সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আগে জেনে নিন
আপনি কি চাকরি খুঁজছেন?
আজকের চাকরির বাজার অনেক বেশি জটিল ও প্রতিযোগিতামূলক!আমরা সকলেই এমন চাকরির খোঁজ করি যেখানে কাজের পরিবেশে নমনীয়তা রয়েছে এবং যেখানে বেতন বা ইনসেন্টিভ স্থির থাকে। যেকোন জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় বা চাকরির আবেদনের যেকোন ধাপে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব পছন্দ ও সুবিধালাভের আকাঙ্খা অনেক বড় ভুমিকা পালন করে। কিন্তু যেসব প্রাইভেট কোম্পানি নতুন নিয়োগদের ভালো বেতন ও সুযোগসুবিধা অফার করে, সেসব জায়গায় চাকরির আবেদন করার আগে সরকারি চাকরির সুবিধাগুলো নিয়ে একবার হলেও ভেবে দেখতে পারেন।
সরকারি চাকরি বলতে টাকার চেয়ে সম্মান বড় এবং বেতনও কম এমন একটা ধারনা অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে অনেক বেশি পরিমানে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় যা অন্য প্রাইভেট সেক্টরে কল্পনাও করা যায় না। সোজাকথা হলো সরকারি চাকরি সাধাসিধা ও স্থির। কিন্তু এই চাকরি পাওয়া বাংলাদেশে অনেক দুস্কর আর বিশাল বড় একটা প্রাপ্তি বলা চলে। এই খাতে আগ্রহের অভাব থেকেই দিন দিন সরকারি চাকরি পাবার পদ্ধতিতে জটিলটা বেড়ে চলছে। আপনার পছন্দসই চাকরি খুঁজতে সাহায্য করবে Bikroy.com/jobs. আজ আমরা সরকারি চাকরির বড় বড় সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
সরকারি চাকরির সুবিধা
প্রাইভেট কোম্পানির তুলনায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের পরিমান অনেক কম হলেও প্রতিযোগিতা অনেক তীব্র। যাই হোক, প্রথমেই সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সুবিধাগুলো নিয়ে আলাপ করা যাক।
চাকরির স্থায়িত্ব
সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনার চাকরির নিরাপত্তা। যখন সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যায় বা কোনো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে, তখন প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর চাকরির বাজার পঙ্গু হয়ে পড়ে। কিন্তু যা কিছুই ঘটুক না কেনো, সরকারি চাকরিক্ষেত্র অটল দুর্গের মত কাজ করে। সারাবিশ্বে চাকরির বাজার ঝুঁকির মুখে রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অবস্থা খুবই নড়বড়ে। কিন্তু এদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক বা না হোক, একটি সরকারি চাকরি সবসময় স্থির ও নিরাপদ।
প্রাইভেট কোম্পানিগুলোয় চাকরিজীবীরা বেশিরভাগ সময়ই তাদের চাকরি বা সুযোগ-সুবিধা হারানোর ঝুঁকিতে থাকে। এই কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই মন্থরগতির অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হিমসিম খায়, আর একটা সময় বাধ্য হয়ে কর্মচারীদের বেতন, বোনাস ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা, এমনকি তাদের চাকরিও বাদ দিয়ে দেয়। সরকারি চাকরিতে এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে!
স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা
জনগনের সেবক হিসেবে একজন সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাও পেয়ে থাকেন। জনগনের সেবকদের জন্য অনেক রকম স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা ও পলিসি থাকে যা প্রাইভেট চাকরিজীবির জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল। সরকারি চাকরিক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার মধ্যে জীবনবীমা, মেডিক্যাল পরিকল্পনা, দন্তচিকিৎসা পরিকল্পনা এবং আরো অনেক রকম প্রয়োজনীয় জরুরী সেবা ব্যবস্থাও রয়েছে।
জীবনধারার সুযোগ-সুবিধা
সরকারি চাকরিজীবিদের আরো অনেক রকম সুযোগসুবিধা দেয়া হয়ে থাকে, যা তাদের একটা নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা ও জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। এসবের মধ্যে অনেক বড় একটা সুবিধা হলো বাসস্থানের সংস্থান, প্রতিটি সরকারি চাকরিজীবিরই সরকারী হাউজিং পাবার অধিকার থাকে এবং তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে পারে। এছাড়াও বাসা ভাড়া, বাড়ি বা গাড়ি কেনা ইত্যাদি বিভিন্ন রকম ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা রয়েছে। জনগনের সেবকদের কাজ, বাড়িঘর, পরিবার, পড়াশোনা ও অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোন বা অনুদানের ব্যাপারে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়।
ন্যায্য পারিশ্রমিক
অনেকেরই একটা ভুল ধারনা রয়েছে যে সরকারি চাকরিক্ষেত্রে পারিশ্রমিক অসন্তোষজনক, যদিও এটা পুরোপুরি সত্য নয়। হ্যাঁ, সরকারি চাকরিতে যে মূল বেতন অফার করা হয় তা একই পর্যায়ের প্রাইভেট চাকরির তুলনায় কিছু কম। কিন্তু আনুষঙ্গিক সুযোগসুবিধা আর সেবাসমূহ অনেক বড় বড় খরচ বাঁচিয়ে দেয় যা অন্য চাকরিতে থাকলে আপনার পকেট থেকেই হয়ত চলে যেতো। প্রাইভেট কোম্পানিতে বড় পারিশ্রমিক অফার করা হয় সত্যি, কিন্তু কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে তারা আপনার বেতন, বোনাস বা সুযোগসুবিধা কমিয়ে বা বাদ করে দিতে পারে। এছাড়াও অনেক কর্মচারী ম্যানেজমেন্টের সাথে শর্ত বা চুক্তি আরোপ করে তাদের বেতন বাড়িয়ে নিতে পারে যা অসাধু ও বৈষম্য সৃষ্টি করে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বেতন বাড়ার পদ্ধতি ন্যায্য ও স্থিতিশীল। প্রাইভেট কোম্পানির তুলনায় সরকারি চাকরিতে লক্ষণীয় মাত্রায় কম বৈষম্য রয়েছে, যেহেতু সরকারি চাকরির বেতনের স্কেল সুনির্দিষ্ট এবং পদ বা পজিশন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।
কাজের চাপ
বেশিরভাগ সময়ে পাবলিক চাকরি বা সরকারি চাকরিক্ষেত্রে কাজের চাপ বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির চাকরির তুলনায় অনেক কম। সরকারি অফিস আদালতে বেশ শিথিল কর্মপরিবেশ থাকে বিধায় কখনো প্রবল মাত্রায় কর্মক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজের চাপ খুবই কম যাতে কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, একই সাথে কাজের সময়সীমা পর্যাপ্ত থাকে অথবা কোন বাড়তি কাজের চাপ তাদের উপর দেয়া হয় না। কর্মকালের ব্যাপারটাও খুব কড়াকড়ি ভাবে বজায় রাখা হয়, যাতে কর্মচারীদেরকে কখনো ওভারটাইম করানো না হয়।
সরকারি চাকরির অসুবিধা
বিস্তৃত আমলাতন্ত্র
সারা পৃথিবীতে প্রায় প্রতিটি দেশেই সরকারি চাকরির খাতে উচ্চমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের সমস্যা দেখা যায়। এর প্রধান কারন হলো প্রচলিত কাজের পদ্ধতিতে অতিমাত্রায় নির্ভরশীল থাকা, ফলস্বরূপ আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ কর্মক্ষেত্রের তুলনায় থেকে সরকারি চাকরি জীবনে কাজের প্রতি একঘেয়েমী চলে আসে। যেখানে বর্তমানে নতুন প্রযুক্তি অবলম্বন করার ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আসছে, এই বিশাল রূপান্তরমূলক পর্ব মোটেই সহজ কাজ নয়, তবে ভবিষ্যতে এই পরিবর্তনের ধারা আরো উন্নয়ন বয়ে আনবে। বর্তমান সময়ে কেবল জনতা না, জনতার সেবকেরাও কাজের মন্থর গতি ও সেকেলে কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রায়শই হতাশ হয়ে পড়েন।
পরোক্ষ পরিবেশ
কর্মপরিবেশগত সমস্যার মধ্যে সরকারি চাকরিখাতের আরো একটা সমস্যা হলো, এমন সব ব্যক্তিদের সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ দেয়া হয় যারা প্যাসিভ ওয়ার্কিং(নিষ্ক্রিয়) মনোভাবের। প্রগতিশীল কর্মীরা সবসময় নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে নিজেদেরকে আরো বেশি দক্ষ করে তুলতে চায়, অথচ তারা নিয়োগ দেয়ার সময় প্রাধান্য পায় না। যদি নিয়োগ পেয়েও যায়, তখন ভালো ভালো কাজে অংশগ্রহণ করার সময় ম্যানেজমেন্ট বা সিনিয়রদের সমর্থন পায় না। আর দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় যদি তাদের আইডিয়া ম্যানেজমেন্টের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে বা পছন্দ হয়েও যায়, সেটা বাস্তবায়ন হতে অনেক লম্বা সময় লেগে যায়। এরকম নিরুৎসাহী পরিবেশ থেকে প্রায়শই সবচেয়ে খারাপ যে প্রভাব পড়ে তা হলো, প্রগতিশীল কর্মীদের মনোভাব পালটে যেতে শুরু করে আর প্যাসিভ ওয়ার্কিং পরিবেশ তৈরি হয় নতুন করে। এইরকম পরিস্থিতি পাবলিক, প্রাইভেট যেকোন খাতের ক্লায়েন্ট বা কাস্টমারদের জন্য খুবই খারাপ।
শেষকথা
আশা করি আপনারা প্রতিবেদনটি থেকে সরকারি চাকরি খাত ও এদের নিয়োগপদ্ধতি সম্পর্কে কিছু নতুন জিনিস জানতে পেরেছেন যেগুলো আপনাদের চাকরির আবেদন করার সময় কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। সবরকম চাকরিতেই সুবিধা ও অসুবিধা দু’টোই রয়েছে। আমরা সবাই ভালো পরিবেশ, স্থির বেতন ও আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার মত সুযোগ সহ চাকরি চাই, যেকোনো যায়গায় চাকরির আবেদন করার সময় এই জিনিসগুলো মাথায় রাখবেন। Bikroy.com/Jobs সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো ধরনের চাকরি খোঁজার জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত চাকরির ওয়েবাইটগুলোর মধ্যে একটি। ৫বছরের মধ্যে একটি বেসরকারি চাকরির তুলনায় একই রকম সরকারি চাকরি থেকে আপনি কি কি পাবেন সেটা ভেবে দেখলে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। মোটকথা আপনার জন্য সেরা চাকরিটি খুঁজে নেয়ার সময়ে আপনাকে দু’টো দিকই ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
চাকরির বাজারে মন্দার এই সময়ে আরো বিভিন্ন রকম চাকরির অপশন আছে যেমন ‘স্বনিযুক্ত’ বা স্বাধীন কর্মী, এই ধরনের কাজ ‘ফ্রিল্যান্সিং’ নামে পরিচিত। একজন স্বাধীন কর্মী হিসেবে চাইলে আপনি এমন একজন ব্যবসায়ী হতে পারেন যে গতানুগতিক পণ্যের বদলে বিক্রি করে তার প্রতিভা অথবা শিল্পকর্ম। এই ধরনের কাজ অনেক বিশেষ হয় যেমন- স্বাধীণ শিক্ষক, ট্রেইনার, প্রভাবক, ইভেন্ট প্ল্যানার, মেহেদি আর্টিস্ট, কারুপণ্য শিল্পী ইত্যাদি; এগুলো যেমন বেশ ভিন্ন ধাঁচের কাজ তেমনই উত্তেজনাপূর্ণ। একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে স্বনিযুক্ত বা ফ্রিল্যান্সিং এগুলোর কোনটারই নিশ্চিত নিরাপত্তা নেই। অতএব যেই পেশাই পছন্দ করবেন সেটা ভালোভাবে ভেবে অন্যসব অপশনের কথা মাথায় রেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিবেন।
আপনি সংবাদপত্রের চাকরি-পাতা কিংবা অনলাইনে চাকরির খোঁজ, অথবা অনলাইন চাকরির পোর্টাল যেমন Bikroy.com/Jobs, যেটাই পছন্দ করে থাকেন, আপনার পরামর্শ ও গল্প আমাদের কমেন্ট সেকশনে শেয়ার করুন, যাতে করে অন্যরাও আপনার অভিজ্ঞতা, টিপস আর পরামর্শ থেকে উপকৃত হতে পারে।
শুভকামনা রইলো!