ব্যবহৃত আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি করার সহজ উপায়

অনেকেই মনে করেন ব্যবহৃত আসবাবপত্র বিক্রি করা খুব কঠিন। কারণ, ব্যবহৃত আসবাবপত্র বিক্রি থেকে তেমন লাভ করা যায় না। এসব আসবাবপত্র বিক্রি করাও বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার অনেকেই জানেননা কোথায় এবং কিভাবে বিক্রি করতে হয়। বাড়ির কিংবা অফিসের আসবাবপত্র আপগ্রেড করার প্রয়োজনে, ব্যবহৃত আসবাবপত্র বিক্রি করতে হতে পারে। অনেক সময় ব্যবহৃত আসবাবপত্রের ব্যবসাও লাভজনক হতে পারে।
ব্যবহৃত আসবাবপত্রের দাম বেশ কম হওয়ায়, এসব আসবাবপত্রের অনেক গ্রাহক রয়েছে। অনেকেই এসব আসবাবপত্র দিয়ে সুন্দর করে ঘর সাজাতে পারেন। এসব আসবাবপত্র কিছুটা রিনোভেট করে, কিংবা আকৃতি পরিবর্তন করে, বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব। তাই কিছু কৌশল অবলম্বন করে, এবং আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করে সেকেন্ড-হ্যান্ড আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি করা সম্ভব। বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস, স্থানীয় ফার্নিচারের দোকান এবং কনসাইনমেন্ট/রিসেল স্টোরে আপনি আপনার ব্যবহৃত আসবাবপত্র বিক্রি করতে পারেন।
মূলত ব্যবহৃত আসবাবপত্রের জন্য ক্রেতা খুঁজে পাওয়া, বিক্রির পদ্ধতি এবং উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণই প্রধান চ্যালেঞ্জ। দ্রুত আসবাব বিক্রির কৌশল জানতে এই ব্লগটি পড়তে থাকুন।
(১) অনলাইন মার্কেটপ্লেস হতে পারে সবচেয়ে ভালো একটি অপশন
ফেসবুকের মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি বিনামূল্যে আপনার আসবাবপত্র পোস্ট করতে পারেন। এতে আপনার পরিচিতদের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়াও Bikroy-এর মতো ক্লাসিফাইড ওয়েবসাইট সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার বিক্রয়ের জন্য দুর্দান্ত একটি মার্কেটপ্লেস। এখানে আপনি আসবাবপত্রের ছবি, বিবরণ, এবং মূল্য দিয়ে পোস্ট করতে পারেন। এসব ওয়েবসাইটে অনেকেই সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচারের জন্য সার্চ করেন। এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়। তাই প্রত্যাশা মাফিক দাম পাবার ভালো সম্ভবনা থাকে, তবে বিক্রি হতে কিছুটা সময় লাগে।
(২) ভালো কিছু ছবি তুলুন এবং আকর্ষণীয় একটি বিবরণ তৈরী করুন
ব্যবহৃত ফার্নিচারের ভালো কিছু ছবি এবং গোছানো একটি বিবরণ, সম্ভাব্য ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে পারে। আসবাবপত্রের ছবিগুলো বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে পরিষ্কার ভাবে তুলুন। আসবাবটির ভালো-মন্দ দিক, কত বছর ব্যবহার করা হয়েছে, কিভাবে যত্ন নেয়া হয়েছে, ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করুন। এই ব্যাপারগুলো ক্রেতাকে আগ্রহী করে তোলে।
(৩) স্থানীয় ফার্নিচার তৈরির দোকানে যোগাযোগ করুন
ঘরের সাধারণ আসবাবপত্র বিক্রি করতে স্থানীয় ফার্নিচার তৈরির দোকানে যোগাযোগ করতে পারেন। এসব বিক্রেতা ব্যবহৃত বা পুরোনো আসবাবপত্র কিনে, রিনোভেট করে পুনরায় বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি করা সম্ভব হলেও, দাম আশানুরূপ নাও হতে পারে। এসব বিক্রেতার সাথে কৌশলী উপায়ে আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করতে হবে।
(৪) স্বাভাবিক দাম নির্ধারণ করুন
ব্যবহৃত আসবাবপত্রের লাভজনক দামে বিক্রি করা বেশ কঠিন। এই বিষয়টি মাথায় রেখে একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করুন। আসবাবটির বর্তমান মূল্য কত, কত বছর ব্যবহার করেছেন, কি কি ত্রুটি আছে, ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করুন। এছাড়াও ফার্নিচারটির বর্তমান বাজার মূল্য যাচাই করুন এবং সেই অনুযায়ী আপনার প্রত্যাশিত মূল্যে সামঞ্জস্য রাখুন। স্মার্টলি দর কষাকষি করুন। অফিসের আসবাবপত্র কিংবা বেশি ফার্নিচার বিক্রি করতে, অবস্থা এবং চাহিদা বুঝে নিলাম এবং বান্ডেল ছাড় অফার করতে পারেন।
(৫) কনসাইনমেন্ট কিংবা রিসেল শপগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন
আপনার ব্যবহৃত আসবাবপত্রগুলো এস্থেটিক কিংবা ভালো মানের হয়ে থাকলে কনসাইনমেন্ট কিংবা রিসেল শপগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন। এই শপগুলোতে এই আসবাবপত্রগুলো বেশ ভালো দামে বিক্রি হবার সম্ভবনা থাকে। এই শপগুলোতে গ্রাহকরা কম দামে ইউনিক প্রোডাক্ট কিনতে আসেন।
(৬) গ্যারেজ সেল কিংবা নিলাম আয়োজন করতে পারেন
আপনার অফিস কিংবা বাসার আসবাব অনেক বেশি হয়ে থাকলে কিংবা একটি বড় লটের আসবাব বিক্রি করতে চাইলে, অথরাইজড কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিলাম আয়োজন করতে পারেন। গ্যারেজ সেল বলতে বোঝায়, নিজের বাসা অথবা অফিসে ফার্নিচার সাজিয়ে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা। বেশি আসবাবের ক্ষেত্রে গ্যারেজ সেল কিংবা নিলামই ভালো অপশন। এই পদ্ধতিতে আশানুরূপ দাম এবং দ্রুত বিক্রি হবার সম্ভবনা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কিংবা আশেপাশে পোস্টারিং করে সবাইকে জানাতে হবে। উপযুক্ত কাস্টমার পেতে সরাসরি ইনভাইট করা যেতে পারে।
(৭) উপযুক্ত দাম এবং কাস্টমার পেতে একজন প্রফেশনাল বিক্রেতার সাহায্য নিতে পারেন
বাংলাদেশে কিছু কিছু কোম্পানি আছে যারা ব্যবহৃত আসবাবপত্র কেনা বেচা করেন। এসব কোম্পানি তৃতীয় পক্ষ হিসেবেও কাজ করেন। অফিস ফার্নিচার কিংবা বড় কোনো ফার্নিচার সেটআপ বিক্রি করতে এই প্রফেশনাল বিক্রেতাদের সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আশানুরূপ দাম নাও পেতে পারেন, তবে ঝামেলামুক্ত থাকতে পারবেন। পরিবহন সহ সকল বিষয়, এমনকি চুক্তিপত্রও তারা হ্যান্ডেল করে থাকেন।
ব্যবহৃত আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি করতে আরো কিছু সাধারণ টিপস
(১) ফার্নিচার বিষয়ক কমিউনিটি ফোরাম, স্থানীয় ফেসবুক গ্রুপ, ইত্যাদি স্থানীয় সামাজিক মিডিয়া গ্রুপে পোস্ট করতে পারেন।
(২) বিনামূল্যে আসবাবপত্র ডেলিভারি বা অ্যাসেম্বলি অফার করতে পারেন।
(৩) দ্রুত বিক্রি করতে কিছুটা ছাড় দিতে পারেন।
(৪) বিক্রির জন্য যুক্তিসঙ্গত সময় বেছে নিন।
(৫) আসবাবপত্র পরিষ্কার করে ভালো অবস্থায় রাখুন।
(৬) স্বল্প মূল্যে স্থানীয় বিজ্ঞাপন, পোস্টারিং, ব্যানার, ইত্যাদি করতে পারেন।
পরিশেষে, ব্যবহৃত আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সঠিক কৌশল অবলম্বন করে, স্পষ্ট এবং সৎ ভাবে আপনার জিনিসপত্রের অবস্থা তুলে ধরুন এবং যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করুন। সঠিক সময়ে উপযুক্ত দামে ব্যবহৃত আসবাব বিক্রি করলে দ্রুত এবং লাভজনক হবার সম্ভাবনা থাকে। আশা করা যায়, উপরের তালিকাটি থেকে পারফেক্ট উপায় অপ্টিমাইজ করলে, আপনার আসবাবপত্র অল্প সময়ের মধ্যেই একটি নতুন ঠিকানা খুঁজে পাবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
(১) ব্যবহৃত আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি করতে কি কি বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন?
ব্যবহৃত আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি করার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন, বিজ্ঞাপনের কার্যকর কৌশল, এবং দাম নির্ধারণের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
(২) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কিভাবে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের বিজ্ঞাপন দেবেন?
প্রথমে, আপনার আসবাবপত্রের অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা দিন এবং ছবি তুলুন। তারপর বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা স্থানীয় মার্কেটপ্লেসে বিজ্ঞাপন দিন।
(৩) ব্যবহৃত আসবাবপত্র বিক্রির জন্য বাংলাদেশে প্রথম সারির কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কি কি?
Bikroy.com, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ইত্যাদি বাংলাদেশে প্রথম সারির কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
(৪) আসবাবপত্রের দাম কিভাবে ঠিক করবেন?
আসবাবটির বর্তমান মূল্য কত, কত বছর ব্যবহার করেছেন, কি কি ত্রুটি আছে, ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করুন।
(৫) কি ধরণের ব্যবহৃত আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি হয়?
আধুনিক ডিজাইনের আসবাবপত্র, ভালো অবস্থায় থাকা কাঠের আসবাবপত্র, এবং স্পেস সেভিং আসবাবপত্র দ্রুত বিক্রি হয়।