সামর্থ্যরে ভেতর ছোট গাড়ি কেনার নির্দেশনাবলী
নতুন গাড়ির তুলনায় খুব সস্তায় ব্যবহৃত গাড়ি এবং ট্রাক কেনা যায়। পুরাতনগুলোর তুলনায় নতুন ভ্যান অনেক ভালোভাবে নির্মিত হয়, কিন্তু তার মানে এ নয় যে ব্যবহৃত ভ্যান এক বছরের মধ্যে অকেজো হয়ে যাবে। বাংলাদেশে অধিকাংশ বিক্রেতা নতুন গাড়ি ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গাড়ির যেকোনো সমস্যার সমাধান দেওয়ার ওয়ারেন্টি প্রদান করে। ব্যবহৃত গাড়ির ডিলাররা পুরাতন মডেলের ভ্যান এবং গাড়ি বিক্রি করে, ঠিক যে অবস্থায় আছে সে অবস্থার আলোকে তারা বিক্রি করে বলে এ ক্ষেত্রে ক্রয় করার পর গাড়িতে কোন সমস্যা দেখা দিলে তারা সেটা ঠিক করে দেয়ার কোনো দায়িত্ব নেয় না। পুরাতন গাড়ি কেনার একটি ভালো দিক হলো এর মাধ্যমে আপনি বাইপাস অর্থায়ন করতে পারবেন এবং নগদ অর্থ থাকলে আপনি সরাসরি ক্রয় করতে পারবেন।
নিম্ন মাত্রার ট্রিমঃ
যদি আপনি ঠিক করেন নতুন গাড়ি কিনবেন তবে আপনি নিম্নমানের ট্রিম বাদ দেওয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা বাঁচাতে পারবেন। প্রত্যেক ভ্যান মডেল সেটির নিজস্ব ট্রিম স্টাইল সহকারে আসে, অর্থ্যাৎ প্রত্যেক গাড়ির মডেলে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রযুক্তি ও ফিচার। অধিকাংশ মডেলের ভ্যান দুই অথবা তিনটি ট্রিম লেভেলে আসে। সর্বনিম্ম ট্রিম লেভের গাড়ির মূল্যও সর্বনিম্ম হয়। বিশেষ বৈশিষ্টগুলো যেমন ট্রাকশন কনট্রোল, টেম্পারেচার গেজ এবং পাওয়ার উইনডোজ ও লক বাদ দেওয়ার মাধ্যমে আপনি টাকা বাঁচাতে পারবেন।
লিজ নেওয়াঃ
আপনি নতুন কিনবেন নাকি লিজ নিবেন এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পারলে সেক্ষেত্রে লিজ নিতে পারেন। কারণ এতে আপনার খরচ কমবে। লিজ মানে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ভ্যান ধার নেওয়া হয়, এটা সাধারণত দুই অথবা তিন বছর হয়। লিজের সময় শেষ হলে ভ্যানটি আপনাকে পুনরায় ডিলারের কাছে ফেরত দিতে হবে। লিজ ফি’এর মধ্যে অবচয় খরচ এবং অন্যান্য আর্থিক চার্জ অর্ন্তভুক্ত থাকে।
নিলামঃ
আপনি নিলামের মাধ্যমেও ভ্যান কিনতে পারেন। এটি আপনাকে ভলো মডেলের ভ্যান বাজার দরের চেয়ে অনেক কম মূল্যে কেনার সুযোগ দিবে। অনেক ধরনের নিলাম আছে যেমন অনলাইন, পুলিশ, সাধারণ এবং সরকারি নিলাম। নিলামে ক্রয় করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল আপনি গাড়িটির কোন ওয়ারেন্টি পাবেন না এবং ক্রয় করার আগে গাড়িটির অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার সুযোগ পাবেন না।
ফ্রি গাড়িঃ
ফ্রি গাড়ির মতো এত কম দামে কোন ভ্যান আপনি পাবেন না। কিছু ফার্ম তাদের কর্মচারি যারা ফ্রি গাড়ি প্রোগামের জন্যে আবেদন করে তাদের ফ্রি গাড়ির পাওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে, এক্ষেত্রে গাড়ি চালানোটা সম্পূর্নই বিজ্ঞাপনের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। এই প্রোগ্রামের পুরো উদ্দেশ্যই থাকে বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন করা। দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশে ফ্রি গাড়ি প্রোগ্রাম প্রদানকারী ফার্মের সংখ্যা অনেক কম।
রেন্টাল কোম্পানীঃ
ভাড়া সংস্থাগুলো প্রায় পুরাতন ভাড়ায় চালিত ভ্যানগুলো আপনি যে দামে ডিলারশিপ চাইছেন তার চেয়ে অনেক সস্তায় বিক্রি করে। নিলামের মতো কোন রেন্টাল কোম্পানি থেকে ভ্যান কিনলে গাড়িতে কোন সমস্যা দেখা দিলে আপনি তেমন কিছু বলতে পারবেন না। রেন্টাল গাড়িগুলো অতীতের ড্রাইভাররা খুব বাজেভাবে চালায় এবং ভালোমত যতœ করে না বলে খুব ভালো কন্ডিশনের হয় না।
প্রাইভেট সেলারঃ
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আপনি গাড়ির ডিলারশীপের চেয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট ভালো গাড়ি পেতে পারেন। ব্যক্তির নিকট থেকে গাড়ি কেনার মানে হচ্ছে আপনি ব্যবহৃত গাড়ি কিনছেন এবং আপনি জানেন না ব্যক্তি কেন গাড়িটি বিক্রি করছে। অনেক মানুষ তাদের গাড়ি বিক্রি করে দেয় সেটির চেয়ে আরো ভালো গাড়ি কেনার জন্যে, আবার কেউ কেউ সমস্যার কারণে গাড়ি বিক্রি কওে দেয়। যদি আপনি কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়ি কিনতে চান তবে কেনার আগে একজন মেকানিককে এনে সেটির অবস্থা চেক করে নিন।
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আইডিয়াঃ
উদ্দেশ্যঃ
গাড়ি কেনার আগে যেটি খুব গুরুত্বর্পূন সেটি হলো গাড়ি কেনার উদ্দেশ্য বিবেচনায় আনা। ঠিক করুন আপনি কোন কাজে গাড়িটি ব্যবহার করবেন। গাড়িটির বৈশিষ্ট কেমন হবে এবং আপনি গাড়িটি ক্রয় করতে সর্বোচ্চ কত দাম প্রদান করতে প্রস্তুত। আপনার ড্রাইভিং অভ্যাসটাও বিবেচনা করা এর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ আপনি কি শুধু বাংলাদেশ অথবা বাইরে ভ্রমনেও ড্রাইভিং করবেন। একটি অধিক বিশস্ত গাড়ি কিনলে আপনাকে শহরের বাহিরে মেরামতে দেরী হলেও ভ্রমেনর সমস্যা এড়িয়ে যেতে সাহায্য করবে।
নতুন নাকি ব্যবহৃতঃ
সিদ্ধান্ত নিন আপনি নতুন নাকি ব্যবহৃত গাড়ি কিনবেন। নতুন এবং ব্যবহৃত উভয় ক্ষেত্রে কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে। নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, কম সংস্কার এবং রক্ষনাবেক্ষনের খরচও কম হবে। এছাড়া নতুন গাড়িতে ওয়ারেন্টিও থাকবে। নতুন গাড়ি ব্যবহৃত গাড়ি থেকে অনেক ব্যয়বহুল। আর যত গাড়ি চালনা করা হবে ততই এর মূল্যহ্রাস পাবে। অন্যদিকে নতুন গাড়ির তুলনায় ব্যবহৃত গাড়ির ইন্স্যুরেন্স খরচও কম। তবে ব্যবহৃত গাড়ি খুব কম চুরি হয়।
ব্যবহৃত গাড়ির ক্ষেত্রে নানা প্রশ্নঃ
ব্যবহৃত ভ্যান গাড়ির ক্রয়ের ক্ষেত্রে গাড়িটির হিস্টোরি রির্পোট দেখে নিন। তবে দেখা যাবে ব্যবহৃত গাড়িতে ব্যাপক সমস্যা থাকতে পারে। ব্যবহৃত গাড়িগুলোর ওডোমিটার হয়তো নতুন লাগানো হয়েথাকতে পারে, এটা হয়তো চুরি যাওয়া গাড়িও হতে পারে, বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা মুখোমুখি হয়ে আগুন অথবা ওয়েদারগত কোনো ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে। এ ধরনের সমস্যাগুলো হয়তো ক্রেতার কাছে গোপনই থাকতে পারে। ব্যবহৃত গাড়ি কেনার আগে সেটির নাম্বার লিখে গাড়ির হিস্টোরি সংরক্ষন করে এমন কোম্পানীতে দিন সেটির পুরো হিস্টোরি রিপোর্টের জন্য। গাড়িটির এক বা একাধিক মালিক ছিলেন কিনা খুঁজে বের করুন। মালিকের নিকট মূল ম্যানুয়াল আছে কিনা তা নির্ধারণ করুন।
নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশ্নঃ
ভ্যানটির ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করুন। ডিলারদের ইনভয়েস মূল্য নির্ধারনের জন্যে গাড়িটির পুনবিক্রি মূল্য চেক করুন। উল্লেখিত মূল্যের সাথে কোন গোপন খরচ সংযুক্ত আছে কিনা খুঁজে বের করুন। ডিলারকে একটি ভালো দাম নির্ধারনের জন্য বলুন। সুদ এবং মোট মাষিক জমা নির্ধারণ করুন।
কেনার ক্ষেত্রে অপশনঃ
নতুন হোক আর পুরাতন হোক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো ডিলারের কাছ থেকে ক্রয় করার ভিতরেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। অনলাইন মার্কেট প্লেসও আপনার ক্রয়ের বিকল্প মাধ্যম হতে পারে। প্রাথমিক গবেষনা করুন যা আপনাকে ভালো পন্য পেতে সাহায্য করবে। যদি আপনি ব্যবহৃত গাড়ি ক্রয় করার পরিকল্পনা করেন তবে বিক্রেতা কর্তৃক পত্রিকায় প্রদত্ত বিজ্ঞাপন দেখুন। সরাসরি মালিকের সাথে চুক্তি করুন কারণ এটি আপনাকে টাকা বাচাতে এবং গাড়ির ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে। ব্যবহৃত গাড়ি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিলে অনলাইন প্রদর্শিত সেবা এবং ব্রোকারের বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন। নিকটস্থ গাড়ি মেম্বারশিপ ফার্মে কোন ডিসকাউন্ট সার্ভিস দিচ্ছে কিনা খোঁজ রাখুন।
কিভাবে নির্ধারন করবেন যে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী কি ধরনের গাড়ি কিনবেন?
১. অনলাইনে গাড়ি ডিলারশিপ সাইটগুলো দেখুন। আপনি যে গাড়িটি কিনতে আগ্রহী সেটির মডেল এবং মূল্য খুঁজে বের করুন। কোম্পানীর ওয়েবসাইটের পরিবর্তে স্থানীয় ডিলারশীপ সাইটে মূল্য চেক করুন কারণ মূল্য উঠা নামা করতে পারে।
২. ইন্স্যুরেন্স পেমেন্টটা কত হতে পারে তা জানতে আপনার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করুন। ইন্সুরেন্স পেমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণবিবেচনার বিষয়, বিশেষ করে যখন আপনি নতুন গাড়ি কিনতে যাবেন।
৩. বাজেট ঠিক করুন। আপনার চলতি ব্যয়গুলোর তালিকা লিখে ফেলুন। মোট খরচ থেকে নিট খরচ বাদ দিন। এটা আপনাকে গাড়ি কিনতে অতিরিক্ত কত টাকা খরচ হবে তা নিধারণ করতে সাহায্য করবে।
৪. ডিলারশিপে যান এবং আপনার বাজেট, গাড়িটির বাণিজ্য মূল্য এবং মূল্য পরিসর নিয়ে বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করুন।
৫. বিক্রয় প্রতিনিধিকে আপনার মাষিক পেমেন্ট পরিসরের সাথে উপযুক্ত গাড়িগুলো দেখাতে বলুন।
৬. মাষিক পেমেন্ট পরিসর এবং মূল্য পরিসরের আলোকে কোন গাড়িটি কেনার সামর্থ্য আপনার আছে তা নির্ধারণ করুন।