুড়েই ছিল তবে বেশিরভাগ ভাড়ার জন্য প্রপার্টির বিজ্ঞাপনই ১০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ার মধ্যেই ছিল। 

আরও ভালো ভাবে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, একটি বড় অংশের ভাড়া ১০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে। অপরদিকে ৩০ থেকে ৩৯ হাজার টাকার মধ্যে ভাড়া চাওয়া হয়েছে সবচেয়ে কম অংশের (৮.৪%) বিজ্ঞাপনে। 

বিক্রির জন্য 

দাম অনুযায়ী প্রপার্টির তালিকা (বিক্রির জন্য)

ঢাকা শহরে বসবাসযোগ্য জায়গার অভাব এবং অবস্থান অনুযায়ী প্রপার্টির দাম সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছুক হলে এই গ্রাফটি আপনাকে সহায়তা করবে। 

তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে বিক্রির জন্য বেশিরভাগ প্রপার্টির দাম ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে (প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী) এবং মোট বিজ্ঞাপনের ২৬ শতাংশরই দাম ছিল বর্গফুট প্রতি ১০,০০০ টাকার নিচে।  

সম্পত্তি কেনার ট্রেন্ড 

সম্পত্তি কেনার ট্রেন্ড

কোভিড-১৯ এর কারণে মার্চ মাসের শেষ পর্যায়ে ঘোষনাকৃত লকডাউন দেশের আবাসন খাতকে প্রায় হুমকির মুখেই ঠেলে দিয়েছিল। তবে জুলাই মাসের শেষ পর্যায়ে সংক্রমণ কিছুটা থিতু হয়ে এলে ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাড়ায়। 

এমতাবস্থায় গত অর্থবছরে ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ফি কমানো এবং অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সরকারও চেষ্টা করছে রিয়েল এস্টেট খাতকে পুনরায় নিজের পায়ে দাঁড় করানোর। 

নতুন বনাম ব্যবহৃত ফ্ল্যাট 

নতুন বনাম ব্যবহৃত ফ্ল্যাট

দেশের মধ্যবিত্ত জনগণের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন, শহরাঞ্চলে বসবাসের চাহিদা, এবং দেশের অর্থনৈতিক উত্তরণ পুনরায় আবাসন খাতকে গতিময় করেছে। উপরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালের পোস্টকৃত অধিকাংশ ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট-ই ছিল নতুন। যা নতুন অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগকে লাভজনক হিসেবে নেওয়ার প্রবণতাকে ইঙ্গিত করে।  

এছাড়াও করোনা পরবর্তী সময়ে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ আগামী দিনগুলোতেও এই খাতকে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে। 

বিটুবি মার্কেট শেয়ার 

বিটুবি মার্কেট শেয়ার

প্রপার্টি কেনাবেচার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ২০২০ সালে Bikroy.com-এ এই সংক্রান্ত মোট ট্রেডিং এর প্রায় ৫৫% বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে অন্যান্য সমসাময়িক প্ল্যাটফর্মগুলোতে হয়েছে বাকি ৪৫%। 

সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত এলাকা 

সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত এলাকা

২০২০ সালে Bikroy- এর তথ্যানুযায়ী সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত এলাকা হলো মিরপুর। এরপর রয়েছে যথাক্রমে উত্তরা, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, গুলশান, এবং মোহাম্মদপুর। আবাসন খাতে মধ্যম আয়ের মানুষের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ার ফলে মিরপুর এবং উত্তরার মত লোকেশনগুলো ক্রমাগত চাহিদার শীর্ষে উঠে আসছে। 

সম্পত্তির দাম মূল্যায়ন 

সম্পত্তির দাম মূল্যায়ন

Bikroy-এর প্রপার্টি এক্সপার্টরা ২০২০ সালের তথ্যানুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে এই খাতের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেখান থেকে দেখা যায় কেরানীগঞ্জ এলাকাটি ২০২৫ সাল নাগাদ জমির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকবে। 

পাশাপাশি ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট-এর ক্ষেত্রে মোহাম্মদপুর এবং উত্তরার ফ্ল্যাটগুলোর দাম আগামী ৫ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও “নতুন ঢাকা” হিসেবে খ্যাত পূর্বাচল এলাকাতেও জমির দাম বাড়বে। 

যেহেতু আবাসন খাত এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য শিল্পগুলো ক্রমশ বর্ধমান তাই আশা করা যায় নিকট ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট মার্কেট একটি ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে সমর্থ হবে। এর সাথেই প্রপার্টি মালিক এবং ডেভেলপারদের কোভিড পরবর্তী সময়ে কীভাবে দ্রুততার সাথে মানুষের চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে সেই লক্ষ্যে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

শেষকথা

বাংলাদেশের আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তাই বিনিয়োগের পূর্বে গভীরভাবে রিয়েল এস্টেট বাজারের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। 

বাইরে থেকে দেখার মাধ্যমে যেহেতু একজন নতুন গ্রাহকের ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের কর্মপরিধি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া কিছুটা কষ্টকর, তাই আমরা আশা করি, Bikroy.com-থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ আপনাকে বাংলাদেশের প্রপার্টি মার্কেট সম্পর্কে একটি দ্রুত এবং সামগ্রিক চিত্র দেখাতে সক্ষম হবে। 

বর্তমান পৃথিবী আমাদেরকে শিখিয়েছে দিন শেষে “ঘর” অথবা “বাসস্থান” আমাদের জন্য কতখানি প্রয়োজনীয়। তারই হাত ধরে রিয়েল এস্টেস্ট শিল্পের সাথে জড়িত সবাইকে এগিয়ে এসে চিন্তা করতে হবে আমাদের আগামীর জন্য। 

Apartments for sale in DhakaApartments for sale in Chattogram
Apartments for sale in Dhaka DivisionApartments for sale in Khulna Division
Apartments for sale in SylhetApartments for sale in Chattogram Division
Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close