প্রথম ডিএসএলআর কেনার আগে কি কি জানা জরুরি?
আপনি যদি একজন নবাগত ফটোগ্রাফার কিংবা ভিডিওগ্রাফার হয়ে থাকেন, আজকাল বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে নজরকাড়া সব ক্যামেরার ভিড়ে আপনার প্রথম ডিএসএলআরটি পছন্দ করা ও কেনার সিদ্ধান্তটা হতে পারে বেশ কঠিন। সৌভাগ্যবশত প্রায় সব রকম দামের মধ্যে ও বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য উপযোগী ডিএসএলআর এখন বাজারে পাওয়া যায়। যাই হোক, প্রথম বারের মত ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ্য করা খুবই জরুরি। প্রতিটি ক্যামেরায় এত বেশি স্পেসিফিকেশন ও ফিচারে ভরা থাকে যে এদেরকে আলাদা ভাবে বেছে নেয়া খুবই জটিল হয়ে পড়ে। এই প্রতিবেদনে আমরা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ডিএসএলআরটি বাছাই করার জন্য যা কিছু জানা দরকার তা নিয়ে আলোচনা করবো এবং প্রথম বারের মত ডিএসএলআর কেনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পয়েন্ট আকারে দেখে নেব। তবে এই প্রবন্ধটি পড়ার আগে জেনে নিন কোন ক্যামেরাটি আপনার জন্য সঠিক!
আপনার ব্যবহার
প্রথমত আপনার জন্য কোন ডিএসএলআরটি সেরা সেটা নির্ভর করে আপনি কোন উদ্দেশ্যে ক্যামেরাটি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তার উপর- ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, নাকি দু’টোই! যদি আপনি ফটোগ্রাফি করার জন্য একটি ডিএসএলআর কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে এর ক্যামেরা মোডে কী কী ফিচার দেয়া হচ্ছে তা দেখে নিন, যেমন- বিল্ট ইন ফ্ল্যাশ ও ইমেজ এডিটিং এর ফিচার সহ এইচডিআর, পোট্রেট, নাইট মোড ইত্যাদি।
যদি আপনি ভিডিওগ্রাফিতে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে আরো বিশেষ কিছু ফিচার আলাদা ভাবে বিবেচনা করে দেখতে হবে, যেমন- যে রেসল্যুশনে এটি শ্যুট করতে পারে এবং এতে যে ফ্রেম রেট স্পিড পাওয়া যায় ইত্যাদি। উদাহরণ স্বরূপ, প্রায় সব ক্যামেরাই আপনাকে ১০৮০ পিক্সেলে ভিডিও ধারণ করার ক্ষমতা দিবে, কিন্তু খুব অল্প ক্যামেরায় ১০৮০ পিক্সেলে স্লো মোশন ভিডিও করার ক্ষমতা থাকে। বেশির ভাগ ক্যামেরা আপনাকে স্লো মোশন ভিডিও শ্যুট করতে দিবে কিন্তু তার রেসল্যুশন হবে মাত্র ৭২০ পিক্সেল এবং সর্বোচ্চ ফ্রেম রেট হবে ৫০ কিনবা ৬০ এফপিএস। ক্যানন ইওএস ৫ডি মার্ক ফোর, সনি আলফা ৬ ও ৭ সিরিজের ক্যামেরা আপনাকে ১০৮০ পিক্সেলে স্লো মোশন ভিডিও ধারণ করার ক্ষ্মতা দিতে পারে এবং এতে সর্বোচ্চ ফ্রেম রেট ১২০ এফপিএস পর্যন্ত পাওয়া যায়। সোজাকথায় ফ্রেম রেট যত বেশি হবে, আউটপুট ভিডিওটি তত বেশি স্মুথ ও সাবলীল হবে, যার ফলে দারুণ স্লো মোশন ইফেক্ট পাওয়া যায়। ডি এস এল আর দিয়ে ভিডিওগ্রাফি সম্পর্কে আরও জানতে দেখে নিন নবীনদের জন্য DSLR ভিডিও প্রডাকশন বিষয়ক পরামর্শ।
সেন্সর সাইজ
সেন্সর সাইজ আপনার প্রথম ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার। খুবই স্বাভাবিক যে যত বড় সেন্সর হবে, তত বেশি পরিমান তথ্য বা ডাটা এটি ধারণ করতে পারবে এবং ততটাই পরিষ্কার ও স্পষ্ট ছবি তাতে তোলা যাবে। মার্কেটে বিভিন্ন সাইজের সেন্সর সহ ক্যামেরা পাওয়া যায়। কিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩টি সেন্সর সাইজ হলো – ফুল ফ্রেম, এপিএস-সি এবং মাইক্রো ফোর থার্ডস(৪ঃ৩)।
ফুল ফ্রেম সেন্সর একটি ছবিতে সেরা ক্ল্যারিটি বা স্পষ্টতা এবং একই সাথে দারুণ সব গতিশীল পরিসীমা দিতে সক্ষম। ঠিক এর নামের মতই, ফুল ফ্রেম সেন্সরে একেবারেই কোন রকম ক্রপ ফ্যাক্টর নেই। অতএব আপনি স্বাভাবিক ভাবে ভিউ ফাইন্ডারে যা কিছু দেখতে পাবেন তার পুরোটাই ছবি তে তুলে আনবে একটি ফুল ফ্রেম সেন্সর। এটি মূলত ফটোগ্রাফারদের বেশি পছন্দনীয় এবং এটি বেশ ব্যয়বহুলও। কিন্তু এর অসামান্য ওয়াইড এঙ্গেলে ছবি তোলার ক্ষমতার জন্য এটি বাজারের সেরা মানের সেন্সর গুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। অতএব আপনি যদি এমন একটি ক্যামেরা কেনার কথা ভেবে থাকেন যা অন্তত ৩-৪ বছর পর্যন্ত কোন রকম ঝামেলা কিংবা আপগ্রেড ছাড়াই ভালো ভাবে পারফর্ম করতে পারবে, তাহলে আমি পরামর্শ দেব একটি ফুল ফ্রেম সেন্সরের ক্যামেরা কেনার, অবশ্য সেজন্য আপনার বাজেট ভালো হতে হবে।
এপিএস-সি সেন্সর ক্রপ সেন্সরের তালিকায় অন্যতম সেরা এক নাম এবং নাইকন ও ক্যাননের বেশির ভাগ প্রাথমিক স্তরের এবং মাঝারি দামের ডিএসএলআর ক্যামেরায় এই সেন্সর ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই সেন্সর সাইজ আপনাকে ১.৬ ক্রপ দেয় এবং দাম ও ইমেজ কোয়ালিটির মাঝে এক সেরা সমন্বয় স্থাপন করতে সক্ষম। ফটোগ্রাফার হোক কিংবা ভিডিওগ্রাফার, সকলের জন্যই এই সাইজের সেন্সর সর্বোত্তম।
এরপর রয়েছে ফোর থার্ড বা মাইক্রো ফোর থার্ড সেন্সর সাইজ যা কিনা বেশির ভাগ অলিম্পাস ও প্যানাসনিক ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই সেন্সর সাইজ আপনাকে দিবে ২এক্স ক্রপ এবং এতে ব্যবহৃত হয় ৪ঃ৩ এসপেক্ট রেশিও। যার ফলে এই সেন্সর ভিডিওগ্রাফারদের জন্য অধিক উপযোগী। একই সাথে এই সাইজের সেন্সর যেসব ক্যামেরায় থাকে সেগুলো অধিক ফ্রেম রেট স্পিড ও উত্তম রেসল্যুশন দিতে সক্ষম। এত সব কথার সারমর্ম হলো, আপনি যদি আপনার ভিউফাইন্ডারের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চান এবং ওয়াইড এঙ্গেলে ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করতে চান তাহলে আপনার উচিত একটি ফুল ফ্রেম সেন্সর কেনা। আর যদি আপনি বাজেটের মধ্যে সবটুকু পেতে চান এবং একই সাথে ছবি ও ভিডিওতে সেরা পারফর্মেন্স পেতে চান, তাহলে একটি ক্রপ সেন্সর ক্যামেরা আপনার জন্য উপযুক্ত, আর সেটি এপিএস-সি হলে সবচেয়ে ভালো।
ক্যামেরার বডি
ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো ক্যামেরার বডি। যেখানে বেশির ভাগ ডিএসএলআর ক্যামেরার মডেল দেখতে প্রায় একই, সেখানে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি যে মডেলটি কিনতে চাচ্ছেন তার বাহ্যিক গঠণ আপনার স্বাচ্ছন্দ্য ও ব্যবহার অনুযায়ী আপনার জন্য সঠিক ফিট করছে কিনা।
এরপর আপনাকে চেক করতে হবে এতে থাকা বিল্ট ইন মাইক্রোফোন, একটি এইচডিএমআই পোর্ট এবং কাস্টম বাটনের সংখ্যা ঠিকমত আছে কিনা। আমি এটাও পরামর্শ দেব যে আপনি এমন ক্যামেরা কিনুন যাতে ডিসপ্লে হিসেবে একটি এলসিডি টাচ স্ক্রিন রয়েছে, কেননা এতে অনেক কাজ আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আরো লক্ষ্য করুন আপনার ডিএসএলআরের ডিসপ্লেতে ফ্লিপিং বা ঘোরানো সিস্টেম আছে কিনা। আপনি যদি ভিডিও শ্যুট করেন, তাহলে এই ফ্লিপিং ডিসপ্লে আপনার অনেক কাজে দিতে পারে। নাইকন ও ক্যানন উভয় ব্র্যান্ডেরই বেশির ভাগ বাজেট ক্যামেরায় টাচ স্ক্রিন ডিসপ্লে দেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেও ব্যতিক্রম রয়েছে, তাই আগে ভাগেই চেক করে নেয়া ভালো। টাচ স্ক্রিন না থাকলেও আপনি একটা সময় এর বাটন সমূহ ব্যবহার করায় অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, সেটা যে ব্র্যান্ডের ক্যামেরাই হোক না কেন।
লেন্স
একটি ক্যামেরার কোয়ালিটি বিচারের ক্ষেত্রে লেন্স হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। অতএব আপনি যে ব্র্যান্ডের ডিএসএলআরই বাছাই করুন না কেনো, তাতে যেন বিভিন্ন ধরণের লেন্সের সংগ্রহ বাজারে সুলভ থাকে। প্রকৃতপক্ষে আজকের বাজারের সেরা ৩টি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, নাইকন, ক্যানন এবং সনির ক্যামেরায় সমান সংখ্যক ও বহুল রকমের লেন্সের সংগ্রহ রয়েছে। যাই হোক, এটা সকলে জানেন যে নাইকন এর লেন্সগুলো সমমানের ও একই ফিচারের ক্যানন কিংবা সনি লেন্সের তুলনায় যথেষ্ট সাশ্রয়ী। এছাড়াও এ সব গুলো ব্র্যান্ডই একটি বিশেষ মাপ ও ধরণের কিট লেন্স অফার করে থাকে, তা হলো ১৮-৫৫ মিলিমিটার জুম লেন্স। আপনি যদি বাজেটের মধ্যে ভালো ডি এস এল আর ক্যামেরা ও লেন্স কিনতে চান, তাহলে আপনার উচিত ক্রপ ফ্রেম সেন্সর সমৃদ্ধ একটি স্বল্পমূল্যের বডি কেনা ও বেশি টাকা খরচ করে একটি জুম কিট লেন্স ও একটি প্রাইম লেন্স একসাথে কিনে ফেলা। এতে করে আপনি যেকোন ধরণের ছবি তোলার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকবেন। আমার মতে একটি ১৮-৫৫ মিলিমিটার কিট লেন্সের সাথে একটি ৫০ মিলিমিটার এফ১.৮ প্রাইম লেন্স কেনা ভালো; আর বাজেট আরেকটু ভালো হলে ৫০ মিলিমিটার এফ১.৪ প্রাইম লেন্সো কিনতে পারেন, যা এফ১.৮ এর চেয়েও বেশি ভালো।
যদি আপনার বাজেট নিয়ে কোনরকম সমস্যা না থাকে এবং প্রফেশনাল পর্যায়ে ডিএসএলআর ব্যবহার করার ইচ্ছা থেকে থাকে তাহলে আপনি ভিন্ন ভিন্ন ধরণের লেন্সের কম্বিনেশন কিনতে পারেন। ওয়াইড এঙ্গেলে ছবি তোলার জন্য আপনি একটি ১৭-৪০ মিলিমিটার কিট লেন্স কিনতে পারেন, বাজেট একটু ভালো হলে এইটার বদলে কিনতে পারেন ১৬-৩৫ মিলিমিটার লেন্স। একই সাথে দারুণ ল্যান্ডস্কেপ ও পোট্রেট ছবি তুলতে পারে এবং আরো বেশি জুমিং করতে পারে এমন লেন্স হলো ২৪-৭০ মিলিমিটার (অথবা একটু বেশি দামের ২৪-১০৫ মিলিমিটার) কিট লেন্স। এছাড়াও পোট্রেট ছবি তোলার জন্য আরো ভালো জুম লেন্স রয়েছে বাজারে, যেমন ৭০-২০০ মিলিমিটার এফ৪ / ৭০-২০০ মিলিমিটার এফ২.৮ (দামে সামান্য বেশি) লেন্স। পোট্রেট ছবি তোলার জন্য সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করে প্রাইম লেন্স, অতএব ৫০ মিলিমিটার লেন্সের বদলে আপনি কিনতে পারেন ৮৫ মিলিমিটার এফ১.৮ লেন্স অথবা আরেকটু ভালো বাজেট থাকলে ৮৫ মিলিমিটার এফ১.৪ লেন্স। উল্লেখিত লেন্সগুলো অল্প আলোতেও ভালো ছবি তুলতে পারে।
ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করার জন্য ১০০ মিলিমিটার এফ২.৮ প্রাইম লেন্স অন্যতম সেরা লেন্সগুলোর মধ্যে একটি। এখানে উল্লেখিত সবগুলো লেন্সই ফুল ফ্রেম ক্যামেরার জন্য ভালো, তবে চাইলেই আপনি এগুলো ক্রপ ফ্রেমের ক্যামেরার সাথেও ব্যবহার করতে পারবেন।
মেগাপিক্সেল
মেগাপিক্সেলের হিসাব করা দরকারি, তবে আপনি যতটা মনে করেন ঠিক ততটাও দরকারি নয়। অধিক মেগাপিক্সেলের মানেই যে অধিক ভালো ছবি এমন কোন কথা নেই। ৮মেগাপিক্সেলের ছবিও বড় মাপের প্রিন্ট বের করার জন্য যথেষ্ট এবং আজকাল প্রাথমিক স্তরের ডিএসএলআরেও ১৫ থেকে ১৬ মেগাপিক্সেলের ছবি তোলা যায়। সতি কথা বলতে, আজকের দিনে আপনি যে ডিএসএলআর মডেলই কিনুন না কেন, আপনার প্রয়োজনের চেয়েও বেশি মেগাপিক্সেল তাতে থাকবে। অতএব মেগাপিক্সেলের হিসাব নিয়ে বিভ্রান্ত হবার বা দুশ্চিন্তা করার কোন প্রয়োজনই নেই।
যাই হোক, বিলবোর্ড ফটোগ্রাফির মত বড় মাপের ছবির জন্য ক্যানন ৬ডি, মার্ক থ্রি, ফোর কিংবা এদের সমতুল্য যেকোন ক্যামেরাই আপনাকে দিতে পারে সেরা পারফর্মেন্স। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ‘র’ মোডে শ্যুট করতে হবে।
ভবিষ্যতের কথা ভাবুন
ডিএসএলআর ক্যামেরা কোন সস্তা জিনিস নয়, অতএব আপনি যে ক্যামেরাটিই কিনছেন না কেন তা ভবিষ্যতের জন্য কতটা নিশ্চিত তা ভালোভাবে জেনে বুঝে তবেই কেনা উচিত, যাতে করে অন্তত কয়েক বছর পর্যন্ত নিশ্চিতে কোনরকম আপগ্রেড ছাড়াই চলতে পারেন, শীঘ্রই আপগ্রেড করার ইচ্ছা থাকলে ভিন্ন কথা। সত্যি বলতে যদি আপনার বাজেট যথেষ্ট ভালো থাকে, তাহলে আপনি বেশির ভাগ নাইকন কিংবা ক্যানন ক্যামেরা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি প্রফেশনাল হতে চান এবং এক দফায় ভালোভাবে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে আপনার উচিত ফটোগ্রাফির জন্য একটি ফুল ফ্রেম সেন্সর সমৃদ্ধ, অথবা ভিডিওগ্রাফিতে আগ্রহ বেশি থাকলে ফোরকে সাপোর্ট করে এমন একটি ক্যামেরা কিনতে পারেন।
মিররলেস নাকি ডিএসএলআর?
মিররলেস ক্যামেরার জনপ্রিয়তা এখন দিন কে দিন বেড়ে চলেছে, তাই এটা নিয়ে ভাবা কিংবা বিভ্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক যে আপনি কোনটি কিনবেন, মিররলেস ক্যামেরা নাকি একটি ডিএসএলআর? আসলে, মিররলেস ক্যামেরার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এগুলো স্পষ্টতই অধিক বহনযোগ্য এবং কুশলী, যেহেতু মিররলেস ক্যামেরা অনেক হাল্কা ও আকারে ছোট হয়ে থাকে। তারপর আবার হাই স্পিড শ্যুটিং এর ক্ষেত্রে মিররলেস ক্যামেরা অন্যান্য ক্যামেরার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। তাছাড়াও এই ক্যামেরাগুলো দ্রুততর অটোফোকাসের সাথে ভালো মানের ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম এবং এতে অবস্থিত ইলেকট্রনিক ভিউফাইন্ডার অনেকের কাছেই অধিক সমাদৃত।
যাই হোক, আমি তারপরও পরামর্শ দেব যেন আপনি একটি ডিএসেলআর ক্যামেরাই কিনেন। কারণ ডিএসএলআরের ক্ষেত্রে বহুল রকমের ও মানসম্মত লেন্স ব্যাপক সহজলভ্য। আর মিররলেস ক্যামেরায় লেন্সের সংগ্রহ থাকলেও, এদের সংখ্যা বেশ কম এবং এগুলো দামেও অনেক চড়া। তারপর আবার এটাও সত্য যে কিছু মানুষ ডিএসএলআর ক্যামেরার সাথে থাকা অধিকতর প্রাকৃতিক এবং ল্যাগ-বিহীন অপটিকাল ভিউফাইন্ডারই বেশি পছন্দ করে থাকেন।
এখন যেহেতু আপনি আপনার প্রথম ডিএসএলআর বাছাই করার ক্ষেত্রে সব প্রধান ফ্যাকটরগুলো জেনেই ফেলেছেন, তাই আসুন দেখে নিই বিভিন্ন দামের তালিকার মধ্যে সেরা ডিএসএলআর ক্যামেরার নামগুলো।
বাংলাদেশে ৩৫০০০ টাকার মধ্যে আপনি যেই ক্যামেরাটি সবচেয়ে ভালো পাবেন তা হলো নাইকন ডি৫৩০০ এর ক্যামেরা বডি। বাংলাদেশের বাজারে ৭০০০০ টাকার মধ্যে সেরা ক্যামেরা বডি হলো নাইকন ডি৫৫০০। ১ লাখ টাকার মধ্যে আপনি দেখতে পারেন ক্যাননের ইওএস ৮০ডি ডিএসএলআর ক্যামেরা বডি। সবশেষে দেড় লাখ টাকার মধ্যে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ হচ্ছে ক্যানন ইওএস ৬ডি ক্যামেরার বডিটি। আর আপনার বাজেট যদি আরো বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আপনার প্রয়োজন ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে যে কোন ক্যামেরাটি আপনি কিনবেন। এক্ষেত্রে আপনি ঐসব মডেলের বিভিন্ন ভালো দিকগুলো বিবেচনা করে তারপর একটি ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বোনাস টিপস: ভালোভাবে গবেষণা করে নিন এবং জেনে শুনে সিদ্ধান্ত নিন
একটি নতুন ডিএসএলআর কেনা নিঃসন্দেহে একটি বিশাল বিনিয়োগ। আর আপনি অবশ্যই চাইবেন এমন একটি ক্যামেরা পছন্দ করতে, যা আপনার বিশেষ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য কাজে আসবে এবং এমন একটি দামের মধ্যে তা কিনতে চাইবেন যা আপনার বাজেটের জন্য সর্বাপেক্ষা সহনীয়। প্রতিটি ক্যামেরার সেন্সর সাইজ, মেগাপিক্সেলের হিসাব এবং ইমেজ কোয়ালিটিসহ বিভিন্ন ক্যামেরার নানাবিধ স্পেসিফিকেশনের মধ্যে তুলনা করার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার কষ্টের টাকায় ঠিক কেমন পারফর্মেন্স পাচ্ছেন। নতুন ক্যামেরা কেনার আগে আমাদের আরেকটি আর্টিকেল থেকে জেনে নিন ডিএসএলআর ক্যামেরার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সম্পর্কে। আর এটা করার জন্য, আপনি সহজেই বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন Bikroy.com তে সার্চ করতে পারেন এবং হাতের নাগালে শত শত অপশন ব্রাউজ করে দেখতে পারবেন। এছাড়াও আপনি চাইলেই আদর্শ ও বিশ্বাসযোগ্য বিভিন্ন ক্যামেরার শোরুমে যেতে পারেন এবং সরাসরি দেখে বিচার করতে পারেন। জেনে শুনে সিদ্ধান্ত নিন এবং এভাবে আপনি অবশ্যই আপনার কেনা সামগ্রী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকত পারবেন ও আপনার প্যাশনটি নিয়ে আরো বেশি পড়াশুনা করা ও একজন নিবেদিত ফটো অথবা ভিডিওগ্রাফার হওয়ার পেছনে কাজ করার মত পর্যাপ্ত সময়ও পাবেন। শপিং হোক আনন্দের!
আপনি একটি ডিএসএলআর বাছাই করার ক্ষেত্রে আর কী কী জিনিস লক্ষ্য করেন? আপনি কি এমন কোন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছেন যা কিছু ক্যামেরাকে অন্য সব ক্যামেরার চেয়ে আলাদা করে তোলে? আপনার ক্যামেরা কেনা সম্পর্কিত সেরা অভিজ্ঞতা ও টিপস গুলো শেয়ার করুন একটু নিচেই আমাদের কমেন্ট সেকশনে!