গরম শুরুর আগেই ফ্রিজ কেনার সহজ টিপস

বাংলাদেশে গরমের সময়টা যেন একটু বেশিই রুক্ষ ও চাহিদাপূর্ণ। এই সময়টাতে রান্নাঘরের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠে ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর। খাবার টাটকা রাখা, ঠান্ডা পানি, বরফ বা বাড়িয়ে তৈরি জুস – এসবের জন্য একমাত্র ভরসা এই যন্ত্রটি। তাই গরম শুরু হওয়ার আগেই ফ্রিজ কেনা একটি বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত।
তবে বাজারে এত রকমের ফ্রিজ দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাই ফ্রিজ কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই লেখায় থাকছে আপনার জন্য সঠিক ফ্রিজ বেছে নেওয়ার সহজ টিপস।
১. প্রয়োজন অনুযায়ী সাইজ বেছে নিন
ফ্রিজ কেনার আগে প্রথমেই ভাবুন, আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কতজন এবং প্রতিদিনের খাবার সংরক্ষণের চাহিদা কেমন। যদি আপনি একা থাকেন বা দুই সদস্যের পরিবার হন, তবে ১৫০-২০০ লিটার ফ্রিজ যথেষ্ট। তিন থেকে পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য ২৫০-৩৫০ লিটার ফ্রিজ বেছে নেওয়াই ভালো। আর বড় পরিবার বা যারা নিয়মিত রান্না করে সংরক্ষণ করেন, তাদের জন্য ৪০০ লিটার বা তার বেশি ধারণক্ষম ফ্রিজ উপযুক্ত।
২. কোন ধরণের ফ্রিজ আপনার জন্য উপযুক্ত?
বাজারে প্রধাণত ৩ ধরনের ফ্রিজ পাওয়া যায় – সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজ, ডাবল ডোর ফ্রিজ এবং মাল্টি ডোর ফ্রিজ।
- সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজ সাধারণত ছোট ফ্যামিলির জন্য উপযোগী। কম জায়গা লাগে এবং বিদ্যুৎ খরচও কম হয়।
- ডাবল ডোর ফ্রিজ বেশি সংরক্ষণের জন্য আদর্শ। ডাবল ডোর ফ্রিজ-এ আলাদা ফ্রিজার থাকায় বরফ বা মাছ-মাংস সংরক্ষণে সুবিধা হয়।
- মাল্টি ডোর বা সাইড বাই সাইড ফ্রিজ সাধারণর বড় ফ্যামিলির জন্য বা যারা মডার্ন ফিচার চান, তাদের জন্য উপযুক্ত।
৩. ইনভার্টার প্রযুক্তির ফ্রিজ বেছে নিন
বর্তমান বাজারের অনেক ফ্রিজেই ইনভার্টার কম্প্রেসর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এটি বিদ্যুৎ খরচ কমায় ও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয়। ইনভার্টার ফ্রিজ সাধারণত নিরব, এবং তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্প্রেসর চালু বা বন্ধ হয়, যা ফ্রিজের আয়ু বাড়ায়।
৪. এনার্জি রেটিং দেখুন
ফ্রিজের উপরে থাকা স্টার রেটিং দেখে ফ্রিজ কেনা উচিত। ৫-স্টার রেটিং মানে ফ্রিজটি সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। যদিও ৫-স্টার ফ্রিজের দাম একটু বেশি, তবে লম্বা সময় ধরে বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে বাঁচিয়ে দেয় অনেক খরচ।
এক নজরে দেখে নিন বিভিন্ন স্টার রেটিংয়ের ফ্রিজ কতটা বিদ্যুৎ খরচ করে:
স্টার রেটিং | বার্ষিক বিদ্যুৎ খরচ | গড় মাসিক বিল (টাকা) |
2 স্টার | ৩০০-৩৫০ ইউনিট | ৬০০-৭০০ টাকার মতো |
4 স্টার | ২০০-২৫০ ইউনিট | ৪০০-৫০০ টাকার মতো |
5 স্টার | ১৫০-১৮০ ইউনিট | ৩০০-৪০০ টাকার মতো |
বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক চার্ট
৫. ডিফ্রোস্ট প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে জানুন
ফ্রিজ সাধারণত ডাইরেক্ট কুল এবং ফ্রস্ট ফ্রি – এই দুই ধরণের হয়। ডাইরেক্ট কুল ফ্রিজে মাঝে মাঝে ম্যানুয়ালি বরফ পরিষ্কার করতে হয়। তবে ফ্রস্ট ফ্রি ফ্রিজ নিজে নিজেই বরফ গলিয়ে নেয়। যদি আপনার ব্যস্ত রুটিন হয়, তাহলে ফ্রস্ট ফ্রি ফ্রিজ আপনাকে অতিরিক্ত ঝামেলা থেকে রেহাই দেবে।
৬. ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টি বিষয়েও খেয়াল রাখুন
ভালো ব্র্যান্ডের ফ্রিজ সাধারণত দীর্ঘদিন ভালো সার্ভিস দেয়। বাংলাদেশে LG, Samsung, Walton, Singer, Hitachi, Sharp এবং vision-এর ফ্রিজ জনপ্রিয়। কিনে নেওয়ার আগে দেখে নিন কত বছরের কম্প্রেসর ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস সাপোর্ট রয়েছে।
৭. বিশেষ ফিচার কী কী দরকার?
আজকাল অনেক ফ্রিজেই যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত ফিচার, যেমনঃ
- চাইল্ড লক
- জিরো ডিগ্রি চেম্বার
- স্টেবিলাইজার-ফ্রি অপারেশন
- এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গ্যাসকেট
- এলইডি লাইটিং ও ডিজিটাল ডিসপ্লে
যেসব ফিচার আপনার ব্যাবহারকে আরও সহজ ও নিরাপদ করে তুলবে, সেগুলো বিবেচনায় নিন।
৮. দাম ও বাজেটের ভারসাম্য রাখুন
একটি ভালো মানের ফ্রিজের দাম শুরু হয় প্রায় ১৮,০০০ টাকা থেকে, এবং উন্নত ফিচারের জন্য এটি ৭০,০০০ টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই আপনার বাজেটের মধ্যেই সর্বোচ্চ ফিচার ও মানসম্মত ব্র্যান্ড বেছে নেওয়াই উত্তম।
শেষ কথা
ফ্রিজ এখন কেবল বিলাসিতা নয়, বরং একটি অপরিহার্য গৃহস্থালী সরঞ্জাম। গরমের সময় এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যায়। তাই দেরি না করে গরম আরও বেশি পড়ার আগেই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ফ্রিজটি বেছে নিন। মনে রাখবেন, একটু ভালোভাবে ভেবে নেওয়া সিদ্ধান্ত দীর্ঘ সময়ের জন্য স্বস্তি বয়ে আনে। আর আপনি যদি পুরাতন বা নতুন ফ্রিজ কিনতে চান, তবে Bikroy-এ একটা ঢুঁ মারতে ভুলবেন না। এখানে পাবেন নানান দামের, ব্র্যান্ডের ও ক্যাটাগরির ফ্রিজ – সব এক জায়গায়।