কুরবানির পশু কেনা ও দেখাশোনা করার টিপস
কুরবানির পশু কিনতে যাওয়ার সময়
হাতে সময় নিয়ে পশুর হাটে যাওয়া উচিত; এতে ধীরেসুস্থে, দেখেশুনে পশু কেনা যায়। পশু চিনে কিনতে পারেন এমন কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। হাট থেকে পশু বাড়িতে আনার জন্য একজন শক্তসমর্থ লোককে সঙ্গে নিন, যিনি পশু বাড়িতে আনতে সাহায্য করতে পারবেন। প্রচুর কাদা, গোবর ও আবর্জনার দাগ বা ময়লা থেকে বাঁচতে ভালো পোশাক পরে হাটে না যাওয়াই ভালো। হাটের খাজনা ঠিকমতো পরিশোধ করুন। তাছাড়া হাটে অনেক ধরনের লোক আর ভিড় ভাট্টা থাকে, তাই টাকা-পয়সা সাবধানে রাখবেন।
সুস্থ পশু সনাক্ত করা ও কেনা
পশুর বয়স সম্পর্কে জেনে নিন। গরুর বয়স দুই বছর এবং ছাগলের বয়স ন্যূনতম ছয় মাস না হলে কোরবানি আদায় হবে না। সম্ভব হলে দিনের আলোতে দেখে শুনে সুস্থ-সবল ও নীরোগ পশু কিনুন। চামড়ায় কাটা ক্ষত আছে কিনা এগুলো খেয়াল করতে হবে। দেখতে হবে পশুর কান বা লেজ কাটা, শিং ভাঙা, খুরের মধ্যে ক্ষত বা জিহ্বায় ঘা এধরণের কোন সমস্যা আছে কি না। গরুর কুঁজ মোটা টানটান হলে গরু সতেজ, সুস্থ হয়। অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না। পশুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় এবং নাকের উপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। দেশি গরু কিনতে চেষ্টা করুন। কারণ সীমান্ত পার হয়ে আসা গরুগুলো অনেক দূর থেকে আসে বলে ক্লান্ত হয়, আর অনেক সময় ছোট-খাট আঘাতপ্রাপ্তও হয়। আর দুর্বল গরু সুস্থ নাকি অসুস্থ সেটা বোঝা বেশ কষ্টকর। গাভী বা বকনা গরু না কেনাই ভালো। যদি কিনতেই হয় তবে পশুচিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে পশুটি গর্ভবতী কি না। কেননা গর্ভবতী পশু কোরবানি হয় না।
অতিরিক্ত হরমোন খাওয়ানো গরুর মাংস আগুনেও হরমোনমুক্ত হয় না। এই মাংস খেলে মানবদেহে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই স্টেরয়েড খাওয়ানো পশু কেনা ঠিক না। স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেয়া গরু হবে খুব শান্ত। পশুর ঊরুতে অনেক মাংস মনে হবে, ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না। অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে। আঙ্গুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।
কুরবানির পশুকে কী ধরনের খাবার দেবেন
কুরবানির পশু শুধু কিনলেই চলবে না, এর দেখাশোনা করা ও যত্ন নেয়া আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। সাধারণত ঈদের দুই-তিন দিন আগে পশু কেনা হয়। কিনে আনার পর থেকে পশুকে কোনো প্রকার জাউ বা পচা ভাত বা পচা খাবার খাওয়ানো উচিৎ নয়। পশুর পেট ফাঁপা, বদহজম ইত্যাদি সমস্যা যাতে না হয়, সেদিকে নজর রাখা উচিত। বাজারে দানাদার পিলেট খাবার পাওয়া যায়, পশুকে সেগুলো খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। যদি পশু এ খাবারে অভ্যস্ত না থাকে, তবে অল্প অল্প করে দিয়ে অভ্যস্ত করে নিতে হবে। তা না খেতে চাইলে তাকে ভালো মানের গমের ভুসি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এ জাতীয় খাবার সর্বোচ্চ দুই কেজি পর্যন্ত খাওয়ানো যেতে পারে। যেকোন খাবার জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পাত্রে খাওয়াতে হবে এবং পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পান করাতে হবে। হজমে সহায়তার জন্য পশুকে আদার রস বা ডিজিভেট/ডিজিটপ জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। পেট ফাঁপা দেখা দিলে তিসির তেল খাওয়ালে উপকার হয়। এসব ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি ডাক্তার বা পশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কুরবানির আগে ও পরে করনীয়
কুরবানির পশুকে সবচেয়ে কম কষ্ট দিয়ে ও আন্তরিকতার সাথে কুরবানি করতে হয়। তাই সবকিছুর প্রস্তুতি পরিচ্ছন্নভাবে আগে থেকেই নিয়ে রাখা উচিৎ। কম কষ্টে দ্রুত কুরবানি দেয়ার জন্য ছুরি সুন্দরভাবে ধার দিয়ে রাখুন, এছাড়া দা, বঁটি এসবেও ধার দিয়ে রাখুন। চামড়া ছাড়ানোর জন্য মাথা বাঁকানো অর্থাৎ U আকারের ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
কুরবানির আগেই কসাই ঠিক করে রাখুন, না হলে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। মাটিতে জমে থাকা রক্তে ছিটানোর জন্য ব্লিচিং কিনে রাখুন সময়ের আগে। মাংস কেটে রাখার জন্য পরিষ্কার চাটাই ও সমভাবে বণ্টনের জন্য দাঁড়িপাল্লা আগে থেকে জোগাড় করে রাখুন। জবাই করার আগে পশুকে ভালোভাবে গোসল করাতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। এতে চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়। পশু মাটিতে শোয়ানোর সময় লক্ষ করতে হবে দেহে যেন কোনো প্রকার চোট না লাগে। এতে চামড়া থেঁতলে অথবা ছিড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জবাই করার পর রক্ত, মলমূত্র, হাড়, বর্জ্য ইত্যাদি যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখবেন না। এতে পরিবেশ দূষিত হবে। পশুর রক্ত ও বর্জ্য মাটির গর্তে পুঁতে ফেলুন। রক্ত ছড়িয়ে থাকা স্থানে পানি দিয়ে ধুয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ আবর্জনার দায়িত্ব নেই, তাহলে এবার থেকে প্রত্যেক কুরবানি হবে পরিষ্কার আর সুন্দর।