ক্রোমবুক ল্যাপটপ ক্রয়
১৯৮০ সালের শুরুতে পার্সোনাল কম্পিউটার আসার পর থেকে ভোক্তারা কম্পিউটিংকে সহজ ও পোর্টেবল করার উপায় খুঁজে ফিরেছেন। ডেস্কটপ কম্পিউটার যেখানে অনেক ভারী এবং অনেকগুলো অংশের সমন্বয়ে তৈরি সেখানে ল্যাপটপ কম্পিউটার তুলনামূলকভাবে ছোট ও হালকা। যদিও পার্সোনাল কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্য বাজারে আসা প্রথম ল্যাপটপগুলোর একটি, অসবরন্ ১ মাইক্রোকম্পিউটার, এর ওজন ছিল ২৪ পাউন্ড; যা বর্তমান ল্যাপটপের গড় ওজনের প্রায় ছয় গুণ! দিনে দিনে পোর্টেবল কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং প্রায় সকল দেশে ইন্টারনেট সুবিধা থাকার কারণে ভোক্তারা বর্তমানে আরও হালকা কম্পিউটার চাচ্ছেন এবং চলার পথে কাজ ও যোগাযোগের জন্য সাশ্রয়ী উপায় খুঁজছেন।
কেন ক্রোমবুক বেছে নেবেন?
নতুন কম্পিউটার পছন্দ করার জন্য আপনি অনেক কম্পিউটার পাবেন, এর দাম ব্র্যান্ডের ভিন্নতা অনুযায়ী তিনশো থেকে তিন হাজার ডলার বা তারও বেশী হতে পারে, এবং প্রতিটি মডেলেই অসংখ্য ফিচার রয়েছে যা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে আপনার প্রয়োজন। এতে হতবিহ্বল হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। সর্বপ্রথম আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি সেটি কী কাজে ব্যবহার করবেন: কাজ নাকি বিনোদন? আপনার কি অনেক স্টোরেজের প্রয়োজন আছে নাকি আপনি কম্পিউটার ড্রাইভে এক্সটারনাল প্রোগ্রাম চালাবেন? যদি দ্বিতীয় প্রশ্নটির ক্ষেত্রে আপনার উত্তর “না” হয় তবে আপনার জন্য সঠিক পছন্দ হবে ক্রোমবুক (Chromebook) যা “নেটবুক” বা “মিনি নোটবুক” নামেও পরিচিত। ক্রোমবুক ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমে চলে যা ল্যাপটপ বা নোটবুকের মতো নয় এবং এটি সাধারণত ১০ থেকে ১৪ ইঞ্চির মধ্যে হয়ে থাকে, অর্থাৎ সবচেয়ে বড় ক্রোমবুকটিও ১৫.৬ ইঞ্চির ল্যাপটপের চেয়ে ছোট। অনেক শিক্ষার্থী, যারা কমদামে ল্যাপটপ কিনতে চান, তাঁরা ক্রোমবুক দেখলে কম দামের কথা চিন্তা করে তা কিনতে বা কেনার কথা ভাবতে পারেন, আবার অনেকেই এটির ছোট আকারের কারনে পার্স বা স্কুল ব্যাগে বহন করা সহজ হবে বলে মনে করেন। কম দামের অনেক ল্যাপটপ রিভিউ দেখলে দেখবেন, অনেকেই মনে করেন গতানুগতিক ল্যাপটপে এমন অনেক জিনিস রয়েছে যা তাঁদের প্রয়োজন নেই। ক্রোমবুকে সাধারণত প্রি-লোডেড গেমস, বেসিক নোটপ্যাড এবং/অথবা ওয়ার্ডপ্যাড থাকে যা দিয়ে স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট এবং সাধারণ অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করা যায়, তাছাড়াও রয়েছে শক্তিশালী ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম এবং সার্চ ইঞ্জিন, যা দিয়ে নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট সার্ফিং করতে পারবেন। ব্যবহারকারীরা গতানুগতিক ল্যাপটপের সমান বা তাঁর বেশী স্পিডে ই-মেইল চেক, সামাজিক যোগাযোগ সাইট ও ইন্টারনেটের অন্যান্য পরিষেবা গ্রহণ করতে পারবেন, এবং এতে ওয়্যারলেস ফ্রি ইন্টারনেট ক্যাপাবিলিটি (ওয়াই ফাই) সুবিধা রয়েছে যা দিয়ে কফিশপে বা লাইব্রেরীতে বা অন্য যে জায়গায় ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
কোন ধরণের ক্রোমবুক কিনবেন?
যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে ক্রোমবুকই আপনার জন্য ভালো হবে তবে আপনি আপনার সমস্যার একটি অংশ সমাধান করেছেন। ২০০৮ সালে ক্রোমবুক বাজারে আসার পর থেকে এর গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং বাজারে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা আকারের, সক্ষমতার এবং দামের ক্রোমবুক নিয়ে এসেছে।
যেহেতু ২০১৪ সালে অনেক অখ্যাত কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান বাজারে ক্রোমবুক নিয়ে এসেছে, তাই এখন কিছু প্রতিষ্ঠিত নামীদামী ব্র্যান্ডের ক্রোমবুকের কথা বলবো।
১) স্যামসাং ক্রোমবুক ২
গ্যালাক্সি নোট ফোনের হালকা পাতলা গঠনের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই ক্রোমবুক সবচেয়ে কম দামের, যার দাম প্রায় $২৪৯ বা তার বেশী। এতে রয়েছে ২.৫৮ গিগাহার্জ ইন্টেল সেলেরন প্রসেসর এবং আট ঘণ্টার ব্যাটারি লাইফ। এবং এতে একটি ১৯২০ x ১০৮০ বিকল্প স্ক্রিন ডিসপ্লে রয়েছে, যার ফলে ১৩″ স্ক্রিনে মুভি দেখা সহজ হয়েছে এবং এই সুবিধা অন্যান্য ক্রোমবুকে নেই।
২) ডেল ক্রোমবুক ১১
$২৭৯ মুল্যের এই ক্রোমবুক শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। মজবুত গঠনের এই ক্রোমবুকটিতে ৭ ঘণ্টার ব্যাটারি লাইফ এবং ভালো একটি কীবোর্ড রয়েছে যা স্কুলের ব্যাকপ্যাকে বা ডরমিটরিতে বহনের সময় পড়ে গেলে বা ধাক্কা লাগলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু এই ক্রোমবুকটি মাত্র ১১″ এবং এতে ১.৪ গিগাহার্জ ইন্টেল সেলেরন প্রসেসর রয়েছে। যদিও কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবে এটি একটি ভালো পছন্দ কিন্তু প্রচুর কাজ করার জন্য আপনার আরও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও বড় স্ক্রিনের কোনোকিছু প্রয়োজন হবে।
৩) এইচপি ক্রোমবুক ১৪
১৪″ এই ক্রোমবুকের দাম একটু বেশী এবং প্রায় $২৯৯ এবং এটি তিনটি রঙে পাওয়া যায়: সাদা, ফিরোজা, এবং পিচ রঙের। এর লিড এবং কীবোর্ডের চারপাশ স্যান্ডব্লাস্টেড (sandblasted) অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি, যা এটিকে “অভিজাত” রুপ দিয়েছে। এইচ পি ক্রোমবুকে ১.৪ গিগাহার্জ ইন্টেল সেলেরন প্রসেসর এবং অনেক প্রি-লোডেড ক্রোম অ্যাপস রয়েছে যা ব্যবহার করতে পারবেন।
৪) এসার ক্রোমবুক সি৭২০
এসার অসাধারণ এই ক্রোমবুকটি দিচ্ছে প্রায় $২৪৯-এ। যা এই ক্রোমবুকটিকে অন্যান্য ক্রোমবুক থেকে আলাদা করেছে তা হল এর রেসপনসিভ টাচপ্যাড, হ্যাসওয়েল মাইক্রোআর্কিটেকচার (Haswell microarchitecture) এর উপর ভিত্তি করে তৈরি ইন্টেল সেলেরন প্রসেসর এবং ওয়েব সার্ফিংয়ের সময় একাধিক ট্যাব ব্যবহারের সুযোগ। হালকা পাতলা এই মেশিনটি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে বা বিনোদনের কাজে লাগাতে পারেন, কারণ এতে একটি বিল্ট-ইন ফ্যান রয়েছে যা এর সিস্টেমকে ঠাণ্ডা রাখবে। যেহেতু স্ক্রিনের আকার মাত্র ১১.৩″, তাই যাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হয় তাঁদের জন্য এসার ক্রোমবুক কম দামে ভালো পছন্দ হতে পারে।
৫) তোশিবা ক্রোমবুক ২
তোশিবা ছোট ক্রোমবুক মেশিনে ল্যাপটপের অভিজ্ঞতা দিতে অপেক্ষাকৃত দামী $৩২৯ মূল্যের ক্রোমবুক নিয়ে এসেছে। তোশিবার মসৃণ ডিজাইন শুধু দেখতেই সুন্দর না, বরং ধরতেও সুবিধা; এর কীবোর্ডের সুবিধাজনক বিন্যাস অনেকটা দামী ম্যাকবুকের মতো এবং এর টাচপ্যাড জটিল সব “সোয়াইপিং”-এ দ্রুত রেসপন্স করতে পারে, যা কমদামী অধিকাংশ ল্যাপটপ বা ক্রোমবুকে সমস্যা করবে। তোশিবা ক্রোমবুকের আরেকটি দারুণ ফিচার হচ্ছে এর ৪ জিবি র্যাম এবং ২.৬ গিগাহার্জ প্রসেসর, যা এটিকে এর দ্বিগুণ দামের ল্যাপটপের মতো কাজ করার সক্ষমতা দিয়েছে। আপনি যদি একটি উচ্চমানের ক্রোমবুক কিনতে চান যা আপনাকে স্কুল বা কাজ থেকে শুরু করে আপনার নিজের ও পরিবারের শিশুদের বিনোদন যোগাবে তবে এটিই অন্যতম সেরা পছন্দ।