iPhone 16 মোবাইল কেনার আগে কী কী বিবেচনা করবেন?
বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মোবাইল ব্র্যান্ড হলো অ্যাপল এর আইফোন। সেদিনই আইফোন নিয়ে এলো তাদের নতুন চমক, আইফোন ১৬ সিরিজ। বাজার কিংবা প্রযুক্তি প্রেমীদের মন, সব জায়গায় সয়লাব আইফোন ১৬ এবং তাঁকে ঘিরে নানা আলোচনা। আপনিও নিশ্চয়ই চাইছেন, এই আইফোনকে আপনার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে।
কিন্তু কথায় আছে না, “যত দ্রুত তত ভ্রান্তি”। আইফোন ১৬ বেশ ব্যয়বহুল। আপনার কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগের আগে একটু ভেবে দেখুন ফোনটি সম্পর্কে। কি কি বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো এই আর্টিকেলে।
iPhone 16 কেনার আগে বিবেচ্য বিষয়:
iPhone 16 যেহেতু একটি বড় ইনভেস্টমেন্ট, তাই কেনার আগে আপনাকে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিনা সেটা বিচার করে আইফোন কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন।
বাজেট
মডেল এবং স্টোরেজ এর উপর নির্ভর করে আইফোন ১৬ এর দাম ১ লাখ থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত হতে পারে। আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনার মডেল নির্বাচন করা উচিৎ। যদি ছবি বা ভিডিও করার প্রয়োজন বেশি হয় তবে আপনার বাজেট একটু বেশি হতে হবে যেহেতু ২৫৬ বা ৫১২ জিবি স্টোরেজের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
প্রাত্যহিক ব্যবহার
আপনার চাহিদা একটি ফোন কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। যদি আপনি ফটোগ্রাফির জন্য আইফোন চান তবে ফোনের ক্যামেরা ক্ষমতা বিবেচনা করুন। যদি গেমিং হয় তবে ব্যাটারি লাইফ ও কুলিং সিস্টেম হবে আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার চাহিদার সাথে আইফোনের ফিচারগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা অবশ্যই আগে ভাববেন।
ব্যাটারি লাইফ
iPhone 16 এ ৩৫৬১ এমএএইচ (MAH) ব্যাটারি রয়েছে, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ নিশ্চিত করে। ২৫ ওয়াট এর দ্রুত চার্জিং সুবিধা থাকায়, ফোনটি অতিদ্রুত চার্জ হয়। দীর্ঘ সময় ব্যবহারের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। তবে আইফোনের ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখতে চাইলে কিছু রুলস মানতে হয়। আপনি সেই নিয়মের ব্যাপারে সচেতন কিনা সেটা ভেবে দেখুন।
স্টোরেজ অপশন
iPhone 16 এ ১২৮জিবি, ২৫৬জিবি, এবং ৫১২জিবি স্টোরেজের বিকল্প রয়েছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কতটা স্টোরেজ প্রয়োজন তা বিবেচনা করুন। ছবি, ভিডিও এবং অ্যাপসের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকাটা খুব প্রয়োজন। নয়তো স্টোরেজের জন্য বাড়তি খরচা করে আইক্লাউড স্পেস কিনতে হবে।
ডিসপ্লে
iPhone 16 এ ৬.১ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর ওএলইডি ডিসপ্লে আছে। যদি আপনি মুভি বা সিরিজ দেখার জন্য আইফোন নিতে চান তবে আইফোন ১৬ প্লাসটা নিতে পারেন। প্লাস ভার্সনটি ৬.৭ ইঞ্চি যা ভিডিও দেখার জন্য বেশি উপযোগী।
বা আরো বড় চাইলে আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স মডেলটা আপনার জন্য ভালো হবে যাতে ৬.৯ ইঞ্চি ডিসপ্লে আছে। তবে এই মডেলটি বেশ ভারী এবং পকেটে বহন করার একট অস্বস্থিকর। তবে, সাইজের সাথে ডিসপ্লের গুণমান এবং রেজোলিউশনও কিন্তু বিবেচ্য বিষয়।
ক্যামেরা ক্ষমতা
iPhone 16 এর ক্যামেরা সিস্টেমে ৪৮ মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর এবং ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড সেন্সর রয়েছে। আপনার ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফির শখ থাকলে এই ক্যামেরার মান আপনার ভালো লাগবে। এই সেটআপটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চমৎকার ছবি তোলার জন্য উপযুক্ত।
ডিজাইন এবং রং
iPhone 16 পাঁচটি রঙে পাওয়া যায়: কালো, সাদা, গোলাপী, টিল এবং আল্ট্রামারিন। যদি আপনি টাইটেনিয়াম বডি চান তবে আপনাকে প্রো সিরিজ থেকে ফোন নিতে হবে। প্রো সিরিজে ৪টি টাইটেনিয়াম এর রঙের অপশন আছে।
আপনার পছন্দ অনুযায়ী রঙ বেছে নেওয়াটা বেশ জরুরি। কারণ ডিজাইন এবং রঙ আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। রঙের বৈচিত্র্য আপনার স্টাইলের সঙ্গে মানানসই হতে পারে।
অপারেটিং সিস্টেম
iPhone 16 iOS 18 অপারেটিং সিস্টেমে চলে। আপনার পূর্ববর্তী iPhone অভিজ্ঞতার সঙ্গে এটি কতটা সুবিধাজনক তা দেখুন। নতুন ফিচার ও ডেভেলপমেন্টগুলো আইফোনের ব্যবহারকে আরও সহজ ও আনন্দময় করতে পারে।
বিক্রয়োত্তর সেবা
বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করে যে, আপনার ডিভাইসের সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে এবং আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। যেহেতু বাংলাদেশে এখনো আপেল স্টোর নেই, তাই বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করাও অনেক মুখ্য বিষয়।
কাদের আইফোন ১৬ তে আপগ্রেড করা উচিৎ?
অনেকেই হয়তো সন্দিহান, আইফোন ১৬ কি কেনা উচিৎ কিনা। আপনি যদি নিজের তালিকাভুক্ত হন, তবে আইফোন ১৬ এ আপগ্রেড করা আপনাদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে যারা:
পুরনো মডেল ব্যবহারকারি
আপনার বর্তমান ব্যবহৃত মোবাইলটি যদি আইফোন ১২ বা তার আগের মডেল হয়, তবে ১৬ তে আপগ্রেড করা ভালো সিদ্ধান্ত হবে। আপনার আইফোনটি প্রো সিরিজের না হলে, আইফোন ১৬ ফোনটি নিতে পারেন।
প্রযুক্তিপ্রেমী
আপনি যদি সর্বশেষ প্রযুক্তি এবং নতুন ফিচার ব্যবহার করতে ভালোবাসেন, আপনার জন্য আইফোন ১৬ একটি চমৎকার ফোন। এই ফোনটি নতুন প্রযুক্তি এবং উন্নত ফিচার নিয়ে এসেছে, যা প্রযুক্তির দুনিয়ায় আগ্রহী ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করবেই।
ফটোগ্রাফি
যারা ভালো ছবি তোলার জন্য উন্নতমানের ক্যামেরা চান, তাদের জন্য আইফোন ১৬ একটি আদর্শ পছন্দ। এর ৪৮ মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরা এবং অন্যান্য ফটোগ্রাফিক ফিচার আপনার ফটোগ্রাফিকে নিয়ে যাবে অন্য লেভেলে।
গেমারস
যারা হেভি গেমিং করেন এবং উন্নত প্রসেসিং পাওয়ার চান, তাদের জন্য আইফোন ১৬ বেশ উপযুক্ত। এর শক্তিশালী প্রসেসর এবং উন্নত কুলিং সিস্টেম গেমিং অভিজ্ঞতাকে মসৃণ এবং আনন্দময় করে তোলে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর
একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরের একটি ভালো ক্যামেরার, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি সংযোজিত ফোন প্রয়োজন। ছবি তোলা, ভিডিও করা, লাইভ করা, ইত্যাদি কাজের জন্য যারা ভালো ফোন খুঁজছেন, আইফোন ১৬ নিঃসন্দেহে একটি ভালো অপশন।
কর্মজীবী পেশাদাররা
যারা কাজের জন্য উন্নত নিরাপত্তা ফিচার এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ প্রয়োজন অনুভব করেন, তাদের জন্য এই ফোনটি খুব উপকারী। আইফোন ১৬ এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ব্যাটারি লাইফ কর্মক্ষেত্রে আপনাকে সুরক্ষা দিবে।
অ্যাপল ইকোসিস্টেম ব্যবহারকারী
যারা একাধিক অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহার করেন, তাদের জন্য আইফোন ১৬ আপগ্রেড করা অত্যন্ত সুবিধাজনক। এটি অন্যান্য অ্যাপল ডিভাইসের সাথে সহজে সংযুক্ত হতে পারে এবং ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে।
আইফোন ১৬-এ সংযুক্ত নতুন ফিচার্স
আইফোন ১৬ কেনার আগে, এই ফোনে সংযুক্ত নতুন প্রযুক্তি আর ডেভেলপমেন্টের কথা না জানলেই নয়। ঠিক কি কি কারণে এই ফোনটি অন্য সকল ডিভাইস থেকে ব্যতিক্রম, তা জানতে পারবেন এই সেগমেন্টে। চলুন জেনে নেই আইফোন ১৬ তে থাকা নতুন প্রযুক্তিগুলো।
১. অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স: সব আইফোন ১৬ মডেলগুলিতে অ্যাপলের নতুন এআই টুল কানেক্ট করা আছে। এর মধ্যে রয়েছে আরো উন্নত সিরি, লিখন সহায়ক টুলগুলি, এবং রিয়েল-টাইম অডিও ট্রান্সক্রিপশন। অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স iOS 18.1 আপডেটের মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
২. নতুন রঙ: স্ট্যান্ডার্ড আইফোন ১৬ মডেলগুলি এখন আরও প্রানবন্দ শেডগুলিতে পাওয়া যাবে। আপনার জন্য ৫টি অপশন আছে, আল্ট্রামেরিন, টিল, গোলাপী, সাদা এবং কালো। এছাড়া প্রো মডেলেও নাচারাল টাইটেনিয়াম, ব্ল্যাক টাইটেনিয়াম ও হুইট টাইটেনিয়াম রঙের সাথে একটি নতুন রঙ যুক্ত হয়েছে যাকে ডেসার্ট টাইটেনিয়াম নাম দেওয়া হয়েছে।
৩. অ্যাকশন বাটন: স্ট্যান্ডার্ড আইফোন ১৬ ও আইফোন ১৬ প্লাসে মিউট সুইচের পরিবর্তে একটি কাস্টমাইজযোগ্য বাটন যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মিউট বাদেও অন্যান্য সুবিধা অন্তর্ভুক্ত।
৪. উন্নত ক্যামেরা: এ মডেল এর ক্যামেরা এসেছে উন্নত সেন্সর ও প্রসেসিং বৈশিষ্ট্যসহ। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে ৪৮MP ডিপ ফিউশন ক্যামেরা রয়েছে, যা ২ গুণ জুম ক্ষমতা এবং ১২MP আল্ট্রাওয়াইড সেন্সর যুক্ত। প্রো মডেলগুলিতে ৪৮MP আল্ট্রাওয়াইড ও ৫ গুণ টেলিফোটো জুমও রয়েছে।
৫. ক্যামেরা ফাংশন: নতুন আইফোন ১৬ মডেলগুলিতে ক্যামেরা ফাংশন, যেমন মোড স্যুইচিং ও জুমিং, পরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট বোতাম দেওয়া হয়েছে। এতে সাইড বাটনের মাধ্যমেই ক্যামেরার ফাংশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
আইফোন ১৬ কেনার আগে করনীয়
নতুন ফোনকে স্বাগত জানাতে আপনি নিশ্চয়ই অধির আগ্রহে অপেক্ষায়মান। তবে নতুন আইফোনটি হাতে পাওয়ার আগে কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহন করা কিন্তু খুব জরুরি। আসুন জেনে নেই আইফোন ১৬ কেনার আগে আপনার করনীয় কি কি।
বিশ্বস্ত সেলার নির্বাচন
আগেই বলেছি, বাংলাদেশে বর্তমানে কোন অ্যাপেল স্টোর নেই। বিভিন্ন সেলার এই আইফোনগুলো বিক্রি করে। অথেন্টিক ও প্রকৃত আইফোনটি হাতে পেতে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বেঁছে নিন।
মডেলগুলোর মাঝে পার্থক্য বুঝে নিন
আইফোন ১৬ তে আছে ৪ ধরনের ভেরিএশন। যেমন, আইফোন ১৬, আইফোন ১৬ প্লাস, আইফোন ১৬ প্রো, আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স। এদের মধ্যেও আবার স্টোরেজ এর ভিত্তিতে ভাগ করা আছে, যেমন, ১২৮ জিবি, ২৫৬ জিবি, ৫১২ জিবি। যে মডেলটি আপনি চাচ্ছেন, সেইটাই আগে পাচ্ছেন কি না তা আগেই যাচাই করুন।
অথেন্টিকেশন টেস্ট
ফোনটি অরিজিনাল কিনা তা পরীক্ষা করা কিন্তু সবচেয়ে জরুরি। আপনি আইফোনের বক্সটি খোলার আগেই বক্সের গাঁয়ে দেওয়া কিউআর কোডটি স্ক্যান করে জেনে নিন ফোনটি অথেনটিক কিনা। এছাড়া কত দিন পর্যন্ত ঐ মডেলের ওয়ারেন্টি বিদ্যমান তাও জানতে পারবেন কিউআর কোড স্ক্যান এর মাধ্যমে।
উপসংহার
প্রযুক্তি প্রেমী হন বা সাধারণ নাগরিক, আইফোনের প্রতি মোহ কিন্তু সবার মাঝেই কম-বেশি বিদ্যমান। নতুন আইফোন বাজারে এলেই তাই শুরু হয় এক অন্য রকম উন্মাদনা। তবে একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এই উন্মাদনায় মত্ত হওয়ার আগে জেনে নিন, আইফোন ১৬ এর খুঁটিনাটি। ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত এর মাধ্যমে আইফোন ১৬ কে স্বাগত জানান আপনার ডিজিটাল জীবনে।