ফ্যাশন, স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য্য

পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন: সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক কেনা কি স্মার্ট সিদ্ধান্ত?

আজকের পৃথিবীতে ‘স্মার্ট’ মানেই কেবল দামি কিছু নয়, বরং পরিবেশ, অর্থ এবং সচেতনতার ভারসাম্য রক্ষা করাই আসল স্মার্টনেস। ঠিক এই দৃষ্টিকোণ থেকে সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক বা পুনর্ব্যবহৃত জামাকাপড় কেনা অনেকের জন্য এখন একটি চিন্তাশীল এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ফ্যাশনের অন্ধ দৌড় ও পরিবেশের ক্ষতি

বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন শিল্প পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় উৎস হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর কোটি কোটি পোশাক তৈরি হচ্ছে, যেগুলোর জন্য প্রয়োজন হয় বিপুল পরিমাণ পানি, কেমিক্যাল ও শক্তির। এছাড়া, এসব পোশাক ব্যবহারের পর সঠিকভাবে রিসাইকেল না হলে তা গিয়ে পড়ে ল্যান্ডফিলে – যেখানে বছরের পর বছর এগুলো অপচনশীল অবস্থায় পড়ে থাকে।

বাংলাদেশও এই বৈশ্বিক সমস্যার অংশ। আমাদের দেশ একদিকে পোশাক রপ্তানির জন্য পরিচিত, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত পোশাকের অপচয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক কেনার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী

অনেকেই এখনো মনে করেন পুরনো পোশাক কেনা যেন সামাজিক মর্যাদার সাথে যায় না। অথচ পশ্চিমা দেশে ‘থ্রিফটিং’ বা ‘ভিন্টেজ ক্লোথিং’ – এর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে হু হু করে। ইউরোপ-আমেরিকায় ফেশন সচেতন, পরিবেশবান্ধব প্রজন্ম সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাককে ট্রেন্ড হিসেবে গ্রহণ করেছ, তাই থ্রিফট শপিং এর জনপ্রিয়তা এতো বেড়েছে।

বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটছে। শহরের তরুণ প্রজম্নের অনেকেই এখন খুঁজছেন ইউনিক ও সাশ্রয়ী পোশাক – যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস কিংবা থ্রিফট স্টোরে।

অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী

একটি ভালো মানের ব্র্যান্ডেড জ্যাকেট বা ব্যাগের জন্য আপনি হয়তো নতুন কিনতে গিয়ে ৫-৬ হাজার খরচ করতেন, সেখানে সেকেন্ড-হ্যান্ড কিনলে তা মিলছে ১৫০০-২০০০ টাকায়। এই টাকায় আপনি আরও দুই-তিনটি প্রয়োজনীয় পোশাক কিনে ফেলতে পারেন।

বিশেষ করে যারা শিক্ষার্থী, নতুন চাকরি শুরু করেছেন বা বিয়ের আগেই সংসার গোছাচ্ছেন তাদের জন্য সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক সাশ্রয় ও স্টাইল দুই-ই নিশ্চিত করে।

স্বাস্থ্যগত দিক থেকে কতটা নিরাপদ?

এটা সত্যি যে কেউ যদি অতি পুরনো বা নোংরা পোশাক ব্যবহার করেন, তাহলে ত্বকে এলার্জি বা সংক্রমণের আশংকা থাকতে পারে। তবে আপনি যদি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পরিচ্ছন্ন, অল্প ব্যবহৃত এবং ভালোভাবে ধোয়া পোশাক কেনেন, তাহলে এসব সমস্যা এড়ানো যায়।

বাড়িতে এনে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুঁয়ে নিলে এবং সূর্যের আলোয় শুকালে জীবাণুর ভয় আর থাকেনা বললেই চলে।

নতুন একধরণের পরিচিতি ও স্টাইল স্টেটমেন্ট

অনেকেই আজকাল সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাককে একটি ইউনিক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে দেখছেন। দোকানে যে পোশাক সবাই কিনছে, তা না দিয়ে কেউ কেউ খুঁজে বের করছেন ভিন্টেজ বা এক ধরণের রেট্রো স্টাইল, যা তাকে আলাদা পরিচিতি দিচ্ছে।

Bikroy-এ প্রায়ই দেখা যায়, কেউ কেউ একেবারে নিত্যদিনের ব্যতিক্রম পোশাক বিক্রি করছেন – যা দোকানে হয়তো এখন আর পাওয়া যায় না।

গ্লোবাল ট্রেন্ড ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা

একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক মার্কেট ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি দ্বিগুন হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশেও এমন একটি বাজার তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু প্রয়োজন সচেতনা, মানসম্পন্ন পণ্য এবং বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে আস্থার পরিবেশ।

Bikroy-এর মতো প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব 

যেখানে একদিকে ব্র্যান্ড নিউ পোশাকের দাম দিন দিন বাড়ছে, অন্যদিকে Bikroy-এর মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেস সাশ্রয়ী সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক কেনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আপনি চাইলে ঘরে বসেই ব্র্যান্ডেড জিন্স, জ্যাকেট, ব্যাগ বা এক্সেসরিজ খুঁজে পেতে পারেন, একেবারে সাধ্যের মধ্যে।

এছাড়া, যারা নিজেদের অল্প ব্যবহার করা পোশাক বিক্রি করতে চান, তাদের জন্যও এটি একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম। এতে একদিকে আপনার পোশাক অপচয় হচ্ছে না, অন্যদিকে আয়ও হচ্ছে কিছুটা।

উপসংহার

সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক শুধু টাকা বাঁচায় না, এটি আপনাকে একটি সচেতন, স্টাইলিশ ও দায়িত্বশীল পরিচিতি দেয়। আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতের পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে।

তাই নতুন পোশাক কেনার আগে একবার ভেবে দেখুন – আপনি কি সত্যিই সেটার প্রয়োজনবোধ করছেন? নাকি Bikroy-এ একটু খুঁজলেই পেতে পারেন একই বা ভালো কিছু – কম দামে, পরিবেশবান্ধব?

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close