চাকরি

কন্টেন্ট রাইটিংঃ লেখালেখি যখন উপার্জনের মাধ্যম

প্রযুক্তির এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন তথ্যকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। আপনি যা কিছুই জানতে চান না কেন, তা শুধুমাত্র একটি ক্লিকেই সম্ভব।  

আজকের দিনে বিভিন্ন রকম কন্টেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছে নিজেদের তুলে ধরছে। আর এভাবেই বেড়ে চলেছে কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদা।

আজকের লেখায় আমরা কন্টেন্ট রাইটিং, বাংলাদেশে কনটেন্ট রাইটিং চাকরি এবং আপনি কীভাবে আপনার দক্ষতা এবং পেশাদারীত্বকে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তুলে ধরবেন সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

কন্টেন্ট রাইটিং কী?

বর্তমানে আমাদের দেশে কন্টেন্ট রাইটিং শেখার জন্য একাডেমিক কোনো ডিগ্রি বা কোর্সের প্রচলন নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কন্টেন্ট রাইটারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজি সাহিত্য এবং জার্নালিজম-এ স্নাতকধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে। তবে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে অনলাইন কোনো পোর্টালে কাজ করার ক্ষেত্রে তেমন ডিগ্রি যাচাই করা হয়না। 

লেখার মান ভালো হলে আপনার এই শখের কাজ থেকেই আয় করা সম্ভব। একজন কন্টেন্ট রাইটার মূলত আর্টিকেল, ব্লগ, পত্রিকাসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে থাকেন। কাজের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আপনাকে আপনার কন্টেন্টে ছোটোখাটো ভুল, ব্যাকরণগত ত্রুটি, এবং এডিটিং-এ দক্ষ করে তুলবে। 

কন্টেন্ট রাইটার হতে হলে কী কী দক্ষতা প্রয়োজন?

অনলাইন মার্কেটিং-এর এই বিশাল পরিসরে আসতে হলে বেশ কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু হলোঃ 

  • বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে হলে যদিও স্নাতক ডিগ্রীর প্রয়োজন হয়না, তবুও স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আপনাকে অন্যদের থেকে চাকরি পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখবে। 
  • লেখার হাত ভালো থাকলে যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই কন্টেন্ট রাইটিং-এ আসা যেতে পারে। 
  • সঠিক উপায়ে রিসার্চিং বা গবেষণা করার দক্ষতা আপনাকে কন্টেন্ট লিখতে অনেকাংশে সহায়তা করবে, কারণ সঠিক গবেষণাই একটি কন্টেন্ট তৈরির মূল ভিত্তি। 
  • প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী আপনার গবেষণালব্ধ তথ্য সমূহ সঠিক উপায়ে তুলে ধরতে জানতে হবে। 
  • যাদের জন্য লিখছেন সেই গ্রাহকদের চাহিদা সম্পর্কে জানুন, এতে করে তাদের কাছে সঠিক তথ্যটি পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে। 
  • স্বতন্ত্র কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে এবং লেখার শুরু থেকেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ফোকাস রেখে লিখে যেতে হবে। 
  • এডিটিং এর উপর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এতে করে বানান, ব্যাকরণ, এবং বাক্যের গঠনের উপর পূর্ণ দখল রাখা সম্ভব হবে। 
  • বিষয়বস্তুর উপর পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং ভাষাগত দক্ষতা কন্টেন্ট রাইটিং-কে একটি স্বাধীন পেশা হিসেবে বেছে নিতে সাহায্য করবে। 

কন্টেন্ট রাইটিং-এ কীভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন?  

বিভাগ স্নাতক স্নাতকোত্তর 
উপায় ১ যেকোনো বিভাগ হতে উচ্চমাধ্যমিক পাস যেকোনো বিষয়ের উপর ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রি                                      –
উপায় ২ যেকোনো বিভাগ হতে উচ্চমাধ্যমিক পাস ইংরেজি  সাহিত্যের উপর ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রীসাংবাদিকতায় অথবা ইংরেজি সাহিত্যের উপর ২ বছর মেয়াদী মাস্টার্স ডিগ্রি 
উপায় ৩ যেকোনো বিভাগ হতে উচ্চমাধ্যমিক পাস জার্নালিজম বা সাংবাদিকতার উপর ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রীইংরেজি  সাহিত্য অথবা সাংবাদিকতার উপর ২ বছর মেয়াদী মাস্টার্স ডিগ্রি
লেখালেখি পেশায় আসতে হলে যেকোনো বিষয়ের উপর স্নাতকধারী হতে হবে

কন্টেন্ট রাইটিং কী কী ধরণের হতে পারে 

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মাধ্যমে কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ পাওয়া যেতে পারে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন রকম রাইটিং সেবা আপনাকে প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশে যে ধরণের কন্টেন্ট রাইটিং চাকরি পাওয়া যেতে পারে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ 

ওয়েব কন্টেন্ট রাইটার

ওয়েব কন্টেন্ট রাইটাররা মূলত অনলাইনে প্রকাশের জন্য কন্টেন্ট লিখে থাকেন। একজন পেশাদার কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে আপনাকে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে, প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরণ, পণ্য/সেবা, ব্লগ, আর্টিকেল রাইটিং, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) কপি রাইটিং ছাড়াও অন্যান্য নানাবিধ লেখালেখি সম্পর্কিত কাজ করতে হতে পারে। 

তবে একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে আপনাকে যেকোনো কন্টেন্টের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে ভালো আইডিয়াটি তুলে ধরতে আপনার প্রতিষ্ঠানের সেলস এবং মার্কেটিং টিমের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে এগোতে হবে। 

ফ্রিল্যান্সার

একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসেবে আপনার কাজ কীরকম হবে সেটি আপনি যেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তারাই নির্ধারণ করে দিবে। যার মধ্যে থাকতে পারে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত কন্টেন্ট দেওয়া, ইমেইল মার্কেটিং, কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট, অথবা এসইও প্র্যাকটিস। 

অনলাইন মার্কেটপ্লেস ছাড়াও একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি দেশের অভ্যন্তরেই কন্টেন্ট রাইটিং বা আর্টিকেল রাইটিং-এর কাজ খুঁজে পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার লিংকডইন প্রোফাইলের মাধ্যমে আপনাকে গ্রাহকদের খুঁজে বের করার মাধ্যমে তাদের কাছে আপনার সেবা পৌঁছে দিতে হবে। যেই মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরা নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেরদের জন্য যোগ্য ব্যক্তি খুঁজছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে বিকল্প উপার্জনের এই পন্থা হাতছাড়া করার অর্থ নেই।    

ব্লগার

ব্লগিং আপনাকে আপনার পছন্দের বিষয়ে আরও বেশি দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে। এছাড়াও ব্লগিং নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার মতই অন্যান্য যাদের আগ্রহ রয়েছে তাদের সবাইকে একত্রিত করতে পারে। বর্তমানে অনলাইন দুনিয়ায় বেশ কিছু রকমের ব্লগারের দেখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রথম সারির সেযব ব্লগার আছেন, যারা ব্লগের ব্যাপারে শৌখিন এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সেই সম্পর্কিত কন্টেন্ট তাঁরা শেয়ার করেন। 

দ্বিতীয়ত যারা পার্ট-টাইম ব্লগিং করেন। এই জাতীয় ব্লগারদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্লগ থাকে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কাজের জন্য এই ব্লগারদের নিয়োগ দেয়। তৃতীয় ক্যাটাগরির ব্লগাররা মূলত  ফুল-টাইম ব্লগার, যারা তাদের ব্যক্তিগত ব্লগের মাধ্যমে উপার্জন করে থাকে।

ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট রাইটার 

পাবলিশিং হাউসগুলো মূলত ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট রাইটারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। আপনাকে আলোচিত খবর সহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল লিখতে হতে পারে একজন ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে। এছাড়াও ক্রিয়েটিভ রাইটারদের কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। যার মধ্যে রয়েছেঃ রিকমেন্ডেশন লেটার, সিভি, দরখাস্ত, বৃত্তি আবেদন লেখা সহ নানাবিধ অন্যান্য কাজ। 

পাশাপশি আপনাকে ক্লাইন্ট ব্রিফকে অনুবাদ করার ক্ষমতা এবং আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।  

স্ক্রিপ্ট রাইটার 

একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার মূলত ভিডিও ধারণের উপযোগী করে কন্টেন্ট লিখে থাকেন। এক্ষেত্রে আপনার গ্রাহকের চাহিদা মাথায় রেখে সেই অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করা প্রয়োজন। 

একজন পেশাদার স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে আপনাকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপশি কাজ করার সময় নিয়মিত বিভিন্ন সৃজনশীল আইডিয়াও উপস্থাপন করা প্রয়োজনীয়। 

কপি রাইটার

কপি রাইটাররা সচরাচর পণ্য অথবা সেবা বিক্রয়ের জন্য আকর্ষণীয় কপি লিখে থাকেন। যার মধ্যে রয়েছে পণ্যের প্রচার সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা, ব্লগ, পণ্য বিবরণী, নিউজ লেটার, বিজ্ঞাপন কপি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট, সহ অন্যান্য নানাবিধ কপি। 

এছাড়াও একজন কপি রাইটার অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন এবং সময়োপোযোগী কপি তৈরি করে থাকেন।  

টেকনিক্যাল রাইটার

টেকনিক্যাল রাইটারদের কাজ হলো জটিল কোন বিষয়কে গ্রাহকদের কাছে খুব সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা এবং পণ্য/সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা। টেকনিল্যাল রাইটিং এর মধ্যে রয়েছে ইউজার ম্যানুয়াল লেখা, পণ্য সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর, ব্যবহারিক গাইডলাইন, ইত্যাদি। 

একজন ভালো টেকনিক্যাল রাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে সফটওয়্যার, ইঞ্জিনিয়ারিং সহ অন্যান্য অনেক টেকনিক্যাল ভাষা সম্পর্কে জানতে হবে।     

একাডেমিক রাইটার

একাডেমিক রাইটারদের মূলত লেখালেখির দক্ষতার পাশাপশি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হয়। যাতে করে আপনার লেখার মাধ্যমে সেই বিষয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হয়। এছাড়াও অনেক সময় টেকনিক্যাল রাইটারদের পড়াশোনা অথবা পেশা  সম্পর্কিত বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল তৈরি করার প্রয়োজন হতে পারে। 

কন্টেন্ট রাইটিং-এর ভালোমন্দ 

অন্যান্য আরও অনেক পেশার মতই কন্টেন্ট রাইটিং-এরও কিছু ভালোমন্দ দিক রয়েছে। 

কন্টেন্ট রাইটিং-এর ভালো কিছু দিক- 

  • আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার রাইটার হিসেবে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে কাজ করার সুবিধা পাবেন। 
  • ব্যবসা এবং মার্কেটিং এর সমন্বয় ঘটানোর মাধ্যমে একজন কন্টেন্ট রাইটার বেশ ভালো পরিমাণের উপার্জন করতে পারেন।   
  • সময় এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজারে একজন কন্টেন্ট রাইটারের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পায়। 

কন্টেন্ট রাইটিং-এর কিছু মন্দ দিক-  

  • বাংলাদেশে যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং এর বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তাই এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।  
  • আপনার উপস্থিতি নির্দিষ্ট স্থানে না হলেও আপনাকে প্রায় সময়ই ডেডলাইন মেনে কাজ করতে হবে। 
  • মাঝে মাঝে আপনাকে রাইটার্স ব্লকের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে। 

শেষকথা

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রি এই সময়ে তার স্বর্ণশিখরে অবস্থান করছে। যার অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি সেক্টর হল কন্টেন্ট রাইটিং। প্রায় প্রতিটি শিল্প এবং ব্যবসার প্রসারের জন্যেই প্রয়োজন উন্নত মানের কন্টেন্ট। 

তবে মার্কেটিং-এর এই বিশাল পরিসরের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বদলে চলেছে কন্টেন্ট রাইটার নিয়োগের যোগ্যতাগুলো। মোটাদাগে, আপনার সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা এবং সেগুলোকে বাক্যে রূপান্তরিত করার দক্ষতা থাকলে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং ক্যারিয়ারে ভালো কিছু করার সুযোগ পাবেন। 

আমরা আশাবাদী আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনার কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার পথ কিছুটা হলেও সুগম হবে। 

হ্যাপী রাইটিং!

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close