সময়ের সাথ সাথে পানি বিশুদ্ধ করার ফিল্টার ঘরে এবং ঘরের বাইরে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সহজলভ্য হওয়ার করনে অনেক পরিবারই নিরাপদ পানির জন্য এই ফিল্টার কিনে থাকে। ফলে বাজারে অনেক ধরনের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র থাকায়কোনটা কেনা সঠিক সেটা জানা বা বোজা কঠিন। পানির ফিল্টার বিষয়ক এই নির্দেশনাবলীটি আপনাকে পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে সহায়তা করবে।
পানিতে কি আছে?:
এক এক ধরনের ফিল্টার পানি থেকে এক এক ধরনের জীবাণু দূর করে। যেহেতু কিছু ফিল্টার অন্যগুলোর চেয়ে একটু বেশি জীবাণু দূর করে, তাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হল এ ধরনের ফিল্টার খুঁজে বের করা যা আপনার প্রয়োজন মিটাতে পারবে। আপনি যদি জানতে পারেন যে কোন ক্ষতিকর জিনিসগুলো আপনার পানি থেকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন, তাহলে আপনি আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারবে এমন পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র খুজে নিতে পারবেন। আরও দেখে নিন কীভাবে আপনার রান্নাঘর স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিচ্ছন্ন রাখবেন?
ফিল্টারের প্রকারভেদঃ
পানি বিশুদ্ধ করার জন্য অসংখ্য ধরনের ফিল্টার রয়েছে, এর মধ্যে কিছু আছে যেগুলো অন্যগুলোর তুলনায় ভালো কাজ করে।
১. কারাফে ফিল্টারঃ
এই মডেলটি মূলত একটি জার যার সাথে উপরে একটি ফিল্টার রয়েছে। এটা ব্যবহার করতে পানি উপরে ঢালতে হয় এবং ফিল্টার হয়ে বাঁ দিক দিয়ে পানি নির্গমন হবে। এই ফিল্টারটি ছোট এবং সস্তা। একজন বা দ্ইুজন ব্যক্তির জন্য অসাধারন হলেও চার জনের পরিবারে পানির চাহিদা মেটাতে একটু কঠিন হয়ে যাবে, কেননা এটাতে প্রতিদিন বহুবার পানি দিতে হবে। এই কারাফে ফিল্টারের গড় দাম প্রায় ৬০০ টাকা।
সুবিধা:এটি খুব বেশি জায়গা নেয় না এবং ক্লোরোফরম এবং সীসা দূর করে। দামে সস্তা।
অসুবিধা:পানি বিশুদ্ধ করতে সময় নেয় এবং বেশি পরিমান পানি ধারন করতে পারে না। ক্রমাগত ব্যবহারের জন্য বহুবার পানি ভরতে হবে।
২. ফকেট- মাউন্টেড ফিল্টারঃ
এই ফিল্টর সরাসরি একটি পানির কলের সাথে সংযুক্ত, পানি প্রবাহিত হওযার সময়ই এটা বিশুদ্ধ করে। এটি পরিবর্তন করা খুবই সহজ। শুধুমাত পুরানোটার স্ক্রু খুলে নতুনটা লাগিয়ে দিলেই হয়। এই মেিডলটি পানির প্রবাহকে অপরিশোধন করতেও পারে। ৬৫০ টাকাতেই একটি ফকেট-মাউন্টেড ফিল্টার পাওয়া যাবে।
সুবিধা: সস্তা এবং সহজে ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধা:পানির প্রবাহকে কমিয়ে দেয় এবং সব কলের সাথে সব সময় ফিট হয় না।
৩. কাউন্টার টপ ফিল্টারঃ
এটি আকারে কারাফে ফিল্টারের মতোই, কিন্তু সরাসরি একটি কলের সাথে সংযুক্ত। এটা যদিও আপনাকে অনেক পানি কম সময়ের মধ্যেই বিশুদ্ধ করে দিবে, কিন্তু এটার সহজাত আকারের কারনে এটা আবার নোংরাও হয়ে যেতে পারে।
সুবিধা:কম সময়ে অনেক পানি বিশুদ্ধ করে। একটি কাউন্টার ফিল্টারের দাম প্রায় ১৫০০ টাকা।
অসুবিধা:এটি গোলমেলে হতে পারে এবং সবসময় সব কলের সাথে ফিট হয় না।
৪. আন্ডার সিন্ক ফিল্টারসঃ
এই মডেলগুলো সবচেয়ে কার্যকরী মডেলের অন্যতম, কিন্তু পেশাদার ইন্সটলমেন্ট প্রয়োজন, যা অনেকের বাজেটের বাইরে বেশি খরচের কারন হতে পারে। এগুলোর নীচে সিনক থাকে, যার মাধ্যমে আপনি অনেক পানি রাখতে পারবেন। এসব ফিল্টারের গড়-পরতা দাম পড়বে প্রায় ১৪ হাজার টাকা।
সুবিধা: অনেক পানি জমিয়ে রাখতে খুব দ্রুত এবং কার্যকরী।
অসুবিধা: ব্যয়বহুল হওয়ায় রান্নাঘরে রাখার জন্য এর মডিফিকেশন দরকার।
৫. রিভার্স-অসমোসিস ফিল্টারঃ
এই ফিল্টারগুলো সহজলভ্য ফিল্টারগুলোর মধ্যে খুবই কার্যকরী। পরিবারের পানির প্রয়োজন মেটাতে এই ফিল্টার কার্যকরী। এটি একটি পর্দার মাধ্যমে পানির জীবানুমূক্ত করে। এই ফিল্টারগুলোই একমাত্র সাপ্লাইয়ের পানি থেকে আর্সেনিক দুর করতে পারে। কিন্তু এটির একটি সমস্যা রয়েছে, তা হল এটি নিয়মিতভাবে ব্লিচ দিয়ে পরিস্কার করতে হয়। এবং এটির পর্দাটাও পরিবর্তন করতে হয়। এই রিভার্স -অসমোসিস ফিল্টারের দাম পড়বে প্রায় ৪২,০০০ টাকা।
সুবিধা: অনেক কার্যকরী এবং সে তুলনায় দাম অনেক কম।
অসুবিধা: ফিল্টার করতে অতিরিক্ত সময় নেয়, এবং ফিল্টারিং প্রক্রিয়ায় বাড়তি পানির অপচয় হয়।
৬. হোল-হাউজ ফিল্টারঃ
এই ফিল্টারগুলো অনেক বেশি কার্যকরী, পুরো বাড়ির জন্য প্রযোজনীয় পানি ফিল্টার করে দেয়। এর মানে হচ্ছে আপনি আপনার কলগুলো খুললেই বিশুদ্ধ পানি পাবেন। কিন্তু এই ফিল্টারটি সেট করতে পেশাদার ব্যক্তির মাধ্যমে পূর্বের লাইন পরিবর্তন করতে হবে।
সুবিধা: এবং তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। দীর্ঘস্থায়ী।
অসুবিধা: বড় ধরনের দুসণ দূও কওে না। প্লাম্বিং পরিবর্তনের দরকার হয়।
অন্যান্য ফিচারঃ
যেহেতু পানির পিল্টারগুলো বেশ সহজবোধ্য, এর বাইরেও আরো অনেক বাড়তি যন্ত্রাংশ আছে যেগুলো আলাদা কিনতে পাওয়া যায় এবং পানি আরো সহজে ফিল্টার করার জন্য যোগ করা হয়। এধরনের ইলেক্ট্রনিক ইন্ডিকেটর আপনাকে জানাবে কখন ফিল্টার পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই সাথে কানেকশনের ব্যাপারেও নির্দেশ দিবে। যখন আপনি নিজে নিজেই প্লাম্বিং পরিবর্তন করতে যাবেন, তখন এর স্ক্রুগুলো খুলে এবং লাগিয়ে এগুলো পরিবর্তন করে আপনার কাজকে আরো সহজ করতে পারেন। এই ইল্ক্ট্রেনিক ইন্ডিকেটর আপনার ফিল্টার কার্যকারীতা হারালে রঙ পরিবর্তন হবে এবং আপনাকে ফিল্টার পরিবর্তনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিবে।
পানির ফিল্টার কি দূর করেঃ
বেশিরভাগ ফিল্টারই পানির খনিজ জীবানু যেমন সীসা, ক্লোরিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ দূর করার জন্য তৈরি। অনেক জায়গার পানিতে এগুলোই হচ্ছে সমস্যা। কিন্তু, কিছু ফিল্টার আছে যেগৃুলো লুকানো জীবানু যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসও দুর করে।
ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস অনেক সূক্ষ যা খালি চোখে দেখা যায় না, এর ফলে এরা িিফল্টার করার পর্দা দিয়ে খুব সহজেই ঢুকে যায়। তাই আপনার পরিবারের জন্য যে পানি, তার ভেতরেই ব্যাকটেরিয়া থেকে যায় এবং সবাইকে অসুস্থ করে ফেলে। কিছু সাধারন ব্যাকটেরিয়া যেমন গিয়ারডিয়া, ক্রিপটোসপোরডিয়াম এবং হেলমিন্থস, এগুলো ডায়রিয়া, বমি, কিংবা বমি বমি ভাব তৈরি করে। এগুলো দর করার একমাত্র উপায় হল কড়া আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মির মাধ্যমে অথবা পান করার পূর্বে পানিকে ভালোভাবে ফুটানো। ফুুটানো সবচেয়ে সহজ উপায়। পানি ফুটানোর পরে এটা রেফ্রিজারেটর’এর মাধ্যমে ঠান্ডা করে নিতে পারেন। এটি যখন হয়ে যাবে তখন এটি সময় নিয়ে ফিল্টার করুন। এটি আপনার জীবনের নিরাপত্তা দিবে।
কোন ব্র্যান্ডের কিনবেনঃ
ফিল্টার কেনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন অনকে কোম্পানী আছে যারা এক ধরনের ফিল্টারের জন্যই বিষেশায়িত এবং তারা সেটা দিয়েই তাদের ব্যবসা চালিয়ে নেয়। এটা কোন পোষাকের মতো নয়- এটি ব্র্যান্ডের হোক বা না হোক পানি ফিল্টারের কাজ করে। পানির ফিল্টার কিনতে গেলে এর কার্যকারিতার ধরন দেখে কিনুন।
আপনি পুরানো পানির ফিল্টারও কিনতে পারেন, কিন্তু এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেনার আগে দেখতে হবে এটি সঠিকভাবে কাজ করে কিনা। পুরানো ফিল্টার স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারন পুরানো হয়ে গেলে ফিল্টারটিই জীবানু আকান্ত হয়ে যায়। যার ফলে এটি যা ফিল্টার করবে তা নিরাপদ নয়। নতুন ফিল্টার একটি পুরানো ফিল্টারিং সিস্টেমের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল এবং নতুন অসংখ্য ফিল্টার আছে যেগুলো থেকে খুব সহজেই কেনা যায়। আপনি যখন ফিল্টার কিনবেন, তা এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যাতে এটি শুষ্ক এবং পরিস্কার থাকে এবং আপনার প্রয়েজনে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
কিছু চুড়ান্ত বিষয়ঃ
আপনার পরিবারের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যই আপনার কাছে প্রধান বিষয়। যাই ঘটুক, সবার উচিত স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিরাপদ পানি গ্রহন করা। যদিও পানির ফিল্টার সবসময় খুব সস্তা নয় কিন্তু পরিবারের সুরক্ষায় এটি একটি ভালো বিনিয়োগ। পানি থেকে ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল গুলো দূর হওয়ায় আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার সন্তান তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু গ্রহন করছে না।
পানির ফিল্টার থাকলে আপনার জন্য তা রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন কিছু হবে না। বেশিরভাগ ফিল্টারই ৩০০ গ্যালন পানি বিমুদ্ধ করতে পারে, তাই হিসাব রাখুন প্রতিদিনে আপনি কতটা ব্যবহার করছেন এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনার ফিল্টারটি পরবর্তন করুন। এটা যদি না করেন তবে ফিল্টারটি নোংরা এবং বিবর্ণ হয়ে যাবে এবং পানি পরিবাহিত হতে অনেক সময় লাগবে। ফিল্টার প্রতিস্থাপন করলে কম খরচ হয় যা আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দিবে। তাই ভালোভাবে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করুন। আপনি কারাফে, ফকেট-মাউন্টেড ফিল্টার অথবা আরো অনেক ফিল্টার যেমন হোল-হাউজ ফিল্টার যাই কিনতে চান না কেন সবগুলোই কার্যকর এবং ব্যবহার উপযোগী। এমনকি আপনার ফিল্টারটি যদি সব জীবানু দূর নাও করে তারপরও এটি সুস্থ থাকতে সঠিক নিয়মে চলার একটি পদক্ষেপ।