রান্নাঘরের সামগ্রীর স্মার্ট ব্যবহার : ঝামেলামুক্ত রান্না
রমজানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো অনেকটাই রুটিন-মাফিক হয়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, কাজ আর ইবাদত সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় আর মাত্রা আছে। শুধুমাত্র যে জিনিসটার কোন মাত্রা নেই তা হলো কাজের চাপ আর ধকল, যার একটা বড় অংশ আসে আমাদের রান্নাঘর থেকে। আমরা যারা পরিবারে জন্য রান্নাবান্না করে থাকি, এই সময়টায় রোজা রেখে দু’টো গুরুত্বপূর্ণ আহার আমাদেরকে প্রস্তুত করতে হয়─সেহরি এবং ইফতার। আর ঈদ আসলে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায় বহুগুণ। এই কাজের চাপ কমাতে এবং রান্নাঘরের ঝামেলা সামলাতে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকরী রান্নাঘরের সামগ্রী। অতএব, কিছু চটপটে আর বুদ্ধিদীপ্ত কাজ আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে-
খাবারের মেনু আগে থেকেই ঠিক করে ফেলুন
প্রতিটি সপ্তাহের শুরুতেই আপনার পুরো সপ্তাহের সেহেরী ও ইফতার মেনু ঠিক করে নিন। সহজ ও চটপটে সব খাবার বাছাই করুন, যেগুলোর তৈরি করতে খুব বেশি সময় লাগেনা। এই পরিকল্পনার সুবাদে আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারবেন এবং নিজেকেও পরিপাটি রাখতে পারবেন। প্রতিদিন সকালে উঠে কি রান্না করবেন আর সেজন্য কি কি কাজ আপনাকে করতে হবে এসব নিয়ে আর ভাবতে হবে না এতে আপনার মূল্যবান সময় যেমন বাঁচবে, তেমন প্রতিদিন উপভোগ করতে পারবেন আরও এক ঘণ্টার নিশ্চিন্ত ঘুম!
খাবারের মেনুর ব্যাপারে বিচক্ষন হোন; এমন খাবার বাছাই করবেন না যেগুলো ইফতারের পর আপনার পরিবারকে ক্লান্ত ও অলস করে তুলবে। মেনুতে বেশি করে পানীয় রাখুন; তাজা ফলের সরবত আর বিশুদ্ধ পানি আমাদের শরীরকে ঠাণ্ডা আর সতেজ করে। আপনার জুসার এবং পানি বিশুদ্ধকারক যন্ত্র(ওয়াটার পিউরিফায়ার) বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনার অনেকটুকু সময় আর সেই সাথে আপনার কাজের চাপও কমে আসবে। আরও জেনে নিন আপনার রান্নাঘরের জিনিসপত্র কীভাবে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর রাখবেন?
প্রতিটি রমজানকে একেকটা ভোজ-উৎসবে পরিণত করার একটা প্রবণতা রয়েছে আমাদের মধ্যে। আর টানা ৩০টা দিন প্রতিবার খাবারে চর্বিযুক্ত ও অস্বাস্থকর খাবারের এই আকাঙ্খা আমাদের পেট আর স্বাস্থ্যের বারোটা বাজায়। রমজানে আমাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস বজায় রাখা উচিত। খাবারের মেনুতে একটি বা দু’টি ভারী খাবার রাখতে পারেন, টেবিলের বাকি জায়গা ফল, সালাদ ও ঠাণ্ডা সরবত দিয়ে পূর্ণ করুন। এতে কেবল আপনার সময়ই বাঁচবে না, সাথে খাবারের অপচয়ও কমবে।
আগেভাগেই গুছিয়ে ফেলুন কিছু কাজ
সপ্তাহের পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গেলে যতটা সম্ভব কাজ আগেভাগেই গুছিয়ে ফেলুন। যেমন- ফল ও সবজি কেটে জিপলক ব্যাগে ভরে রেফ্রিজারেটরে ডীপ-ফ্রীজ করে রাখুন। রমজান হোক অথবা ঈদ, এই রেফ্রিজারেটর হতে পারে আপনার সবচেয়ে কাজের বন্ধু। একবার ফল ও সবজি ফ্রীজ হয়ে গেলে সারা সপ্তাহ খোসা ছাড়ানো আর কাটাকাটির যন্ত্রনা থেকে থাকবেন মুক্ত। হিমায়িত ফল দিয়ে নানারকম মজার পানীয় যেমন মিল্কশেক তৈরি করা যায়(সেহরির জন্য দারুণ); এজন্য আপনার না লাগবে বাড়তি বরফ, না করতে হবে কোন বাড়তি ঝঞ্ঝাট! দেখে নিন বাংলাদেশের সেরা ঘরোয়া ফ্রিজ গুলো।
আরও একটি আইডিয়া যেটা আপনার বেশ কাজে আসবে তা হলো, রান্নার প্রয়োজনীয় মাল-মশলা যেমন রসুন, আদা ইত্যাদি আইসকিউব বানানোর পাত্রে রেখে ছোট ছোট কিউব হিমায়িত করে রাখা। এর ফলে সহজেই আপনি একটি বা দু’টি কিউব বের করে সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন। আগেভাগেই তৈরি করে রাখা উপাদান ফ্রিজ থেকে বের করে সরাসরি ব্যবহার করতে পারা যে কতটা শান্তির, তা একবার চেষ্টা করে দেখলেই বুঝতে পারবেন আর প্রতিবার রান্না শুরু করতে পারবেন মিনিটের ব্যবধানে।
রান্নাঘরের সামগ্রী ব্যবহার করুন স্মার্টভাবে
সপ্তাহের শুরুতেই যথেষ্ট সময় থাকে এমন একটি দিন বেছে নিন; একটি ভালো ফুড-প্রসেসর ব্যবহার করে ফল ও সবজীগুলো আগেভাগে কেটে ফেলুন আর একেকদিন এর জন্য একেকরকম মেনু অনুযায়ী সবকিছু ভাগ করে ফ্রীজ করে রাখুন। কিছু কিছ আইটেম আগেই বানিয়ে রাখা যায় যেমন সুস্বাদু পুডিং কিংবা কাস্টার্ড, অথবা পরবর্তীতে রান্নায় ব্যবহারের জন্য সস কিংবা মশলার মিশ্রন। রুটি অথবা পরোটার জন্য কাই তৈরি করে ছোট ছোট গোলা বা মণ্ড বানিয়ে র্যাপ করে রাখতে পারেন। আগেভাগে রান্না করে বা প্রস্তুত করে ফ্রিজে রাখা যায় এমন যেকোনো কিছু আপনার মূল্যবান সময় ও কর্মশক্তি বাঁচাতে পারে। এতে করে আপনি ইবাদত ও বিশ্রামের জন্য পাবেন বাড়তি সময়।
আপনার রান্নাঘরে যদি একটি ঝামেলাপূর্ণ চুলা বা স্টোভ থেকে থাকে তবে সেটি আজই সরিয়ে ফেলুন। নষ্ট চুলা কিংবা স্টোভ যেমন রান্নার ক্ষেত্রে দেরি ঘটায়, তেমনি ঘরে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে ঘরের পরিবেশ অসহনীয় করে তোলে। একটি ভালোমানের মাইক্রোওয়েভ ওভেন আপনার অনেক কাজ সহজ করে তোলে, তাই আমাদের মতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি আপনার ঘরে নিয়ে আসুন। এতে অনেক রকম খাবার রান্নার পাশাপাশি খাবার গরমও রাখা যায় দীর্ঘক্ষণ। সেহরির সময় খাবার ঝটপট গরমও করতে পারবেন এতে, আর সেহরির তাড়াহুড়োর কথা আমাদের কারোই অজানা নয়।
রান্নাঘরে একটু বাড়তি সাহায্য সবসময়ই আমাদের কাজে আসে। সঠিক পরিকল্পনা ও সামান্য চেষ্টা করলে, আপনার রান্নাঘরের সামগ্রী-এর সাহায্যে সহজেই দিনের যথেষ্ট সময় আপনি আপনার ইবাদত আর বিশ্রামের জন্য বের করে নিতে পারবেন। তাই দেরি না করে আসছে ঈদ এর জন্য পরিকল্পনা আর পূর্বপ্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিন আজই!