ফ্রেশারদের জন্য চাকরি খোঁজার ৫ টি সর্বোত্তম উপায়
দশকের পর দশক আমাদের দেশের তরুণদের একটি বড় অংশ চাকরির বাজারে পিছিয়ে থাকছে। এর পেছনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অসামঞ্জস্য নিয়োগ ব্যবস্থা এবং স্বজনপ্রীতির মত ভয়াবহ পরিস্থিতিও। যেকোনো কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে বই নিয়ে বুঁদ হয়ে বসে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে দেখা আজকালকার দিনে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। যেখানে সরকারি চাকরিতে একটি পদের বিপরীতে কিছু ক্ষেত্রে হাজারেরও বেশি আবেদনের রেকর্ড আছে।
আর যে সমস্ত তরুণেরা সরকারি চাকু্রির গন্ডির বাইরে কিছু ভাবার চেষ্টা করছেন তারা হয়ত ভার্সিটি জীবন শেষ করার পর হয়ত উচ্চশিক্ষার আশায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। আবার যাদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই তারা দেশের কর্পোরেট জগতে প্রবেশের ক্ষীণ আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এভাবেই আমরা অন্য দেশের কাছে হারিয়ে ফেলছি আমাদের আমাদের প্রতিভাবান তরুণদের। তবে আশার কথা এই যে, পরিস্থিতিতে বদল আসছে।
কিছু বছর ধরে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ, দেশীয় উদ্ভাবনী সংস্থার প্রসার সহ বেসরকারি বিভিন্ন খাতে লোকবল নিয়োগের ফলে “সোনার হরিণের” দেখা পাওয়াটা কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। আজকের প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীতে চাকরি পেতে হলে প্রয়োজন অধ্যবসায়, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং একটি গোছালো চাকরি খোঁজার প্ল্যাটফর্ম।
নিজেকে তৈরি করে নিতে শুরু করুন
গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই তাড়াহুড়ো করবেন না। সময় নিয়ে নিজের দক্ষতাগুলোকে ঝালিয়ে নিন। দেখুন সেগুলো সময় উপযোগী কিনা। একই ধরণের যোগ্যতার সাথে মিল রেখে চাকরি খুঁজুন। এতে করে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা থাকতে হবে প্রতিটি মুহুর্তে। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ আর পরিবেশের সাথে টিকে থাকার ক্ষমতা থাকলে চাকরির দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে থাকতে পারবেন।
আকর্ষণীয় সিভি এবং কভার লেটার লেখা শিখুন
আপনার সিভি এবং কভার লেটার হওয়া চাই সাবলীল, এবং সংক্ষিপ্ত। যেহেতু আপনার সিভি-ই আপনাকে উপস্থাপন করবে, তাই সিভি লেখার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।
তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর কর্মব্যস্ত পৃথিবীতে সবাই ছুটছে। তাই লম্বা, এবং বিরক্তিকর কভার লেটার পড়ার সময় কারো কাছেই নেই। তাই চেষ্টা করুন আপনার কভার লেটারকে সংক্ষিপ্ত রাখতে এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোই এর মাধ্যমে তুলে ধরুন। একটি সঠিক কভার লেটার ফরম্যাট আপনাকে চাকরি পাওয়ার দৌড়ে অনেকাংশে এগিয়ে রাখবে।
সঠিক প্ল্যাটফর্মে চাকরি খুঁজুন
ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সঠিকভাবে এবং সঠিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চাকরি খোঁজা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে না, বরং বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের বিজ্ঞপ্তির প্রচার করে। এতে করে তাদের কর্মী খোঁজার পাশাপাশি নিজস্ব ব্র্যান্ডিং এর কাজটিও হয়ে যায়।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন জব প্ল্যাটফর্মগুলো অথবা পত্রিকার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েও তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্তমানে আবেদন থেকে নিয়োগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত প্রক্রিয়াই হচ্ছে অনলাইনে। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে কাজের ধরণ বুঝে আগানো ভালো। যেমন আপনি যদি গার্মেন্টসে চাকরির সুযোগ বা এই জাতীয় ব্লু-কলার চাকরির খোঁজ করেন, তাহলে BikroyJOBS হতে পারে আপনার সঠিক গন্তব্য।
বাংলাদেশের অনলাইন জব পোর্টালগুলোতে চোখ রাখুন
হন্যে হয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে চাকরি খোঁজার দিন ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রায় শেষের পথে। কোন প্রতিষ্ঠান, কোন কাজের জন্য, কত জন লোক নিয়োগ করবে তা অনলাইন জব পোর্টালগুলোর মাধ্যমে ঘরে বসেই জানা যাবে। ইন্ডাস্ট্রি ভেদে ফুল-টাইম, অথবা পার্ট-টাইম চাকুরির বিজ্ঞপ্তি দেখার এবং সাথে সাথেই আবেদন করার সুযোগ থাকছে এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
তবে এজন্য চোখ কান খোলা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে থাকছে বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় অনলাইন জব পোর্টালঃ
- BikroyJOBS
- Bdjobs
- Kormo
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে অনলাইন জব পোর্টালগুলোই চাকরির বিজ্ঞাপন দেবার এবং চাকরি খোঁজার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এসব প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলার পাশাপাশি আপনাকে সর্বদা সিভিও আপডেটেড করে রাখতে হবে।
পত্রিকার পাতায় চোখ রাখুন
চাকরি খোঁজার জন্য সংবাদপত্র একটি প্রাচীন এবং কার্যকরী উপায়। আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি দৈনিক এবং মাসিক পত্রিকার সরকারি-বেসরকারি সহ প্রাইভেট সেক্টরের বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়ে থাকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ
- প্রথম আলো
- দ্য ডেইলি স্টার
- দ্য ডেইলি সান
- দৈনিক যুগান্তর
- দ্য বিজনেস ইনসাইডার
এছাড়াও “সাপ্তাহিক চাকরির খবর” নামক একটি পত্রিকা বের হয় শুধুমাত্র চাকরিজীবিদের কথা মাথায় রেখেই।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট নিয়মিত চেক করুন
বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেই “ক্যারিয়ার” নামক একটি আলাদা পেজ থাকে। আপনার যদি পছন্দের কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহলে আপনি নিয়মিত তাদের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে পারেন নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও খুঁজে পেতে পারেন আপনার কাঙ্খিত গন্তব্য
আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেন আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছে। আর একেই সুযোগ হিসেবে দেখছেন চাকরি দাতা এবং চাকরি প্রার্থী উভয় পক্ষই। পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইনে সহজেই চাকরি খোঁজার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ফেসবুকে রয়েছে সরকারি/বেসরকারি চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপ।
নিয়োগদাতারা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সবসময় চান দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ দিতে। তাই সঠিক দক্ষতা আর প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা থাকলে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমগুলোর মাধ্যমেই খুঁজে নিতে পারেন আপনার প্রিয় কোনো কাজ।
ইন্টারভিউ এর জন্য প্রস্তুত থাকুন
ইন্টারভিউ এর জন্য গোছালো প্রস্তুতি নিন। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনার স্কিল অথবা বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর পেয়ে যাবেন। নিয়মিত বিরতিতে সেগুলো চর্চা করুন। আপনার কোনো বন্ধুকে নিয়ে মক ইন্টারভিউ এর আয়োজন করুন।
কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নিন। তারা কি ধরণের প্রতিষ্ঠান, বাজারে তাদের অবস্থান কীরকম, তাদের প্রতিদ্বন্ধী প্রতিষ্ঠান কারা, ইত্যাদি। ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারের সময় এই জ্ঞান কাজে লাগাতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই সেটি অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করে দেবে।
সার্টিফিকেশন কোর্স করে নেওয়া ভালো
যদি দীর্ঘদিন চেষ্টার পরেও কোন ইন্টারভিউ কল না পেয়ে থাকেন তাহলে দেরি না করে আপনি যেই ধরণের কাজ পেতে আগ্রহী তার উপর কোনো কোর্সে ভর্তি হয়ে যান। কোর্সের কথা আপনার সিভিতেও উল্লেখ করুন। এতে করে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পাওয়া সহজ হবে কারণ প্রতিটা প্রতিষ্ঠানই চায় দক্ষ নিয়োগ করতে।
আপনার দক্ষতা, দুর্বলতা, এবং শখগুলো জানুন
ব্যক্তিগত সফলতার মূলমন্ত্র হল সঠিক অধ্যবসায় এবং নেটওয়ার্কিং। তাই, সবার আগে নিজেকে জানুন। ধরুন, আপনার ঘুরতে ভালো লাগে। ব্যাগ নিয়ে সময় পেলেই বেরিয়ে পরেন অজানার উদ্দেশ্যে। এই আপনার কাছে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টেন্ট এর চাকরির মত একঘেয়ে হয়ত আর কিছুই হবে না।
তাই নিজের জন্য পছন্দের কাজটি বেছে নেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক ততখানি চ্যালেঞ্জিং।
শেষকথা
আপনি যেই মাধ্যম থেকেই আসুন না কেন, চাকরি পেতে হলে আপনাকে সেই চাকরির মনন এবং মানসিকতায় নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। তাই নিরাশ না হয়ে বরং নতুন উদ্দমে আবার প্রস্তুত হয়ে উঠুন।
আশা করি আমাদের এই লেখাটি আপনাকে আপনার কাঙ্খিত উদ্দেশ্যের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
আপনার জন্য আন্তরিক শুভকামনা।
বাংলাদেশে চাকরি খোঁজা সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর
১) অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও কি আমি আবেদন করতে পারব?
সহজ উত্তর হল হ্যাঁ, পারবেন। আপনি যদি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা দক্ষতা এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম হোন তাহলে চেষ্টা করে দেখতে আপত্তি কোথায়? আপনার স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়েও অনেক প্রতিষ্ঠানেই কাজ করার মত সক্ষম অবস্থানে নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন। তবে এই ব্যাপারটি নিয়ে শুরুতেই প্রতিষ্ঠানের অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে নেওয়া উত্তম।
২) নিয়োগদাতার নাম উল্লেখ না থাকলে সেক্ষেত্রে কী করণীয়?
কভার লেটার লেখার সময় এই সমস্যায় প্রায়ই পরতে হয় বিশেষত যখন নিয়োগকারী ব্যক্তির নাম বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা থাকে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন। গুগল অথবা উইকিপিডিয়ায় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সার্চ দিন। তবুও নাম না পাওয়া গেলে “Dear Concern” লিখে শুরু করা যেতে পারে।
৩) ইন্টারভিউ এর পরে ফলো-আপের জন্য কতদিন অপেক্ষা করব?
ইন্টারভিউ হয়ে যাওয়ার পরে যদি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু জানানো না হয় তাহলে বিজ্ঞপ্তির ডেডলাইন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এর পরে ইমেইলে তাদেরকে ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আপনার নাম, কোন পদের জন্য আবেদন করেছিলেন, কেন আপনি উপযুক্ত এসব জানিয়ে ফলো-আপ করুন আর এর পরেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর না আসলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য চেষ্টা করুন।
৪) বাংলাদেশে চাকরি খোঁজার সর্বোত্তম জায়গা কোনটি?
পছন্দের ইন্ডাস্ট্রি অথবা প্রতিষ্ঠানে চাকরি খোঁজা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তবে অনলাইন জব পোর্টালগুলোর কল্যাণে বর্তমানে এই কাজটি বেশ সহজ ভাবেই করা যায়। যেখানে একজন প্রার্থী কম সময়ের মধ্যেই আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে পারেন। আমাদের দেশের জনপ্রিয় চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে আছেঃ BikroyJOBS, Bdjobs, Kormo, ইত্যাদি। এছাড়াও নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেও মিলতে পারে সাফল্য।