আমাদের দেশে মার্কেটিং চাকরি লাভের উপায়
স্থানীয় নিউজ শো ও পত্রপত্রিকায় নানা মানুষের নানা অভিমত সত্ত্বেও, আমাদের দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। অবশ্যই, ভালোভাবে জীবন ধারণের জন্য সঠিক চাকরি খুঁজে পাওয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ; সব ধরণের চাকরিই এক নয়, এবং সব সেক্টরের বিকাশও এক রকম নয়।
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এদেশের কর্মজীবীরা বহিঃবিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশী সুবিধা ভোগ করেন। এই উপমহাদেশে ভারতের পূর্বে অবস্থিত আমাদের দেশে ইউরোপের জনবহুল দেশগুলো বা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে জীবনযাপনের খরচ অনেক কম বলে একটি সুনাম রয়েছে। যদিও এই তথ্যটি যারা চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁদের জন্য কোনো সুখের খবর নয়, তবুও আপনি এর মধ্যে সান্তনা ও অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে পারেন।
অনেক নিয়োগকারী আছেন যারা আমাদের দেশ থেকে নিয়োগ দিতে চান। তাঁরা যে কারও দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারেন,শুধু এই কারণেই নয় বরং তাঁদের পরিচালন ব্যয় কমানোর জন্য এখান থেকে নিয়োগ দিতে চান। আপনি যদি চাকরি খুঁজতে থাকেন তবে চাকরি পরিকল্পনার জন্য এখানে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।
বাংলাদেশে ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়ার পাঁচটি পরামর্শ
১: আপনার জন্য সঠিক ক্ষেত্রটি খুঁজে বের করুন
এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র খুঁজে বের করা যেখানে আপনি ভালো করতে পারবেন। সবাই মার্কেটিংয়ে ভালো করবে এমনটি নয়। অনেকে হয়তো বীমা প্রতিষ্ঠানের ভালো টেলিফোন সাপোর্ট দিতে পারবেন, অথবা ফ্রিল্যান্স লেখালেখি এবং এসইও (SEO), কোডিং ইত্যাদিতে ভালো করবেন। এই ধাপের জন্য আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আপনি কোন ক্ষেত্রে ভালো। কথায় যেমন আছে, আপনার ভালো পা’টি আগে বাড়ান, তেমনি চাকরির ক্ষেত্রেও আপনাকে আপনার ভালো দিকগুলো প্রদর্শন করতে হবে।
এটি এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ, কারণ সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার মানসিক প্রস্তুতি দরকার। আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনি কোন বিষয়ে ভালো এবং আপনি কী করতে চান, তবে আপনি আপনার পছন্দের ক্ষেত্রে ভালো চাকরি খুঁজে পাবেন। অপরদিকে, আপনি যদি কেবল বেতনভোগী চাকুরে হতে চান, তবে আপনি কোনো অভিজ্ঞতাই লাভ করতে পারবেন না এবং আপনাকে কেউ চাইবে না।
২: আপনার জীবনবৃত্তান্ত বা Resume তৈরি করুন
এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে আপনার Resume তৈরি করা। যেমন, আপনি মার্কেটিংয়ের চাকরি খুঁজলে, আপনাকে এমন একটি পোর্টফলিও বানাতে হবে যা আপনার অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলবে। আপনি কোনো মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের উপরের দিকে অবস্থান না করলে কী করে সেটি করবেন? সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সেই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের পরিধি প্রদর্শন করা। আপনার Resume-তে কোন একটি পণ্য পরিচিত করে তুলতে কী কী পদক্ষেপ নেবেন তা বর্ণনা করে ছোট একটি প্রবন্ধ লিখুন।
যেহেতু আপনি একটি আকাঙ্ক্ষিত ক্ষেত্রে রয়েছেন, অনেক নিয়োগকর্তা অভিজ্ঞতার চাইতে যোগ্যতাকে বেশী প্রাধান্য দিতে পারেন। সব চাকরির ক্ষেত্রেই এমনটি হবে তা নয়, কিন্তু এমন অনেক সুযোগ আছে যেখানে কাজ জানা আর পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা একই রকমভাবে কাজে লাগে। যাই হোক না কেন, আপনার দক্ষতা Resume-এ তুলে ধরুন, ভালো রেফারেন্স দিন, এবং আপনার নিজের সম্পর্কে, আপনার উদ্যম, এবং আপনার পছন্দের বিষয়ে আপনার দখল ইত্যাদি সম্পর্কে বলুন।
৩: ব্র্যান্ড তৈরি করুন
এরপর, আপনি একটি ব্র্যান্ড তৈরি করবেন। যেমন ধরুন, আপনি যদি ঢাকায় বসবাস করে থাকেন, তবে আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার প্রোফাইল গড়ে তোলার দিকে নজর দিন, যাতে আপনি আপনার নাম ছড়িয়ে দিতে পারেন। যেমন, আপনি আপনার একটি LinkdIn পেজ, ফেসবুকে একটি ব্যবসায়িক পেজ তৈরি করতে পারেন এবং একটি ব্যবসায়িক টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। স্থানীয়ভাবে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছানো এবং নিজের ব্র্যান্ডিং করা সবার মাঝে আপনাকে পরিচিতি দেবে।
শুধু মনে রাখবেন যে সোশ্যাল প্রোফাইলগুলো সচল রাখতে হবে। অর্থাৎ, প্রায়ই পোস্ট করতে হবে, প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দেয়া এবং তথ্যভিত্তিক পোস্ট দেয়া, যা প্রমাণ করবে যে বিষয়টির উপর আপনার ভালো দখল রয়েছে। এটা আপনাকে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে সহায়তা করবে; আপনি উপযুক্ত ক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতা দিয়ে আরও ভালো করতে পারবেন।
৪: ফ্রিল্যান্সিংযের কথা ভাবুন
বাংলাদেশে চাকরি খোঁজার আরেকটি জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলো। এটা একটা সাধারণ পরামর্শ মনে হতে পারে, কিন্তু মনে রাখবেন, এর আগে পূর্বের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত, আপনার উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করুন, আপনার Resume তৈরি করুন, এবং ব্র্যান্ড তৈরি করুন। একবার আপনার ভিত্তি তৈরি হয়ে গেলে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটে আপনার দক্ষতা বিক্রি করতে পারবেন।
আপনি লেখক, ডাক্তার, সম্পাদক, প্রোগ্রামার যাই হোন না কেন, মার্কেটিং এবং অন্যান্য যেসব জায়গায় আপনার দক্ষতা রয়েছে সেসব জায়গায় অনেক চাকরি খুঁজে পাবেন। এই ক্ষেত্রটি বেশ প্রতিযোগিতাপুর্ণ, এবং আপনি বাংলাদেশে চাকরি সন্ধানী অন্যান্য মানুষের সাথে বিডিংযে অংশগ্রহণ করবেন সেই সম্ভাবনাই বেশী। কাজেই ব্র্যান্ডিংযের সেই বিষয়টি মনে রাখবেন; সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিড করার পরও, আপনাকে অন্যদের ভিড়ে সঠিক ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে বিক্রি করতে হবে। এরকম কয়েকটি কাজ করতে পারলে তা একটি শক্তিশালী Resume ও অভিজ্ঞতা তৈরির পথে আপনাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৫: অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন এমন চাকরি নিন
আপনি যদিও আপনার পছন্দের উপযুক্ত স্থানে অভিজ্ঞ, তবু অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অনেক ধরনের চাকরি করা দোষের কিছু নয়। যেমন মনে করুন, আপনি একটি ফ্রিল্যান্সিং সাইটে চাকরি পেলেন যেখানে খুব বেশী বেতন দেয়া হয় না। আপনার তা নেয়া উচিৎ নাকি বাদ দিয়ে দেয়া উচিৎ? আপনি যদি চাকরিটি নেন তবে আপনি ভালো কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম করবেন, এবং আপনার অনেক অভিজ্ঞতা বাড়বে।
ক্যারিয়ারের সোপান একদম শীর্ষ থেকে শুরু হয়না। নীচ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে অনেক কষ্ট করে উপরের দিকে উঠতে হয়। বেশিরভাগ সময়ই আপনি আপনার কাজের পছন্দমতো প্রতিদান পাবেন না। তথাপি, আপনি যদি কষ্ট করতে রাজি হন, এবং উপরে উল্লেখ করা এসব সহজ ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন, তবে বাংলাদেশে ভালো চাকরি খুঁজে পাবেন এবং অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।