যানবাহন

সুলভমূল্যে বিএমডব্লিউ : সবার নতুন এক্স ওয়ান

মাত্র এক মাস আগেই ২০১৬ সালের নতুন ব্র্যান্ডের বিএমডব্লিউ (ব্যাভারিয়ান মোটর ওয়ার্কস) এক্স ওয়ান ঢাকায় উদ্বোধন করা হয়েছে। এক্সিকিউটিভ মটরস এর মাধ্যমে অত্যন্ত সুলভমূল্যে (আলোচনা সাপেক্ষে প্রত্যাশিত মূল্যেই) অর্থ্যাৎ ৮০ লাখ টাকারও কমে পাওয়া যাচ্ছে অত্যাধুনিক এই গাড়ি। বিএমডব্লিউ এর নতুন এক্স ওয়ান গাড়িগুলোতে আগের সব বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ হয়েই বাজারে এসেছে এবং গাড়িটি চালানোও অত্যন্ত আনন্দদায়ক।

1 (2)

এক্স ওয়ান গাড়িটি তাদের জন্য, যারা বা যেসব পরিবার প্রথমবারের মতো জার্মানীর লাক্সারিয়াস গাড়ি কিনবেন অথবা যেসব পরিবারে ইতোমধ্যে থ্রি অথবা ফাইভ সিরিজের সিডান গাড়ি রয়েছে কিন্তু তারা এর পাশাপাশি আরও একটি এসইউভি (স্পোর্ট ইউটিলিটি ভ্যাহিকল) গাড়ি নিতে চান, তাদের জন্যই এক্স ওয়ান। বিএমডব্লিউ এর এক্স রেইঞ্জ-এ এক্স ওয়ান মডেলটি হচ্ছে এসইউভি এর বাচ্চা (বেবী)। এক্স থ্রি এবং ফ্ল্যাগশিপ এক্স ফাইভ এই দুটির চেয়ে এক্স ওয়ান মডেলের গাড়িটি একটু ছোট, তবে অনেক বেশি কার্যকর এবং গাড়িটি চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা অনেক সহজ, খরচও কম। এক্স ওয়ান গাড়িটি অন্যান্য এসইউভি এর মতো আপনার পকেট ফাঁকা করে (খুব বেশি খরচ করে) নয়, বরং প্রত্যাশিতভাবেই বিএমডব্লিউ এর অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

গত পাঁচ বছর ধরে বিএমডব্লিউ এর মূল তত্ত্বই হচ্ছে মূলত গাড়িটিতে যথাযথ সক্ষমতা এবং অত্যধিক বিলাসিতা সঠিকভাবে বজায় রাখা। এছাড়া আর অন্য কিছু তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, গাড়িগুলোতে ১.৫ লিটারের তিনটি সিলিন্ডার, দুটি পাওয়ার টার্বো পেট্রোল ইঞ্জিন রয়েছে। মূলত তারা টু এবং থ্রি সিরিজের অপেক্ষাকৃত নতুন মোটর গাড়িগুলোতে যত বেশি সম্ভব শক্তির উৎস নিযুক্ত করেছে। এটি ছোট কিন্তু এখনো অনেক শক্তিশালী। গাড়িটি ছোট হওয়ার ফলে বিএমডব্লিউ গাড়ির উপর যে নিয়ন্ত্রণমূলক আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তা এড়াতে সহায়তা করবে এবং আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মার্কেটেও এটিকে পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে।

বিএমডব্লিউ তাদের টার্বোচার্জ ইঞ্জিনের ধারণাটি গ্রহণ করেছে এবং এটি তাদেরকে তাদের মূলের দিকেই ফিরিয়ে নিয়েছে অর্থ্যাৎ ৭০’র দশকে। টার্বো চার্জার হচ্ছে ডিসপ্লেসমেন্টের সাথে সাথে ইঞ্জিনের সাইজ কমানোর অন্যতম একটি পদ্ধতি। কিন্তু এই পরিবর্তন করতে গিয়ে পাওয়ার যেন ঠিক আগের মতোই থাকে সেই বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় পাওয়ারের জন্যই মূলত ফুয়েলের পরিমানটা কমানো হয়েছে। আর এটাই অটোমোবাইল পারফরমেন্সের বিশ্বে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু এটা কি বিশ্বব্যাপী তেল সঙ্কটের মোকাবেলা করতে গাড়ি এবং গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করা করা কিনা।

এবং বিএমডব্লিউ তাদের সবচেয়ে ছোট এসইউভি’তে ছোট মোটর স্থাপন করে সেটির রেইঞ্জ পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। টুইনপাওয়ার নামকরণের বা নামাবলীর কারণে অনেক মানুষ মনে করছেন যে এই ইঞ্জিনটি টুইন টার্বোর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই টুইন টার্বো ইঞ্জিনটি তৈরি করা হয়েছে একটি সিঙ্গেল টুইন স্ক্রল টার্বোচার্জারে। এটি যেনো নিঃশব্দে কাজ করে সেভাবেই ডিজাইন এবং ব্যাকগ্রাউন্ড করা হয়েছে। ইঞ্জিনের নিম্ন এবং মধ্যম রেইঞ্জের সমন্বয় করার জন্য পাওয়ার এবং টর্ক সংযুক্ত করা হয়েছে। যখন এটি কাজ করে তখন ঠিক প্রকৃতিকভাবে এ্যাসপাইরেটেড ইঞ্জিনের মতোই কাজ করে। এটি প্রাকৃতিকভাবে এ্যাসপাইরেটেড ইঞ্জিনের মতো মনে হবে, যদি না জাপানিজ এবং জার্মানরা টার্বোচার্জারের প্রমানগুলো লুকিয়ে এবং গোপন করতে চান। ইঞ্জিনটি ১৩২ এইচপি (হর্সপাওয়ার) এবং ১৬২ এলবি-এফটি (পাউন্ড-ফুট) টর্কে সজ্জিত। ১.৫ লিটারের মোটরটি অনেক শক্তিশালী এবং নিশ্চিদ্র। তাই থ্রি সিলিন্ডার আপনাকে বোকা বানাক এটা হতে দেবেন না।

2

যখন আপনি এক্স ওয়ান গাড়িটি চালাবেন, তখন এক্স ওয়ান এর পরিপূর্ণ মিড রেইঞ্জ মোটর আপনাকে অনেক বেশি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা দিবে। এই গাড়ির ইঞ্জিন ৪৫০০ থেকে ৫৫০০ আরপিএম বা রেভ্যুলুশন পার মিনিট (রোটেশন বা ঘূর্ণনের ফ্রিকোয়েন্সির পরিমাপ) রেইঞ্জে ভালো চলে। যতক্ষণ না আপনি ইঞ্জিনের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে আকস্মিক কোন নির্দেশনা ভঙ্গ করবেন বা প্রয়োজন মনে করবেন ততক্ষণ ইঞ্জিনটি মৃদুস্বরে গরগর আওয়াজ করবে। যদি আপনি আলতোভাবে ট্রোটল এর উপর চাপ দেন, এর ফল হবে প্রাণবন্ত, নিঃশব্দ আওয়াজ এবং স্পীড মিটার বাড়তে থাকবে। এটা এক্সিলারেশনের তীব্রতা পরিমাপের জন্য নয়, যদিও যখন আপনি গাড়িটি খুব বেশি ঠেলাঠেলি করবেন তখন অমসৃণ সিলিন্ডারের কনফিগারেশন ইঞ্জিন একটু রুক্ষ ও অনিয়মিত শব্দ করবে।

আপনি যদি আপনার বিএমডব্লিউ এসইউভি গাড়িটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে চান অথবা রোডট্রিপে (লং ট্রিপে) যেতে চান তাহলে এটি মহাসড়কে খুব ভালোভাবেই চলবে এবং আপনার দারুন অভিজ্ঞতা হবে। তবে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় যেখানে শহরের ট্রাফিক সঙ্কেত চোখে পড়বে সেখানে গাড়ি ধীরে ধীরে চালানো, গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার ডান পায়ে প্রয়োজনীয় টর্ক রয়েছে এবং ৮ স্পীড স্টেপট্রোনিক গিয়ারবক্স স্টপ স্টার্ট ট্রাফিকে মৃদুমন্দ বায়ু নেভিগেইট করে।

3

একটি বিএমডব্লিউ গাড়িতে আপনি যেধরণের সুযোগ-সুবিধা বা আরামদায়ক প্রত্যাশা করেন এক্স ওয়ান মডেলের গাড়িটির ভিতরে আপনি তার সবধরণের সুযোগ-সুবিধাই পাবেন। বিএমডব্লিউ এর সিগন্যাচার ইনফটেনমেন্ট সিস্টেম, বিএমডব্লিউ আই-ড্রাইভ প্রযুক্তি সত্যিই অবিশ্বাস্য। এই প্রযুক্তি বিএমডব্লিউ এর মূল দুই প্রতিদ্বন্ধী মার্সেডিজ বেনজ এবং লেক্সাসে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি সহজ এবং ব্যবহার উপযোগী (ইজার ফ্রেইন্ডলি)। বিএমডব্লিউ এর সিগন্যাচার ইনফটেনমেন্ট সিস্টেম, বিএমডব্লিউ আই-ড্রাইভ প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি অন-বোর্ড ভেহিকল ইনফরমেশন এবং ডিজিটাল ইউজার ম্যানুয়ালের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। গাড়িটিতে আপনি পাচ্ছেন ব্লুটুথ হ্যান্ডসফ্রি এরসাথে একটি সুবিন্যাস্ত ও পরিপূর্ণ অডিও অপশন, ফোনবুক সিন্ক এবং স্টিয়ারিং মাউন্টেড কন্ট্রোল। পাশাপাশি থাকছে ডুয়েল জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল, রিয়ার এয়ার-কন্ডিশনিং, একটি যান্ত্রিক শক্তি সম্পন্ন প্যানেরোমিক ছাদ এবং আটটি এয়ারব্যাগসহ নিরাপত্তার আরও অনেক বৈশিষ্ট্য, পার্কিং সেন্সর এবং সেইফটি রেস্ট্রেইনিং সিস্টেম। এক্স ওয়ান গাড়িটিতে যেসব উপকরণ ব্যবহার এবং যেভাবে সাজসজ্জিত করা হয়েছে তা যদি আপনি অন্য কোন গাড়িতে পেয়ে যান তাহলে আপনি একজন সন্তুষ্ট গাড়ি ব্যবহারকারী হবেন।

সামনের এবং পিছনের দিকের সীটগুলো সুন্দর সেনসেইটেক চামড়া দিয়ে সুসজ্জিত। আপনার জার্নি বা যাত্রা যদি অনেক দীর্ঘ হয় তারপরও রেশমের তৈরি এসব সীট আপনার জন্য আরামদায়ক হবে। যদিও এক্স ফাইভ এবং এক্স সেভেন সিরিজের ফ্ল্যাগশিপে যে অভিনব ব্যাক ম্যসেজ এবং ভ্যান্টিলেশন ট্রিকারি (বাতাস চলাচলের জন্য জানালা) ছিল তা এই এক্স ওয়ান গাড়িটিতে নাই। যদি তাদের ছোট এসইউভি গাড়ির সিটগুলো চামরা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে তারপরও এখন পর্যন্ত বিএমডব্লিউ এর অনেক প্রিমিয়াম নেচার বা প্রকৃতি সম্পর্কে বলা যায়। পিছনের দিকের সিটে বসার জন্য পা রাখার পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে এবং পেছনের দিকে যে লাগেজ রাখার জায়গা রয়েছে সেখানে যে কোন ধরনের লাগেজ রাখা যাবে। তবে গাড়ির প্রস্থ নিয়ে ছোট একটি অভিযোগ আছে, এক্স ওয়ান গাড়িতে যদি যাত্রীর সিটে একজন মোটাসোটা ব্যক্তি বসে এবং ড্রাইভিংয়ের সঙ্কীর্ণ সিটে একজন বেশ মোটাসোটা ব্যক্তি একসঙ্গে বসে তাহলে মাঝখানের কনসোল আর্মেস্ট (চেয়ারে যেমন হাত রাখার জন্য হাতল থাকে) এর উপর হাত রাখতে গেলে ঘষা খাবে বা হাত রাখার জায়গার জন্য যুদ্ধ করতে হবে।

4

অন্যান্য গাড়ির চেয়ে এক্স ওয়ান গড়িটির আয়তন সরু ও সংকীর্ণ, তবে আপনাকে বিএমডব্লিউ এসইউভি এর অভিজ্ঞতা গ্রহণের জন্য খুব বেশি দুরে নিতে হবে না। গাড়িটির সাসপেনশন খুব সুন্দরভাবে টিউন (মিল বা ঐক্য) করা হয়েছে, এর ফলে আপনি যখন সুন্দর সড়ক এবং গ্রামের কর্দমাক্ত রাস্তা বা ভূ-খণ্ড দিয়ে গাড়ি চালাবেন উভয় ক্ষেত্রেই আপনাকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতে সহায়তা করবে, চালানোর সময় কোন ধরণের ড্রপ হবে না এবং সুইচওভার (পক্ষপরিবর্তন) খুব আরামদায়ক। এই এসইউভি গাড়িটি অমসৃণ (খানা খন্দের রাস্তা বা উচু-নিচু) সড়কে সম্পূর্ণ সফট-রোডারের মতো করে চলবে না। আপনি আপনার পাজেরো অথবা প্রাডোর গাড়িটি যেভাবে ব্যবহার করেন এই গাড়িটিও সেইভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন। তবে তা সত্ত্বেও সম্ভবত ছোট একটি ডিগ্রির ব্যবধান আছে।

এসব বিষয় মাথায় রেখেই বলা যায়, বিএমডব্লিউ এক্স ওয়ান তাদের জন্য বিষয়টি পুরোপুরি ইদ্রিয়গ্রাহ্য (বোধগম্য) করে তুলেছে যারা প্রথমবারের মতো বিএমডব্লিউ কেনার কথা ভাবছিলেন এবং কেনার জন্য খুঁজছিলেন। যতক্ষণ না আপনি ৯০’র দশকের থ্রি সিরিজের মধ্য থেকে কোন একটি ঠিক করবেন, আপনি দেখবেন বিক্রয় ডটকমে পাঁচ লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বিএমডব্লিউ গাড়ির মালিক হওয়ার জন্য এক্স ওয়ান হচ্ছে পথম পদক্ষেপ বা প্রবেশদ্বার। আর এসইউভি এর জন্য আপনাকে কেন যেতে হবে না, এটি হচ্ছে কোয়াইট, লাক্সরিয়াস, এখনো অনেক বেশি মিতব্যায়ী, আধুনিক প্রযুক্তিতে পরিপূর্ণ এবং অনেক পথ পাড়ি দিতে সক্ষম।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close