হোম এবং লিভিং

কোরবানি আসার আগেই আপনার রান্নাঘর গুছিয়ে নিন

কোরবানির ঈদ আসলেই যেন রান্নাঘরে একটা বাড়তি চাপ আসে। সারা মাসের বাজার-সদাই বা মাছ মাংস গোছানোও ঐ একদিনের বিশাল ধাক্কার থেকে অনেক সহজ মনে হয়। কেননা প্রতি বছর ঐ একটা দিনে রান্নাঘরে মাংস আর হাড়ের পাহাড় জমা হয়, সাথে রক্ত আর চর্বির উৎপাত তো আছেই। যতই এক্সপার্ট হন না কেন, কোরবানির দিন সবকিছু সামলানো যে কত কঠিন তা আপনি মানতে বাধ্য! সেই ধাক্কা সামলাতে আপনার প্রয়োজন ভালো মানের ও কার্যকরী রান্নাঘরের সামগ্রী। বুদ্ধি করে সমস্ত সামগ্রী আগে ভাগে সংগ্রহ করে আর সেগুলো ঠিকঠাক করিয়ে নিলে কোরবানি ঈদে কাজের বোঝা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

পরিচ্ছন্ন রাখুন কাউন্টার আর কাটাকুটির যন্ত্রপাতি

কুরবানি kitchen clean countertop

রান্নাঘরের কাউন্টার যে ম্যাটেরিয়ালেরই হোক না কেনো, খাবার আর তেল-মশলা তাতেই লাগবেই আর পরিষ্কার না করা হলে তা চটচটে দাগে পরিণত হতে মোটেও সময় লাগে না। কোরবানির সময় অপরিষ্কার কাউন্টার থেকে আপনার হাড় মাংসের পাহাড়ে জীবাণু ছড়াতে পারে। আর সবকিছু প্যাকেট করে তুলে ফেলার পরও কাউন্টার চটজলদি পরিষ্কার করে ফেলা উচিত নয়ত রক্ত মাংসের মধ্যে থাকা জীবাণু পরবর্তী রান্নার মাঝেও সংক্রামিত হতে পারে। কাউন্টার পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে এর উপর থেকে সবকিছু সরিয়ে ফেলতে হবে। কাউন্টারের উপরের সামগ্রীগুলোর না সরালে এগুলোর নিচে আর কোনায় ময়লা থেকেই যায়। কাটিং বোর্ড আর ছুরিও ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করার শান্তিই অন্যরকম।

কাটিং বোর্ডে কাজ করার অভ্যাস যদি থাকে, তাহলে শাকসবজি আর মাংসের জন্য আলাদা বোর্ড ব্যবহার করুন। যদি আপনার বোর্ডটি টেম্পারড গ্লাস এর হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ কেননা এর তল মসৃণ এবং এতে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না, যেমনটা প্লাস্টিক বা কাঠের বোর্ডে প্রায়ই হয়ে থাকে। তবে যে ম্যাটেরিয়ালই হোক না কেনো, কাজ শেষে ভালোভাবে বোর্ডটি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

কুরবানি kitchen cutter board

ছুরির ক্ষেত্রেও একই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত; মাংস কাটার পরপরই ভালোভাবে না ধুয়ে একই ছুরি শাকসবজি কাটার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। অনেক খাবারের আইটেম এমন আছে যেগুলো কাটা-ধোয়া থেকে শুরু করে রান্না করা পর্যন্ত আলাদা রাখা উচিত, নাহলে পরস্পর থেকে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রান্না করা খাবার কখন কাঁচা মাংসের আশেপাশে রাখবেন না। আর প্রতি কাজের পর পর আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে, নয়ত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।

খাবার প্রস্তুত শুরু করার আগেই কাউন্টারের সমস্ত কাজ সেরে ফেলুন। এতে করে কাজ করার জন্য অনেকখানি খোলা জায়গা পাবেন। রান্না শেষ করে ফেলার পরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। নাহলে ময়লা আবর্জনা জমে গিয়ে পিপড়া, পোকামাকড় থেকে শুরু করে জীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। পরের দিনের জন্য বসে না থেকে দিনের কাজ দিনে শেষ করে ফেললে পরের রান্নাটা করার সময় আপনাকে আর কোন ঝামেলাই পোহাতে হবে না।

কার্যকরী রান্নাঘরের সামগ্রী আপনার বিপদের বন্ধু

কুরবানি kitchen microwave oven

রান্না করা মানেই আগুন আর তাপের ব্যবহার, স্বাভাবিকভাবেই কোরবানি-র সময় আপনার ওভেন, চুলা আর মাইক্রোওয়েভের উপর দিয়ে বিশাল ঝড় বয়ে যায়। কারো কারো ধারনা যে এসব সামগ্রীর কখনও মেরামতের প্রয়োজন পড়ে না, তবে যদি আপনি এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চান তাহলে কিছুটা মেহনত আপনাকে এগুলোর পিছনেও দিতে হবে।

আপনার ওভেন পরিষ্কার করার জন্য ফ্যাক্টরি-সেটিংস বা সেলফ-ক্লিনিং অপশন ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে নিজেও হাত লাগিয়ে ভেতরের সমস্ত তেল-ময়লা ঘষে তুলে ফেলুন। বেকিং সোডা আর পানির মিশ্রণ নিয়ে একটি স্পঞ্জ অথবা স্ক্রাব-প্যাডের সাহায্যে যতটা সম্ভব ময়লা পরিষ্কার করে নিন। ঝাঁঝরির ফাঁক-ফোকর থেকে খাবারের কণা ও তেল চিটচিটে ময়লা সরিয়ে ফেলুন। মাইক্রোওয়েভের ক্ষেত্রে কেবল ভেতরটা হালকা মুছে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি আপনার মাইক্রোওয়েভে ঘূর্ণায়মান প্লেট থেকে থাকে তবে চেক করে নিন সেটি জায়গামত বসানো আছে কিনা আর ঠিকমত কাজ করছে কিনা। মাইক্রোওয়েভটি সত্যিকার তাপমাত্রা দেখাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে শঙ্কা থাকলে তাপস্থাপকটি চেক করে নিন। সমস্যা দেখা দিলে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন এবং সম্ভব হলে এগুলো সারিয়ে ফেলুন। হয়ত কিছু সামগ্রী আপনার কাছে নাও থাকতে পারে। সম্ভব হলে নতুন সামগ্রী কিনে নিন

ইলেকট্রিক বা ইন্ডাকশন চুলার ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে তেমন কোন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু গ্যাসের চুলার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বার্নারের মুখগুলো যেন বদ্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন, সেই সাথে সব বার্নারে যেন সমান মাপের অগ্নিশিখা তৈরি হয়। চুলার ঝাঁঝরিগুলো খুব সহজেই তেল-ময়লা আর ঝোল লেগে খুব শীঘ্রই নোংরা হয়ে যায়, নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে অনাকাঙ্খিত আগুন লাগা প্রতিরোধ করা যায়।

কুরবানি kitchen frozen-meat

যেকোনো রান্নাঘরে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় আর সর্বোচ্চ ব্যবহৃত সামগ্রী হলো ফ্রিজ আর কোরবানি আসার আগেই ফ্রিজ গুছিয়ে ফেলা উচিত। পুরোনো আর বেঁচে যাওয়া খাবার ফ্রিজে জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন, কেননা কোরবানির সময় আপনার ফ্রিজে অনেক বেশি জায়গা প্রয়োজন হয়। আপনার যা প্রয়োজন নেই সেগুলো সরিয়ে ফেলুন। হিমায়িত খাবারেরও মেয়াদ থাকে, তাই ভালোভাবে মেয়াদ-উত্তীর্ণের তারিখ বারবার চেক করুন। খেয়াল রাখুন যেন আপনার ফ্রিজের তাপমাত্রা সবসময় ৪ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। মাংস সংরক্ষনের সময় ফ্রিজের সবচেয়ে ঠাণ্ডা অংশে রাখুন। সমস্ত হাড়-মাংস ছোট ছোট প্যাকেট করে ফ্রিজারে রেখে দিন, যতদিন না আবার সেগুলো ব্যবহার করা হবে ততদিন পর্যন্ত প্যাকেট গুলো এভাবেই রেখে দেয়া ভালো।

আপনার রান্নাঘরকে যেকোন চ্যালেঞ্জ এর জন্য সবসময় প্রস্তুত রাখতে পারলে কোরবানি হয়ে উঠবে আরো সহজ আর আনন্দের। তাই এইবারের ঈদ ঝঞ্ঝাট ছাড়া কাটাতে আজ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close