বাসার জন্য সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী আসবাবপত্র কেনার টিপস
আসবাবপত্র ঘর সাজানোর জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। সুন্দর এবং পরিপাটি আসবাবপত্র আপনার রুচি বোধ ফুটিয়ে তুলবে। ঘরের আকার যেমনি হোক না কেন, একটি নিখুঁত আসবাব ঘরের সৌন্দর্য অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফার্নিচার কেনার সময় ঘরের আকার, আপনার প্রয়োজনীয়তা, মাল্টিপল ব্যবহার উপযোগীতা, ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। তবে ঘর সাজাবার জন্য ক্রয়ক্ষমতা এবং কার্যকারিতার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়।
পরিকল্পনা মাফিক স্মার্টলি কেনাকাটা করলে সাশ্রয়ী মূল্যে কম্ফোর্টেবল জীবনযাপনের উপযোগী আসবাবপত্র কেনা সম্ভব। অপ্রয়োজনীয় কিংবা বিশাল ফার্নিচার আপনার ঘরকে অগোছালো কিংবা বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ব্লগে বাসার জন্য সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী আসবাবপত্র কেনার কিছু দুর্দান্ত টিপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় এই গাইডটি আপনাকে আপনার ঘরের জন্য উপযুক্ত ফার্নিচার বেছে নিতে সাহায্য করবে।
বাসার জন্য সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী আসবাবপত্র কেনার টিপস
(১) প্রয়োজনীয়তা বুঝে আসবাবপত্র কেনার পরিকল্পনা করুন –
ঘরের আকার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের একটি লিস্ট তৈরী করুন। কোন রুমে কি কি আসবাব দরকার তা বিবেচনা করুন। কার্যকারিতা বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় ফার্নিচার এড়িয়ে চলুন। যেমন, জুতা রাখার জন্য আপনি ভাঁজ করা যায় এমন রাক ব্যবহার করতে পারেন। কাঠের বদলে, প্লাস্টিক এবং স্টিলের ফার্নিচার ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে চলাচলের জন্য যথেষ্ট জায়গা রেখে, ভালভাবে ফিট করে এমন আসবাব বেছে নিন।
(২) বাজেট সেট করুন –
আপনার বাজেটের মধ্যে কার্যকর এবং দীর্ঘ মেয়াদি সাপোর্ট দেবে এমন ফার্নিচার বাছাই করুন। সস্তা অপশনের দিকে না গিয়ে মানসম্পন্ন আসবাব কেনার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে কিনুন। প্রাথমিকভাবে যে আসবাবগুলো বেশি প্রয়োজন তার জন্য বাজেট ঠিক করুন। রেগুলার ব্যবহারের জন্য উন্নতমানের প্লাস্টিকের ফার্নিচার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো কাঠের ফার্নিচারের চেয়ে দামে কম হয়ে থাকে।
(৩) মাল্টি-ফাংশনাল আসবাব কেনার চেষ্টা করুন –
স্পেস-সেভিং ডিজাইনের সোফা, টেবিল, বেড, চেয়ার, ইত্যাদি কেনার চেষ্টা করুন। ভাঁজ করা যায় এমন কিছু ফার্নিচার ঘরে রাখুন, যেন প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা যায়। আবার প্রয়োজন না থাকলে স্টোরেজ করা যায়। এসব ফার্নিচার স্থান এবং অর্থ দুটোই বাঁচায়। স্টোরেজ বেড/সোফা, শেলভিং ইউনিট, ইত্যাদি থাকলে আপনার বাড়তি ফার্নিচার কেনার প্রয়োজন হবে না।
(৪) রুম সাইজের সাথে ফার্নিচারের আকার সমন্বয় করুন –
ঘরের আয়তন অনুযায়ী ফার্নিচারের সাইজ পরিমাপ করুন। ঘর ছোট হলে, বড় ফার্নিচার আপনার ঘরের শোভা নষ্ট করবে। আবার বড় ঘরে অপ্রয়োজনীয় ফার্নিচার থাকলে, তা অগোছালো দেখাবে। ঘরে আলো-বাতাস চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, এমন ফার্নিচার ব্যবহার করা উচিত নয়। পরিমাপ অনুযায়ী আসবাবপত্র না কিনলে, ঘরের পুরো চেহারা নষ্ট করে দিতে পারে। যেমন ৫ সিটের জায়গায় ৩ সিটের সোফা ব্যবহার করতে পারেন। গোলাকারের বদলে আয়তাকার ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করতে পারেন।
(৫) সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার যাচাই করতে পারেন –
সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার মার্কেট গুলোতে কম দামে ভালো আসবাবপত্র পেতে পারেন। অনেক সময় ব্যবহার করা আসবাবপত্র খুব ভালো অবস্থায় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে গুণমান যাচাই করাটা জরুরি।
(৬) আসবাবপত্র কারিগর দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন –
নির্দিষ্ট মাপের ফার্নিচার বানাতে চাইলে কিংবা কাস্টমাইজ করতে চাইলে স্থানীয় কারিগরের সহায়তা নিন। কারিগরদের সাহায্যে আপনি হালকা এবং আপনার ঘরের জন্য উপযোগী সাইজের আসবাবপত্র বানিয়ে নিতে পারেন। বোর্ড কিংবা প্লাই উডের ফার্নিচার কম খরচে বানাতে পারবেন।
(৭) দীর্ঘস্থায়ী এবং মজবুত আসবাবপত্রে বিনিয়োগ করুন –
অতিরিক্ত সাজসজ্জা বিশিষ্ট আসবাব না কিনে মজবুত আসবাবপত্রে বিনিয়োগ করুন, যা আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদি সাপোর্ট দেবে। বছর বছর ফার্নিচার পরিবর্তন করাটা সাশ্রয়ী নয়। এক্ষেত্রে খাট, আলমারি, চেয়ার, ডাইনিং টেবিল, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ফার্নিচারের দিকে আগে মনোযোগ দিন। ফার্নিচার এর উপাদান, ফার্ণিশ, ডেপ্থ, ইত্যাদি যাচাই, করবেন, তবে খেয়াল রাখবেন যেন আপনার বাজেটের বাইরে না যায়।
(৮) দীর্ঘ সময় ব্যবহার করতে চান কিনা ভেবে দেখুন –
আপনি ৭ থেকে ১০ বছরের বেশি ব্যবহার করবেন, এমন ফার্নিচার নিতে চান, তাহলে স্ট্যান্ডার্ড একটি বাজেট হাতে রাখুন। কারণ, খাট, সোফা, ওয়ারড্রোব, আলমারি, এবং ডাইনিং টেবিলের মতো আসবাব ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
(৯) যাচাই-বাছাই করতে কিছুটা সময় নিন –
শোরুমে আসবাবপত্র ডেকোরেশন খুবই সুন্দর। তাই বলে সেগুলো আপনার ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে তা একদমই নয়। ওই আসবাবপত্রের ডিজাইন এবং সাইজ আপনার ঘরে কেমন দেখাবে তা কল্পনা করুন। আসবাবপত্রের উপকরণ সম্পর্কে ধারণা নিন। সেলসম্যানের কাছে ফার্নিচারের ভালো-মন্দ দিক সম্পর্কে জেনে নিন। ফার্নিচারের জয়েন্ট, ড্রয়ার, কারুকাজ, বার্ণিশ ইত্যাদি পরীক্ষা করুন। আপনার কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করতে যাচ্ছেন, তাই বিজ্ঞতার সাথে করুন।
(১০) ডিসকাউন্ট, সিজনাল সেল কিংবা ক্লিয়ারেন্স সেলের জন্য অপেক্ষা করুন –
পরিচিত ফার্নিচার কোম্পানিগুলো বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে। এছাড়াও বাণিজ্য মেলা, ফার্নিচার মেলা, এবং বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষেও ডিসকাউন্ট অফার দেয়া হয়। ব্র্যান্ডের ফার্নিচারগুলোর ফিনিসিং এবং ডিজাইন খুব সুন্দর হয়ে থাকে। তাই ডিসকাউন্টের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি অস্থায়ী সিজনাল সেল কিংবা ক্লিয়ারেন্স সেল মার্কেটে কম দামে ফার্নিচার নিয়ে আসে।
এছাড়াও এখন অনেক ফ্ল্যাট-প্যাক আসবাবপত্র পাওয়া যায়, যা আপনি নিজেই এসেম্বল করে ব্যবহার করতে পারবেন। এগুলোর খরচ বেশ কম, এবং সহজে পরিবহন করা যায়। আসবাবপত্র কেনার সময় কমফোর্টেবিলিটি বিবেচনা করুন। কারণ ফার্নিচার যতই সুন্দর বা আকর্ষণীয় হোক না কেন, তা আরামদায়ক না হলে আপনার কোনো কাজেই আসবে না। ঘরের জন্য বাজেটের মধ্যে সেরা আসবাবপত্র কিনতে আপনাকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে। আপনার কষ্টার্জিত টাকা খরচ করতে যাচ্ছেন, তাই কেনার আগে ঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিন।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রয়োজনীয়তা বুঝে বাজেট সেট করবেন। মাল্টি-ফাংশনাল আসবাব কেনার চেষ্টা করবেন। মার্কেট যাচাই করতে পারেন, বিভিন্ন অফার ও ডিসকাউন্ট চেক করতে পারেন।
ঘরের আয়তন অনুযায়ী ফার্নিচারের সাইজ পরিমাপ করুন। ঘর ছোট হলে, বড় ফার্নিচার আপনার ঘরের শোভা নষ্ট করবে। আবার বড় ঘরে অপ্রয়োজনীয় ফার্নিচার থাকলে, তা অগোছালো দেখাবে। মাল্টি-ফাংশনাল সোফা, টেবিল, বেড, চেয়ার, ইত্যাদি ব্যবহার। ভাঁজ করা যায় এমন কিছু ফার্নিচার ঘরে রাখুন।
ছোট ঘরের জন্য কনপ্যাক্ট ডিজাইনের এবং মাল্টি-ফাংশনাল আসবাবপত্র যেমন ফোল্ডেবল টেবিল, সোফা, বেড, এবং ক্যাবিনেট ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।।
অনলাইনে আসবাবপত্র কেনার সময় অবশ্যই পণ্যের কাস্টোমার রিভিউ, বিক্রেতার রেটিং, পণ্যের অরিজিনাল ছবি এবং রিটার্ন পলিসি চেক করবেন।
হ্যাঁ, নিরাপদ। এক্ষেত্রে গুণমান যাচাই করাটা জরুরি। সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার মার্কেট গুলোতে কম দামে ভালো আসবাবপত্র পেতে পারেন।