ইলেকট্রনিক্স

রিফারবিশড নাকি ব্যবহৃত ল্যাপটপ: আপনার জন্য কোনটি সঠিক পছন্দ?

নতুন ল্যাপটপ কেনার বাজেট কম? ব্যবহৃত বা রিফারবিশড ল্যাপটপ আপনার এই সমস্যার জন্য সাশ্রয়ী সমাধান হতে পারে। কিন্তু এই দুটির মধ্যে কোনটি নিজের জন্য সেরা হবে, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং জেনে নিব যে রিফারবিশড ল্যাপটপ ও ব্যবহৃত ল্যাপটপের ভেতর কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে। 

রিফারবিশড ল্যাপটপ কী?

রিফারবিশড ল্যাপটপ বলতে বোঝায় এমন একটি ডিভাইস যা হয়তো কারিগরি ত্রুটির কারণে ওয়ারেন্টি পিরিয়ডে ফেরত এসেছিল অথবা কোনো কারণে রিটেইল থেকে তুলে নিয়ে কারখানায় বা অনুমোদিত সেন্টারে যাচাই-বাছাই করে আবার বাজারজাত করা হয়েছে। 

এই ধরনের ল্যাপটপগুলো সাধারণত কোম্পানি বা নির্ভরযোগ্য রিসেলারদের দ্বারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা, মেরামত এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে প্রায় নতুন অবস্থায় বাজারে ফিরিয়ে আনা হয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এগুলো অনেক সময় ওয়ারেন্টি সহ পাওয়া যায়, যা ক্রেতাদের বাড়তি সুরক্ষা দেয়।

ব্যবহৃত ল্যাপটপ কী?

অন্যদিকে, ব্যবহৃত ল্যাপটপ হলো এমন একটি ডিভাইস যা আগের কোনো ব্যবহারকারী ব্যবহারের পর বিক্রি করেছেন। এগুলো সাধারণত ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি বিক্রি হয়ে থাকে এবং এদের ওপর কোনো ধরনের ওয়ারেন্টি বা সার্ভিস গ্যারান্টি থাকে না। একটি ব্যবহৃত ল্যাপটপের মান নির্ভর করে পূর্ববর্তী মালিকের ব্যবহার এবং যত্নের উপর। ফলে এতে লুকানো সমস্যা থাকার ঝুঁকি অনেক বেশি।

পারফরম্যান্স ও মানের দিক থেকে তুলনা

রিফারবিশড ল্যাপটপ সাধারণত প্রফেশনাল পর্যায়ে কঠোর টেস্টিং-এর মধ্য দিয়ে যায়। এর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের অবস্থা অনেকটাই নিশ্চিত থাকে কারণ যেকোনো ত্রুটি মেরামত করা হয় এবং মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে এর পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে নির্ভরযোগ্য হয়।

অন্যদিকে, ব্যবহৃত ল্যাপটপের ক্ষেত্রে আগের মালিকের যত্ন এবং ব্যবহারভেদে এর অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় বাহ্যিকভাবে ভালো দেখালেও এর ভেতরের কম্পোনেন্টসে সমস্যা থাকতে পারে, যা বাইরে থেকে বোঝা কঠিন। এই কারণে, পারফরম্যান্স এবং মানের দিক থেকে রিফারবিশড ল্যাপটপ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ পছন্দ।

দামের দিক থেকে তুলনা

ব্যবহৃত ল্যাপটপ সাধারণত রিফারবিশড ল্যাপটপের তুলনায় আরও কম দামে পাওয়া যায়, যা সীমিত বাজেটের ক্রেতাদের জন্য ভালো অপশন হতে পারে। তবে এতে দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত খরচের সম্ভাবনা থাকে যদি হার্ডওয়্যার সমস্যা দেখা দেয় এবং মেরামত বাবদ টাকা খরচ করতে হয়।

রিফারবিশড ল্যাপটপে আপনি কিছুটা বাড়তি টাকা খরচ করলেও মানের নিশ্চয়তা পান। যেহেতু এগুলো পরীক্ষা ও মেরামত করা হয় এবং অনেক সময় ওয়ারেন্টি সহ আসে, তাই দীর্ঘমেয়াদে এটি আরও সাশ্রয়ী হতে পারে। হঠাৎ করে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিলে ওয়ারেন্টি থাকায় খরচ বেঁচে যায়।

বাংলাদেশের বাজারে প্রাপ্যতা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত এবং রিফারবিশড উভয় ধরনের ল্যাপটপই বেশ সহজলভ্য। Bikroy.com-এর মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি সহজেই ব্যবহৃত ল্যাপটপের প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। বিভিন্ন ছোট কম্পিউটার শপ বা ফ্রিল্যান্সারদের কাছেও ব্যবহৃত ল্যাপটপ পাওয়া যায়।

রিফারবিশড ল্যাপটপের ক্ষেত্রে, কিছু বড় অনলাইন শপ এবং সুপরিচিত কম্পিউটার দোকান এগুলো বিক্রি করে থাকে। এক্ষেত্রে অনেক সময় দোকান থেকে কিছুদিনের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশি ক্রেতাদের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত করে।

আপনার জন্য কোনটি ভালো?

আপনার প্রয়োজন, ল্যাপটপের বাজেট এবং কতটুকু ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক, তার উপর নির্ভর করবে কোনটি আপনার জন্য সঠিক পছন্দ:

  • যদি আপনার বাজেট অত্যন্ত সীমিত হয় এবং আপনি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন, তবে ব্যবহৃত ল্যাপটপ একটি ভালো অপশন হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানকে দিয়ে ল্যাপটপটি ভালোভাবে চেক করিয়ে নেবেন।
  • যদি আপনি মান ও নির্ভরযোগ্যতা চান এবং কিছুটা বাড়তি বাজেট নিয়ে প্রস্তুত থাকেন, তবে রিফারবিশড ল্যাপটপ কেনাই ভালো সিদ্ধান্ত। এতে আপনি একটি নির্ভরযোগ্য ডিভাইস পাবেন যা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং ওয়ারেন্টি থাকায় ঝুঁকি কম থাকবে।
  • বিশেষ করে শিক্ষার্থী, ফ্রিল্যান্সার বা যারা প্রতিদিনের কাজে একটি নির্ভরযোগ্য ডিভাইস খুঁজছেন, তাদের জন্য রিফারবিশড ল্যাপটপই ভালো পছন্দ। এটি নতুন ল্যাপটপের কাছাকাছি পারফরম্যান্স দিতে পারে এবং বাজেটের দিক থেকেও সাশ্রয়ী হয়।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবহৃত ল্যাপটপ সাশ্রয়ী হলেও এতে ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে, রিফারবিশড ল্যাপটপ কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও এটি নির্ভরযোগ্যতা এবং ওয়ারেন্টি অফার করে। আপনার প্রয়োজন, বাজেট এবং কতটুকু ঝুঁকি নিতে চান তার উপর নির্ভর করে সঠিক পছন্দটি করুন। ভেবেচিন্তে কেনা আপনাকে একটি ভালো ডিল পেতে সাহায্য করবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. রিফারবিশড ল্যাপটপে কি নতুন ল্যাপটপের মতো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়? 

না, সবসময় নতুন ল্যাপটপের মতো পারফরম্যান্স নাও পেতে পারেন, তবে এটি খুব কাছাকাছি হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি মানসম্মতভাবে রিফারবিশ করা হয়।

২. ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার আগে কী কী পরীক্ষা করা উচিত? 

ব্যাটারি হেলথ, কিবোর্ড, টাচপ্যাড, ডিসপ্লে, ইউএসবি পোর্ট, ওয়াইফাই কানেক্টিভিটি এবং ওভারঅল ফিজিক্যাল কন্ডিশন ভালোভাবে পরীক্ষা করা উচিত।

৩. রিফারবিশড ল্যাপটপে কি ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়? 

হ্যাঁ, বেশিরভাগ নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা বা প্রস্তুতকারক রিফারবিশড ল্যাপটপে সীমিত ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকেন।

৪. বাংলাদেশে কোথায় ব্যবহৃত বা রিফারবিশড ল্যাপটপ কেনা নিরাপদ? 

ভালো রিভিউ আছে এমন অনলাইন শপ, স্বীকৃত কম্পিউটার মার্কেট বা ব্যক্তিগত বিক্রেতাদের থেকে কিনতে পারেন, তবে কেনার আগে অবশ্যই ল্যাপটপটি ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নিবেন।

৫. আমার কি রিফারবিশড ল্যাপটপের জন্য অতিরিক্ত সফটওয়্যার বা ড্রাইভার ইন্সটল করতে হবে?

সাধারণত, রিফারবিশড ল্যাপটপগুলো প্রয়োজনীয় অপারেটিং সিস্টেম এবং ড্রাইভারসহ আসে। তবে, নিশ্চিত হতে বিক্রেতার সাথে কথা বলে নিতে পারেন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close