বাসা বিক্রি করার কথা ভাবছেন? ৬টি উপায় মেনে সর্বোচ্চ আয় নিশ্চিত করুন
এই মৌসুমে বাসা কিংবা বাড়ি বিক্রি করার পরিকল্পনা করছেন? নিজস্ব বাসা-বাড়ি তৈরি করা বেশিরভাগ বাংলাদেশীর জন্যই সারা জীবনের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য এবং বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। নিয়মিত বাড়ি ভাড়া পাওয়া যেমন আপনার জীবিকার জন্য অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম, তেমনই বাড়ির কিছু আপগ্রেড বা উন্নয়ন বিক্রি করার সময় বাড়ির জন্য একটি ভালো দাম পেতে অথবা আরও বেশি ভাড়া পেতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
বাড়ির মালিক হিসেবে আপনার বাড়ির সংস্কার বা আপগ্রেড করার জন্য সাশ্রয়ী ও সহজ উপায়গুলোর সন্ধান করা উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি শীঘ্রই বাড়ি বিক্রি করার পরিকল্পনা করে থাকেন। অনলাইন প্রপার্টি কেনাবেচায় দীর্ঘ ৯ বছরের অভিজ্ঞতা সহ, বিক্রয় ডট কম – বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস-এর পক্ষ থেকে আজকের লেখায় আমরা কীভাবে বিক্রি করার পূর্বে বাড়ির মূল্য বাড়ানো যেতে পারে এবং বিক্রির জন্য বাড়ির বিজ্ঞাপন পোস্ট করার মাধ্যমে পছন্দসই মূল্য পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
যেসব উপায়ে বাড়িকে আরও মূল্যবান করে তোলা যেতে পারে
বাড়ি বিক্রি অথবা আপনার প্রপার্টি ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার ক্ষেত্রে বাড়ির মূল্য বাড়াতে নিচে উল্লেখিত এই টিপসগুলো ব্যবহার করতে পারেনঃ
১. চাহিদাসম্পন্ন আপগ্রেডগুলো আগে করুন
দ্রুতই বাড়ি বিক্রি করতে চাইছেন? তাহলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় এমন আপগ্রেডগুলোতে ফোকাস করুন। আপনার বাড়ির এক্সটারনাল বা বাহ্যিক লুকে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করুন কারণ এটি আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রথমবার আপনার বাড়ি দেখার পরে বাড়ি কেনার ব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
বাড়ির বাইরের অংশের রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি প্রতিবেশীদের তুলনায় আপনার বাড়িটি কিছুটা অগোছালো মনে হয়, তাহলে ইনডোর প্ল্যান্ট লাগাতে পারেন অথবা বাসার প্রধান দরজাটি পুনরায় রং করতে পারেন। বাহিরের প্রয়োজনীয় আপগ্রেডগুলো সম্পন্ন হবার পর আপনার রান্নাঘর এবং ওয়াশরুমগুলোর দিকে নজর দিন। এসব স্থানে কিছু ছোটখাটো আপগ্রেড অনায়াসেই বাসার দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
রান্নাঘরে ব্যবহৃত ক্যাবিনেটগুলো হয়তো মানসম্পন্ন কাঠের তৈরি কিন্তু পুরোনো হয়ে থাকলে ক্যাবিনেট পেইন্ট করিয়ে নিতে পারেন এতে করে সেগুলো আবার নতুন মনে হবে। তবে ভেঙে গিয়ে থাকলে একজন পেশাদার মিস্ত্রির সাহায্যে সেগুলো ঠিক করিয়ে নিন।
আপনি আপনার রান্নাঘরে স্টেইনলেস স্টিলের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারেন যার ফলে ভেতর থেকে এটি আরও আকর্ষণীয় মনে হবে। এছাড়াও সমস্ত ট্যাপ এবং অন্যান্য পানির লাইনগুলো ঠিকঠাক অবস্থায় আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
ওয়াশরুমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য – নতুন ফ্লোরিং, ডিজাইনার ফিটিংস বা কাস্টমাইজড ক্যাবিনেটের মতো রিমডেলিং আপনাকে ভালো দামে বাসা বিক্রি করতে সাহায্য করবে।
২. বাসার ভেতরের দিকটা রং করিয়ে নিতে পারেন
বাসায় করা রং কিছুটা পুরোনো মনে হচ্ছে বা কোথাও কি শ্যাওলার আস্তরণ পড়েছে? তাহলে আপনার বাসার ভেতরে এবং বাইরের দিকটি পুনরায় রং করিয়ে নিন। তবে আমরা পুরো অভ্যন্তরে একাধিক রং ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি; বরং দ্রুত আপনার ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটি আদর্শ রং বেছে নিন।
৩. বাসার রক্ষণাবেক্ষণ সাশ্রয়ী রাখুন
মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার কারণে বেশিরভাগ ক্রেতাই এমন একটি বাড়ি কিনতে আগ্রহী হবেন না যেটির জন্য ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। তবে বাড়ি বিক্রির পূর্বে খরচসাপেক্ষ কিছু বড় যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন, যেমন কাঠের আসবাবপত্র, ওয়াটার হিটার, বা ড্রয়িং-রুম সংস্কার করা, ইত্যাদি আপনার ক্রেতার মনের শঙ্কাগুলো যেমন দূর করতে পারে, তেমনি আপনিও ‘বিক্রির জন্য বাড়ি’ শিরোনামের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় ভালো দাম আশা করতে পারেন।
পাশাপাশি যে ধরণের আপগ্রেডগুলো বাসা পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে সেগুলোও আপনার আকাঙ্ক্ষিত মূল্য বাড়ানোর জন্য সহায়ক হতে পারে; যেমন – ভাঙাচোরা মেঝের বদলে টাইলস ব্যবহার করা কিংবা ওয়াশরুম এ স্নানের স্থানটি আলাদা করা, ইত্যাদি।
৪. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির দিকে মনোযোগ দিন
আজকাল, বেশিরভাগ ক্রেতাই পরিবেশ-বান্ধব বাসা এবং ইউটিলিটি চার্জ কমাতে পারে অর্থাৎ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে এরকম বাসা খোঁজার উপর জোর দিয়ে থাকেন।
আপনি যদি ইতোমধ্যেই বাড়ির সংস্কার বা রেনোভেশনে কাজে হাত দিয়ে থাকেন এবং বাড়ির যন্ত্রপাতি আপগ্রেড করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন যা পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুতের বিল কিছুটা হলেও কমাতে সক্ষম।
পরবর্তীতে আপনি এগুলো ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে পারেন এবং এতে করে ক্রেতারাও সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনার প্রপার্টি দেখতে শুরু করবে।
কিছু খরুচে পরিবেশ-বান্ধব আপগ্রেড থেকে আপনি উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারেন তবে এ ধরণের খরচ অতিরিক্ত না করাই শ্রেয়। বরং আপনার বাজেট এবং আপনি বাসা বিক্রি করার মাধ্যমে যেমন মূল্য আশা করছেন সেই অনুযায়ী বাসা সংস্কার এবং আপগ্রেড করার চেষ্টা করুন।
আপনি যদি সাশ্রয়ী আপগ্রেড করতে পারেন, তাহলে তাই-ই করুন। কম খরচে সংস্কার এবং দীর্ঘ মেয়াদে আপনার জন্য লাভজনক এমন আপগ্রেডগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন।
৫. ছোটখাটো ত্রুটিগুলোর প্রতি মনোযোগী হতে হবে
ক্রেতারা যখন আপনার বাড়ি দেখার জন্য আসবে, তখন ছোটখাটো সমস্যা বা ত্রুটিগুলো একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে যেগুলো মূলত বাসার প্রতি ঠিকঠাক যত্ন না নেওয়ার ফল, এবং শেষমেশ এগুলোই ক্রেতাদের অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে থাকে। বাসা বিক্রির পূর্বে যে জিনিসগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিতঃ
- নোংরা দেয়াল, বিশেষ করে দরজা এবং জানালার কাছে যেগুলো রয়েছে
- খসে পড়া রং
- নষ্ট বৈদ্যুতিক ফিটিংস
- নোংরা রান্নাঘর ও বাথরুম
- ভাঙাচোরা মেঝে
ছোটখাটো এই সমস্যাগুলো সমাধান করার পাশাপাশি নিশ্চিত হয়ে নিন যেন আপনার বাসার আশেপাশে কোনো অপ্রীতিকর গন্ধ, যেমন পোষা প্রাণীর গন্ধ বা খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে দুর্গন্ধ আসছে কিনা। ক্রেতাদের কাছ থেকে এই সমস্যাটি না লুকানোই শ্রেয়, কারণ হয়তো আপনি পোষা প্রাণীর সাথে অভ্যস্ত, কিন্তু আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা এটি পছন্দ নাও করতে পারে।
৬. অনলাইনে আপনার বিজ্ঞাপন দিন
বাড়ি বিক্রি করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ আয় করতে আপনি বিক্রয় ডট কম-এ বিজ্ঞাপন পোস্ট করতে পারেন। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আপনার রান্নাঘর, শৌচাগার, বসার ঘর বা ছাদের সঠিক বর্ণনা এবং আকর্ষণীয় ছবি দিন।
পরিশেষ
আমরা আশা করি উল্লেখিত টিপসগুলো আপনাকে আপনার বাসা বিক্রির ব্যাপারে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কোন জায়গাগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে তা বিবেচনা করতে সাহায্য করবে এবং বাড়ি বিক্রির সময় করা ভুলগুলো থেকে বিরত রাখবে।
রিয়েল এস্টেট সম্পর্কিত অন্যান্য খবর এবং বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া সম্পর্কিত ট্রেন্ড নিয়ে জানতে চোখ রাখুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস – বিক্রয় ডট কম-এ।
আপনার আগামীর জন্য শুভকামনা!
বিক্রির জন্য বাসা in Dhaka | বিক্রির জন্য বাসা in Chattogram |
বিক্রির জন্য বাসা in Dhaka Division | বিক্রির জন্য বাসা in Khulna Division |
বিক্রির জন্য বাসা in Sylhet | বিক্রির জন্য বাসা in Chattogram Division |