WE X1 : সৌন্দর্য্যরে চেয়ে আরও অনেক কিছু
বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বাজার দ্রুত বিস্তার ও নিত্য-নতুন ডিজাইনের স্মার্টফোনের চাহিদার কারণে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফিচার ও প্রযুক্তি নিয়ে ক্রেতাদের সামনে আসছে ফোন কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশেও এবার একমাত্র ‘আমরা কোম্পানীজ’ নিজেদের ‘উই স্মার্ট সল্যুশনস’ স্মার্টফোনের সঙ্গে ‘আমরা ক্লাউড স্টোরেজ’ সেবা নিয়ে এসেছে। আপনি হয়তো শুনেছেন দেশীয় কোম্পানী ‘আমরা’ মোবাইল ফোন শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্মার্টফোন টেকনোলজি সল্যুশন অফার করছে। আমরার একটি স্মার্টফোন পণ্য হলো ‘উই’। কেম্পানিটি তাদের ক্রেতাদের জন্য এটি শুধুই একটি স্মার্টফোন দিচ্ছে তা নয়, বরং ফোনটিতে থাকা ক্লাউড স্টোরেজ এবং গ্রোয়িং ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে হাই স্পীড এক্সেসের কারণে ব্যবহারকারীরা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। আমরা তাদের এক্স১ স্মার্টফোনটির বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি ও খুটিনাটি বিষয়গুলো দেখেছি। এরই প্রেক্ষিতে ফোনটি সম্পর্কে আমাদের চিন্তাধারা তুলে ধরা হলো-
ডিজাইন:
আপনি যখন আমরা এক্স১ স্মার্টফোন ডিভাইসটি বক্স থেকে বের করবেন, তখন ডিভাইসটি দেখে যদি মনে করেন ভুলে আইফোন পেয়ে গেছেন তাহলে এজন্য আপনাকেকোন দোষ দেয়া যাবে না। কৃস্টালের মতো চকচকে ডিজাইন থেকেই এক্স১ এর ডিজাইনটির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। তাছাড়া এটি তৈরি করার সময় কৃস্টাল ডিজাইনটিকেযেনোতেনোভাবে অনুকরণ করা হয়নি। বরং ফোনটির নির্মাণশৈলী অত্যন্ত চমৎকার। এতে মেশিন ড্রিল স্পিকার (নেটের মতো) এর সাথে প্রান্তগুলো গোলাকৃতির। সবকিছুইদেখতে পরিচ্ছন্ন এবং দারুন উজ্জ্বল। মেটালের তৈরি বাটনের মাধ্যমে সন্তোষজনকভাবে কাজ করা যায় এবং খুব ভালো রেসপনসিভ (প্রতিত্তর দেয় বা কাজ করে) ডিভাইসটির উপরিভাগের মেটাল এবং কালার দিয়ে এতো সুন্দরভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, হাতে ধরলে দারুন অনুভূতি হয়। কিন্তুফোনটির উপরিভাগে এবং পেছনেনিচের দিকে সফ্ট প্লাস্টিকের একটি অংশ (সম্ভবত সেল্যুলার এন্টেনা) রয়েছে যা সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ডিসপ্লের নিচের দিকে রয়েছে ক্যাপাসিটিভ কী লাইন। তবেদূর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে এই কী গুলোতে বেক লাইট (পেছনের দিক থেকে আলো জ্বলে উঠা) নাই। যদিও সেখানে একটি এলইডি নোটিফিকেশন রয়েছে, তবে তা পাশেরসেন্সরের জন্য বিচক্ষণতার সাথে লুকানো রয়েছে। ডিভাইসটি ৬.৫ মিলিমিটার চিকন এবং ১২৪.৫ গ্রাম ওজন। যদিও এটির সাইডগুলো কিছুটা পিচ্ছিল তারপরও এক্স১ফোনটি খুব সহজেই ধরা, বহন করা এবংপকেটে রাখা যায়।
ডিসপ্লে:
এইচডি অ্যামোলেড ডিসপ্লের এক্স১ ফোন কিনে নিরাশ হবেন এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। কারণ এতে রয়েছে ৫ ইঞ্চি এইচডি অ্যামোলেড ডিসপ্লে। প্রতি ইঞ্চিতে ৩২০ পিক্সেলব্যবহার করার কারণে ডিসপ্লেটি অনেক স্বচ্ছ। গতানুগতিক অ্যামোলেড ডিসপ্লের মাধ্যমে আপনি পাবেন কালির মতো কালো একইসাথে উচ্চমাত্রায় রংয়ের সম্পৃক্ততা এবংস্পষ্ট পার্থক্য। ডিসপ্লের রংয়ের প্রতিচ্ছবিও অত্যন্ত মনোরম এবং আনন্দদায়ক, এমনকি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ (পার্শ্ব) থেকে দেখলেও একইরকম দেখাবে। এর উচ্চ মাত্রার উজ্জ্বলতাডিসপ্লেটিতে বাইরের দৃশ্যগুলোকে করেছে স্পষ্ট। রাতের বেলা ডিসপ্লেটির উজ্জ্বলতা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কমে গিয়ে চোখের জন্য আরামদায়ক এবং সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে।এছাড়া ডিসপ্লেতে স্ক্যাচের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গোরিলা গ্লাস থ্রি। সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, আপনি এধরণের একটি চমৎকারএবং উচ্চ মান সম্পন্ন মোবাইল বড় কোন নামিদামি কোম্পানি যেমন অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফেকচারার (ওইএম) এর কাছ থেকে আশা করতে পারেন। কিন্তু উই এক্স১এটি নিয়ে এসেছে।
ক্যামেরা:
উই এক্স১ মোবাইলের মূল ফোকাস পয়েন্টই হলো এর ক্যামেরা। স্মার্টফোনটিতে আছে অত্যাধুনিক ক্যামেরা। মেইন ক্যামেরাটি ১৩ মেগাপিক্সেলের স্যামসাং সেন্সরযুক্তএস৫কে৩এম২ ইউনিট এবং দ্বিতীয় ক্যামেরাটি ৮ মেগাপিক্সেলের ওমনিভিশন ওভি৮৮৫৮ সেন্সর। যদি প্রশ্ন করা হয় এই ক্যামেরা দুটি কেমন কাজ করে? সততার সাথেবলছি খুবই চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয়। মূল ক্যামেরাটি কম আলো এবং দিনের রৌদরোজ্জ্বল উভয় আলোতেই সুন্দর ছবি তুলতে সক্ষম। একই সাথে এই ক্যামেরাটি ছবিতেরংয়ের ক্ষেত্রেও খুব ভালো কাজ করে। মনোমুগ্ধকর সেলফি তোলার জন্য আছে ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা। উন্নত লেন্স যুক্ত থাকায় স্বল্প আলোতেও ছবি ও ভিডিওক্যাপচার হয় অনায়াসে। এছাড়া ম্যাজিক ক্যামেরা অ্যাপ, ফেইস বিউটি, জিআইএফ শট, জেশচার ও উইঙ্ক, এইচডিআর, প্যানারমা, চাটশট, সেলফ টাইমার ও ফেইসডিটেকশন ফিচার রয়েছে। উই স্মার্টফোনটির সাথে যে ক্যামেরাটি দেয়া হয়েছে এর কার্যকারিতার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগটির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মানের অঙ্গীকার করাহয়েছে।
সফটওয়্যার:
অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪.৪ কিটক্যাট অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত একটি নতুন ডিভাইস এই মূল্যে দেখা সত্যিই হতাশাজনক। তারপরও এক্স১ ফোনটিতে পুরোনো সেই সফটওয়্যারদারুনভাবে কাজ করে। ফোন প্রস্তুতকারীরা এটিতে পর্যাপ্ত কাস্টমাইজড অপশন, পরিবর্তনশীল দৃষ্টিনন্দন থিম, অ্যানিমেশন অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এছাড়াও রয়েছে সলিডলকস্ক্রিন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো এর ব্যাটারি ততটা মসৃণ নয়। এটা হোম স্ক্রিন লঞ্চারের সাথে খুব ভালোভাবে কাজ করে। তাই প্লে স্টোর থেকে কোন ফিচার পরিবর্তন বাকাস্টমাইজ করা দারুন অভিজ্ঞতা হবে। অপারেটিং সিস্টেমস এর অন্যান্য বিষয়গুলো সাধারণত যেমনটি হওয়া উচিত তেমনি প্রাণোজ্জ্বল এবং স্বচ্ছন্দে কাজ করে।
পারফরমেন্স:
উই এক্স১ স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হয়েছে ৬৪ বিটের দ্রুতগতির কোয়ালকম স্নাপড্রাগন ৪১০ মডেলের ১.২ গিগাজার্টজ কোয়াডকোর প্রসেসর। এর সাথে রয়েছে ২জিবি র্যাম। এগুলো থাকার কারণে আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গেম যেমন মডার্ন কমব্যাট ৫, অ্যাসফেল্ট ৮ এয়ারবোর্ন এবং নোভা ৩ খেলতে পারবেন। কোন কঠিন পরিস্থিতিতে আপনি কিছু বিষয়ে নোটিস করতে পারেন। যা আপনাকে খুব বেশি সময় বিরক্ত করবে না। তাছাড়া ফোনটির ২,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার (এমএএইচ) ব্যাটারি অনেক ক্ষুদ্র মনে হতে পারে। তবে এটির ওজনের চেয়ে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ দিনভর অনবরত ব্যাটারিটিকে কার্যকর রাখে এবং আপনাকে সেবা প্রদান করে।
মূল্যায়ন:
উই এক্স১ ফোনটির চমৎকার ডিজাইন, ডিসপ্লে, ক্যামেরা প্রশংসনীয় যা আমাদের উদ্যোগকে আনন্দদায়ক করেছে। উই তাদের এক্স১ পণ্যটি খুব ভালো মানের করেছে। কোয়ালকম সিলিকনের সমন্বয়ে ফোনটিকে প্রত্যয়ী (খুব সাফল্যজনকভাবে কাজ করবে সেই বিশ্বাস) স্মার্টফোনটি হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। ফোনটিতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার পুরনো হলেও এর কার্যক্ষমতা ও কার্যকারিতা খুব ভালো। ফোনটির ব্যবহারকারীদের এজন্য কোন ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। এক্স১ ফোনটি অন্যান্য স্মার্টফোন থেকে আলাদা। কারণ আমরা আগেই উল্লেখ করেছি এক্স১ ফোনটি বাজারে আনা হয়েছে একটি প্যাকেজ হিসেবে। নির্দিষ্ট স্থানে ফ্রি হাই স্পীড ওয়াইফাই এবং ১০০ জিবি ক্লাউড স্টোরেজের কারণে আমরাকে ধন্যবাদ। তাদের এক্স১ ফোনটি সত্যিই অন্যান্য এভারেজ রানিং স্মার্টফোনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষনীয়, মনোমুগ্ধকর এবং লোভনীয়। সর্বসাকূল্যে ফোনটির মূল্য ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। এই মূল্যে কেনা এক্স১ ফোনটি খুব কর্যকর একটি স্মার্টফোন। যা ২০১৬ সালে আপনার উপকারে আসবে।
স্পেসিফিকেশন: