রমজানে খাদ্যাভ্যাসঃ করণীয় ও বর্জনীয়
চলছে পবিত্র রমজান মাস। সংযমের মাস এই রমজান। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য প্রায় ১৫ ঘন্টা রোজা রেখে শরীরকে সতেজ রাখা এসময়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং।
অনেকেই রোজা রাখতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন আবার অনেকেই আছেন ইফতার ও সাহ্রিতে অপরিকল্পিত উপায়ে খাবার নির্বাচন করেন। সুষ্ঠু উপায়ে রোজা পালন করার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার নির্বাচন, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু উপায় বা টিপস যা আপনাকে এই গরমে লম্বা সময় ধরে রোজা রাখতে সাহায্য করবে এবং রোজার সময় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহারের সঠিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
কেমন হবে রমজানের খাদ্যাভ্যাস?
১. সাহ্রিঃ
অনেকেই মনে করে থাকেন সাহ্রিতে ভরপেট খেলে সারা দিনে ক্ষুধা লাগে না। আর এজন্যে তারা পেটপুরে খান এই সময়ে। তবে এই ধারণাটি ঠিক নয়। সাহ্রিতে আপনার স্বাভাবিক খাবারটাই খাবেন এবং শেষ সময়ের প্রায় ২০ মিনিট আগেই খাবার শেষ করার চেষ্টা করবেন।
পরিমিত পরিমাণে ভাত, সাথে সবজি, ডাল, মাছ, বা মাংস থাকতে পারে। শেষের পাতে নেওয়া যেতে পারে দই বা দুধ। এই দুধ বা দই আপনাকে সারাদিনে শক্তি যোগাবে। মূলত এই সময়ে এমন কিছু খাওয়া উচিত যা আপনাকে সারাদিন না খেয়ে থাকতে সাহায্য করবে। তবে অতিরিক্ত কিছু খাওয়া যাবে না, এতে করে শরীরে চর্বি বা মেদ জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. ইফতারঃ
ইফতারের প্রস্তুতি বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই শুরু হওয়ার কারণে এই সময়ে ক্লান্তিবোধ কিছুটা হলেও কমে আসে। সারাদিন যেহেতু না খেয়ে থাকা হয়, তাই ইফতার হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ খালিপেটে কিছু খেলে অ্যাসিডিটি হবার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
ইফতারে সাধারণত পানির চাহিদা বেশি থাকে তাই এসময়ে এমন কিছু পানীয় রাখা যেতে পারে যা পিপাসা মেটানোর সাথে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তিও যোগাবে। এক্ষেত্রে অল্প চিনিযুক্ত লেবুপানি, আনারসের জুস, ডাবের পানি, লাচ্ছি ইত্যাদি রাখা যেতে পারে খাদ্য তালিকায়। অনেকেই ফ্রিজ থেকে পানি নিয়ে এসব জুস বানিয়ে থাকেন, তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যাতে বেশি ঠান্ডা না হয়।
ইফতারের খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত ফল রাখুন। খেজুর যেহেতু উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত ফল, তাই খেজুর সহ অন্যান্য ফল যেমনঃ তরমুজ, পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি এসব রাখুন খাবার তালিকায়।
রমজানে বর্জনীয় খাদ্যাভ্যাস
সারা দিন রোজা রাখার পরে অনেকেই সাহ্রি ও ইফতারে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করেন, যা রোজার সঠিক সুফল পাওয়া থেকে তাদের বিরত রাখে। বিশেষ করে ভাজাপোড়া অনেক সময় শরীরের জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠে। দেখে নিন রোজার সময়ে ভুল কিছু খাদ্যাভ্যাসঃ
- ইফতারের সময় অত্যাধিক তেলেভাজা খাওয়াঃ দীর্ঘ সময় না খেয়ে অনেকেই ইফতারে এত বেশি খাবার খান যে পরে আর কিছু খেতে পারেন না। এই সময়ে তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি, মাথাব্যথা ইত্যাদি হয়ে থাকে আর এসব খাবারে বেশি মাত্রায় ক্যালরি থাকার ফলে সহজেই অবসাদ ও ক্লান্তি আসে যা স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। এসব খাবারের বদলে সহজপাচ্য খাবার খেলে বেশি উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়াঃ কোনো বেলায় বেশি খেয়ে ফেললে পরের বেলায় আর খাওয়া যায় না, আর এক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া থাকলে তা অ্যাসিডিটিতেও রূপ নিতে পারে। তাই রাতে বা সাহ্রিতে খাবার মিস না করে বরং পরিমিত তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া যেতে পারে।
- অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াঃ ইফতারিতে অনেকেই বেশি মিষ্টিযুক্ত বা প্রক্রিয়াজাত জুস পান করে থাকেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বরং এসময় বাসায় তৈরি লেবুর শরবত, দই, দুধ, বা অন্যান্য ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও খাওয়া যেতে পারে নানান মৌসুমি ফল।
- সাহ্রিতে অত্যাধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখাঃ সাহ্রিতে অতিরিক্ত মাছ বা মাংস খেলে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তাই এসময়ে এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা সারাদিনে শরীরে পানির যোগান দেয়, যেমনঃ ডিম, দুধ, মুরগি, ফল ইত্যাদি।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খাওয়াঃ চিনি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে খাওয়া যেতে পারে বিভিন্ন ফল। পাশাপাশি শসা, গাজর, কপি, মটরশুঁটি, পেঁয়াজ, অলিভ অয়েল দিয়ে সালাদ বানিয়ে খেলে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যাবে।
- পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াঃ সাহ্রিতে উঠতে হয় বলে অনেকের ঘুমের সমস্যা হতে পারে এই সময়ে, যার কারণে হিটস্ট্রেস হতে পারে। দিনের বেলা বা অন্য কোনো সময় ঘুমিয়ে এই ক্লান্তি পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যারা চাকরি করেন, তারা কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন।
শেষকথা
রমজান মাসে ব্যায়াম করার তেমন প্রয়োজন না থাকলেও, ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। বাসায় ফিটনেস সরঞ্জাম থাকলে, সেগুলো দিয়েই কিছুটা ব্যায়াম করে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও নামাজ পড়ার কারণে ইবাদতের সাথে ব্যায়ামের কাজটিও হয়ে যাবে।
রমজান মুবারাক!