ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার সময় যে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখবেন

নতুন ল্যাপটপের দাম এখন বেশ চড়া! তাই অনেকেই কম বাজেটে ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার দিকে ঝুঁকছেন। তবে না জেনে কিনলে বাজে ডিভাইস হাতে পড়তে পারে, যা পরে আপনাকে ভোগান্তিতে ফেলবে। তাই ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে পরে ঝামেলা এড়ানো যায়। আজকে আমরা জানবো ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার কয়েকটি টিপস, যা আপনাকে ভালো মানের সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনতে সাহায্য করবে।
১. ল্যাপটপের অবস্থা ও পারফরম্যান্স যাচাই করুন
ব্যবহৃত ল্যাপটপ মানেই পুরোনো, তবে সেটার অবস্থা কেমন, সেটা ভালোভাবে যাচাই করাটা খুব দরকারি। ল্যাপটপ কেনার গাইড অনুসারে প্রথমেই দেখতে হবে ল্যাপটপের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কন্ডিশন কেমন।
- স্ক্রিন চেক করুনঃ ডিসপ্লেতে কোনো দাগ, ফাটল বা ডেড পিক্সেল আছে কিনা দেখে নিন। স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ঠিকঠাক আছে কিনা সেটাও খেয়াল করুন।
- কিবোর্ড ও টাচপ্যাডঃ টাইপিং করতে গিয়ে কোনো কী কাজ করছে না বা টাচপ্যাড ঠিকভাবে স্ক্রল করছে না, এমন হলে তা ঝামেলার কারণ হতে পারে।
- পারফরম্যান্স পরীক্ষা করুনঃ ল্যাপটপের প্রসেসর, RAM, স্টোরেজ কেমন পারফরম্যান্স দিচ্ছে, সেটা দেখে নিন। যদি ল্যাপটপ স্লো চলে বা স্টোরেজ কম থাকে, তাহলে পরে সমস্যা হতে পারে।
- পোর্ট ও কানেক্টিভিটিঃ USB, HDMI, অডিও জ্যাক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা দেখে নিন।
২. ব্যাটারি লাইফ ও পাওয়ার অ্যাডাপ্টার চেক করুন
ব্যাটারি ভালো না থাকলে ল্যাপটপ বারবার চার্জ দিতে হবে, যা বেশ বিরক্তিকর হতে পারে। তাই সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনার আগে ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন সেটা জানা জরুরি।
- ল্যাপটপ ফুল চার্জ হলে কতক্ষণ চলে তার একটা ধারণা নিন।
- অনেক পুরোনো ল্যাপটপের ব্যাটারি দ্রুত ড্রেন হয়, তাই সম্ভব হলে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট অপশন আছে কিনা জেনে নিন।
- অরিজিনাল চার্জার আছে কিনা নিশ্চিত করুন, কারণ লোকাল বা নকল অ্যাডাপ্টার ল্যাপটপের ক্ষতি করতে পারে।
৩. ওএস ও সফটওয়্যার কম্প্যাটিবিলিটি পরীক্ষা করুন
ল্যাপটপের হার্ডওয়্যার ঠিক আছে, কিন্তু যদি আপনার দরকারি সফটওয়্যার সাপোর্ট না করে, তাহলে সেটা কোনো কাজের না। তাই আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে নিন ল্যাপটপের অপারেটিং সিস্টেম (OS) আপডেট করা যাবে কিনা এবং সফটওয়্যার কম্প্যাটিবিলিটি কেমন।
- আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী উইন্ডোজ বা ম্যাক ওএস সাপোর্ট করবে কিনা চেক করুন। পুরনো মডেলের ম্যাকবুক হলে অনেক নতুন সফটওয়্যার চালানো কঠিন হতে পারে।
- গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার সাপোর্ট করে কিনা দেখুন – Adobe Photoshop, Microsoft Office, বা যে সফটওয়্যারগুলো আপনি বেশি ব্যবহার করেন, সেগুলো ঠিকমতো চলবে কিনা যাচাই করুন।
- রিসেট অপশন আছে কিনা দেখুন – অনেক ব্যবহৃত ল্যাপটপে আগের ইউজারের ফাইল বা সেটিংস থেকে যেতে পারে। ফ্যাক্টরি রিসেট দেওয়া যাবে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
৪. ল্যাপটপের ইউজিং হিস্টোরি ও ওয়ারেন্টি যাচাই করুন
ল্যাপটপের ব্যাকগ্রাউন্ড জানাটা খুব জরুরি! অনেকে চুরি করা বা সমস্যা থাকা সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ বিক্রি করতে চায়, তাই কিনতে গেলে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।
- ল্যাপটপটি চুরি হওয়া কিনা চেক করুন। ল্যাপটপের সিরিয়াল নম্বর দেখে নিন এবং সেটি অনলাইনে সার্চ করে চেক করুন, কোনো রিপোর্টেড চুরি হওয়া ডিভাইস কিনা।
- বিক্রেতা যাচাই বাছাই করুন। যদি অনলাইনে কিনে থাকেন, তাহলে বিক্রেতার ফিডব্যাক চেক করুন। অফলাইনে কিনলে আগের ইউজারের কাছ থেকে এর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা জেনে নিন।
- ওয়ারেন্টি ও রিটার্ন পলিসি আছে কিনা জানুন। অনেক দোকান ব্যবহৃত ল্যাপটপের জন্য ৩-৬ মাসের ওয়ারেন্টি দেয়। ওয়ারেন্টি থাকলে সেটা অবশ্যই নোট করুন, যাতে পরে কোনো সমস্যা হলে ঠিক করিয়ে নিতে পারেন।
৫. দাম যাচাই ও সঠিক মূল্য নির্ধারণ করুন
একই মডেলের নতুন ও পুরোনো ল্যাপটপের দামের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও বেশি পুরোনো ল্যাপটপও বেশি দামে বিক্রি করতে চায় কিছু বিক্রেতা। তাই কেনার আগে ব্যবহৃত ল্যাপটপের দাম যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ!
- নতুন ও ব্যবহৃত ল্যাপটপের দাম কমপেয়ার করে নিন। অনলাইনে একই মডেলের নতুন ল্যাপটপের দাম দেখুন এবং ব্যবহৃত ল্যাপটপের দাম সেটার তুলনায় ঠিক আছে কিনা বিচার করুন।
- বিভিন্ন জায়গা থেকে দাম তুলনা করুন। এক জায়গায় গিয়ে কিনে ফেলবেন না। কয়েকটি দোকান বা অনলাইন মার্কেটপ্লেস ঘুরে দেখে নিন কোথায় সেরা ডিলে পাচ্ছেন।
- দরদাম করতে পারেন। ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার সময় দাম নিয়ে দর কষাকষি করা খুবই স্বাভাবিক। বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে একটু কমানোর চেষ্টা করুন!
একটা ভালো সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনতে হলে শুধু কম দাম দেখলেই হবে না, ভালোভাবে ব্যবহৃত ল্যাপটপের দাম যাচাই করাটাই আসল কাজ। এই ৫টি বিষয় মনে রেখে কেনাকাটা করলে, আশা করি আপনার হাতে আসবে সঠিক ল্যাপটপ, যা আপনাকে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার আগে কী কী পরীক্ষা করা উচিত?
ল্যাপটপের স্ক্রিন, কিবোর্ড, ব্যাটারি, পারফরম্যান্স, পোর্ট, ওএস কম্প্যাটিবিলিটি এবং ইউজিং হিস্টোরি ভালোভাবে যাচাই করা উচিত।
২. ব্যবহৃত ল্যাপটপের ব্যাটারি ভালো কিনা কীভাবে বুঝবো?
ল্যাপটপ ফুল চার্জ হলে কতক্ষণ ব্যাকআপ দেয় তা পরীক্ষা করুন এবং ব্যাটারি স্বাস্থ্য চেক করার জন্য ‘Battery Report’ কমান্ড ব্যবহার করুন।
৩. সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনলে কি ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়?
অনেক বিক্রেতা ৩-৬ মাসের ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে, তাই কেনার আগে ওয়ারেন্টি বা রিটার্ন পলিসি আছে কিনা নিশ্চিত করুন।
৪. ব্যবহৃত ল্যাপটপ কোথা থেকে কেনা ভালো?
বিশ্বস্ত অনলাইন মার্কেটপ্লেস, ব্র্যান্ডের রিফার্বিশড স্টোর বা পরিচিত বিক্রেতার কাছ থেকে কেনাই সবচেয়ে নিরাপদ।
৫. ব্যবহৃত ল্যাপটপের দাম কীভাবে যাচাই করবো?
অনলাইনে নতুন ও ব্যবহৃত ল্যাপটপের দাম তুলনা করুন, বিভিন্ন বিক্রেতার অফার দেখুন এবং দরদাম করার সুযোগ নিন।