বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবারের জন্যে সঠিক গাড়ি নির্বাচন
বাংলাদেশের বসবাসকারী সবাই চায় নিজস্ব নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা। এটা ছাড়া আপনি এবং আপনার পরিবারকে যাতায়াত করতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় যা জিবনকে দুর্বিষহ করে তুলে। এ কারনেই প্রয়োজন একটি ফ্যামিলি কার। একটি ভালো মানের গাড়ির পেছনে আপনার মূল্যবান অর্থ ব্যয় করলে সেটা অনেকদিন পর্যন্ত চালাতে পারবেন। আর ভালো মানের গাড়ি কিনতে চাইলে কিছু ছোট ছোট নির্দেশনা অনুসরন করতে পারেন এখানে বাংলাদেশে ফ্যামিলি কার কেনার জন্য ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হল।
নির্ভরযোগ্যতা:
সবার আগে আপনার প্রয়োজন একটি নির্ভরযোগ্য গাড়ি পছন্দ করা। এদেশের কেউই চান না তার গাড়িটা মাঝপথে থেমে যাক কিংবা রাতের যাত্রায় ভেঙে যাক যা খুব বিপদজনক এবং অনেক টাকা খরচের কারন হতে পারে। একারনেই আপনার উচিৎ টোয়োটা কিংবা অন্যান্য জাপনিজ ব্র্যান্ডের গাড়ি খোঁজ করা। এর ফলে গাড়ি নিয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই গন্তব্যে পৌছাতে পারবেন। অন্যদিকে, আপনি যদি কোন নিম্নমানের ব্র্যান্ডের গাড়ি কেনেন, তবে ভবিষ্যতে এটার জটিল যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান করতে আপনাকে অনেক অর্থ জলাঞ্জলী দিতে হতে পারে। তাই মনে রাখবেন, সব কিছুর আগে আপনাকে গাড়ির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এর সাথেই আমাদের সাম্প্রতিক প্রকাশ করা একটি প্রবন্ধ পড়ে নিন “বেছে নিন আপনার পরিবারের জন্য সেরা গাড়িটি!“
আকার:
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে ব্যাবহারের জন্য আপনি একটি সঠিক আকারের গাড়িই চাইবেন। আর জ্বালানির জন্য বেশি খরচ করতে না চাইলে টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি উৎকৃষ্ট। যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে তাতে আপনার উচিৎ ছোট সাইজের গাড়ি পছন্দ করা যাতে জ্বালানির পেছনে বড় অংকের টাকা খরচ করতে না হয়। একই সাথে নতুন গাড়ি কিনতে গেলে আপনাকে এর ষ্টোরেজ এবং জায়গা নিয়েও ভাবা উচিৎ। এক মিনিটে চিন্তা করে নিন আপনি গাড়িতে পুরো পরিবারকে এবং সেই সাথে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নিতে চান। সেজন্যই আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারবে এমন সাইজের গাড়িই কেনা উচিৎ।
নতুন নাকি পুরাতন:
গাড়ি কিনতে চাইলে আপনাকে সেটির প্রি-ওনড ভার্সনের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনি কম দামেই গাড়িটি পেতে পারেন। যদিও অনেক বিত্তবান আছেন যারা নতুন গাড়ির কিনতে অনেক টাকা খরচ করেন, কিন্তু আপনাকে ভাবতে হবে অন্যভাবে। নতুন গাড়ির দাম এক রাতেই কমে যেতে পারে, এবং আপনার উচিৎ সেগুলো এড়িয়ে চলা বরং একটু পুরানো গাড়ি কেনা। এর ফলে আপনার খরচও অনেক কমে যাবে। শুধুমাত্র তাই নয়, সেই সাথে ইন্স্যুরেন্স খরচও কমে যাবে। এধরনের গাড়ি কেনার জন্য ক্লাসিফাইড সাইটগুলোতে প্রচুর বিজ্ঞাপন রয়েছে। এক্ষেত্রে দেখে নিন সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।
অনেক সময় নিয়ে ভাবুন:
সাধারনত কেউ গাড়ি কিনলে দীর্ঘদিন ব্যবহারের আশাতেই কিনেন। যেহেতু বাংলাদেশে গাড়ি সস্তা নয়, তাই ভবিষ্যতে যাতে আরেকটি কিনতে না হয় সেভাবেই চিন্তা করা উচিৎ। এটি করতে আপনার উচিৎ নির্ভর করা যায় এমন একটি গাড়ি কেনা এবং ভালো মত সেটি দেখ-ভাল করা। একইভাবে গাড়ি লক্ষ্য করার সময় এটি ঘন্টায় কত মাইল যেতে পাওে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। যদিও বাছাই করতে আপনাকে একটু বেশি খরচ আর সময় ব্যয় করতে হবে, কিন্তু এর ফলে আপনি অনেকদিন পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দে গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন। মনে রাখবেন, গাড়ি কেনার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল না করলে ভবিষ্যতে এর পেছনে অনেক বেশি খরচ করতে হবে।
অনেকগুলো গাড়ি ঘুরে দেখুন:
কোন একটি বা দুটি বিশেষ মডেলের গাড়ি দেখে পছন্দ হয়ে যাওযাটা খুবই সহজ ব্যাপার। অনেক সময়, গাড়ির ডিলার কিংবা নিজের গাড়ি বিক্রি করবেন এমন ব্যক্তির কাছে গেলে আপনার অনেক গাড়ি খুঁজে দেখার সুযোগ হয় না। এসব ক্ষেত্রে গাড়ি কিনতে বেশি দাম দিতে হতে পারে। এর পরিবর্তে দাম মেটানোর আগে আপনার উচিত চার-পাঁচটা গাড়ি খুঁজে দেখা। এর ফলে আপনাকে বেশি দাম দিতে হবে না কিংবা কোনো নির্দিষ্ট গাড়ির প্্েরমে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে গাড়ি একটি পণ্য এবং একটি নির্দিষ্ট ডিজাইন কিংবা স্টাইলের গাড়ির প্্েরমে পড়ে যাওয়া উচিত নয়।
পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে টেস্ট ড্রাইভ করা:
দেখা যায় কেউ যখন তার ব্যবহৃত গাড়িটি বিক্রি করে দিতে চায় তার একটি প্রবণতা থাকে ক্রেতাকে অকেজো জিনিস দিয়ে ঠকানোর। এটা থেকে রক্ষা পেতে একজন বুদ্ধিমান ক্রেতার উচিত পুঙ্খানুপুঙ্খ টেস্ট ড্রাইভ করা। আপনি যখন টেস্ট ড্রাইভের জন্য নিবেন অবশ্যই তখন এটি বিভিন্ন রাস্তায় কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য নিবেন। যদিও এটি আপনার কাছে অনেক বেশি মনে হতে পারে কিন্তু এর ফলে আপনি গাড়ির জটিল সমস্যাগুলো ধরতে পারবেন। বিক্রেতা যদি এটি করতে দিতে না চায় তাহলে বুঝতে হবে তিনি গাড়িটির যান্ত্রিক সমস্যাগুলো লুকাতে চাইছেনএ বং সেক্ষেত্রে সেই গাড়ি কেনা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে।
জেনে নিন কিভাবে গাড়ির সমস্যা খুঁজে বের করতে হয়:
গাড়ি পরিক্ষা করার সময় হুডের নীচে খেয়াল উচিত। ক্রেতাকে বুঝতে হবে যে কোন বিষয়গুলো খেয়াল করা উচিত। এটার জন্য আপনার এমন কোনো বন্ধুকে নিয়ে যান যিনি গাড়ির যন্ত্রপাতি ভালো বোঝেন এবং খুব দ্রুত গাড়ির উপর নজর বুলিয়েই বুঝতে পারেন। অবশ্য আপনি নিজেই কিছু বিষয় পরীক্ষা করতে পারেন যেমন তেলের ট্যাঙকিতে ছিদ্র আছে কি না এবং অকেজো কোন পার্টস আছে কিনা। এগুলো ছাড়্ও আপনাকে জানতে হবে কিভাবে মূল সমষ্যাগুলো খুঁজে বের করতে হয়। মোট খরচের কথা ভাবুন: আগেই বলা হয়েছে গাড়ি বাছাই করার আগে জ্বালানির খরচের কথা চিন্তা করুন। এটার সাথে এর ইন্স্যুরেন্স এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচের কথাও ভাবতে হবে। যেহেতু এই খরচ মডেল ভেদে ভিন্ন হয়, তাই চিন্তা ভাবনা করে বাছাই করলে আপনি অনেক টাকা বাঁচাতে পারবেন। কোন গাড়িতে সবচেয়ে কম খরচ হয় সেটা বাছাই করা খুব সহজ নয়। তাই আপনি যদি ছোট আকৃতির এবং নির্ভরযোগ্য কোনো টয়োটা কিনেন, তাহলে ভবিষ্যতে জটিল কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না, যার ফলে বাড়তি টাকাও খরচ হবে না।
দরদাম করা:
ক্লাসিফাইড সাইট থেকে গাড়ি কিনতে গেলে যতটা সম্ভব দরদাম করুন। যদিও এটা সব সময় আনন্দদায়ক নয় কিন্তু এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর সঠিকভাবে দরদাম করতে না পারলে আপনাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। ভালো দরদাম করার একটি সহজ উপায় হল হাতে নগদ টাকা নিয়ে যাওয়া। এর ফলে বিক্রেতা নগদ টাকা দেখে তৎক্ষনাত বিক্রি করার জন্য দাম অনেকখানি কমিয়ে দেয়।
পরিবারের সবার মতামত নিন:
অবশ্যই পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞাসা করুন তারা কি ভাবছে। টাকা পরিশোধ করার আগে আপনার স্ত্রী/ স্বামী এবং সন্তান এটি পছন্দ করেছে কি না জানতে চান। যেহেতু এসব ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই এটি আপনার বিনিয়োগ কতটা সঠিক তা নির্ধারন করে দিবে। অন্যদিকে, এর ফলে আপনাকে গাড়ি নিয়ে সামনে কিংবা অদুর ভবিষ্যতে অযথা সমস্যায় পড়তে হবে না।
বাংলাদেশে যখন আপনি কোন গাড়ি কিনতে যাবেন, আপনাকে এর পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে হবে এবং কিভাবে সঠিক দরদাম করা যায় জানতে হবে। একই সাথে আপনাকে জানতে হবে কোন গাড়িটি আপনাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে সেবা দিতে পারবে। অবশ্যই এই টিপসগুলো শুধুমাত্র গাড়ি কেনার শুরুর দিকে কাজে দিবে এবং এর পাশাপাশি ক্রেতাকে প্রতিটি গাড়ি এবং মডেল নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করতে হবে। এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি সাধারন সমস্যাগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন যেগুলোর মুখোমুখি সচরাচর বাংলাদেশে গাড়ির ক্রেতারা হয়ে থাকে। আর এই বিষয়গুলো অনেক খরচ আর সময়ের ব্যাপার হওয়াতে অনেকেই এগুলো এড়িয়ে চলেন। আর দুঃখের বিষয় এ কারনেই তারা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারে না। তাই গাড়ি কিনতে গেলে এই সাধারন টিপসগুলো মাথায় রাখুন আর আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত গাড়িটি কিনুন।