নতুন টয়োটা আভেঞ্জার টেস্ট ড্রাইভ
টয়োটার নতুন মডেল অ্যাভেঞ্জা ২০১৬ যে একেবারে নতুন কিছু তা ভাবা ঠিক হবে না। এটি ঠিক বাজারে পুরোপুরি নতুন প্রজন্মের গাড়ির সংযোজন হিসেবে নয়, বরং নতুন সংস্করণ হিসেবে দেখা যেতে পারে যা এরকম প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যেই নামানো হয়েছে। আর এ বিষয়ে তো কোন রাখঢাক নেই যে টয়োটা সবসময়ই বাহ্যিক চাকচিক্যের চেয়েও ব্যবহার-উপযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। গাড়ির বিভিন্ন মডেলের মধ্যে অ্যাভেঞ্জাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বিক্রি হয়। বিশেষ করে, পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহারের ক্ষেত্রেই এটি বেশি চলে।
আসলে প্রদর্শনযোগ্যতার দিক থেকে অ্যাভেঞ্জা বরং পিছিয়েই থাকবে বাজারে। এটি বানানোই হয়েছে পারিবারিক ব্যবহারের দিক মাথায় রেখেই। খুবই কাজের, সামলানো সহজ, রাস্তায় বেরোতে, বা বেড়াতে যেতে সঙ্গী হবে। এর বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবেই বলে দেওয়া আছে, মালামাল, ছেলেমেয়ে, তাদের সরঞ্জামাদি, আত্মীয়স্বজন, গৃহশ্রমিক একসঙ্গে উঠতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এটি একটি এমপিভির মতো, অর্থাৎ একটু বড় গাড়ির মতো কাজে দেবে।
মালের ভারে হাল ছেড়ে দেওয়া ঘোড়ার মতো গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে না অ্যাভেঞ্জা। আপনাকেও অসহায়ের মতো মাঝপথে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। অ্যাভেঞ্জা প্রচুর মালামাল বহন করতে সক্ষম। মালপত্তর রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো বাদেও এর বিভিন্ন খাঁজে আপনি জিনিসপত্র আটাতে পারবেন। একটি এসইউভির মতো অত হয়তো পারবে না, কিন্তু হোন্ডা এইচআরভি, জেডিএম ব্রাদার, বা ভেজেলের চেয়ে কম নয়। এগুলোর সবই প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড। বিশেষ করে, ভেজেলের সুবিধা অনেক। দেখতে সুন্দর, চালিয়ে আরাম, প্রয়োজনীয় জায়গা, সাজসরঞ্জাম, যা আপনার দরকার। আমি নিজে ভেজেল ২০১৩ চালিয়েছি, হাইওয়েতে, প্রতি ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে। তখন ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক ও একটি শিশু ছিল আমার সঙ্গে। সেই সঙ্গে তিনটে প্রমাণ সাইজের স্যুটকেস, বেশ কয়েকটি বড় হ্যান্ডব্যাগ, পিঠব্যাগ, ঠাসা ঝোলা। হ্যাঁ, ভেজেল যে কোনো দিনের জন্যই সই। ভেজেলের মতো বিশেষ কিছু না হলেও অ্যাভেঞ্জা কিন্তু সে তুলনায় খুব খারাপও না। তাছাড়া হোন্ডা ভেজেলের চৌহদ্দিতে পা দিতে হলে আপনাকে অন্তত ৩২ লাখ টাকা গুণতে হবে। আপনার পরিবারের জন্য দেরা গারিতা খুঁজতে দেখুন “বেছে নিন আপনার পরিবারের জন্য সেরা গাড়িটি!“
হুডের নিচে একটি ১.৫ লিটারের ডুয়াল ভিভিটিআই ৪ সিলিন্ডার, ২ এনআর-ভিই মোটর যা দিয়ে ১০৩ এইচপি এবং ১০০ পাউন্ড-ফুট টর্ক বা ঘুর্ণনবল তৈরি হয়। এটি আপনার নিশ্চয়তা দেবে না, বা প্রাইয়াসের মতো জ্বালানি সাশ্রয়ীও নয়। অ্যাভেঞ্জা সে অর্থে আহামরি কোন গাড়ি নয়। গাড়ির গতি বাড়ানো বা মাল বহনের ক্ষমতাও আহামরি লাগবে না। কিন্তু গাড়িটিকে আপনার সম্পূর্ণ ও সমর্থ মনে হবে। আপনি অবাক হবেন এর ইঞ্জিনের জোর দেখে, যখন সে একটি এমপিভির মতো সাতজনকে অনায়াসে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে এর তিনসারিতে আসন এবং সেগুলো ভাজ করার সুবিধা দিয়েই বাজিমাত করেছে অ্যাভেঞ্জা। বুদ্ধিমান যারা তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করবেন যে একটি ভেজেলে পাঁচটি আসন থাকে, এবং সেগুলো ভাঁজ করার সুবিধে নেই। ঠিকই ধরেছেন, কিন্তু এত জায়গা সবার লাগে না। আর অ্যাভেঞ্জার শেষ সারিতে বসতে গেলে জড়োসড়ো হয়েই বসতে হবে। সিএনজিতে কনভার্ট করার কথা, বা আরও মালামাল নেওয়ার কথা না হয় বাদই দিলেন। তার ওপর মাঝের ও পেছনের আসনগুলো সেভাবে নোয়ানোও যায় না। তাই ভাজ করার সুবিধা থাকা না থাকায় কিছু আসে যায় না, যদি সেটা জায়গার কথা ভেবেই করা হয়ে থাকে। যেহেতু গোমর ফাঁক হয়েই গেলো, ধরে নিই অ্যাভেঞ্জার ভেতরে প্রচুর জায়গার বিষয়টি পুরোটাই গল্প, একটি বাড়িয়েই বলা। এছাড়াও দেখুন টয়োটা বাংলাদেশে নিয়ে আসছে নতুন করোলা আলটিস।
আবার ৩০ লাখ টাকার বেশি যে গাড়ির দাম, তার ভেতরের দিকে প্রথমবার তাকিয়ে আপনি একটু হতাশও হতে পারেন। কিন্তু ভালভাবে দেখলে, কাজের দিকগুলো খেয়াল করলে আপনার সে সংশয় কেটে যাবে। কাজে লাগানোর মতো করেই সাজানো হয়েছে ভেতরটা। বিশেষ করে, সম্ভাব্য পারিবারিক ব্যবহারের দিকগুলোর প্রায় সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে। অনেকগুলো ছোট গর্তের মতো জায়গার সংস্থান করা আছে যাতে আপনি এটা-ওটা রাখতে পারেন। সেসব এমন সুবিধেজনক করে সাজানো হয়েছে যে আপনার ভাল লাগবে। দেখার মতো উন্নতি যা ঘটানো হয়েছে তার বেশ কয়েকটি আছে বাইরের দিকে। সামনের দিকটা একেবারে নতুনভাবে বানানো, যেখানে গ্রিলের মধ্যে নতুন ধরনের হেডলাইট, তারপর বাম্পার এবং ফেন্ডার, আর পেছনের দিকে হালকা আলোর সমাবেশ। আগের গাড়িগুলোর চেয়ে এটিকে পোক্ত মনে হয়, সুন্দরও দেখায়।
পরিশেষে, ব্যবহারগত দিকই অ্যাভেঞ্জার এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। হতে পারে বাজারে অনেক গাড়ি আছে, যেগুলো বিলাসবহুল, দেখতে দারুণ, কিন্তু অ্যাভেঞ্জা প্রকৃত অর্থেই ফ্যামিলি কার, অর্থাৎ পারিবারিক ব্যবহারের বিবেচনায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আর যদি অ্যাভেঞ্জার নতুন সংস্করণটি আপনার কাছে বেশি ব্যয়সাধ্য মনে হয়, অন্তত দ্বিতীয় প্রজন্মের সেকেন্ডহ্যান্ড অ্যাভেঞ্জাও কিনতে পারেন। সেটির দাম হবে ২২ থেকে ২৪ লাখের মধ্যে। পরিবারের ব্যবহারের জন্য সেটি কিনলেও লোকসান হবে না।