পুরোনো জিনিসের ক্রেতাদের জন্য আসবাবপত্রের খোঁজখবর
সবচেয়ে পুরোনো ফার্নিচারের খোঁজ মিলে ষোল শতকে। এখন এসব ঐতিহাসিক প্রাচীন ফার্নিচারের দাম অনেক বেশি। কিন্তু তখন যারা এসব ফার্নিচার কিনেছিল, তাদের কাছে তখনকার ওই দামও কিন্তু অনেক বেশি মনে হয়েছিল। বাসায় বসে আপনি যখন টেলিভিশন দেখছেন, তখন কাউকে বলতে দেখবেন কিভাবে তিনি মাত্র কয়েকটি টাকা দিয়ে একটি চেয়ার কিনেছিলেন যার মূল্য এখন অনেক বেশি। আজ পুরোনো জিনিসের ব্যবসায়ীদের হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পুরোনো জিনিসপত্র খুঁজতে দেখা যায় যাতে তার ওইগুলো অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারে। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগে পুরাতন দ্রব্য কেনার বিষয়ে আপনার আরও জানা প্রয়োজন।
পুরাতন স্টাইল
পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন আসবাবপত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্যাকোবিয়ান, উইলিয়াম অ্যান্ড ম্যারি ইত্যাদি। জ্যাকোবিয়ান ফার্নিচার হয় ইংরেজ নকশাকাররা তৈরি করেছিল অথবা তাদের অনুপ্রেরণায় এ ডিজাইনের ফার্নিচার তৈরি করা হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা। ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দেরও পূর্বে এ ধরনের আসবাবপত্রের প্রচলন ছিল। জ্যাকোবিয়ান ফার্নিচারের বৈশিষ্ট্য হলো কাঠে তাপ দিয়ে এতে নকশা তৈরি করা হতো এবং এতে নকশার আধিক্য থাকতো। উইলিয়াম অ্যান্ড ম্যারি ফার্নিচারে জ্যাকোবিয়ানের চেয়েও কিছুটা বেশি কারুকাজ থাকতো। এ ধরনের আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে বেঁত দিয়ে চেয়ার বানানো হতো এবং কিছু ক্ষেত্রে এতে বার্র্নিশ করা হতো। প্রাচীন ফার্নিচারের মধ্যে আর একটি হচ্ছে কুইন অ্যান স্টাইলের ফার্নিচার। এ ধরনের ফার্নিচারে মার্জিত মাপের পা ও এতে সাজসজ্জা থাকতো প্রচুর। এ ছাড়াও এ ধরনের আসবাবপত্রে আকর্ষণীয় ড্রয়ার থাকতো যা দেখতে বাদুরের পাখার মতো মনে হতো। আসবাবপত্র দিয়ে আপনার ঘরটি দারুন ভাবে সাজিএ তুলতে আমাদের একটি টিপস দেখে নিন “কীভাবে আপনার ছোট বাসাটি দারুণ সব আসবাবপত্র দিয়ে সাজাবেন?“
১৮ শতাকের ফার্নিচার
আঠার শতকের ফার্নিচার জগতে নিত্যনতুন কয়েকটি ডিজাইনের সংযোজন ঘটে। ঔপনিবেশিক যুগের ফার্নিচারের প্রচলন ছিল আঠার শতকের প্রথম দিকে। এতে খুব কম নকশা করা হতো যাতে উইলিয়াম অ্যান্ড ম্যারি ফার্নিচারের কিছু ডিজাইনের সন্নিবেশ থাকতো। এ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিজাইনগুলোর মধ্যে চিপানডেল অন্যতম। চিপানডেল হলো বৈঠকখানায় ব্যবহৃত হালকা ধরনের আসবাবপত্র। এ ফার্নিচারের প্রথম প্রচলন ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে। পরবর্তীতে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের ফার্নিচারে থাকতো খোদাই করে তৈরি করা নকশাযুক্ত পা, সম্মুখভাগে থাকতো সুন্দর নকশা, আরও থাকতো নখরযুক্ত পায়ের পাতা। যারা নিজের ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে চাইতেন তাদের কাছে এ ফার্নিচার অত্যন্ত পছন্দের ছিল। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ডিজাইনাররা ফার্নিচারের ক্ষেত্রে হেপলহোয়াইট স্টাইলের প্রবর্তন করেন। এ ধরনের ফার্নিচার তৈরিতে বিচিত্র রকমের কাঠ ব্যবহার করা হতো যাদের রঙেও থাকতো বৈচিত্র্য। এ ছাড়াও এ ফার্নিচারের পা থাকতো খুব সরু।
আধুনিকতর স্টাইল
ঊনিশ শতাব্দীতে ডিজাইনাররা তাদের ফার্নিচারে আরও আধুনিক কারুকাজের সন্নিবেশ ঘটিয়েছিলেন। আর এ উদ্যোগই শেকার, ভিকটোরিয়ান ও আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট ফার্নিচারের প্রচলন ঘটিয়েছিল। শেকার ফার্নিচারে সাধারণ ডিজাইন থাকতো যাতে সাজসজ্জাও থাকতো খুবই কম। শেকাররা এ ডিজাইনের প্রচলন করেছিল বলে তাদের নাম অনুসারেই এ ফার্নিচারের নাম হয় শেকার ফার্নিচার। ভিকটোরিয়ান ফার্নিচারে অনেক সাজসজ্জা বিশিষ্ট দীর্ঘ পা এবং নকশা থাকতো। আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট স্টাইল মিশন স্টাইল নামেও পরিচিত ছিল। এতে সমতল নকশার পাশাপাশি সমান্তরাল রেখা এবং অত্যন্ত পরিপাটি সাজসজ্জা থাকতো। আধুনিক যুগের ফার্নিচারে খোদাই করা রেখার পাশাপাশি জটিল নকশার ব্যবহার শুরু হয়।
সুইডেন অ্যান্ড বিয়ন্ড
১৯৩০-এর দশকে ফার্নিচারের ক্ষেত্রে এক নয়া আন্দোলনের সূচনা হয় সুইডেন এবং ডেনমার্কে। এই ফার্নিচারে অধিকতর নতুন স্টাইলের নকশা থাকতো যাতে মসৃণ সজ্জা এবং পরিপাটি রেখা থাকতো। ফার্নিচারের ক্ষেত্রে এই আন্দোলন কাগজে-কলমে ১৯৫০ সালে শেষ হলেও কার্যত ১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত এটি চলেছিল। এ যুগের বিখ্যাত ডিজাইনারদের অন্যতম হচ্ছে হারম্যান মিলার ও ইমাস। ফিকা রঙের হালকা কাঠ ব্যবহার করা হতো এ যুগে। এ ছাড়া কিছু কিছু ফার্নিচারে সূক্ষ¥ কারুকাজ থাকতো যা স্পেস রেস থেকে উৎসাহ যুগিয়েছিল।
বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত ফার্নিচারের যা যা দেখে নেওয়া ভাল
কোনো ফার্নিচার কিনে বাসায় নিয়ে আসার আগে কিছু বিষয় আপনাকে বিবেচনা করতে হবে। পুরাতন ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে আপনি সবসময় আগে ড্রয়ার খুলে ভাল করে এর অবস্থা দেখে নেবেন। আগের দিনের ফার্নিচারের ক্ষেত্রে দেখা যায় জোড়া লাগানোর সময় দুটি কাঠ খাঁজে খাঁজে আটকানো হতো যেখানে প্রস্তুতকারক সযতেœ একটি কাঠের কিনারা অন্য কাঠের কিনারার খাঁজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতো। আপনি প্রায়ই পুরাতন ঘরানার ডিজাইন ও সাজসজ্জা বিশিষ্ট আধুনিক ফার্নিচার দেখে থাকতে পারেন। কিন্তু এদের ক্ষেত্রে যা চোখে পড়বে তা হলো দুটি কাঠের কিনারা মেশিন দিয়ে কেটে মসৃণ করার পর তা জোড়া লাগানো হয়। ড্রেসার ফার্নিচারসহ ড্রয়ার আছে এমন ফার্নিচারের ক্ষেত্রে আগে ড্রয়ারটি খুলে এর ভেতরের অংশ ভালভাবে দেখে নিন। যদি ড্রয়ারের পেছনের দিকটায় কোনো প্রকার গর্ত দেখতে পান তাহলে বুঝবেন যে এ ফার্নিচারে আগের ব্যবহারকারী নতুন কোনো কাঠ বা কোনো কিছু সংযোজন করেছিল। আপনি ফার্নিচারের পাগুলো দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এগুলো নতুন করে সংযোজন করা হয়নি। পুরাতন অনেক ফার্নিচারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এখানে ওখানে সড়ানোর কারণে বা বহুদিন ধরে ব্যবহারের ফলে সেগুলোর কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর ফলে ব্যবহারকারী সেগুলো মেরামত করে, নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ফেলে দিয়ে নতুন করে সংযোজন করে।
ফার্নিচারে প্রস্তুতকারক বিষয়ক কোনো চিহ্ন আছে কি?
পুরাতন ফার্নিচার পর্যবেক্ষণের পর কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের পর আপনাকে জানতে হবে কিভাবে বিভিন্ন প্রস্তুতকারকের ব্রান্ড চিহ্ন বা বিশেষ চিহ্ন চিহ্নিত করতে হয়। প্রস্তুতকারকের ব্রান্ড চিহ্ন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে এমন পুরাতন ফার্নিচারের দাম ব্রান্ড চিহ্ন নেই এমন ফার্নিচারের দামের চেয়ে অনেক কম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইমাস ১৯৬০-এর দশকে একটি লাউঞ্জ চেয়ার তৈরি করেছিল যাতে তিনি মসৃণ ক্রোম এ্যাকসেন্ট, কাঠ প্যানেলের কাজ এবং চামড়া-সামগ্রী ব্যবহার করেছিলেন। এই ডিজাইন কিছু কোম্পানিকে বিশেষ করে প্লাইক্রাফটকে একই ডিজাইনের ফার্নিচার তৈরিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। একটি ইমাস লাউঞ্জ চেয়ারের দাম এর নকল কপির চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ বেশি।
অবস্থা নির্ণয়
বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার ফার্নিচারের অবস্থা আগে বিবেচনা করতে হবে। কুইন অ্যান ফার্নিচারের অতি সামান্য কোনো ত্রুটি এর মূল্য অনেক কমিয়ে দিতে পারে। আর বড় ধরনের ক্ষতি যেমন মেরামত করা পা অথবা কোনো অংশ ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় ফার্নিচারের দাম আরও কমিয়ে দিতে পারে। আপনার ফার্নিচারের এ সকল বিষয়ে আপনার যদি কোনো উদ্বেগ বা প্রশ্ন থাকে থাকে, অথবা আপনি যদি নিশ্চিত হতে না পারেন যে ফার্নিচারে কোনো মেরামত কাজ করা হয়েছে কি না; তাহলে অবশ্যই একজন এক্সপার্টের সহায়তা নিন। একজন ফার্নিচার বিশেষজ্ঞ চেয়ার বা টেবিলের দিকে একবার মাত্র তাকিয়েই এর অবস্থা বলে দিতে পারবেন।
কোথায় পাওয়া যাবে
নতুন ক্রেতাদের প্রথম প্রশ্নের একটি হলো কোথায় পুরাতন ফার্নিচার পাবো? সত্য কথা বলতে কি, আপনি ডজন ডজন উৎস থেকে সোফা, চেয়ার, ড্রেসার, টেবিল ইত্যাদি কিনতে পারবেন। আপনার আশেপাশে যদি কোনো ফ্রি মার্কেট থাকে তাহলে পুরো একদিন ধরে দোকানগুলোতে ঘুরুন। আপনি আপনার প্রতিযোগিদের চেয়ে আগেই মার্কেটে গেছেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন। পুরাতন জিনিসপত্র বিক্রি করে এমন দোকান কিংবা আপনার এলাকার ফার্নিচারের দোকানেও আপনি পুরাতন ফার্নিচার পেতে পারেন।
কোথায় বিক্রি করতে হবে
বাংলাদেশে পুরাতন জিনিসপত্র অনলাইনে বিক্রি করা কঠিন। আপনি আপনার এলাকা থেকে ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত সব সাইট খুঁজে পাবেন না। এছাড়াও ইন্টারনেটের ধীরগতির ফলে ছবি আপলোড ও লিস্ট তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। উচ্চ শিপিং রেট গোনা বা কম্পিটারেরর সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আপনি নিজেই একটি দোকান চালু করুন, অথবা বাজারে বিক্রি করুন। দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি আপনার কাস্টমার ভিত্তি গড়ে তুলতে পারবেন এবং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আপনার মুনাফাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।