আপনার ফোন আপগ্রেডের সময় হয়েছে কি? জেনে নিন ৫টি লক্ষণ

বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। স্মার্টফোন এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রযুক্তির ডেভেলপমেন্টের সাথে সাথে মোবাইল ফোনেরও আপগ্রেডের প্রয়োজন হয়। সময়ের সাথে সাথে ফোনের পারফরম্যান্স, ব্যাটারি লাইফ, এবং অন্যান্য ফিচার ধীরগতির হয়ে যায়। স্ট্যান্ডার্ড মানের একটি স্মার্টফোন সাধারণত ২ থেকে ৩ বছর ভালো পারফর্ম করে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর ফোনের নিয়মিত আপডেটগুলো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্লো করে দেয়।
একটা সময় দেখবেন ফোনের অ্যাপগুলো স্লো কাজ করছে, আপডেট করার পর ফিচার সাপোর্ট করছে না, দ্রুত ব্যাটারি চার্জ ড্রেন হচ্ছে, কিংবা মোবাইল ঘন ঘন রিস্টার্ট নিচ্ছে। এমন অবস্থায় বুঝবেন এখন আপনার ফোন আপগ্রেডের সময় হয়েছে। এই ব্লগে এমন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই লক্ষণগুলো দেখে বুঝতে পারবেন যে আপনার ফোন আপগ্রেডের সময় হয়েছে।
৫টি লক্ষণ – যা দেখে বুঝবেন ফোন আপগ্রেডের সময় হয়েছে
(১) পারফরম্যান্স ধীরগতির হওয়া
যখন আপনার ফোনটি আগের মতো ফার্স্ট রেস্পন্স করবে না এবং অ্যাপ ওপেন হতে খানিকটা সময় নেবে, তখন বুঝতে পারবেন বর্তমান প্রযুক্তির ডেভেপলমেন্ট অনুযায়ী ফোনের হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার পুরনো হয়ে গেছে। আপনি লক্ষ্য করবেন ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গেম খেলা, এমনকি সিম্পল টাস্ক করতেও, ফোনের কমান্ড বেশি সময় নিচ্ছে, ফোন হ্যাং হয়ে যাচ্ছে কিংবা ঘন ঘন রিস্টার্ট নিচ্ছে। এতে বোঝা যায় ফোনের পুরোনো ভার্সনের প্রসেসর এবং র্যাম, এতো কাজের লোড নিতে পারছে না। কারণ নতুন সিস্টেম আপডেট এবং অ্যাপগুলো অনেক বেশি রিসোর্স ব্যবহার করে। এই অবস্থায় ফোন সার্ভিসিং কোনো কাজে আসে না, আপগ্রেড করে নেয়াই বেস্ট অপশন।
(২) ব্যাটারি চার্জ দ্রুত শেষ হওয়া
একটি মোবাইল ফোন রেগুলার ব্যবহারে ১-২ বছর পরই ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। ফুল চার্জে ১২-১৫ ঘন্টা সাপোর্ট না পেলে আপগ্রেড করার কথা ভাবতে পারেন। এছাড়াও চার্জিংয়ের সময় ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া এবং চার্জ থাকা সত্ত্বেও ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়া, এগুলো বেশ খারাপ লক্ষণ। তবে ওভারঅল পারফরম্যান্স ভালো থাকলে শুধু ব্যাটারি পরিবর্তন করতে পারেন। এখন সব স্মার্টফোন কোম্পানি মডেল অনুযায়ী আলাদা ব্যাটারি বিক্রয় করে থাকে।
(৩) অ্যাপ ও আপডেট সাপোর্ট না করা
অপারেটিং সিস্টেম পুরনো হয়ে গেলে, সিস্টেম আপডেট এবং নতুন অ্যাপের সাথে সফটওয়্যারের অসঙ্গতি দেখা দেয়। প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা সম্ভব হয় না, অর্থাৎ অ্যাপ আর সাপোর্ট করে না। কারণ একটা নির্দিষ্ট সময় পর নতুন আপডেটের সাথে ফোনের পুরোনো সফটওয়্যার ম্যাচ করে না, আবার পুরনো সিস্টেমে অনেক অ্যাপ কাজও করে না। এক্ষেত্রে ফোনের পারফরম্যান্স ধীরগতির হয়ে যায় এবং অ্যাপ হ্যাং করার মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। এছাড়াও ফোনের নিরাপত্তা ও পারফরম্যান্স উভয় দিক সমস্যা দেখা দেয়।
(৪) হ্যাং বা রিস্টার্ট হওয়া
হার্ডওয়্যার সমস্যার কারণে, হঠাৎ ফোন হ্যাং কিংবা রিস্টার্ট নেয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। এরকম সমস্যা সাধারণত সার্ভিসিং করে ঠিক করা যায় না। পুরোনো ভার্সনের ফোন আপডেট করার পর হার্ডওয়্যারে এধরণের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও পুরোনো ফোনের প্রসেসর বেশি লোড নিতে পারে না, তাই ফোন হ্যাং হয়ে যায় বা বারবার রিস্টার্ট হয়। এরকম লক্ষণ দেখা দিলে ফোন বদলানোই ভালো সমাধান।
(৫) মোবাইল স্টোরেজ ফুল দেখানো
পুরোনো ভার্সনের ফোনে রিড অনলি মেমরি (ROM) কম হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত স্টোরেজ না থাকলে অ্যাপ আপডেট এবং সিস্টেম আপডেট, ইনস্টল হয় না। এছাড়াও প্রচুর ক্যাশ জমে স্টোরেজ পরিপূর্ণ দেখায়, এতে ফোনের পারফরম্যান্স ডাউন হয়ে যায়। আবার ROM বেশি হয়ে থাকলেও, নতুন সিস্টেম আপডেট সম্পূর্ণভাবে ইনস্টল হতে সমস্যা হতে পারে। যদি অপ্রয়োজনীয় ফাইল ক্লিয়ার করার পরেও, বারবার ‘স্টোরেজ ফুল’ নোটিফিকেশন আসে, তাহলে নতুন একটি ফোন বিবেচনা করাই ভালো।
আরো কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে –
(১) ফোনের নিরাপত্তা আপডেট বা ওএসএস আপডেট বন্ধ হয়ে গেলে, ফোন আপগ্রেড করা উচিত।
(২) সিম্পল টাস্কের সময়ও ফোন গরম হলে, ফোন আপগ্রেডের বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত।
(৩) মোবাইল নেটওয়ার্ক, এবং ওয়াইফাই পারফরম্যান্স বেশিরভাগ সময় খারাপ থাকলে।
(৪) ক্যামেরার মান পরে গেলে।
(৫) ফোন ডিসপ্লেতে গোল কিংবা চিকন লম্বাটে দাগ পড়লে।
পরিশেষে, আপনার যদি উপরের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে এখনই সময় উপযুক্ত একটি ফোন বেছে নেওয়ার। স্লো পারফরম্যান্স, ব্যাটারি চার্জ ড্রেন, ক্রাশিং, আধুনিক ফিচারের অভাব, ইত্যাদি কারণে আমরা ফোন পরিবর্তন করে থাকি। ফোন আপগ্রেড করলে উন্নত পারফরম্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাটারি লাইফ এবং নিরাপদ ডিভাইস ব্যবহারের অভিজ্ঞতা পাবেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
(১) কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ফোন আপগ্রেডের সময় হয়েছে?
ফোনের পারফরমেন্স স্লো হয়ে গেলে, ব্যাটারি চার্জ ড্রেন হলে, সফটওয়্যার আপডেট না পেলে, এবং নতুন ফিচারগুলি অপ্রতুল হওয়া এর কিছু লক্ষণ হতে পারে।
(২) ফোন আপগ্রেড করার স্ট্যান্ডার্ড সময় কেমন?
সাধারণত, ফোনের মডেল এবং ব্র্যান্ডের উপর ভিত্তি করে, ২ থেকে ৩ বছর পর পর ফোন আপগ্রেড করা উচিত।
(৩) ফোন আপগ্রেডের আগে কি কি বিষয় যাচাই করবেন?
ফোনের পারফরমেন্স, ফিচার, দাম, কাস্টমার রিভিউ এবং আপনার প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য যাচাই করা উচিত।
(৪) প্রায়ই ফোন হ্যাং কিংবা রিস্টার্ট নিলে কি রিপেয়ার করা ঠিক হবে?
হার্ডওয়্যার সমস্যার কারণে, ফোন হঠাৎ রিস্টার্ট নেয়া কিংবা প্রায়ই হ্যাং হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। এজাতীয় সমস্যা সাধারণত সার্ভিসিং করে ঠিক করা যায় না।
(৫) বারবার স্টোরেজ পরিপূর্ণ দেখালে, কি করা উচিত?
পুরোনো ভার্সনের ফোনে রিড অনলি মেমরি (ROM) কম হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত স্টোরেজ না থাকলে অ্যাপ আপডেট এবং সিস্টেম আপডেট, ইনস্টল হয় না। এছাড়াও প্রচুর ক্যাশ জমে স্টোরেজ পরিপূর্ণ দেখায়, এতে ফোনের পারফরম্যান্স ডাউন হয়ে যায়। যদি অপ্রয়োজনীয় ফাইল ক্লিয়ার করার পরেও, বারবার ‘স্টোরেজ ফুল’ নোটিফিকেশন আসে, তাহলে নতুন একটি ফোন বিবেচনা করে ভালো।