মশার অত্যাচার থেকে বাঁচুন : ঘরোয়া টিপস
বর্ষাকাল এলেই মনটা ফুর্তিতে ভরে ওঠে, সবকিছুর মধ্যে নতুন প্রাণের স্পন্দন দেখা যায়। মশারাও এর থেকে বাদ থাকবে কেনো? এই মৌসুম মশাদের বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত সময়। একি সাথে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, সর্বোপরি আজকের ত্রাস─’চিকুনগুনিয়া’! মশা থেকে বাঁচার জন্য দোকানের কেমিক্যালযুক্ত মশা তাড়ানোর সামগ্রী কিনে ঘরের পরিবেশ দূষিত করার কোন মানেই হয় না। কিছু পরিবেশ-বান্ধব ঘরোয়া টিপস আপনাকে মশার হাত বাঁচতে সাহায্য করতে পারে
কফির গুড়ো
কফি খেতে কে না ভালোবাসেন? সবার বাসায়ই কমবেশি কফির পাউডার থাকেই। এই কফি এবার আপনাকে বাঁচাবে মশার যন্ত্রণা থেকে! বিশ্বাস হচ্ছে না? কফির গুড়ো মশার ডিম নষ্ট করতে পারে। বাসার আশে পাশে বা বাসার মধ্যে যেকোন যায়গায় জমে থাকা পানিতে সামান্য পরিমানে কফির গুড়ো ছিটিয়ে দিন। পানিতে থাকা মশার ডিমগুলো পানির উপরিতলে ভেসে উঠবে, আর দ্রুতই অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে। এভাবে আপনি মশার বংশ গোড়া হেকেই নির্বংশ করতে পারবেন, আর এতে পরিবেশেরও কোন ক্ষতি হবে না।
মশার জন্য ফাঁদ
ঘরে বসে খুব সহজেই মশার ফাঁদ তৈরি করা যায়। শুধুমাত্র একটা প্লাস্টিকের বোতল লাগবে এজন্য; বোতলটি আড়াআড়িভাবে কেটে দুভাগ করুন। এবার গরম পানিতে চিনি মেশান আর ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। মিশ্রনটি ঠাণ্ডা হয়ে এলে এতে ঈস্ট মেশান এবং বোতলের নিচের অংশে ঢালুন। এবার বোতলের উপরের অংশটি ঢাকনা খুলে ফানেলের মত উলটো করে নিচের অংশের উপর বসান ও টেপের সাহায্যে কিনারগুলো আটকে দিন। ব্যস, হয়ে গেলো মশা মারার ফাঁদ! এবার যেখানে যেখানে মশার উৎপাত বেশি সেখানে এরকম ফাঁদ পেতে দিন।
এইধরনের ফাঁদকে সুগার-ঈস্ট ফারমেন্টেশন পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। উপাদানগুলো বাজারে খুব সহজেই পাওয়া যায় বলে পদ্ধতিটি যেমন পরিবেশ-বান্ধব, তেমনই কম ব্যয়বহুল।
লেবু আর লবঙ্গ
এই পদ্ধতিটি মশা তাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায়গুলোর মধ্যে একটি। ৩টি লেবু মাঝামাঝি বরাবর কেটে নিন, এবার ১০-১৫টি লবঙ্গ এর মধ্যে গুঁজে দিন। প্লেট বা বাটিতে করে আপনার বসার যায়গার পাশে রেখে দিন। এই যুগলবন্দী দারুণ সুবাস ছড়িয়ে আপনার সন্ধ্যা মাতিয়ে রাখবে, তেমনই মশার বাহিনীকে রাখবে আপনার থেকে দূরে। সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য এদের কে মাইক্রোওয়েভ এ কয়েক সেকেন্ড রেখে হাল্কা গরম করুন, এতে করে লেবু আর লবঙ্গ থেকে সুগন্ধী নির্যাস বের হবে। এভাবে তৈরি করা কয়েকটি আপনার বসার যায়গায় রাখুন আর আরামে থাকুন।
রসুন
রসুনের ঝাঁঝালো নির্যাস মশা তাড়াতে দারুন ভূমিকা পালন করতে পারে। কয়েকটি রসুনের কোয়া থেঁতলে নিন এবং পানিতে কিছুক্ষন জ্বাল দিন। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে এলে একটি স্প্রে-বোতলে ভরুন এবং ঘরের কোনায় কোনায় স্প্রে করুন। এটি মশা তাড়ানোর একটি অনন্য প্রাকৃতিক উপায়। এছাড়া নিয়মিত রসুন খেলে মশারা আপনাকে কম কামড়াবে। ত্বকে সরাসরি রসুনের কোয়া ঘষলেও উপকার পাবেন, তবে কারো কারো ত্বকে রসুন অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে।
পুদিনা, মেনথল ও ল্যাভেন্ডার
পুদিনা ও মেনথল তাদের টাটকা ঝাঁঝালো ঘ্রানের সাহায্যে প্রাকৃতিক ভাবেই পোকামাকড় দূরে রাখে। এগুলো জ্বাল দিয়ে স্প্রে করে খুব সহজেই মশা তাড়াতে পারবেন। বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, সুগন্ধী তেল/নির্যাস মশার বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারে। তবে এই নির্যাস ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে তাই স্প্রে করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ল্যাভেন্ডার এর সুবাস খুব কার্যকরভাবেই মশাদের দূরে রাখতে পারে। ল্যাভেন্ডার এর ঘ্রাণ বেশ কড়া তাই মশারা এ ঘ্রাণ সহ্য করতে পারে না, কিন্তু আমাদের জন্য তা খুবই স্বাচ্ছন্দের। ল্যাভেন্ডারের নির্যাস সারা ঘরে স্প্রে করতে পারেন, অথবা উন্মুক্ত ত্বকে সরাসরি প্রয়োগও করতে পারেন।
আরো একটি ভালো উপায় হলো ঘরে নিজেই পুদিনা, মেনথল ও ল্যাভেন্ডার রোপন করে রাখা। এইসব মশা-বিতারক উদ্ভিদ আপনার ঘরকে সুবাসিত ও নিরাপদ রাখবে সবসময়।
গ্রামে থাকুন কিংবা শহর, এইসব টিপস সবসময় আপনার কাজে আসবে। যদিও রাতে ঘুমাবার সময় মশারি কিংবা ইলেক্ট্রিক কয়েলের কোন তুলনা নেই। তবে সবকিছুর মাঝেও প্রাকৃতিক সমাধানই শ্রেষ্ঠ সমাধান। তাই দেরি না করে আজই পদ্ধতিগুলো খাটিয়ে দেখুন । 🙂
**কিনুন আকর্ষণীয় ঘর ও বাগানের সামগ্রী**