বাড়ি কেনার গাইডঃ নতুন নাকি পুরনো কোন বাড়ি কিনবো?
বাড়ি কেনার কথা মাথায় আসলেই সবার আগে যেই ভাবনাটা আসে তা হলো, নতুন নাকি পুরনো বাড়ী কিনবো?
ফ্লাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা আস্ত বাড়ি; নতুন বাড়ি কেনা প্রত্যেকের জীবনের অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত।
নতুন নাকি পুরনো বাড়ি– কোনটি হতে পারে সেরা পছন্দ?
যেহেতু বাড়ি কেনার ব্যাপারে এই মতামতগুলো নানা বিষয়ের কারনে ভাগ হয়ে আছে, তাই নতুন কিংবা পুরনো যেকোন ফ্লাট কেনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এই লেখাটি পাঠককে নানাভাবে সাহায্য করবে।
আপনি যখন এদেশে কোন নতুন ফ্লাট কেনা এমনকি ভাড়ার বিষয়েও আগ্রহী হবেন, এই লেখাটি আপনাকে জানাবে নতুন ও পুরনো বাড়ির সুবিধা ও অসুবিধার দিকগুলো।
নতুন কিংবা পুরনো ফ্লাট কেনার সময় যে ভাবনাগুলো বেশী মাথায় আসে
শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বাড়ি কেনার বিষয়গুলোতে প্রভাবক বিষয়গুলো সারাবিশ্বে একই। গুণগত মান ও নির্মাণশৈলীর কারনে অনেক মানুষই পুরনো বাড়ি কেনার প্রতি আকৃষ্ট থাকেন। অপরদিকে একবিংশ শতাব্দীর জীবনধারায় অনেকে সদ্য বানানো নতুন বাড়ির প্রতি আগ্রহী হন।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাড়ি অন্বেষকদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকই বেশী যারা নতুন বাড়ি কিনতে চান।
এই শ্রেণীর লোকেরা নতুন ফ্লাটে থাকতে পছন্দ করেন যাতে রুম লাইট, আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, গ্যাজেট ও জ্বালানীশক্তি সাশ্রয়ী পরিবেশ তাদের বর্তমান জীবনযাত্রার মানের সংগে মানানসই।
অন্যদিকে যখন আপনি পুরনো বাড়ি কেনেন, তখন প্রধানত প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী, মজবুত নির্মাণ কিংবা সাশ্রয়ী মূল্যের কারনগুলো বেশী কাজ করে। শুধুমাত্র এদেশে নয়, আধুনিক মানের নির্মানের কারনে বিশ্বব্যাপী নতুন বাড়ি কেনার চাহিদা বাড়ছে।
নতুন কিংবা পুরাতন ফ্লাট কেনার সুবিধা, অসুবিধার যুক্তিগুলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ন।
সরকার ও কর্তৃপক্ষকে তাই গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, তারা কি পুরনো বাড়িগুলো সংরক্ষণ করবে নাকি নতুন বাড়ি বানিয়ে জনগনের আবাসনের চাহিদাকে মেটাবে। সঙ্গে ব্যাংক থেকে লোন ও নানা স্কিমও দেয়া হচ্ছে বাড়ি কেনার ব্যাপারে ক্রেতাদের সাহায্য ও উদ্ধুদ্ধ করার জন্য।
আপনি যদি এমন ক্রেতাদের মধ্যে একজন হন যিনি নতুন কিংবা পুরনো বাড়ির মধ্যে কোনটি কিনবেন তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আপনার জন্য এই লেখাতে বাড়িগুলো ক্রয়ের সুবিধা ও অসুবিধার বিবরণ আপনাকে সিদ্ধান্তগ্রহনে সাহায্য করবে। তাই দেরি না করে দেখে নেয়া যাক এদেশে পুরনো বনাম নতুন ফ্লাট ক্রয়ের সুবিধা ও অসুবিধার দিকগুলো। এই সম্পর্কে আরও সাহায্য পেতে দেখে নিন ঢাকা শহরের যেসব এলাকা ফ্ল্যাট কেনার জন্য জনপ্রিয়।
পুরনো ফ্লাট কেনার সুবিধাগুলো
অনন্য ও ব্যতিক্রমী নির্মাণশৈলী
যখন আপনি পুরনো বাড়ি কিনবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রি দেখা যাবে বাড়িটি অন্তত ৩০ বছর আগে তৈরি। এই পুরনো প্রপার্টিগুলো ব্যতিক্রমী নির্মানশৈলী দিয়ে একপ্রকার সুনাম অর্জন করেছে। এগুলোর নির্মানের ধরন অনন্য ও আকর্ষনীয় হওয়ায় একটি নিজ চরিত্র ধারণ করছে। বাড়িগুলোর পেছনের ইতিহাস বাড়িগুলোকে এখনকার ভিন্টেজ ব্রান্ডে পরিণত হয়েছে।
গুনগত নির্মাণ
এটি সত্যি যে বাড়িগুলো পুরনো ধাঁচের নির্মান হলেও গুনগত মানের দিক দিয়ে এখনকার বাড়ির থেকে পুরনো বাড়িগুলো অনেকাংশে এগিয়ে। বাড়ি নির্মানের ম্যাটেরিয়াল কিংবা উপাদানগুলো ১০–২০ বছর আগের হলেও আজকালকার বাড়ি নির্মানের উপাদানগুলো থেকে ঢের ভালো।
ক্রয়ে স্বল্প খরচ ও দরকষাকষির ক্ষমতা
বাড়ি ক্রয়ের খরচের দিক চিন্তা করলে পুরনো বাড়ির বিক্রয়মূল্য নতুন বাড়ির থেকে অনেক কম চাওয়া হয়, এবং অনেকক্ষেত্রে ক্রেতারা দরকষাকষির সুযোগও পেয়ে থাকেন। বাড়ির বর্তমান অবস্থা ও বয়সের কারণে ক্রেতারা ক্রয়মূল্য তুলনামূলক কম বলার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
পর্যাপ্ত প্রশস্ততা
পুরনো বাড়িগুলো আগে যে মানসিকতা নিয়ে বানানো হতো সেখানে বাড়ির আয়তন কিংবা প্রশস্ততা একটি গৌণ বিষয় হিসেবে ভাবা হতো। তাই পুরনো বাড়িগুলোতে অনেক বিশাল আকৃতির সব কামরা, স্টোরেজ এর জন্য পর্যাপ্ত যায়গা, বড় খাবার ঘর, রান্নাঘর, বারান্দা থাকতো তাই সেখানে এয়ার কন্ডিশন, বিদ্যুতের মত বিষয়গুলো আলাদা করে বড় আকারে ভাবনায় রাখা হতোনা।
পুরনো ফ্লাট কেনার অসুবিধাগুলো
বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রিতা
যখন আপনি এদেশে ফ্লাট কিংবা বাড়ি খুঁজবেন, তখন দেখবেন অধিকাংশ পুরনো বাড়িগুলোই বিক্রির জন্য অনেকদিন ধরে পড়ে আছে। আপনি পছন্দসই কোন পুরনো বাড়ির জন্য একটি দামও প্রস্তাব করতে পারেন কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আরো নতুন প্রস্তাবের আশায় বাড়ির মালিকেরা চুড়ান্ত বিক্রির সিদ্ধান্তটা নিতে চাননা। তাই পুরনো বাড়ি বিক্রির প্রক্রিয়া অনেক লম্বা, দীর্ঘসূত্রি এবং অনেক ক্ষেত্রে হতাশাজনক।
নিরাপত্তার অপর্যাপ্ততা
নতুন ধাঁচের জানালা কিংবা দরজার লক, ফায়ার এলার্ম, ভোল্টেজ রেগুলেটরের মত আধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো আপনি পুরনো দিনের বাড়িতে আশা করাটা ঠিক হবেনা।
পুরনো বাড়ি বড় বাড়ি, আর বড় বাড়ির বেশী দাম
নতুন বাড়িগুলোতে যেহেতু অনেক বেশী পরিমানে রুম থাকে ও আয়তনে বড় হয়, তাই পুরনো বাড়ির দাম নতুন বাড়ির থেকে অনেকক্ষেত্রে বেশী হয়। তাই ভালো দাম না হাকালে বড় আকারের পুরনো বাড়ি কেনার সুযোগ আপনি হারাতে হতে পারে।
ঘনঘন মেরামত
সাধ্যের মধ্যে আপনি একটি পুরনো বাড়ি পেয়ে যেতে পারেন ঠিকই, কিন্তু অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচের ব্যাপারেও আপনাকে ভাবতে হবে। পুরনো হওয়ায় বাড়ির নানা যন্ত্রাংশের ঘনঘন মেরামতের ব্যাপারটি অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। অনেকক্ষেত্রে, এই ছোটছোট খরচগুলো আপনার প্রত্যাশিত খরচকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
নতুন ফ্লাট কেনার সুবিধাগুলো
সরকারী সাহায্য
আগেই জানিয়েছি, সরকার নতুন বাড়ি কেনায় উৎসাহ প্রদানের জন্য নানা ব্যাংকিং স্কিম তৈরি করেছে। এরসঙ্গে অনেক প্রপার্টি ডেভলপারদের দেয়া নানা আকর্ষনীয় ও সহজ স্কিম বাড়ি কেনার বিষয়টাকে সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের আবাসন খাতে নেয়া উদ্যোগগুলো জানতে এই লেখাটি পড়ুন খুঁজে নিন ভাড়া বা কেনার জন্য উপযুক্ত বাসা।
নিজের মত করে ফাঁকা বাড়ি সাজানোর সুযোগ
নতুন ফ্লাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা বাড়িটিকে আপনি আপনার পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য নিজের আপন মনে সাজানোর সুযোগ পাবেন। বাড়ির নাম, ওয়ালপেপার কিংবা দেয়ালের রঙ, ফিটিংস সহ নানাবিধ বিষয়গুলির ব্যাপারে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। নিজের সিদ্ধান্তে ভালো জিনিসগুলো দিয়ে বাড়ি সাজাচ্ছেন, তাইতো ঘনঘন নষ্ট ও মেরামতের ঝামেলা থেকে উদ্ধার পাবেন।
জ্বালানীশক্তি সাশ্রয়ী
নতুন বাড়িগুলো ছোট রুমের আয়তনে তৈরি বিধায় এটি অধিক জ্বালানীশক্তি সাশ্রয়ী। বিদ্যুৎ ও ইউটিলিটির এই বাড়তি খরচের যুগে আপনি কম খরচে আপনার ছোট রুমকে এসির সাহায্যে ঠান্ডা করতে পারবেন। আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন ফ্রিজ, টিভি, ওয়াশিং মেশিনও স্বল্প বিদ্যুৎ খরচে চালাতে পারবেন আপনি। বাজারের সেরা জ্বালানীশক্তি সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি খুঁজুন Bikroy.com মার্কেটপ্লেসে।
নতুন ফ্লাট কেনার অসুবিধাগুলো
নির্মাণ সমাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতা
সুবিধার পাশাপাশি নতুন ফ্লাট কেনার অসুবিধাও রয়েছে যেমন বাড়ি নির্মাণ সমাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতা। অনেকক্ষেত্রে ক্রেতাদের ডেভলপার থেকে বাড়ি বুঝে পেতে ২ থেকে ৩ বছরও লেগে যেতে পারে।
গুণগত নির্মাণের ঘাটতি
অনেকেই মনে করেন ইদানিংকালে নির্মিত ফ্লাটবাড়িগুলোতে সস্তামানের উপকরণ ব্যবহৃত হয় যেটি বেশিদিন স্থায়িত্ব লাভ করেনা। উপকরণগুলো দেখতে সুন্দর ও আকর্ষনীয় হলেও গুণগত মানের দিক দিয়ে সেগুলোতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
অপর্যাপ্ত প্রশস্ততা
এদেশে নতুন ফ্লাটবাড়ির যে বিষয়টি নজরে আসে তা হলো এগুলোর অপর্যাপ্ত প্রশস্ততা। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বানাতে গিয়ে বাড়িগুলো ছোট আকৃতির হয়ে থাকে যেগুলো অনেকক্ষেত্রে অনাকর্ষণীয়।
সার্ভিস চার্জ
নতুন বাড়িতে উঠতে গেলে আপনাকে গুনতে হবে নানা ধরনের সার্ভিস চার্জও। যদিও এটি স্থানের সাথে পরিবর্তন হয়, তাও আপনাকে বাড়ি সামলে রাখতে দিতে হবে সিকিউরিটি, লিফট, পার্কিং, ময়লা সহ নানান বিল। অনেকক্ষেত্রে খরচগুলো একত্রে একটি আস্ত বাসা ভাড়া নেয়ার সমান।
শেষকথা
আশাকরি লেখাটি দিয়ে আপনার বাড়ি খোঁজার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কৌতুহলগুলো মেটানো গেছে।
এবারে বলুন, আপনার সিদ্ধান্তটি কি?
নতুন বাড়ি কিনবেন?
নাকি পুরনো বাড়ি কেনার ব্যাপারেই মনস্থির করবেন?
বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত একটি দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ। দিনশেষে এটি একান্তই আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ যে আপনি নতুন বাড়ি কিনবেন নাকি পুরনো।
কিছু মানুষ অন্ধভাবে পুরনো বাড়িকেই পছন্দ করে আবার কিছু মানুষের পছন্দ নতুন বাড়ি। কিন্তু বাকিদের জন্য বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত বড্ড বিভ্রান্তিকর এবং তারা জানেনা কোথা থেকে শুরু করতে হবে।
বাড়ি কেনার ব্যাপারে লেখাটিতে আলোচিত পুরনো ও নতুন বাড়ির সুবিধা অসুবিধাগুলো আপনাকে একটি সিদ্ধান্তগ্রহনে সাহায্য করবে বলে আশা রাখা যায়। ঢাকায় বিভিন্ন দাম ও আয়তনের প্রোপার্টিগুলো সম্পর্কে জানুন এই ইনফোগ্রাফিক্স এর মাধ্যমে যেটি ২০১৮ সালের আবাসন খাতের পরিসংখ্যান দিয়ে তৈরি ২০১৮ সালে আবাসন খাত এর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে।
পরিশেষে বাড়ি কেনার ব্যাপারে আপনি বিজয়ী কিংবা পরাজিত হবেন কিনা সেটি আসল নয়, আসল হলো আপনি বাংলাদেশে ফ্লাট খোঁজার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিচ্ছেন। বাড়ি আপনি ভাড়া কিংবা পুরোপুরি কেনার জন্যই খুঁজুন, এটি সবচেয়ে জরুরী যে আপনি সমস্ত বিকল্পগুলো খুঁজতে পেরেছেন কিনা!
Bikroy.com প্রপার্টি পোর্টালের সমস্ত লিষ্টিং–গুলোতে ব্রাউজ করে খুঁজুন ফ্লাট। খুঁজুন আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য সঠিক বাড়ি কিংবা আপনার পরবর্তী প্রপার্টি শুধুমাত্র Bikroy.com–এ।
আশাকরছি এই পুরনো বনাম নতুন প্রপার্টি ক্রয়ের গাইডটি আপনাকে সঠিক বাড়ি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। প্রপার্টি ক্রেতা কিংবা বিক্রেতাদের জন্য আপনার সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ কমেন্ট সেকশনে লিখুন।