অনলাইনে ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কেনার আগে যা জানা জরুরি

নতুন স্মার্টওয়াচ কেনার তুলনায় অনলাইনে পুরনো স্মার্টওয়াচ কেনার মাধ্যমে অনেক কম খরচে আধুনিক ফিচারগুলো উপভোগ করা যায়। অনলাইনে বিভিন্ন বিক্রেতার কাছ থেকে সহজেই বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কেনা যায়। তবে সব ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচই ভালো মানের নয় বা যথাযথ দামে সেগুলো পাওয়া যায় না। ব্যাটারি লাইফ থেকে শুরু করে বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা-কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না জানলে তাই আপনি ঠকতেও পারেন। আশা করি, এই ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কেনার টিপসগুলো আপনাকে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে এবং সাধারণ ভুলগুলো এড়াতে সাহায্য করবে।
১. আপনি কি ধরনের স্মার্টওয়াচ চাইছেন তা সর্বপ্রথম ঠিক করুন
সবার আগে নির্ধারণ করুন আপনি কী ধরনের ফিচারগুলো চান, যেমন – ফিটনেস ট্র্যাকিং, কল সাপোর্ট, জিপিএস, নাকি স্লিপ মনিটরিং? বাংলাদেশে Apple Watch, Samsung Galaxy Watch, Xiaomi Mi Watch বা Huawei-এর বিভিন্ন মডেল বেশ জনপ্রিয়। নিজের বাজেট ও প্রয়োজন অনুযায়ী মডেল বেছে নিন এবং সেই মডেলের নতুন স্মার্টওয়াচের বাজার দর জেনে নিন, যাতে ব্যবহৃতটার দাম ঠিকঠাক আছে কি না বুঝতে পারেন।
২. স্মার্টওয়াচের বাহ্যিক অবস্থা ভালোভাবে দেখুন
বিক্রেতার কাছে স্পষ্ট ছবি বা ভিডিও চেয়ে নিন, বিভিন্ন দিক থেকে যেন ঘড়ির অবস্থা বোঝা যায়। স্ক্র্যাচ, ফাটা স্ট্র্যাপ, কিংবা ডিসপ্লে ত্রুটির দিকে খেয়াল করুন। ব্যবহারের কারণে হালকা দাগ থাকা স্বাভাবিক, তবে অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ডিভাইস ভবিষ্যতে সমস্যার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কেনার পূর্বে এই বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।
৩. ব্যাটারির অবস্থা যাচাই করুন
স্মার্টওয়াচের ব্যাটারির স্থায়িত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। দুর্বল ব্যাটারি মানেই সেই স্মার্টওয়াচ আপনাকে আরাম দিবে কম এবং বিরক্ত করবে বেশি। বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করুন একবার চার্জ দিলে কতক্ষণ চলে, ডিভাইসটি কতদিন ব্যবহৃত হয়েছে। সম্ভব হলে হাতে নিয়ে বা ভিডিওর মাধ্যমে ব্যাটারির কার্যকারিতা যাচাই করুন।
৪. আপনার ফোনের সাথে সামঞ্জস্য আছে কি না দেখুন
সব স্মার্টওয়াচ সব ফোনের সাথে চলে না। Apple Watch শুধু iPhone-এর সাথে ভালো কাজ করে, অন্যগুলো সাধারণত অ্যান্ড্রয়েডে ভালো চলে। ঘড়িটি রিসেট করা হয়েছে কি না এবং নতুন ফোনের সাথে কানেক্ট করতে সমস্যা হবে কি না তা বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিন। ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কিনতে করণীয়গুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে অ্যাপ সাপোর্ট আছে-এমন একটি স্মার্টওয়াচ নির্বাচন করা। কারণ, বর্তমান সময়ে ভালো অ্যাপ সাপোর্ট ছাড়া মোটামুটি কোনো স্মার্টওয়াচেরই পুরো ব্যবহার করা যায় না।
৫. অরিজিনাল চার্জার ও বক্স আছে কি না জিজ্ঞেস করুন
অরিজিনাল চার্জার, স্ট্র্যাপ ও প্যাকেট থাকলে সেটি বেশ ভালো দিক। এতে বোঝা যায় ডিভাইসটি যত্নে রাখা হয়েছে। অনেক সময় লোকাল বা থার্ড পার্টি চার্জার দিয়ে চার্জ দিলে ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে। তাই ঘড়ির সাথে অরিজিনাল এক্সেসরিজ না থাকলে সেটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে।
৬. ওয়ারেন্টি আছে কি না বা সার্ভিসিং করানো হয়েছে কি না জানুন
ঘড়িটি যদি ১ বছরেরও কম সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই ওয়ারেন্টি এখনো থাকার কথা। বিক্রেতার কাছে রশিদ বা গ্যারান্টি কার্ড আছে কি না জানুন। সার্ভিসিং করা হয়েছে কি না, আর হয়ে থাকলে কোন সমস্যার কারণে করা হয়েছে তা জিজ্ঞেস করুন। সার্ভিসিং করা হয়েছে মানেই এই নয় যে প্রোডাক্টটি খারাপ, তবে কারণ জানা জরুরি।
৭. বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতা বা প্ল্যাটফর্ম থেকে কিনুন
Bikroy-এর মতো নির্ভরযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা যাচাই করা বিক্রেতার কাছ থেকে কিনলে ঝুঁকি কম থাকে। খুব সস্তা অফার বা সন্দেহজনক প্রোফাইল এড়িয়ে চলুন। বিক্রেতার রেটিং, রিভিউ এবং আগের ক্রেতাদের মন্তব্য দেখে সিদ্ধান্ত নিন।
৮. দর কষাকষি করতে দ্বিধা বোধ করবেন না
সব কিছু যাচাই-বাছাই করার পর, বিনয়ের সাথে দাম কমানোর চেষ্টা করুন। বাংলাদেশে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম নিয়ে দর কষাকষি একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে খুব বেশি কম দামে পেলে সেটি সন্দেহজনকও হতে পারে।
পরিসংহার
বাংলাদেশে অনলাইনে ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কেনা সত্যিই সুবিধাজনক, যদি আপনি একটু সচেতনভাবে কিনতে পারেন। আর সেই জন্য আপনাকে ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কিনতে করণীয়গুলো ভালোভাবে ফলো করতে হবে। ডিভাইসের অবস্থা, ব্যাটারি, ফোনের সাথে কম্প্যাটিবিলিটি এবং বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে কিনলে অল্প খরচে ভালো মানের স্মার্টওয়াচ পাওয়া সম্ভব। আর একটু সচেতন থাকলে ভবিষ্যতের জটিলতা সহজেই এড়ানো সম্ভব।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. বাংলাদেশে অনলাইনে ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কেনা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, যদি আপনি যাচাই করা বিক্রেতা বা বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে কিনেন এবং পণ্যটি ভালোভাবে যাচাই করেন।
২. ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচের ব্যাটারির অবস্থা কীভাবে বুঝব?
ব্যবহারের সময় সম্পর্কে বিক্রেতার কাছ থেকে জানুন এবং ভিডিও বা সরাসরি দেখে চার্জ কেমন থাকে তা যাচাই করুন।
৩. বাংলাদেশে ব্যবহৃত Apple Watch কেনা কি ভালো সিদ্ধান্ত?
ভালো অবস্থায় থাকলে ও iCloud আনলক করা থাকলে Apple Watch একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
৪. স্মার্টওয়াচ কাজ না করলে ফেরত দেওয়া যাবে কি?
বেশিরভাগ ব্যক্তিগত বিক্রেতা রিটার্ন সুবিধা দেয় না। তাই আগেই এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে জেনে নিন।
৫. অনলাইনে ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ কিনতে কী কী এড়িয়ে চলা উচিত?
অসাধু বিক্রেতা, অস্বাভাবিক কম দামে অফার, এবং অস্পষ্ট ছবি বা তথ্যবিহীন বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলাই ভালো।