২০১৬ সালের টেক ট্রেন্ডস এর খোঁজ-খবর
প্রযুক্তির জগতে ২০১৫ সালটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই সময়ে ভার্চুয়াল জগতে আমরা একটি নতুন দিগন্তের সূচনা দেখেছি, পাশাপাশি প্রযুক্তির বাজারেও এসেছে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। যার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে টেক জায়ান্টদের মধ্যে তৈরি হতে পারে প্রযুক্তিগত ক্ষমতার প্রতিযোগিতা। প্রযুক্তি জগতে গত বছরের উদভাবন বা অগ্রসরের খবর নিয়ে খুব বেশি উৎফুল্ল না হয়ে চল আমরা নজর দেই, ২০১৬ সালের টেক ট্রেন্ড এবং এ সম্পর্কে প্রত্যাশা করছি এমন কিছু দুঃসাহসী ভবিষ্যৎবানী।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটির (ভিআর) নবজাগরণ:
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বহু দশক ধরে আলোচনায় থাকলেও বাস্তবে এটি শুরু হয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরে। এই নবজাগরণের পেছনে ভূমিকা রেখেছে অকিউলাস’এর উন্নতি এবং ফেসবুক কর্তৃক এটি কিনে নেয়ার মাধ্যমে। প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৫ সালকে মূলত: তাদের ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তি প্রদর্শনীর বছর এবং ২০১৬ সালকে অবমুক্তির বছর হিসেবে নিয়েছে। আপনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী হওয়ার জন্য প্রস্তুত হোন, কেননা অকিউলাস এর যাত্রার মধ্য দিয়ে বর্তমান বাজারের এইচটিসি এবং সনির ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেটের ব্রান্ডগুলো প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে যাচ্ছে। এটা বলে রাখা ভাল যে, প্রয়োজনীয় ভার্চুয়াল রিয়ালিটি যন্ত্রগুলো (কিটস) গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। অর্থাৎ আপনি আগ্রহী হলে খুব সহজেই এটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট নিতে পারবেন, তবে এটি একটু বেশি দামে কিনতে হতে পারে।
তারযুক্ত হেডফোনের অবসান:
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি যদি সঠিক হয় তাহলে অ্যাপেলের সর্বশেষ আইফোনে অডিও চালানোর ক্ষেত্রে ৩.৫ মিলিমিটারের হেডফোন সংযোগ বাদ দিয়ে লাইটিং ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে। আইফোনটিকে আরও পাতলা করা হয়েছে এবং এজন্য প্রতিষ্ঠানটি কিছু কৌশলী পন্থা অবলম্বন করেছে। যা হোক হেডফোনের পোর্ট বাদ দেয়াটি এখানে মূখ্য বিষয় নয়। দীর্ঘ সময় ধরে তারযুক্ত হেডফোন ব্যবহার করা বিরক্তিকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এটি ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে হেডফোনের তারগুলো জট বেধে যায় এবং ভেঙে (মুড়িয়ে) যায় এবং স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বিশাল ভারী জ্যাকটি অনেক সময় মানায় না বা উপযোগী হয় না। আর এক্ষেত্রে ব্লুটুথ প্রযুক্তি এই সমস্যার সমাধান সহজ করে দিয়েছে। এই ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে (তার বিহীন) অডিও চালাতে কোন সমস্যা হয়না বা অডিওর’vর মানের (সাউন্ড, ফ্রিকোয়েন্সি) ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় না এবং ব্যাটারিও ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে। মনে করা হচ্ছে এর মাধ্যমে তারযুক্ত হেডফোনের জগতে ভাটা পড়তে যাচ্ছে এবং এই প্রযুক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এবং অ্যাপল তারযুক্ত হেডফোন প্রযুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে তার পরিবর্তে নতুন প্রযুক্তিকে জোর দিচ্ছে। হ্যাঁ, এখনই সময় এই পুরনো দিনের প্রযুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ২০১৬ সালের তারবিহীন প্রযুক্তি গ্রহণ করা, যেটিতে এই বছরে সকলেই অভ্যস্ত (আদর্শ প্রযুক্তি হবে) হয়ে যাবে।
স্মার্ট ক্রেতার জন্য স্মার্ট ওয়্যারেবল (তারযুক্ত পরিধেয়):
২০১৫ সালে যতটা প্রত্যাশা ছিল যে, এই সময়ে ওয়্যারেবল (তারযুক্ত পরিধেয়) অপসারণ করা হবে, তা বাস্তবে ততটা সম্ভব হয়নি। এমনকি আশ্চর্যজনকভাবে অ্যাপলও তাদের অ্যাপল ঘড়ির সাথে এই প্রযুক্তি আবশ্যক করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু এটাও তাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাস্তবে এই বাজারে প্রতিযোগিতা কতটা কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স সো’তে (সিইএস) যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেকনোলজি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন করে থাকে সেখানে আমরা দেখলাম যে, কিছু স্বনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মাধ্যমে ওয়্যারেবল সেক্টর দখল করে নিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অনুসরণীয় সক্ষমতা বা উপযুক্ততার বিচারে বাইরের এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের সেরকম সন্তোষজনক কোন কারণ নেই। উদাহরণ হিসেবে ক্যাসিও’র ডব্লিউএসডি-এফ ১০ স্মার্ট ওয়াচের কথা বলা যায়, যেখানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে অমসৃণ স্বাক্ষর এবং ৫০মিলি পর্যন্ত পানির প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ঘড়িটি বাইরের মানুষের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। এটির আরও রয়েছে পাওয়ার সংরক্ষণ মুড যা এর ব্যাটারির কার্যক্ষমতা ৩০ দিন পর্যন্ত অক্ষুণœ রাখে, আর এই পাওয়ার সংরক্ষণ করতে গিয়ে এর মূল যে কার্যকারিতা তার কোন সমস্যা হয় না এবং স্বাভাবিকভাবেই কাজ করে। ২০১৬ সালে স্মার্ট ওয়্যারেবল মার্কেটে আমরা আরও কিছু নতুন কোম্পানিকে আশা করতে পারি যারা ক্যাসিও’র তালিকায় স্থান করে নিতে পারে। তবে বাকী সময়ে ‘কুলনেস’ ফ্যাক্টর এর মতো প্রধান আকর্ষণের পাশাপাশি আরও মসৃণ ওয়্যারেবল এবং উন্নতমানের ফিটনেস ট্র্যাnকিং ক্ষমতাসম্পন্ন পণ্য প্রত্যাশা করতে পারি।
স্মার্টফোন স্ট্যাগনেশন (স্তম্ভ):
স্মার্টফোনের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন দেখা যাবে। বছরের পর বছর ধরে আস্তে আস্তে স্মার্টফোনগুলো দেখতে একই রকম হচ্ছে। বাজারের প্রায় সবগুলো উল্লেখযোগ্য স্মার্টফোনেই একটি করে চমৎকার ক্যামেরা, সুন্দর ডিজাইন, অসাধারণ ডিসপ্লে এবং শক্তিশালী স্পেসিফিকেশন রয়েছে। আমরা এমন একটি অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি যে, এসব ক্ষেত্রে খুব কমই ভিন্ন কিছু দেয়ার থাকে। ফলে উৎপাদনকারীদের নিজেদের পণ্যকে অন্যদের চেয়ে আলাদা হিসেবে উপস্থাপন করতে ভিন্ন পথ খুঁজতে হয়। আমরা দেখছি স্যামসাং গ্রাহক আকৃষ্ট করছে তাদের এজ ডিসপ্লে দিয়ে। এলজি তাদের ভি-১০ এ সেকন্ডারি মিনি ডিসপ্লে দিয়ে গ্রাহক টানার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে অ্যাপল তাদের নতুন আইফোনগুলোতে ‘থ্রিডি টাচ’ নিয়ে এসেছে। এসবই হচ্ছে স্মার্টফোনকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা। কিন্তু কোনোটিই খুব উপকারি বা আকর্ষণীয় কিছু নয়। অপেক্ষাকৃত বিরক্তিকর স্মার্টফোনের এই প্রবণতা ২০১৬ সালে বড় আকারে মূল্য পতন না হওয়া পর্যন্ত চলবেই। ২০১৫ সালে একই রকমের দরপতনের ফলে স্যামসাং বাধ্য হয়েছিল তাদের ‘গ্যালাক্সি এস’কে ঢেলে সাজাতে। যেটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য সাফল্যজনই হয়েছে।
উপসংহার:
মনে হচ্ছে ২০১৬ সাল বিশ্বপ্রযুক্তির জন্য একটি ভাল বছর হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি আমাদের সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে আনা পণ্যগুলো এই বছরব্যাপী আরো নতুনভাবে সাজানো যাবে। তবে নতুন কোনো ক্যাটাগরির পণ্য বাজারে আসার সম্ভাবনা দেখছি না। তারপরও স্মার্ট হোম অটোমেশন এর বিষয়ে চিন্তা করলে বলতে হবে, গ্রাহকরা এতে অভ্যস্ত হতে এখনও অনেক সময় লাগবে। বিভিন্ন বিষয় দেখে মনে হচ্ছে, ২০১৬ সাল এমন একটি বছর হতে যাচ্ছে যখন নতুন অনেক প্রযুক্তি মূলধারায় চলে আসবে আর বাজারে বিদ্যমান থাকা অনেক ক্যাটাগরির পণ্য নিজেদের ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করবে।