শখ, খেলাধুলা এবং শিশু

কোয়ারেন্টাইনঃ এই সময়টা কিভাবে কাজে লাগাবেন?

নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির সংক্রমণ রোধে চলমান সাধারণ ছুটির আজ প্রায় দু’সপ্তাহ হয়ে গেলো। এর মধ্যেই ঢাকা নগরী দেখলে মনে হবে এ যেন রূপকথার কোনো ভূতুড়ে শহর! যান্ত্রিক কোলাহলে পরিপূর্ণ এ শহর এর প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা গৃহবন্দী হওয়াতে হঠাৎই যেন থমকে গেছে। এরকম অভূতপূর্ব ঘটনায় আমরা সবাই যখন ঘরে থেকে মহামারির এই ঝড় থামার অপেক্ষায় আছি, দৈনন্দিন নিত্যনতুন কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে আমরা কিন্তু সেই সময়টা কাজে লাগাতে পারি।

নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার সদাই

প্রথমেই আসা যাক প্রতিদিনের বাজার প্রসঙ্গে। যেহেতু এই সময় বাইরে বের হওয়ায় বিধিনিষেধ আছে, সুতরাং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘরে সবকিছু আছে কিনা তা দেখে নিন। খাদ্যদ্রব্য এবং ঔষধ এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সৌভাগ্যক্রমে, কঠিন এই পরিস্থিতিতে যখন বিভিন্ন এলাকার জেনারেল স্টোরগুলোতে বা অনলাইনে অর্ডার করেও পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাবার, তখন Bikroy.com নিয়ে এসেছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। যদিও গ্রাহকের চাহিদা মেটানোর জন্য বেশ কিছু জেনারেল এবং সুপার স্টোর এখনও খোলা রয়েছে, কিন্তু এমতাবস্থায় প্রতিদিন দোকানে বেচা-কেনা করা ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুই পক্ষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই মহামারি মোকাবেলায় আমাদের ঘরে অবস্থান করতে হবে এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসগুলো অনলাইনে অর্ডার করতে হবে। এতে করে একদিকে আমরা যেমন ঘরে বসে নিজ নিজ এলাকার সুপার স্টোর থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে পারবো, অপরদিকে বিক্রেতারাও নিজের অনলাইন স্টোর থেকে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবেন গ্রাহকের দোরগোড়ায়। Bikroy এ পাচ্ছেন ৩,৩০০ এরও বেশি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বিজ্ঞাপন ও ৭টি সাব-ক্যাটাগরি , যেখানে থাকছে খাবার সামগ্রী যেমন চাল, ডাল, তেল, ডিম ইত্যাদি, স্বাস্থ্যসেবার পণ্য যেমন মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার, ঘর পরিষ্কারের জন্য গৃহস্থালি সামগ্রী, শিশুদের পণ্য যেমন দুধ, ফর্মুলা ডায়াপার ইত্যাদি, তাজা ফল ও সবজি, টাটকা মাছ ও মাংস ইত্যাদি।

স্বাস্থ্যের যত্নআত্তি

যেসব কর্মজীবী মানুষ ঘরে বসে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য একটি ভালো অভ্যাস হলো অফিসে ঠিক যতটুকু সময় কাজ করতেন সেই সময়ের জন্য রুটিন মাফিক কাজ করা। এতে করে প্রতিদিনের কাজে ভারসাম্য এবং শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। পাশাপাশি আপনার শরীরের সাথে সাথে মনকে চাঙ্গা করার জন্যও কিছু কাজ করতে পারেন। অফিসে যাওয়া-আসায় প্রতিদিন যেই সময়টুকু লাগতো সেটা কাজে লাগাতে পারেন। একঘেয়েমি দূর করতে এই সময়টা প্রার্থনা, মেডিটেশন বা গান শুনে কাটাতে পারেন। আপনি যদি শরীরচর্চা করতে ভালোবাসেন তবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় আপনি ব্যায়াম করতে পারেন। আর এই সময় আপনার বহুল আকাঙ্ক্ষিত হোম জিম বানিয়ে ফেললেও মন্দ হয় না।

ঘরবাড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

অবসর সময় ঘরবাড়ি পরিষ্কারের কাজে ব্যয় করা যেতে পারে। অন্য সময়ের চেয়েও এই সময় বাসাবাড়ি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা একটি অপরিহার্য ব্যাপার। বাইরে থেকে অর্ডার করা খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্যাকেজগুলো পরিষ্কারের বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিন। বাইরের জুতা ঘরের ভেতর না আনাই ভালো। এছাড়াও বারবার স্পর্শ বা ব্যবহার করা হয় এমন জায়গা বা বস্তু যেমন আপনার মোবাইল ফোনটি অ্যালকোহলযুক্ত কোনো জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।

নিজ নিজ শখে মনোনিবেশ

শেষ কবে গল্পের বইটি খুলেছিলেন? অনেক বইপড়ুয়াদের বলতে শোনা যায় যে সময়ের অভাবে বই পড়া হয়ে উঠছে না। কোয়ারেন্টাইনের এই দিনগুলোতে আপনার অনেক দিনের তুলে রাখা গল্পের বইটি শেষ করতে পারেন। অবশ্য এই ব্যাপারটি অন্য যেকোনো শখের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। লেখা এবং ছবি আঁকা – এ কাজগুলো মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে বিশেষ সহায়ক। সৃজনশীল কাজ যেমন ছবি আঁকা, বাদ্যযন্ত্রে কোনো নতুন সুর তোলা ইত্যাদি কাজে অনেক প্র্যাকটিসের প্রয়োজন আর এখন সময় কাটানোর জন্য এই কাজ খুবই উপযুক্ত। আর আপনি ভালো রাঁধুনি হয়ে থাকলে এমন কিছু রান্না করে ফেলুন যা আগে কখনো করা হয়নি। অনলাইন থেকে কোনো নতুন রেসিপি দেখে আপনার পরিবারের জন্য বানিয়ে ফেলুন কোনো মুখরোচক খাবার।

বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যম

অবসর কাটানোর অন্যান্য মাধ্যম হতে পারে নতুন মুভি বা সিরিজ দেখা অথবা অনলাইন গেমিং। অনলাইন গেমিং-এ পারদর্শী হবার এখনই সুযোগ। তাই বলে একটানা মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকাও ঠিক হবে না। পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানোর জন্য বোর্ড বা কার্ড গেম নিয়ে বসতে পারেন। এটি আপনজনের সাথে হাসি-ঠাট্টা করার খোড়াক যোগাবে যা এই মুহূর্তে আমাদের সবারই প্রয়োজন।

পরিচিতদের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত আসতে থাকা বিভিন্ন তথ্যের বদৌলতে একঘেয়েমির সুযোগ কিন্তু খুবই কম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনলাইনে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে এই সময় কিভাবে পার করা যায় সেটা নিয়ে কথা বলতে পারেন। দেশের বাইরে থাকা বন্ধু বা আত্মীয়দের ফোন করে সেখানকার খোঁজখবর নিতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে তার সূত্র এবং সত্যতা যাচাই করে নিন। অনেকেই যেকোনো তথ্য অনলাইনে পাওয়া মাত্র সত্য-মিথ্যা না জেনেই শেয়ার করে থাকেন। মহামারির এই বৈশ্বিক সংকটে অন্যের ক্ষতি হতে পারে এমন তথ্য শেয়ার না করে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রচারিত তথ্য শেয়ার করুন। আতংক নয়, সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করুন। 

সুবিধাবঞ্চিতদের সাধ্যমতো সাহায্য করা

এই সময় আমাদের সবারই চেষ্টা করা উচিত যার যার অবস্থান থেকে একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসা। আপনার আশেপাশে সুবিধাবঞ্চিত কেউ থাকলে তাঁদের শুকনো বা রান্না করা খাবার দিতে পারেন। কিভাবে সাহায্য করতে হয় সেটা না জানলে একটু ইন্টারনেটে ঘাঁটলেই পেয়ে যাবেন এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ বা কমিউনিটি, অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তাঁদের ফান্ডে আপনার সাধ্যমতো টাকা জমা দিতে পারেন। 

পরিবারের সাথে সময় কাটানো

অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে থেকে সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে পরিবারের সান্নিধ্য। অধিকাংশ চাকরিজীবীরাই ঘরে থেকে কাজ করছেন, ফলে কাজের পাশাপাশি পরিবারের সবার মাঝে থাকতে পারাটা একটা বিরাট প্রাপ্তি, এরকম সুযোগ কি আর সচরাচর পাওয়া যায়! শুধু একসাথে থাকলেই হবে না, মনের ভাব প্রকাশের জন্য কথা-বার্তারও প্রয়োজন আছে। ঘরে থাকলে বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ এবং শিশুদের সাথে সময় কাটান, হালকা খেলাধুলা বা বিনোদনের ব্যবস্থা করুন, এরকম অবস্থায় মানসিক অবসাদ কাটাতে এটা সাহায্য করবে। ছুটিটা শেষ হওয়ার পর যখন আবার নিয়মিত জীবনে ফেরত যাব তখন আমরা সবাই এটা খুব বেশি মিস করবো।

শেষকথা

আর এভাবেই কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গনিরোধের দিনগুলো আমাদের অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের এমন অনেক অভ্যাস বা কাজ আছে যেগুলো প্রতিদিন করার ফলে এতই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে যে সেগুলো আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দেই না। এ প্রসঙ্গে লরা কেলি ফেনুচি-এর একটি উদ্ধৃতি দিতে চাই, “আমরা যেন আর কখনো কোনো অপরিচিতের সাথে হাত মেলানো, বন্ধুর সাথে কফি খাওয়া, বইয়ের দোকানে তাক ভর্তি বইগুলো, ভিড়ে ঠাসা সিনেমা হল, এবং প্রতিদিনের সাক্ষাতকে হেলায় না দেখি।” আশা করছি ঘরে বসে সময় কাটানোর জন্য কী কী করতে হবে তা ঠিক করে ফেলেছেন। ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন আর সময়টাকে কাজে লাগান।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close