আপনি কি বাংলাদেশে পড়াশোনা করছেন?
এর মানে হচ্ছে আপনি এমন একটি দেশের শিক্ষার্থী যে দেশে এই উপমহাদেশের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার অন্যতম উচ্চমাত্রায় অবস্থান করছে।
এর মধ্যে আশার বিষয় হচ্ছে, আপনি এখনো একজন শিক্ষার্থী এবং উন্নত ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন গুলো নিয়ে আসার সময় আপনার হাতে এখনও রয়েছে!
কিন্তু এটাও সত্য যে, ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসে ‘দ্যা ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট’ এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ১০ জন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ জনই বেকার। ২০১৮ সালের মে মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা ‘আল জাজীরা’ও এই সমস্যাটিকে লক্ষণীয় করে তুলে ধরেছে, যেখানে তারা এটাও বলেছেন যে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানে গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার আমাদের চেয়ে কিছুটা কম, প্রতি দশ জন গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে তিন জন বেকার।
অতএব বাংলাদেশে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার মাঝে ক্যারিয়ার অপশন নিয়ে সফল চিন্তা ভাবনা করার ক্ষেত্রে এই প্রতিবেদনটি পড়া আপনার জন্য বাঞ্ছনীয়।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের উচিত চাকরির খোঁজ ও বিভিন্ন ক্যারিয়ার অপশন গুলোকে পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে থেকেই গুরুত্ব দেয়া এবং এ নিয়ে খোঁজ খবর রাখা। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার পথে সময় এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা করতে পারার দক্ষতা সবচেয়ে বেশি কাজে আসতে পারে। এগুলো আসলে মানব চরিত্রের এমন কিছু দরকারি বৈশিষ্ট্য যা আমরা শিক্ষাজীবনে অর্জন করে থাকি কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা এ গুন গুলো ধরে রাখতে পারি না।
তথাপি, বর্তমানে বাংলাদেশ সব রকম ক্ষেত্র, যেমন- প্রযুক্তি, অর্থনীতি, জীবনযাত্রার মান এবং নিঃসন্দেহে শিক্ষার ক্ষেত্রে দ্রুত প্রবৃদ্ধি লাভের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে পরিনত হয়েছে। যে দেশে এত বেশি তরুণ জনসংখ্যা রয়েছে, সে দেশে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার বিপুল সুযোগও রয়েছে। কিন্তু প্রায় সময়ই আমরা নেতিবাচক চিন্তা ভাবনায় অন্ধ হয়ে এ সব নতুন ও সম্ভাবনাময় সুযোগ লুফে নেয়ার সাহস করতে পারি না। এখন সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর!
বাংলাদেশের সেরা চাকরি গুলোর মধ্যে কয়েকটি
অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ লক্ষণীয় মাত্রায় উন্নত হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে আমরা আমাদের একটি প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যে চাকরি গুলোর প্রধান্য থাকবে সেগুলার কথা বলেছি। এছাড়াও সেই প্রতিবেদনে সেরা চাহিদাসম্পন্ন চাকরিগুলোর বিস্তারিত বিবরণ সহ আকাঙ্খিত বেতনের রেঞ্জ, একটি চাকরির লভ্যতা এবং ভবিষ্যতে সেই চাকরিতে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নিম্নে বাংলাদেশের সেই সব সেরা চাকরি গুলোর মধ্যে ১০টির নাম উল্লেখ করা হলো; পক্ষপাত সংক্রান্ত বিভ্রান্তি এড়াবার জন্য নামগুলো ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম অনুযায়ী সাজানো হয়েছে:
- কল সেন্টারের চাকরি (Call Center)
- কাস্টমার সাপোর্টে চাকরি (Customer Support)
- ডাটা এনট্রির চাকরি (Data Entry)
- ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি (Engineering)
- ফ্রিল্যান্সিং চাকরি (Freelance Jobs)
- আইটি এবং টেলিকম চাকরি (IT & Telecom)
- মেডিক্যাল চাকরি (Medical Jobs)
- অনালাইন মার্কেটিং চাকরি (Online Marketing)
- পার্ট টাইম চাকরি(প্রায় যেকোন ক্ষেত্রে!)(Part Time Jobs)
- সেলস এবং মার্কেটিং চাকরি (Sales & Marketing)
এর সাথে আমাদের আরেকটি প্রবন্ধ থেকে জেনে নিন “শিক্ষা জীবনে পার্ট-টাইম চাকরির ভূমিকা“
শিক্ষার্থীদের জন্য কাস্টমার সার্ভিসের চাকরিই কি সেরা অপশন?
কাস্টমার সাপোর্টে চাকরি এ দেশের সেরা চাহিদা সম্পন্ন চাকরি গুলোর মধ্যে একটি হওয়ার দরুণ স্পষ্টতই বাংলাদেশে পড়াশোনা করছেন এমন শিক্ষার্থীদের জন্য এটিই অন্যতম সেরা ক্যারিয়ার অপশন।
বাংলাদেশ হলো গ্রাহকদের এক বিশাল মার্কেটপ্লেস, যেখানে বিগত কয়েক বছরে সেলস এ ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। অধিক সংখ্যক সেল বা বিক্রি হবার পাশাপাশি ক্রেতাদের নানা রকম প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরির জন্য নিয়মিত কাস্টমার সাপোর্ট বা কাস্টমার সার্ভিস এজেন্টদের প্রয়োজন হয়। সাম্প্রতিক দেশব্যাপী ই-কমার্স ব্যবসার ব্যাপক প্রসার হওয়ার কারণে এই চাহিদা বিশালাকার ধারন করেছে। বেশির ভাগ কোম্পানিরই ২৪ ঘন্টা সপ্তাহে ৭ দিন কাস্টমার সাপোর্ট অপশনের প্রয়োজন হয়, হয়ত টেলিফোন, ইমেইল কিংবা চ্যাট সুবিধা সহ প্রচলিত সার্ভিস সেন্টারে নির্দিষ্ট কর্মঘন্টায় কাস্টমার সার্ভিস স্টাফরা সরাসরি সেবা দিয়ে থাকেন।
২০১৮ সালে এসে ব্যবসার ডিজিটালকরণ এবং অনলাইনে সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়ার চাহিদার কারণে এই চাহিদা ভিত্তিক প্রয়োজনটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। অতএব অনেকগুলো কোম্পানি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন সাপোর্ট সহ প্রচলিত কল সেন্টার সাপোর্টের জন্য সব সমসয় বেশ কিছু কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট রাখতে চান, তাদের পণ্য বা সেবা যেমনই হোক না কেন। এই ধরণের কাস্টমার সার্ভিস চাকরি করতে এমন কিছু দক্ষতা বা গুনের প্রয়োজন হয় যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং কোম্পানি গুলোও এই কাজগুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরি হিসেবে দেখে থাকেন।
আপনি যখন কোন পার্ট টাইম চাকরি বা শিক্ষার্থীদের উপযোগী যেকোন রকম চাকরির খোঁজ শুরু করেন, তখন আপনি দেখতে পাবেন যে বিপুল সংখ্যক চাকরির বিজ্ঞাপনেই কাস্টমার সার্ভিসে চাকরির খবর থাকে। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে এদের মধ্যে বেশির ভাগ কাস্টমার সার্ভিস চাকরির বিজ্ঞাপনেই এই রূপ কাজের জন্য ফুল টাইম কর্মকর্তার বদলে শিক্ষার্থীদেরই আহ্বান করা হয়।
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালো কাস্টমার সার্ভিস অত্যাবশ্যক এবং একটি বিশাল গ্রাহক ভিত্তিক মার্কেট হিসেবে বাংলাদেশে কাস্টমার সার্ভিসের চাহিদায় আরো বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে চাকরিতে আবেদন করার আগে ইন্টারভিউ এর জন্য নিজেকে ভালো মত প্রস্তুত করুন তার পর আবেদন করুন।
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ
এদেশে চাকরির অভাবের জনপ্রিয় ধারণা ব্যাতিরেখে, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য আজও বিপুল পরিমান সহায়ক কর্মসংস্থান পড়ে রয়েছে। এখন হয়ত আপনার মনে হতে পারে বিভিন্ন রকম ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত এত সব বিপুল সংখ্যক চাকরির সুযোগ থাকার পরও এদেশে বেকারত্বের হার কেনো এত বেশি?
কেননা, আমরা সামনের কথা ভেবে পরিকল্পনা করি না!
আসলে আপনার ইউনিভার্সিটি জীবনে প্রথম ক্লাস শুরু করার আগে থেকেই ক্যারিয়ার পরিকল্পনা শুরু করাটাই আদর্শ সময়। কিন্তু আমরা ঠিক তার বিপরীতটা করি; অর্থাৎ আমরা আমাদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা গ্র্যাজুয়েশনের দিন থেকে শুরু করি।
ইউনিভার্সিটি থেকে সুযোগ
বাংলাদেশের একজন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার উচিত আপনার ইউনিভার্সিটির ক্যারিয়ার সেন্টারের সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়া। যদি সেখানে কোন প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ার সেন্টার না থাকে তাহলে সম্মানিত কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানান এবং একটি ক্যারিয়ার সেন্টার তৈরি করার জন্য আবেদন করুন। একটি ক্যারিয়ার সেন্টার আপনাকে বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ গুলো হাতের কাছে এনে দেবে ইউনিভার্সিটির রেফারেন্স সহ, ইউনিভার্সিটি গুলো ‘জব ফেয়ার’ আয়োজন করে থাকে, যেখানে সম্মানিত এবং জনপ্রিয় কোম্পানিগুলো নিজ ইচ্ছায় অংশ নেয়, ফ্যাকাল্টিরা শিক্ষার্থীদের সিভি ও জীবনবৃত্তান্ত তৈরিতে সাহায্য করেন, বিভিন্ন কোম্পানি আবার বিশেষ ধরণের চাকরির জন্য ভার্সিটিতেই ওয়ার্কশপের আয়োজন করে, এছাড়াও আরো কত কি।
নিমন্ত্রিত লেকচারারেরা শিক্ষার্থীদেরকে অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিতে পারেন, বিশেষ করে যারা চাকরির বাজারে বহুদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছেন তাদের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। চাকরি খোঁজার পোর্টাল গুলো বিভিন্ন চাকরি খোঁজার ওয়ার্কশপ এবং একজন আদর্শ চাকরিজীবীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা সভা সহ নানা রকম ইভেন্টের আয়োজন করতে পারে। শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার চাকরি খোঁজার সব রকম প্রচেষ্টার মাঝে কিছু ভালো সম্পর্ক তৈরি করার মাধ্যমেও আপনি বিভিন্ন সম্মানিত ফার্মগুলোয় সফল ক্যারিয়ার গড়ার ভিত্তি স্থাপন করতে পারবেন। তা না হলে পড়াশোনা শেষ করা কিংবা গ্র্যাজুয়েশনের পর দ্রুত একটি ভালো ও নিরাপদ ক্যারিয়ার গঠন করা প্রায় অসম্ভব।
ইউনিভার্সিটির স্টাফ, বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং সংস্থান সমূহ সব সময়ই শিক্ষার্থীদের সব রকম উপায়ে সহায়তা দেয়ার জন্য হাতের নাগালেই থাকে। এসব ক্ষেত্র থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার অনুসন্ধান এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ কিংবা চাকরির খোঁজ করতে পারেন। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে অনেক নিয়োগকারী রয়েছেন যারা এমন সব শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিতে উৎসুক যারা শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠন করতে চান। আপনার প্রয়োজন যেমনই হোক না কেন, ফ্যাকাল্টি বা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দ্বিধায় যান, নতুনা ইমেল কিংবা ফোন কলের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এতে করে আপনারা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ চাকরি কিংবা অন্য যেকোন বিষয়ে সাহায্য পেতে পারবেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব সার্ভিস দেয়া হয়ে থাকে তার মধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং পরামর্শ
- সিভি ও কভার লেটার লেখার দক্ষতা
- সিভি তে রেফেরাল (যে শিক্ষার্থীরা ছুটির দিনে কিংবা অবসর সময়ে পার্ট টাইম কিংবা ফুল টাইম কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্য)
- পেশাদারী ওয়ার্কশপ
- ক্যারিয়ার মেলা আয়োজন
- মার্কেট, কর্পোরেট এবং অন্যান্য ধারণা ভালোভাবে বোঝা ও জীবনে কাজে লাগানোর জন্য সেমিনার এবং বার্তালাপ।
- একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ
- ইন্টারভিউ এর কলা কৌশল উন্নত করা অথবা নিয়োগকারীদের সাথে বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে কথা বলার মত আত্মবিশ্বাস অর্জন।
কোম্পানি, ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠান সমূহে সুযোগ
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি বুঝতে পারবেন যে বাংলাদেশে অনেক গুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের সুযোগ দিয়ে থাকেন যেগুলোর মধ্যে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির ব্যাপক সুযোগ থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সুযোগ আসতে পারে, যদি আপনার নিজেকে সেই কোম্পানির আকাঙ্খিত ভূমিকায় কাজ করার মত যোগ্য প্রমান করতে পারেন।
বিভিন্ন চাকরির পোর্টাল, যেমন Bikroy.com/Jobs এ ব্রাউজ করে আপনি শিক্ষার্থী কিংবা সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চাকরির বিজ্ঞাপন এবং আকর্ষণীয় প্রোজেক্ট সমূহ সম্পর্কে জানতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য এই সব চাকরি গুলোতে হয়ত চাহিদা অনেক বেশি থাকে কিন্তু এই রকম চাকরিতে থাকা চ্যালেঞ্জ গুলো আপনাকে দায়িত্ববোধ শেখাবে এবং ক্যারিয়ার গঠনের ব্যাপারে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য কোম্পানি সমূহ নিম্নের বিভিন্ন রকম ক্যারিয়ার অপশন ছাড়াও আরো বিভিন্ন রকম কাজের সুযোগ দিয়ে থাকে:
- ইন্টার্নশিপ ও গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম
- কর্মচারীদের প্রবৃত্তির উপর ভিত্তি করে পর্যাপ্ত ট্রেনিং এবং সার্ভিস কোয়ালিটি ও কাস্টমারের সন্তুষ্টির ব্যাপারে দক্ষতা বা জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তন।
- বিশেষ দক্ষতার বিকাশের জন্য লিডারশীপ প্রোগ্রাম এবং গঠনমূলক ট্রেনিং।
- প্রায়োগিক জ্ঞান এবং দক্ষতা বিষয়ক ট্রেনিং, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উপর ট্রেনিং, ভাষার উপর কোর্স অথবা সফটওয়্যার দক্ষতাভিত্তিক ট্রেনিং।
- চাকরি চলাকালীন ট্রেনিং
চাকরির খোঁজ শুরু করার সেরা কিছু উপায়
চাকরির খোঁজের সেরা উপায়গুলো জেনে নিয়ে নিজেকে আগে থেকেই প্রস্তুত করে নেয়াটা খুবই জরুরি। বর্তমান বিশ্ব মানুষকে নতুন ডিজিটাল অর্থনৈতিক সুযোগ করে দিচ্ছে, যেগুলো ভৌগলিক কিংবা সামাজিক ভাবে সৃষ্ট সব রকম সীমানার বেড়াজাল ভেঙ্গে দিয়েছে। তাই যতটা সম্ভব এই ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সুবিধা নিন!
অনলাইনের সব গুলো তথ্যভান্ডারের সদ্ব্যবহার করুন
আপনার উচিত প্রতিটি অপশন ক্লিক করে দেখে আপনার সর্বোচ্চ জ্ঞানের সদ্ব্যবহার করা এবং অনলাইনে থাকা বিপুল পরিমান তথ্যভান্ডার ব্যবহার করা। এর মধ্যে অন্যতম কার্যকরী একটি উপায় হলো অনলাইন চাকরির পোর্টাল যেমন Bikroy.com/Jobs, লিংকডইন অথবা অনলাইনে শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন কিংবা বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যেমন ফেসবুকে অনলাইন চাকরির ফোরাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা বিভিন্ন জব ফেয়ার ও অন্যান্য ক্যারিয়ার প্রোগ্রাম সম্পর্কে নিজেকে অবগত রাখুন। ব্যবসায়িক কোম্পানি এবং তাদের গ্রাহকরা উভয়েই অনলাইনে একটা নির্দিষ্ট পরিমান সময় অতিবাহিত করে, অতএব এই সব অনলাইন টুল গুলোর উৎপাদনমূলক সদ্ব্যবহার করুন।
সরাসরি এপ্লিকেশন, সিভি দেয়া এবং ওয়াক-ইন ইন্টারভিউ
প্রথাগত পদ্ধতিতে পত্র পত্রিকায় শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন ঘেঁটে দেখাটা এখনও বেশ কার্যকরী একটি পদ্ধতি। অনেক কোম্পানিই এখনও তাদের প্রধান নিয়োগ পদ্ধতি হিসেবে সংবাদপত্রে চাকরির বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে থাকেন। এমনকি আপনি যখন আপনার জন্য উপযুক্ত একটি চাকরি খুঁজে না পাবেন তখনও একবার আপনার সিভিটি তৈরি করুন এবং পছন্দের কোম্পানিগুলোতে একটি এপ্লিকেশন পাঠিয়ে দেখুন। কিছু কিছু কোম্পানি আবার ওয়াক-ইন ইন্টারভিউও আয়োজন করে থাকেন, যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার একটা ভালো প্রভাব তৈরি করতে পারেন। যেই যেই কোম্পানি গুলোয় আপনার আগ্রহ সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং তাদের ওয়েবসাইট ভিসিট করে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন অথবা আপনার জন্য ভালো কোন সুযোগ আছে কিনা তা জানার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখুন।
তবে সব সময় একটা সিভি পাঠানো কিংবা ওয়াক-ইন ইন্টারভিউতে অংশ নেয়াই যথেষ্ট নয়। ইন্টারভিউ পরবর্তী কিছু ফলো-আপ কাজ করে দেখুন, যেমন হয়ত একটি ফোন কল কিংবা ইমেইল এর মাধ্যমে আপনার আগ্রহের কথা জানান এবং তাদের কাছ থেকে জবাবের অপেক্ষা না করে নিজে থেকে তাদের কাছ থেকে একটি উত্তর বের করে নিন। কিন্তু এই ব্যাপারে যথাযথ ভদ্রতা রক্ষা করুন, কেননা আপনি নিশ্চয়ই একজন সম্ভাব্য নিয়োগকারীকে বিরক্ত করতে চাইবেন না।
কাস্টমার সার্ভিস কিংবা যেকোন পার্ট টাইম চাকরির ক্ষেত্রে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
একজন শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে বেশ ভারী একটা বোঝা আপনাকে বহন করতে হবে, যেমন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার খরচ, খাবার ও পরিবহনের খরচ ইত্যাদি। অনেকেই ঠিক এ কারণেই শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির খোঁজ করে থাকেন নিজেদের কিছুটা খরচ বহন করার কথা চিন্তা করে। ফলস্বরূপ, অনেক শিক্ষার্থীই একটি ফ্লেক্সিবল কাস্টমার সার্ভিসের চাকরি কিংবা যেকোন পার্ট টাইম চাকরিতে ঢুকে যান, যেখানে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে যাওয়ার স্বাধীনতা পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশে পড়াশোনা করার সময় যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে সে সংক্রান্ত কিছু টিপস নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
আপনার কথপোকথনের দক্ষতাকে শাণিত করে নিন
শিক্ষার্থীদের জন্য শক্তিশালী যোগাযোগের দক্ষতা যেমন মৌখিক এবং লিখিত উভয়ে ক্ষেত্রে শক্তিশালী কথোপকথনের দক্ষতা ইত্যাদি থাকাটা বাঞ্ছনীয়। একটি বুদ্ধিদীপ্ত ইন্টারভিউ পর্ব এমনকি চাকরি পাবার পরের সময়ের জন্যও এই দক্ষতা গুলো খুবই প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন ধরণের কাস্টমারদের সাথে কাজ করার জন্য কাস্টমার সার্ভিসের চাকরিতে অনেক বেশি মাত্রায় যোগাযোগ ও কথোপকথনের দক্ষতার প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে খুব সামান্য মৌখিক বা লিখিত ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটে যেতে পারে অনেক বড় কোনো সমস্যা। সেজন্য শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরি খোঁজার আগেই যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহন করাটা বেশ কাজে দেয়।
বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা রাখুন এবং অর্জন করুন
প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের করনীয় হলো তাদের প্যাশন এবং আবেগকে এক না করে ফেলা এবং নিজেদের নিয়ে অবাস্তব প্রত্যাশা করা সন্ধ করা। কেননা অবাস্তব ও অসাধ্য প্রত্যাশা তৈরি করার কারণে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় আমাদের মন মানসিকতা আবদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন আমরা বাস্তবধর্মী ও কার্যকর প্রত্যাশা ঠিক করি, তখন আমাদের পক্ষে সেটা অর্জন করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়, আর যদি তা নাও হয় তাহলে আমরা এই ব্যর্থতার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে পারবো এবং তা সমাধান করতে পারবো। অতএব সবকিছু পারফেক্ট হওয়ার চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের উচিত অধ্যবসায় এবং দৃঢ়তা অর্জন করা। সব সময় মনে রাখবেন যে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রতিটি চাকরি কিংবা সুযোগই একটি শিক্ষাক্ষেত্র এবং যতদিনে আপনি পরিণত বয়সে উপনীত হবেন এই ব্যাপারটি আপনার জীবন এবং পড়াশোনা পরবর্তী সময়েও কাজে আসবে।
ক্যারিয়ার ইভেন্টগুলোকে গুরুত্ব দিন
বিভিন্ন ক্যারিয়ার ইভেন্ট যেমন ইন্টার্নশিপ, জব ফেয়ার, ইন্টারভিউ, ওয়ার্কশপ, সেমিনার ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে এমন ভাবে যাতে আপনাদের মত শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে সেরা গুনগুলো বের করে নিয়ে আসতে পারে। অতএব বাংলাদেশে ক্যারিয়ার অপশন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার সময় এ জিনিস গুলোকে গুরুত্বের সাথে নিন এবং এদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধাগুলো লুফে নিন। বেতন সহ কিংবা বিনা বেতনের যেমন সুযোগই হোক না কেন, সেটা আপনার ক্যারিয়ার গড়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ইভেন্ট গুলোকে তাদের প্রাপ্য মনোযোগ দেয়াটা অত্যাবশ্যক।
প্রতিটি কল রিসিভ করুন এবং আপনার সেরা চেষ্টা নিয়ে প্রতিটি ইন্টারভিউএ অংশ নিন
ভুলেও কখনও কোন নিয়োগকারী কিংবা কোন সুযোগকে ছোট করে দেখবেন না! এটা অত্যন্ত জরুরি যে আপনি প্রতিটি ইন্টার্নশিপের কল নিন, ট্রেনিং নিন অথবা আপনার সেরা ব্যবহারের সাথে প্রতিটি ইন্টারভিউএ অংশ নিন। এতে করে শুধু যে আপনি সেরা অপশনটি বেছে নিতে পারছেন তাই না, আপনি এমন কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক তৈরি করছেন যারা আপনার অপরিচিত ছিল এবং হয়ত ভবিষ্যতেও আপনার কাস্টমার সার্ভিসের ক্যারিয়ারের কোন একটা পর্যায়ে আবারও তাদের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয়ে যেতে পারে।
ভারসাম্য, ভারসাম্য এবং ভারসাম্য!
পরিণত বয়সের জীবন খুবই জটিল! একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী সময়টা বেশ লম্বা এবং পদ্ধতিটা বেশ কষ্টকরও। মনে করে নিজের জীবনের সব কিছুর মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখতে চেষ্টা করবেন। অগ্রাধিকার স্থির করুন এবং আপনার সকল কাযে সমতা বজায় রেখে চলুন। আপনাকে আপনার পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করতে হবে, উল্টোটা নয়। আপনার পার্ট টাইম কিংবা কাস্টমার সার্ভিসের চাকরি যেন আপনার পড়াশোনার মান নষ্ট না করে ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সেরা চাকরি কিংবা সুযোগ হাতে আসলেও আপনাকে এ সব কিছুর মাঝেই বিরতি নিতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম, শখ এবং আগ্রহের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম যেমন খেলাধুলা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার চিন্তা এবং পরিবার ও বন্ধু বান্ধবের সাথে ঠিকভাবে সময় দেয়া ইত্যাদি। জীবনে পারফেক্ট ভারসাম্য অর্জন করাটা বলতে গেলে অসম্ভব, কিন্তু তাই বলে চেষ্টা বন্ধ করলে চলবে না।
উপসংহার
শিক্ষার্থীবৃন্দ আপনাদের আশে পাশে সব রকম সুযোগ বা সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য রাখুন!
একটি চাকরির খোঁজ শুরু করার কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। আপনি একজন ফুল টাইম শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ও উপযুক্ত সুযোগের খোঁজ করতে পারবেন, বাংলাদেশের সেরা কিছু চাকরির মধ্য হতে যেকোন পছন্দের কোম্পানির সাথে বোঝাপড়া করে নিতে পারবেন। একই যায়গায় চাইলে আপনি গ্র্যাজুয়েশনের পর একজন ফুল টাইম কর্মী হিসেবেও জয়েন করতে পারবেন। চাকরির খোঁজ আসলে আমরা সাধারণভাবে যতটা ভাবি তার চেয়েও বেশি সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশের মত একটি দেশে এই ব্যাপারটি আরো প্রকট, যেখানে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী প্রতিদিন একটা ভালো চাকরি পাবার জন্য যুদ্ধ করে থাকেন।
সব সময় আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির পেছনে কাজ করুন, আপনার আগ্রহের যায়গা গুলোকে খতিয়ে দেখুন এবং আপনার সীমাকে প্রশস্ত করুন। সাময়িক চ্যালেঞ্জ গুলোকে আপনার জন্য নতুন এবং সেরা চাকরির সুযোগ তৈরি করে দেয়ার পথে বাধা দিতে দেবেন না। প্রতিটি সুযোগকে নিজের ব্যক্তিত্ব ও সত্ত্বাকে শাণিত করার হাতিয়ার হিসেবে দেখুন। লোকাল কিংবা বাইরের দেশের কোন কোপানির সাথেই যোগাযোগ করতে ইতস্তত করবেন না, কেননা প্রতিটি ব্যর্থতাই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আপনার পছন্দের যেকোন কিছুকে সুযোগ দেয়ার অভ্যাস থেকে খুঁজে বের করুন নিজের প্যাশনটি।
এই প্রতিবেদনে আলোচিত প্রতিটি সুযোগের ক্ষেত্রে সঠিক মনোভাব রাখাটা খুবই জরুরি। আপনার হয়ত প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম থাকতে পারে কিন্তু আপনার শক্তি সামর্থ্য, প্যাশন কিংবা আপনার লক্ষ্যের প্রতি খেয়াল রেখে কঠোর পরিশ্রম করার প্রবণতা কোনটাই কম নেই, অতএব এই গুনগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সেরা চাকরিগুলো লুফে নিন।
হাতের কাছেই রাখুন বিক্রয় অ্যাপ অথবা ভিসিট করুন Bikroy.com/Jobs ওয়েবসাইটটি, আর বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানির সর্বশেষ চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো সম্পর্কে নিজেকে অবগত রাখুন।
আশা করি এই প্রতিবেদনটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। আমাদের কমেন্ট সেকশনে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ভালো থাকুন!