কোভিড-১৯ এবং আমাদের নিরাপত্তাঃ ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের জন্য কিছু টিপস
প্রায় দুই মাস দীর্ঘ ছুটির পর অবশেষে আমরা ফিরে গিয়েছি আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে। অর্থনীতিকে সচল রাখতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও আমাদের দেশ এখনো কোভিড-১৯ মহামারির ঝুঁকিতে অবস্থান করছে। তাই নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের হতে হবে আগের চেয়েও বেশি সচেতন। জীবিকার তাগিদে আমাদের প্রায় সবাইকেই যেতে হচ্ছে ঘরের বাইরে এবং অনেকের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে। এর অর্থ কিন্তু আগের সেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া নয়। আমাদের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে নতুনভাবে, আনতে হবে বেশ কিছু পরিবর্তন। আজ আমরা উল্লেখ করবো এমন কিছু টিপস যা অনলাইন এবং অফলাইনে পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করবে।
বিক্রেতাদের জন্য টিপসঃ
অনলাইনে বেচা-বিক্রি
- বিক্রিযোগ্য পণ্য খালি হাতে ধরা থেকে বিরত থাকুন, সবসময় গ্লাভস ব্যবহার করুন।
- ডেলিভারি করার পূর্বে প্যাকেজটি অ্যালকোহলযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোমতো জীবাণুমুক্ত করে নিন।
- সম্ভব হলে প্যাকেজটির উপর একটি আলাদা প্লাস্টিক শিট ব্যবহার করুন।
- শুধুমাত্র বিশ্বস্ত ডেলিভারি বা কুরিয়ার মাধ্যম থেকে সার্ভিস নিন যারা ডেলিভারি ম্যানদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
- যেসব এলাকা করোনার ঝুঁকিতে আছে সেসব এলাকায় সাবধানতার সাথে ডেলিভার করুন।
- নগদ টাকার পরিবর্তে মোবাইল বা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে মূল্য গ্রহণ করুন।
অফলাইনে বেচা-বিক্রি
- আপনার ব্যবসার কোনো ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থাকলে সেখানে গ্রাহকদের প্রি-অর্ডার করার পরামর্শ দিন, এতে করে কম সময় অতিবাহিত করে ক্রেতারা দোকান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।
- দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান খোলা রাখুন এবং প্রতিদিন দোকান খোলা এবং বন্ধ করার পূর্বে ভালোভাবে সবকিছু পরিষ্কার করে নিন।
- সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সম্ভব হলে ক্রেতাদের আগে থেকে টাইম-স্লট বুক করে দোকানে আসার পরামর্শ দিন, এতে দোকানে ভিড় কম হবে।
- লাইনে অপেক্ষা করতে হলে কমপক্ষে ৩ ফিট বা ১ মিটার দূরত্বে দাঁড়ানোর জন্য সার্কেল বা চিহ্ন এঁকে দিন।
- ক্রেতারা দোকানে ঢোকামাত্র যাতে হাত পরিষ্কার করতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যানিটাইজার মজুদ রাখুন।
- সম্ভব হলে পরিধেয় জুতা বাইরে রেখে আসার ব্যবস্থা করুন।
- হোম ডেলিভারি দিতে হলে সে এলাকায় আক্রান্তের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিন এবং গ্রাহকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে প্যাকজ ডেলিভার করুন।
- নগদ টাকার ব্যবহার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন, এর পরিবর্তে মোবাইল বা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে মূল্য গ্রহণ করুন।
- নিজের এবং কর্মীচারীদের নিরাপদে রাখতে অবশ্যই মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করুন এবং কিছু সময় পরপর অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে দুই হাত পরিষ্কার করুন।
- কর্মচারীরা কোন এলাকা থেকে আসছেন এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কিনা সে ব্যাপারটি পূর্ণ নজরদারিতে রাখুন।
- কর্মচারীরা যাতে নিজেদের মধ্যে এবং ক্রেতাদের সাথে সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। কোনো কর্মচারী বা আপনি নিজে অসুস্থ বোধ করলে বাইরে না থেকে বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিন।
ক্রেতাদের জন্য টিপসঃ
অনলাইনে কেনাকাটা
- ডেলিভারি বুঝে পাওয়া মাত্র পণ্য বের করে প্যাকেজটি ঢাকনাযুক্ত বাস্কেটে ফেলে দিন।
- তরল জীবাণুনাশক দিয়ে পণ্যটি ভালোভাবে মুছে ফেলুন।
- ডেলিভারি নেবার সময় মাস্ক এবং গ্লাভস পরিধান করতে পারলে ভালো।
- নিরাপদ দূরত্বে থেকে পার্সেল গ্রহণ করুন, সম্ভব হলে ডেলিভারি ম্যানকে দরজার বাইরে প্যাকেজটি রেখে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন।
- শুধুমাত্র বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা করুন যারা ডেলিভারি ম্যানদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
- নগদ টাকার পরিবর্তে মোবাইল বা অনলাইনে ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট করুন।
- পার্সেল গ্রহণ করার পূর্বে এবং পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
অফলাইনে কেনাকাটা
- দোকান বা শপটি যেই এলাকায় অবস্থান করছে সেখানকার করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিন।
- যেই দোকান বা শপ থেকে পণ্য কিনতে চাচ্ছেন তার ওয়েবসাইট বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থাকলে সেখানে প্রি-অর্ডার করে নিতে পারেন, এতে করে কম সময়ের মধ্যেই দোকান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।
- বাইরে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন এবং মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করুন।
- কিছুক্ষন পরপর অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে দুই হাত পরিষ্কার করে নিন।
- দোকানে থাকা অন্যান্য পণ্য যা আপনি এই মুহূর্তে কিনছেন না, সেগুলো অকারণে নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।
- ক্রেতাদের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সার্কেল বা চিহ্ন অনুযায়ী অপেক্ষা করুন অথবা অন্যদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফিট বা ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।
- নগদ টাকার পরিবর্তে মোবাইল বা অনলাইনে ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট করুন।
- কিনে আনার পর ঘরে ফিরেই প্যাকেজটি ঢাকনাযুক্ত বাস্কেটে ফেলে দিন।
- জীবাণুনাশক দিয়ে পণ্যটি ভালোভাবে মুছে ফেলুন।
- ঘরে ফিরে জুতা বাইরে রেখে পরিধেয় বস্ত্র ধুয়ে ফেলুন এবং গোসল সেরে নিন।
নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কেনাবেচা
এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাবেচা করতে আমাদের বাজারে যেতে হয়। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস Bikroy.com নিয়ে এসেছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের স্টোরগুলোর বিক্রেতারা অনলাইনে নিজের স্টোর খুলতে পারবেন কোনো ফি ছাড়াই। আবার ক্রেতারাও নিজ এলাকার সুপার স্টোরগুলো থেকে ঘরে বসেই খাদ্যসামগ্রী, ঔষধ ইত্যাদি বুঝে নিতে পারবেন। সারাদেশ থেকে আমাদের রেজিস্টার্ড মেম্বারদের পোস্ট করা ১০,০০০ এরও বেশি বিজ্ঞাপনের মধ্যে রয়েছে খাবার সামগ্রী যেমন চাল, ডাল, তেল, ডিম ইত্যাদি, মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজারের মতো স্বাস্থ্যসেবার পণ্য, ঘর পরিষ্কারের জন্য গৃহস্থালি সামগ্রী, শিশুদের পণ্য যেমন দুধ, ফর্মুলা ডায়াপার ইত্যাদি, তাজা ফল ও সবজি, টাটকা মাছ ও মাংস ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো। তবে এক্ষেত্রেও মেনে চলতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকার ঘোষিত পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি।
শেষকথা
মনে রাখতে হবে সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা কখনোই সম্ভব নয়, তবে আশা করি উপরোক্ত টিপসগুলো মেনে চললে ঝুঁকি যথাসম্ভব কমানো যাবে। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশে সামাজিক দূরত্ব বেশ কঠিন মনে হলেও অসম্ভব কিছু নয়। এজন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়ত সচেতনতা আর সাবধানতার অবলম্বন। ঘরে কিংবা বাইরে সবজায়গায়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। নিজে এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুস্থ থাকতে চাইলে সেটা কোনো বড় ব্যাপারই নয়। আর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরেই অবস্থান করুন।