কোভিড ১৯ঃ রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটায় ৯টি সতর্কতা
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই এবার এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। গত বছরের মতই এবারও রমজান মাস অনেক ভিন্ন কারণ আমরা একটি মহামারির মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছি। নিত্যদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষত যারা বয়স্ক এবং শারীরিক ভাবে দূর্বল।
কোভিড-১৯ এর সাথে লড়াই করার জন্য সুস্থ শরীর এবং রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতার বিকল্প নেই। কারণ বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সংকট, এবং দূর্বল শারীরিক অবস্থাই মানুষকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
যেহেতু রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করার জন্য আমাদের প্রায়ই বাসার বাহিরে যেতে হতে পারে তাই সেসময়ে আমরা কীভাবে সাবধানতা অবলম্বন করে নিজেদের সুরক্ষা দিতে পারি তা জেনে রাখতে হবে। কিন্তু ঠিক কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন?
নিচে উল্লেখিত কিছু টিপস এর মাধ্যমে আপনাকে সহজেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করার সময় সচেতনতা বজায় রাখতে সহায়তা করা এবং অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা করার সুবিধাগুলো সম্পর্কে অবগত করাই আমাদের আজকের আয়োজনের উদ্দেশ্য।
১. কেনাকাটা করার পূর্বে যা যা করণীয়
দেশজুড়ে চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ পণ্যের দোকান বা শপিং মল সমূহ ইতোমধ্যেই সামাজিক দূরত্ব সহ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য নিয়ম কানুন মেনে সারাদিনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকছে। এসব নিয়মের মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেতাকে সেবা প্রদান, মাস্ক পরিধান, অথবা নির্দিষ্ট জায়গা ফাঁকা রেখে একটি লাইনে দাঁড়ানো সহ অন্যান্য আরও কিছু নিয়মাবলী। আইসিডিডিআর,বি কর্তৃক নিত্য পণ্য কেনাকাটার ব্যাপারে অন্যান্য যেসব নির্দেশনা রয়েছেঃ
- জরুরি কাজে বাসা ত্যাগ করার পূর্বে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন
- মাস্ক অথবা ফেস শিল্ড পরিধান করুন
- আপনার বাজারের ব্যাগ জীবাণুমুক্ত করে নিন
- মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
- ভিড় কম এমন সময়ে কেনাকাটা করতে পারেন
- অন্যান্য ক্রেতাদের থেকে নূন্যতম ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন
- ক্যাশ পেমেন্ট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন
- সব সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
আপনি একজন বয়স্ক নাগরিক হয়ে থাকলে চেষ্টা করুন খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে, একান্তই বাজার ও অন্যান্য কেনাকাটা করতে হোলে অন্যের সাহায্য নিন।
২. বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে পরিকল্পনা করে রাখুন
রমজান মাসে বাসায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থাকাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি একেবারে বাজারের তালিকা করে ফেলতে পারলে তা আপনার কম বাইরে যাওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এমন একটি দোকান বা শপিং স্টোর বেছে নেওয়া উচিত যেখানে আপনি প্রায় সকল প্রয়োজনীয় পণ্য একেবারেই পেয়ে যাবেন, যাতে করে অন্যান্য জায়গায় আপনাকে ঘুরতে না হয়।
ঘর বা বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই একটি তালিকা করে নিন, এতে করে আপনার কী কী প্রয়োজন তা মনে থাকবে ভালো এবং একই জায়গা থেকে আপনি সব কিনে ফেলতে পারবেন। তবে তালিকাতে সব ঠিকঠাক আছে কিনা তাও যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন যেমন ইফতার বা সাহরির সময়ে প্রয়োজন এমন দ্রব্যাদি।
৩. একা কেনাকাটা করার চেষ্টা করুন
সরকার থেকে লকডাউনে প্রণীত গাইডলাইন এবং সামাজিক দূরত্ব মূলত একইসাথে অধিক সংখ্যক ক্রেতাকে সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। যাতে করে এসব জায়গায় ভিড় কমানোর চেষ্টা এবং দ্রুততার সাথে সেবা প্রদানের ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা হয়।
যদিও গ্রামাঞ্চলে এই ব্যাপারটি খুব একটা কার্যকরী হয় না বললেই চলে। তবে নিরাপদ কেনাকাটার অভিজ্ঞতা লাভ করতে চাইলে একা একা বাজারে যাওয়াই শ্রেয়।
৪. ভিড় কম হয় এমন সময় কেনাকাটা করুন
আপনি সচরাচর যেখান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে থাকেন, সেখানে ফোন করার মাধ্যমে কখন তাদের কাছে ক্রেতার ভিড় কম থাকে তা জেনে নিতে পারেন। দোকান বা শপ ভেদে তা আলাদা হতে পারে কারণ সবাইকেই মহামারির এই সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটাইজিং ছাড়া অন্যান্য নিরাপত্তা জনিত ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হয়।
এছাড়াও আপনি বয়স্ক হয়ে থাকলে আপনার আসার জন্য নিরাপদ সময়টি শুনে নিতে পারেন। তবে আপনার যদি শারীরিক কোনো জটিলতা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি কেনাকাটার জন্য অন্যের সাহায্য নিতে পারেন।
৫. পেমেন্ট করুন স্মার্ট উপায়ে
কেনাকাটা হয়ে গেলে নগদ টাকার পরিবর্তে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে পারেন তবে মেশিনে পিন দেওয়ার পরপরই হাত স্যানিটাইজ করে নিতে ভুলবেন না। টাকা পরিশোধের সময় ক্যাশিয়ার এবং অন্যান্য কর্মীদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। পরবর্তীতে বাসায় ফেরার পর আপনার ব্যাগটি ধুয়ে নিন।
৬. বাসায় কিনে আনা পণ্য কি করবেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্য থেকে ভাইরাস ছড়ানোর তথ্য সামনে আসেনি। তবে সতর্কতার অংশ হিসেবে খাবার সহ অন্যান্য পণ্যের ব্যাপারে যা যা করতে পারেন তা হলোঃ
- প্রতিবার বাসায় ফিরেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন
- আপনার ব্যাগটি মুছে নিন
- ভেজা কাপড় এবং স্যানিটাইজার দিয়ে খাবারের মোড়ক মুছে নিন
- কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করে থাকলে তা নষ্ট করে ফেলুন
৭. ঘর জীবাণুমুক্ত রাখুন
নামায আদায়ের সময় আপনাকে ঘরের মেঝের সন্নিকটে আসতে হতে পারে, সেক্ষেত্রে মেঝে সহ অন্যান্য সমস্ত জায়গা থাকতে হবে জীবাণুমুক্ত। তবে এর জন্য ঘরের প্রতিটি জিনিস মোছার প্রয়োজন নেই। তবে সচরাচর যেই জায়গাগুলোতে বেশি স্পর্শ করা হয় সেগুলো পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
প্রতিবার বাজার করে বাসায় ফেরার পর বাজারের ব্যাগ কিছুটা দূরে রাখার চেষ্টা করুন এবং পরবর্তী সময়ে সেই জায়গাটি সহ আপনার বাসার দরজার হাতল জীবাণুমুক্ত করে নিন।
৮. বাজারের ব্যাগ ধুয়ে নিন প্রতিবার
রমজান মাসে কেনাকাটা করার সময় যদি প্লাস্টিকের ব্যাগ বা বার বার ব্যবহার করা যায় এমন ব্যাগ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে প্রতিবার ব্যবহারের পরে সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। শক্ত জায়গার পাশাপাশি করোনাভাইরাস কিছুটা নরম জায়গাতেও বেশ কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে যেমনঃ কাপড় চোপড়, কাপড়ের ব্যাগ, ইত্যাদি।
তবে কিছু কিছু শপ তাদের ক্রেতাদের ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ নিয়ে যেতে অনুৎসাহিত করে এবং শপ থেকেই পণ্য বহন করার সুবিধার্থে একবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ দেওয়া হয়ে থাকে।
৯. অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা
আপনার যদি করোনাভাইরাস জনিত কোনো লক্ষণ থেকে থাকে যেমনঃ নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, জ্বর, কিংবা শুকনো কাশি সেক্ষেত্রে বাজারে বা দোকানে কেনাকাটা না করতে যাওয়াই ভালো বরং অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা করে তা হোম ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমে ঘরে বসেই বুঝে নিন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস Bikroy.com এর “ডোরস্টেপ ডেলিভারি” অপশন থেকে এখন ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে জনপ্রিয় বিভিন্ন রিটেইল শপ থেকে এখন অর্ডার করার সুযোগ পাচ্ছেন।
শেষ কথা
করোনা পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাওয়ার কারণে আমরা যেই গাইডলাইন বা নিয়মের কথা উল্লেখ করেছি সেগুলোও বদলে যেতে পারে। পাশাপাশি এই রমজানে সুরক্ষিত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের সাথে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কোভিড পরিস্থিতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এবং আইসিডিডিআর,বি-এর দ্বারস্থ হতে পারেন।
ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এর সাথে লড়াই করা কোনো সহজ ব্যাপার নয়। তাই রমজান মাসের কেনাকাটা করুন নিরাপদে। উপরে আলোচনাকৃত সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে আপনার দৈনন্দিন কেনাকাটা করুন এবং চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে।
আপনার সুস্বাস্থ্য কামনায় রমজান মোবারক!