যানবাহন

বাইসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণের কিছু পরামর্শ

মুক্ত রাস্তায় বাইসাইকেল চালানোর সময় ঢেউ খেলানো চুলে যখন বাতাস দোল দিয়ে যায়, তখন সেটি আনন্দের পাশাপাশি চমৎকার একটি ব্যায়ামও হয়। তবে, বাইসাইকেলটিকে রাস্তায় চালানোর জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ, যত্ন ও কিছু কাজ করা প্রয়োজন। যদি বাইসাইকেলটির যত্ন না নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে শুধু সাইকেলটিরই কার্যক্ষমতা নষ্ট হবে না, চালকও অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকির মুখোমুখি হবেন। নবীন বাইসাইকেল চালকরা যাতে এমন পরিস্থিতিতে না পড়ে সেজন্য এখানে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।

নিজের জন্য সেরা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি জেনে রাখতে হবে কেউ কেউ তাদের সাইকেল রক্ষণাবেক্ষনে এটির উপরের দিক নিচে নামিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন, এতে করে তারা সাইকেলটিকে চাকার উপর রেখে প্যাডেল ঘোরাতে পারেন, চেইন সহ হাতল, সিট স্ট্যাবিলাইজার সবকিছু পরিষ্কার করা যায়। অন্য আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে অ্যাংকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বাইসাইকেলটিকে ঝুলিয়ে রেখে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যথাযথভাবে পরিষ্কার করা যায়। কেননা চালক চায়, সাইকেলটি যখন পরিষ্কার করা হবে তখন যাতে ভালোভাবে নাড়া-চাড়া করা যায়, চাকাটি মাটিতে লেগে থাকলে সেটি সম্ভব হয় না। তাই সাইকেল রক্ষণাবেক্ষণের আগে, অবশ্যই নিজের জন্য কোন পদ্ধতিটি ভালো হবে, সেটি ভালোভাবে জানতে হবে। সাথে আরও জেনে নিন শহরে সাইকেল চালানোর জন্য আবশ্যক কিছু টিপস!

বাইসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণ

দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় সাইকেল চালালে, আগে হোক পরে হোক টায়ার বদলাতে হয়। কিন্তু, সেটি পরিবর্তনের সঠিক সময় অনেকেরই জানা না’ই থাকতে পারে। সেজন্য, নিজের সাইকেলের টায়ার কখন পরিবর্তন করতে হবে, সেটি জানতে হবে। এর ফলে, যখন পরিবর্তনের সময় আসবে, তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যাবে ও যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে। টায়ারটির আকার ঠিক রাখার জন্য, ঘাত না লাগিয়ে কিভাবে টায়ার পরিবর্তন করতে হয় ও নতুন, ভালো মানের টায়ার লাগাতে হয় সেটি জানতে হবে। সাইকেলে চড়ার আগে অবশ্যই টায়ারের চাপ ( প্রেশার) দেখে নিতে হবে। এতে করে, পর্যাপ্ত বাতাস না থাকার ফলে, চাকা ভালোভাবে না এগোনোর সমস্যা থেকে বাঁচা যাবে। ফ্ল্যাট টায়ার পরিবর্তনের করতে বিক্রির জন্য সস্তা যেসব সাইকেল পাওয়া সেগুলোকে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। এতে নিজের সাইকেলটির জন্য অতিরিক্ত কিছু মডেলের যন্ত্রাংশ পাওয়া যাবে।

সঠিক উপকরণ (টুলস) থাকতে হবে সব সাইকেল চালকেরই তাদের মেরামত (রিপেয়ার) ব্যাগে কিছু উপকরণ রাখা প্রয়োজন। টর্ক রেঞ্চ, থ্রেড লকার ও ছোট পাম্প ভর্তি ব্যাগ সাইকেল চালানোর সময়ও পিঠে রাখা যায়। এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে যে, কোন ধরণের উপকরণ অতি ভারী বোধ ও ঝাঁকুনি ছাড়া চালকের ব্যাগের জন্যউপযুক্ত। কোন ধরণের উপকরণ প্রয়োজন সেটি নির্ভর করবে বাইসাইকেলটি কোন ধরণের তার উপর। নিজের নির্দিষ্ট বাইসাইকেলটির জন্য সবচেয়ে ভালো উপকরণটি বাছাই করতে হবে। সেগুলো সাথে না নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া যাবে না। ড্রাইভিং পদ্ধতি মেইনটেইন করতে হবে।

সাইকেলটির সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য এর চেইন ও অন্যান্য ডেরিয়েল্যুর পরিষ্কার রাখতে হবে। খুব সাধারনভাবে সাবান পানি এটি পরিস্কার করা যায় এবং বিভিন্ন পার্টস, গিয়ার ব্রাশ দিয়ে ঝাড়া-মুছাও করতে হবে। অবশ্যই সামনের চাকা যেখানে প্যাডেলের সাথে সংযুক্ত হয়েছে সেটির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে এবং ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে। এটি ভালোভাবে সাবান-পানি দিয়ে পরিস্কার করার পর অবশ্যই পুরোপুরি শুকাতে হবে যাতে মরিচা না পড়ে এবং অন্য কোন সমস্যা তৈরি না হয়। হ্যান্ডেলবার মোড়ানো মিখতে হবে।

হ্যান্ডেলবার ভালো ভাবে মোড়ালে দুটি সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত, এতে হ্যান্ডেলবার নরম হবে যা মুষ্টিবদ্ধ করতে কষ্ট হবে না। এছাড়াও এটি মুড়িয়ে নিলে হ্যান্ডেলবার অনেক দিন টিকবে এবং মূল অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আশে-পাশে অনেক দোকান আছে যেখানে হ্যান্ডেলবার মোড়ানো হয়, কিন্তু এটি চালক নিজে শিখে নিলে অনেক টাকা বেঁচে যাবে। সত্যিকার অর্থে এটি শেখা তেমন কঠিন কিছু নয় এবং খুব বেশি সময়ও লাগে না।

ব্রেক প্যাড প্রতিস্থাপন করা জানতে হবে সাইকলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন আংশ হল এর ব্রেক। এটি থেকে যদি অস্বাভাবিক শব্দ বের হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি বদলে ফেলার সময় হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন ব্রেক ভালো না হলে সেটা অনেক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর ব্রেক কিভাবে বদলাতে হয় সেটা নিজেরই শিখে ফেলা উচিৎ, তাহলে যখনই এটি অস্বাভাবিক লাগবে তাৎক্ষনিকভাবে চালক নিজেই বদলে নিতে পারবেন। তা না হলে দেখা যাবে এটি ঠিক করতে অনেক সময় লেঘে যাবে এবং এর মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্রায়ই ব্রেক প্যাডগুলো পরিবর্তনের কৌশল অনুশীলন করতে হবে। এতে করে সাইকেল চালককে কোন সমস্যায় পড়তে হবে না।

bike gears

নির্ভর করা যায় এমন সাইকেল কেনা সাধারনত সবাই কতদিন টিকবে এটা দেখেই সাইকেল কিনে থাকে। খুব সস্তায় সাইকেল কিনলে দেখা যায় এটি খুব কম দিনেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তখন খুব কম সমযের মধ্যেই আবার পয়সা খরচ করে নতুন আরেকটি সাইকেল কেনার চিন্তা করতে হয়। তাই ভালো ব্র্যান্ড দেখে কেনা উচিত, যেমন লিয়ন বাইসাইকেল নামকরা এবং নির্ভরযোগ্য হিসেবে পরিচিত। হয়তো ভালো ব্র্যান্ডের একটি সাইকেল কিনতে একটু বেশি খরচ হতে পারে, কিন্তু এটি অনেক দিন টিকে থাকবে , যার ফলে নতুন আরেকটি কেনার চিন্তা ভাবনা করতে হবে না। সঠিক সাইকেলটি কিনতে কার্পণ্য করলে কিছু দিনের মধ্যেই পস্তাতে হবে।

বিশ্বস্ত কোন দোকানের সাথে যোগাযোগ রাখা ইকেল রক্ষনাবেক্ষনের ব্যাপরে সিদ্ধহস্ত হলেও এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ভালো জানে এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখা উচিৎ। ভালো একটি দোকানের সাথে সম্পর্ক রাখলে জটিল সমস্যায় পড়লে (যেগুলো নিজে ঠিক করা যায় না) নিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়াও দোকান থেকে অনেক কিছু শিখাও যায়। এছাড়া কোন বিশেষ ইভেন্টে সাইকেলের কোনো বাড়তি সুবিধার দরকার হলে দোকান থেকে সেই সেবা পাওয়া যায়।

প্রত্যেক সাইকেল চালকেরই লক্ষ্য থাকে নিজে নিজে সাইকেলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সব সময় সেটি ভালোভাবে চলার উপযোগী করে রাখা। সাইকেল অনেকদিন নির্বিঘ্নে চালানো যাবে এটি নিশ্চিত হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল এই টিপসগুলো মনে রাখা। নিজে নিজে যত বেশি সমস্যার সমাধান করা যাবে তত বেশি খরচ বাঁচবে। আর অন্যের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করে কোন যাত্রা পিছিয়ে দিতে হবে না। লম্বা যাত্রায় কোন সমস্যায় পড়লে নিজেই ঠিক করতে পারলে কাজেই চালকের মধ্যে কোন ভয়ও কাজ করবে না ।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close