ইলেকট্রনিক্স

স্মার্ট টিভি ও অ্যান্ড্রয়েড টিভির পার্থক্য ও কেনার গাইড

বাংলাদেশে ঘরোয়া বিনোদনের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই এখন স্মার্ট টিভি ও অ্যান্ড্রয়েড টিভি কেনার কথা ভাবছেন। যদিও নামের দিক থেকে অনেকটা মিল রয়েছে, তবে এদের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহারযোগ্যতা এবং মূল্যের দিক থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এই গাইডটি আপনাকে সেই পার্থক্যগুলো বুঝতে এবং আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী সঠিক টিভি বেছে নিতে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশে টেলিভিশন কেনার সময় অনেক ক্রেতা স্মার্ট টিভি এবং অ্যান্ড্রয়েড টিভির মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারেন না। চলুন এই দুটি টিভির মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো দেখে নিই এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিভি কেনার পরামর্শ জেনে নেই।

১. অপারেটিং সিস্টেম

স্মার্ট টিভি 

এতে সাধারণত টিভি নির্মাতা কোম্পানির নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম (যেমন: LG-এর WebOS বা Samsung-এর Tizen) ব্যবহার করা হয়। এতে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করা থাকে বা কোম্পানির নিজস্ব অ্যাপ স্টোর থেকে সীমিত সংখ্যক অ্যাপ ডাউনলোড করা যায়।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি

এটি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলে। এতে করে গুগল প্লে স্টোর থেকে হাজার হাজার অ্যাপ, গেম এবং সার্ভিস ডাউনলোড করা যায়।

কেনার পরামর্শ: আপনি যদি ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম এবং বাংলাদশি স্ট্রিমিং অ্যাপ ব্যবহারে আগ্রহী হন, তাহলে অ্যান্ড্রয়েড টিভি আপনার জন্য বেশি উপযোগী ও ভবিষ্যৎ-নির্ভর।

২. অ্যাপ অ্যাভেইলিবিলিটি

স্মার্ট টিভি

অ্যাপের সংখ্যা সীমিত। আপডেটও অনেক সময় নিয়মিত আসে না। ফলে অনেক জনপ্রিয় অ্যাপ ব্যবহার করা যায় না।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি

এতে অ্যাপের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যেমন: BongoBD, Bioscope ইত্যাদি। গুগলের মাধ্যমে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায়।

কেনার পরামর্শ: যদি আপনি বেশি অ্যাপ ব্যবহার করেন বা আইপিটিভি, গেমিং অ্যাপ ইত্যাদি চান, তাহলে অ্যান্ড্রয়েড টিভি আপনার জন্য উপযুক্ত।

৩. ভয়েস কন্ট্রোল ও গুগল ইন্টিগ্রেশন

স্মার্ট টিভি

ভয়েস সার্চ ফিচার থাকলেও তা সাধারণত সীমিত এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডগুলোতে ভালো কাজ করে।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি

এতে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিল্ট-ইন থাকে, যার মাধ্যমে ভয়েস কমান্ড দিয়ে টিভি চালানো, কনটেন্ট খোঁজা বা স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কেনার পরামর্শ: যদি আপনি ভয়েস কমান্ড ও গুগল ইকোসিস্টেম (যেমন Google Photos বা স্মার্ট লাইট) ব্যবহারে আগ্রহী হন, তবে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বেছে নিন।

৪. আপডেট ও কাস্টমাইজেশন

স্মার্ট টিভি

সফটওয়্যার আপডেট সাধারণত ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে এবং বেশিরভাগ ব্র্যান্ডই স্মার্ট টিভিগুলোতে সীমিত সংখ্যক আপডেট দিয়ে থাকে।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি

গুগল থেকে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায়, ফলে নতুন ফিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত থাকে।

কেনার পরামর্শ: দীর্ঘমেয়াদে ভালো পারফরম্যান্স এবং সাপোর্ট চাইলে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বেছে নেওয়াই ভালো।

৫. ইউজার ইন্টারফেস ও ব্যবহার

স্মার্ট টিভি

সাধারণত ব্যবহারে সহজ কিন্তু কম কাস্টমাইজেবল। কারণ, এগুলোতে ফাংশন খুবই কম থাকে। তাই কিছু সময়ের মাঝেই সবাই এই টিভিগুলোর ফাংশন বুঝে যায়। 

অ্যান্ড্রয়েড টিভি

একটু জটিল মনে হতে পারে, তবে এতে ব্যক্তিগতভাবে কনফিগার করার সুযোগ বেশি। কারণ, এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাংশন দেয়া থাকে। ফলে, সবকিছু বুঝতে উঠতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। 

কেনার পরামর্শ: যারা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত, তারা অ্যান্ড্রয়েড টিভির ব্যক্তিগতকরণ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। আর যারা সহজ ব্যবহার চান, তারা স্মার্ট টিভি বেছে নিতে পারেন।

৬. মূল্য ও বাজেট

স্মার্ট টিভি

তুলনামূলকভাবে দাম কম এবং সাধারণ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি

এগুলো দামে কিছুটা বেশি, তবে এতে অতিরিক্ত ফিচার, গুগল সাপোর্ট এবং লম্বা সময় ব্যবহারযোগ্যতা পাওয়া যায়। তাই অ্যান্ড্রয়েড টিভির দাম কিছু বেশি হলেও, তা আসলে দীর্ঘমেয়াদে বেশি বেনেফিট প্রদান করে। 

কেনার পরামর্শ: যদি বাজেট সীমিত হয় এবং আপনি শুধু ইউটিউব বা সাধারণ চ্যানেলগুলো দেখেন, তাহলে স্মার্ট টিভি’ই যথেষ্ট। ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাইলে অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে বিনিয়োগ করাই ভালো।

পরিসংহার 

বাংলাদেশি বাজারে টিভি কেনার সময় স্মার্ট টিভি ও অ্যান্ড্রয়েড টিভির মধ্যে পার্থক্য বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি সহজ ব্যবহার চান, স্মার্ট টিভি যথেষ্ট। তবে বেশি ফিচার, অ্যাপস ও ভবিষ্যৎ আপডেট চাইলে অ্যান্ড্রয়েড টিভিই ভালো পছন্দ হবে। তবে আপনার প্রয়োজনগুলো আগে ভালো করে বুঝে তারপরই সিদ্ধান্ত নিন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. স্মার্ট টিভি ও অ্যান্ড্রয়েড টিভি কি এক জিনিস?

না, স্মার্ট টিভি-তে কোম্পানির নিজস্ব সিস্টেমে ব্যবহৃত হয় এবং অ্যাপ সংখ্যা সীমিত থাকে। অ্যান্ড্রয়েড টিভি-তে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়, যেখানে গুগল প্লে-স্টোরের মাধ্যমে হাজারো অ্যাপ ব্যবহার করা যায়।

২. স্মার্ট টিভি বনাম অ্যান্ড্রয়েড টিভি – কোনটি বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয়?

বর্তমানে বাংলাদেশে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বেশি জনপ্রিয়, কারণ এতে BongoBD, Bioscope সহ দেশীয় অ্যাপগুলো সহজে ব্যবহার করা যায় এবং সেটিংস বা ইউজার ইন্টারফেস গুগল ইকোসিস্টেমের কারণে অনেকেই সহজেই অভ্যস্ত হতে পারেন।

৩. অ্যান্ড্রয়েড টিভির দাম কি বেশি পড়ে?

হ্যাঁ, সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড টিভি-এর দাম একই সাইজ ও ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি-এর তুলনায় কিছুটা বেশি হয়, কারণ এতে অতিরিক্ত ফিচার ও গুগল সার্ভিস ইন্টিগ্রেশন থাকে।

৪. পুরানো স্মার্ট টিভিতে কি অ্যান্ড্রয়েড ফিচার যোগ করা যায়?

হ্যাঁ, Android TV Box বা Chromecast-এর মতো স্ট্রিমিং ডিভাইস ব্যবহার করে পুরানো স্মার্ট টিভি-তেও অ্যান্ড্রয়েড ফিচার ব্যবহার করা যায়।

৫. কোনটি কেনা উচিত – স্মার্ট নাকি অ্যান্ড্রয়েড টিভি?

আপনার চাহিদার উপর নির্ভর করে। সহজ ব্যবহার আর সাধারণ অ্যাপগুলো ব্যবহার করলে স্মার্ট টিভি ভালো। কিন্তু যদি বেশি অ্যাপ, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, গেমিং, ও নিয়মিত আপডেট চান, তবে অ্যান্ড্রয়েড টিভি-ই শ্রেয়।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close