ছবি তোলার জন্য সেরা স্মার্ট ফোন
আজকাল প্রযুক্তির বাজারে যেসব স্মার্টফোন পাওয়া যায় সেগুলো যে আপনার জন্য শুধু কল করা আর বন্ধুদেরকের টেক্সট মেসেজ পাঠানোই সহজ করে দিয়েছে তা-ই নয়, বরং প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হয় এমন অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো পরিপূর্ণ কার্যকর ডিভাইসে পরিণত হয়েছে। কেউ যখন নতুন কোনো একটি ডিভাইস কেনেন তখন তিনি ডিভাইসের যে বৈশিষ্ট্যটি সত্যিই চান তা হলো এটা দিয়ে কত ভালো ছবি তোলা যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এখন বিভিন্ন ধরণের ইমেজ হোস্টিং অ্যাপস রয়েছে যেগুলো আপনি যতসব সেলফি তোলেন আর লাঞ্চের সময় যতসব খাবার খান সেসবের ছবি আপলোড করার আদর্শ জায়গা। ছবি তোলার জন্য সেরা স্মার্টফোনগুলোর কয়েকটির বিষয়ে এখানে উল্লেখ করা হলো। অতএব আপনি আপনার জীবনের প্রিয় মূহুর্তগুলো খুব সহজেই ধরে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন।
অ্যাপল আইফোন ৫এস (Apple iPhone 5S)
অ্যাপলের আইফোন বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তারা বিভিন্ন ধরণের উচ্চমানের বৈশিষ্ট্য প্রদান করে, যে কারণে ব্যবহারকারীরা গেম খেলার জন্য, ইমেইল পাঠানোর জন্য, নিজেদের কর্মতালিকা সাজানোর জন্য, এবং অবশ্যই, ছবি তোলার জন্য সেগুলো ব্যবহার করে থাকেন। যারা একটি দারুণ ক্যামেরা খুঁজছেন তাদের জন্য আইফোন এস৫ (iPhone 5S) এর সমমানের অন্যান্য ডিভাইসের মধ্যে সবচেয়ে সেরা। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, অ্যাপল আইফোনটির সামনের দিকে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে, পাশাপাশি আরও রয়েছে সামনের দিকে ২ মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা। আইফোনটি যে শুধু স্পষ্ট ছবিই তোলে তা নয়, বরং এর এমন একটি সফটওয়্যার রয়েছে যা আপনার ছবির মান উন্নত করে। অ্যাপল এর নেটিভ ফটো অ্যাপ্লিকেশন (native Photo application) দিয়ে ব্যবহারকারীরা তাদের ছবিগুলোকে সম্পাদনা করতে পারবেন যাতে করে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করার আগে সেগুলোকে আরও বেশি সুন্দর দেখানোর ব্যাপারটি নিশ্চিত করা যায়। আপনি কখন এবং কোথায় ছবি তুলেছিলেন সেই ভিত্তিতে ছবি খোঁজার সুবিধাসহ সেখানে আরও অনেক সমন্বয়করণ সুবিধা রয়েছে।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ (Samsung Galaxy S5)
স্মার্টফোনের বাজারে আরেকটি ব্যাপক চালু ডিভাইস হলো স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ (Samsung Galaxy S5)। অ্যান্ডরয়েড ৪.৪ দিয়ে চালিত হওয়ায় ব্যবহারকারীরা সুন্দর সব ছবি তুলতে পারেন এবং আকারে ৫ ইঞ্চিরও বেশি বড় পর্দায় তা অবলোকন করতে পারেন। স্যামসাংয়ের এই ফোনটির সামনের দিকে ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে, যা সবচেয়ে পরিষ্কার ছবি তোলার জন্য উপলভ্য সব স্মার্টফোন ডিভাইসের মতই ছবি তুলে থাকে। এছাড়াও, এই স্মার্টফোনটি ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন প্রযুক্তির (image-stabilization technology) সুবিধাও দিয়ে থাকে, যা ছবিকে আরও উন্নত ও আরও স্পষ্ট করে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ (Samsung Galaxy S5) ইতোমধ্যেই বাজারে সবচেয়েয়ে জনপ্রিয় ফোনগুলোর একটি হয়ে উঠেছে, কিন্তু এটা যে সুন্দর সব ছবি তুলতে পারে সেকারণেই এই ডিভাইসের প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি।
নকিয়া লুমিয়া ১০২০ (Nokia Lumia 1020)
একগাদা ফোনের মধ্য থেকে নিজেকে সত্যিই আলাদাভাবে তুলে ধরেছে এমন ফোনগুলোর মধ্যে নকিয়া লুমিয়া ১০২০ (Nokia Lumia 1020) অন্যতম। যখন সাধারণ শ্রেণির অনেক ফোন ব্যবহারকারী অ্যাপল অথবা স্যামসাং পছন্দ করেন তখন নকিয়া সত্যিই সেইসব ক্রেতার জন্য ফোন বাজারজাত করে যারা সুন্দর সব ছবি তোলার জন্য অতুলনীয় কোনো ডিভাইস খোঁজেন। লুমিয়া ১০২০ (Lumia 1020) ৪১ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ছবি তুলতে পারে, যা ছবি তোলার জন্য বিশেষভাবে তৈরী বাজারে প্রচলিত যে কোনো ডিভাইসের চাইতেও উৎকৃষ্ট। এছাড়াও, লুমিয়া ব্যবহারকারীদেরকে ৪:৩ অথবা ১৬:৯ মাপের ছবি তোলার সুবিধা দেয় যাতে ছবির পিক্সেল ইচ্ছেমত বদলানো যায়। নকিয়া তার ব্যবহারকারীদের জন্য ছবি সংরক্ষণ করা, সাজানো এবং আপলোড করাকে আরও বেশি সহজ করার চেষ্টাও করেছে এবং এসব কাজ ফোনের অপারেটিং সিস্টেম দিয়েই করা যায়। যারা চমৎকার সব ছবি তোলার মত একটি ডিভাইস চান তাদের জন্য নকিয়া ফোনটি একটি আদর্শ ফোন।
এইচটিসি ওয়ান এম৮ (HTC One M8)
আপনি যদি কোনো এইচটিসি ফোন বেশ কিছুদিনের জন্য ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনি হয়ত এম ওয়ান৮-এ উন্নীত করতে চাইবেন। প্রচলিত সাম্প্রতিক ডিভাইসগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম এবং সত্যিই বিস্ময়কর সব ছবি তুলে থাকে। এটি অবশ্য ছবিতে ৫ মেগাপিক্সেল মান দিয়ে থাকে, তবে পিক্সেলের ঘাটতি পূরণে এতে আল্ট্রাপিক্সেল (Ultrapixel) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই আল্ট্রাপিক্সেল (Ultrapixel) প্রযুক্তি আপনার ছবিকে স্ট্যাবিলাইজ/নিখুঁত (stabilize) করে এবং আশপাশের আলো (surrounding lighting) ব্যবহার করে যাতে আপনার ছবি ঝকঝকে পরিষ্কার হয়। এই এইচটিসি ফোন থেকেই প্রমাণ হয় যে, আপনার ডিভাইসে অনেক বেশি পিক্সেল থাকতেই হবে এমন কোনো কথা নেই, বিশেষ করে যদি মনোলোভা সব ছবি তোলার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়।
ব্ল্যাকবেরি টর্চ ৯৮১০ (Blackberry Torch 9810)
অনেকেই ব্ল্যাকবেরি ফোন ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, কারণ কোর্য়াটি কীবোর্ড থাকায় তা ব্যবহার করা তুলনামূলক সহজ বলে মনে করা হয়। ছবি তোলার মতো ডিভাইসগুলোর মধ্যে নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে সেরা হলো ব্ল্যাকবেরি টর্চ ৯৮১০। এই ডিভাইসটি ৫ মোগাপিক্সেল মানের ছবি প্রদান করে, কিন্তু আপনার ছবির স্ট্যাবল/নিখুঁত (stable) হওয়া নিশ্চিত করার জন্য এতে অটোফোকাস (autofocus) বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনি আপনার ছবিগুলোকে জিও-ট্যাগ (geo-tag) করতে পারবেন এবং আপনার কনটেন্টগুলো (content) সহজেই সংরক্ষণের জন্য মুখমণ্ডল সনাক্তকরণ (face detection) প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন। এই ব্ল্যাকবেরি ফোনটিও ব্ল্যাকবেরি ওএস ৭.০ দ্বারা চালিত, তাই ব্যবহারকারীগণ এই ধরণের প্রিয় যেসকল অ্যাপস এবং প্রোগ্রাম আছে তা সহজেই চালাতে পারবেন।
সনি এক্সপেরিয়া জেড২ (Sony Xperia Z2)
এক্সপেরিয়া জেড১ (Xperia Z1) এর আপগ্রেড, সোনি এক্সপেরিয়া জেড২ (Sony Xperia Z2) দারুণ সব ছবি তুলতে পারে। এটা সনির সাম্প্রতিক ফোনের মডেলগুলোর একটি। তাই ক্রেতা ও বিক্রেতা সকলেরই জানার কথা যে, এটার দাম এখন বেশ কিছুদিন বেশিই থাকবে। এই ডিভাইসটি ২০ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ছবি তুলে থাকে এবং মুখমণ্ডল সনাক্তকরণ (face detection), এইচডিআর (HDR), ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (image stabilization), প্যানোরামা (panorama) সহ আরও নানা ধরণের বৈশিষ্ট্য প্রদান করে থাকে। আপনি আপনার বন্ধুদের চমৎকার সব ছবি তুলতে চান কিংবা অবিস্মরণীয় দৃশ্যের নিখুঁত ছবি তুলতেই চান না কেনো, আপনি এই সনি ফোনটি দিয়ে এর সবকিছুই করতে পারবেন। জেড২ ফোনটিও অ্যান্ডরয়েড অপারেটিং সিস্টেমে (Android operating system) চলে। কাজেই যারা কিটক্যাট (KitKat)-এর মতো করে প্রোগ্রাম চালাতে চান কিন্তু অন্যান্য বিকল্পগুলো চান না, তারা তাদের প্রয়োজন সাপেক্ষে এই ফোনটির উপর নির্ভর করতে পারেন।
আইফোন৬ (iPhone 6)
আমরা এখনও এটির বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে সক্ষম ফোনগুলোর মধ্যে আইফোন৬-ই হতে পারে সবচেয়ে সেরা বিকল্প। খবর বেরিয়েছে যে, সাম্প্রতিক এই আইফোনটি ১০ থেকে ১৩ মেগাপিক্সেল মানের মধ্যে ছবি তুলবে। এছাড়াও, যেকোনো ক্রেতাই জানেন যে, অ্যাপলের পণ্যগুলো বাজারে প্রচলিত অন্যান্য পণ্যের ধারাবাহিকতায় ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন হয়ে থাকে। এ বছরের শেষভাগে সাম্প্রতিক আইফোনটি বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে এটি ইতোমধ্যেই লোকজনকে প্রবল আগ্রহী করে তুলেছে। মেগাপিক্সেলের পাশাপাশি, সাম্প্রতিক এই মডেলটিতে নতুন একটি লাইট স্ট্যাবিলাইজেশন (light stabilization) বৈশিষ্ট্য থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা স্বল্প আলোতেও (low-light settings) অনেক ভালো ছবি তুলবে। এর সামনের (front-facing) ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি তোলার উন্নততর একটি বিকল্পও এতে থাকবে। বাজারে নতুন আসবে আবার একইসঙ্গে দারুণ দারুণ ছবি তোলা যাবে এমন কোনো ডিভাইসের জন্য যদি আপনি অপেক্ষা করে থাকেন, তবে আপনি এবছরের শেষভাগে সম্ভ্যাব্য মুক্তি পাওয়া আইফোনটির জন্য অপেক্ষা করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।