টেসলা এবং সোলার সিটির যৌথ প্রয়াসে তৈরি সোলার রুফ : এনার্জি শিল্পের নতুন বিপ্লব
সম্প্রতি টেসলা বাজারে উদ্বোধন করল তাদের নতুন পণ্য – সোলার রুফ। সোলার রুফটি তৈরি করা হয়েছে সোলার সিটির সহযোগিতায় সোলার রুফের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সত্যিকারের আয়রন ম্যান টেসলার সিইও এলন মুস্ক ঘোষণা দিলেন যে, অদূর ভবিষ্যতে টেসলা হতে যাচ্ছে একটি এনার্জি কোম্পানি। যখন টেসলা তাদের শেয়ার হোল্ডারদের কাছ থেকে সোলার সিটির সাথে যৌথ ভাবে কাজ করার সম্মতি পেলো তখন এলন মুস্কের এই দূরদর্শী আকাঙ্ক্ষার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে গেল আরও এক ধাপ।
সাধারনভাবে বলতে গেলে, সোলার সিটি সোলার প্যানেল তৈরি করে এবং টেসলা তৈরি করে ইলেকট্রিক গাড়ি এবং ব্যাটারি। এলন মুস্ক আশা করছেন যে টেসলা এবং সোলার সিটি যৌথভাবে তাদের পণ্যের প্রকারভেদ, সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং এনার্জির রুপান্তরের প্রবাহ বজায়ে রাখতে পারবেন এবং একই সাথে সুলভ মূল্যে পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরি করে পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
সোলার রুফ পুরো সিস্টেমটির মূল অংশ কেননা এটিই এনার্জি সংগ্রহ করার কাজটি করবে এবং পুরো কর্মচক্রটিকে সচল রাখবে। রুফটি মূলত কতগুলো মিনি সোলার প্যানেলের সমন্বয়ে গঠিত যেগুলো একদম চিরাচরিত বাড়ির ছাদের অমসৃণ ফলকের মত দেখতে। টাইলসগুলো টেম্পারড গ্লাসের তৈরি, ওজনে হালকা এবং সাধারণ সিরামিক টাইলসের চেয়ে আরও বেশি মজবুত। এলন মুস্ক আশা করছেন, সোলার রুফের অধিক স্থায়িত্ব এবং হালকা ওজন – এই দুটি অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য বাজারে অন্যান্য সাধারণ প্রিমিয়াম টাইলসের সাথে একটি প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ এনে দেবে। ওজনে হালকা হওয়ায় পরিবহন খরচও বেশ কমে আসবে বলে তিনি আশা করছেন। সে হিসেবে সোলার রুফের টাইলসটি যেহেতু সোলার পাওয়ার উৎপাদন করতে পারছে সেহেতু এই টাইলসটি অবশ্যই সাশ্রয়ী এবং ক্রেতারা নিঃসন্দেহে এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেবে। রুফ টাইলস চারটি ভিন্ন ভিন্ন রূপে বাজারে আসবে এবং ২০১৭ সালের গ্রীষ্মের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাওয়া যাবে।
টেসলার এই উন্নত প্রযুক্তির টাইলস এই বাজারে দারুণ সাড়া ফেলবে এবং বাজারে টিকে থাকার জন্যে অন্যদেরকেও নতুন কিছু উদ্ভাবনে বাধ্য করবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এমনটা যদি দেখা যায় যে সোলার রুফ ধাঁচের পণ্য উৎপাদনকারীরা কম খরচে পণ্যের অধিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করছে তবে তা মোটেও কোন অবাক হবার মত বিষয় হবে না। পরিণামস্বরূপ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও এ ধরণের পণ্য তৈরির হিড়িক পরে যাবে। যদি সুলভ মূল্যে সোলার টাইলস পাওয়া যায় যেগুলো বাজারের অন্যান্য সাধারণ সোলার প্যানেলের চেয়ে অধিক এনার্জি উৎপাদন করতে সক্ষম তবে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ। সোলার রুফ শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এটি ফসিল ফুয়েলের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে এবং এই খাতে দেশের বিশাল পরিমাণ খরচ বাঁচিয়ে দেবে।
সোলার সিটি এবং টেসলার যৌথ সংগঠন এনার্জি শিল্পে আনবে আমূল পরিবর্তন। এ শিল্পে যেকোন ধরণের অগ্রগতিই হবে ক্রেতা এবং পরিবেশের জন্য ভাল খবর। আমরা খুব দারুণ একটা সময় অবস্থান করছি, যেখান থেকে আমরা হয়ত দেখতে পাবো বিশ্বে এনার্জির ব্যবহারে কতটা পরিবর্তন আসে। বর্তমানে যে কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল ক্রেতাদেরকে সোলার ব্যবহারের সুবিধা এবং উপকারিতাগুলো বোঝানো যাতে করে তারা এ ধরণের পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হয় এবং ধীরে ধীরে ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।