চাকরি

সিভি লেখার জন্য টিপস

উপযুক্ত চাকরি খুঁজে বের করতে যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয় সেটা মোটেও সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে চাহিদা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাইলে। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম যে কোন জায়গায় হোক না কেন সঠিক নিয়মে সিভি তৈরি করার উপরই চাকরি পাওয়া এবং না পাওয়া অনেকটাই নির্ভর করে।

সিভি কেন গুরুত্বপূর্ন:
সিভির মাধ্যমেই কোন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বা এ দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তার কাছে চাকরি-প্রার্থী সম্পর্কে প্রথম ইম্প্রেশন তৈরি হয়। চাকরিতে নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে সাক্ষাতকারের জন্য ডাক পাবার আশাতেই একজন প্রার্থী কোন নির্দিষ্ট পদের জন্য সিভি পাঠায়।  আজকাল অনেক চাকরিদাতা ব্যক্তি প্রতিটা আবেদনের সাথে আকর্ষণীয় কোন সিভি না পেলে বেশিরভাগ সময় পুরো সিভি না পড়েই ফেলে দেয়।    
 
পছন্দের চাকরির কি কি সুযোগ রয়েছে তা বিবেচনা করা:
পছন্দসই চাকরি খোঁজার আগে প্রার্থীর দক্ষতা, শিক্ষা, ব্যক্তিগত এবং পেশাগত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য ক্যারিয়ারের জন্য চেষ্টা করা উচিত। প্রার্থীর উচিৎ তার চাহিদা অনুযায়ী চাকরি যেমন আই টি, শিক্ষকতা কিংবা অফিসিয়াল চাকরির একটি তালিকা তৈরি করা এবং সেগুলোর সাথে তার কি ধরনের দক্ষতা আছে সেগুলোও বিবেচনা করা। 
প্রার্থীর নিজের দক্ষতা, পড়াশোনা এবং অভিজ্ঞতার তালিকা তৈরির পর তার সাথে উপযোগী ক্যারিয়ারের কি কি সুযোগ রয়েছে তারও একটা তালিকা করতে হবে। প্রার্থীর চাহিদাসম্পন্ন চাকরির ক্ষেত্র সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে নেওয়া একটি ভালো সিভি তৈরির প্রথম পদক্ষেপ। এর ফলে সিভিটি দেখতে আকর্ষনীয় হওয়ায় তা সম্ভাব্য চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠনের নজরে আসে।
 
মৌলিক তথ্যাবলী উল্লেখ করা:
সিভিতে যাবতীয় তথ্য সম্পন্ন করার আগে মৌলিক তথ্যাবলী সংযুক্ত করা খুবই জরুরী।  প্রার্থীর পূর্ণ নাম, টেলিফোন নাম্বার, ঠিকানা, যোগাযোগের জন্য ই-মেইলসহ অন্যান্য তথ্যাবলী সিভিতে সংযোগ করতে হবে। যে চাকরির জন্য আবেদন করা তার সাথে প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাও সিভিতে উল্লেখ করা যায়।
মৌলিক তথ্যাবলী কিভাবে সিভিতে সন্নিবেশিত করতে হয় সে বিষয়ে ধারনা লাভের জন্য বিভিন্ন ধরনের সিভির ট্যাপ্লেট দেখে নিলে সুবিধা হয়। নিজে নিজে সিভি তৈরি করার জন্য  কোন নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন নাই, বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট এবং সহযে বোঝা যায় এমনভাবে উল্লেখ করতে হবে।  বিশেষ করে প্রার্থীর যাবতীয় তথ্যই যখন এই সিভিতে থাকে। 
 
ফরম্যাট করা:

চাকরিদাতা প্রষ্ঠিান বা ব্যক্তির কাছে সিভিসহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পৌছানোর আগে সিভি ফরম্যাট করা একটি গুরূত্বপূর্ণ কাজ। কিভাবে ফরম্যাট করবেন সেটা ঠিক করার আগে যেই পদের জন্য আবেদন করছেন তার বিস্তারিত বিষয়াবলী বিবেচনায় নিতে হবে।

সিভি তৈরির ধরন সব চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহনযোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ফরম্যটের সিভি নিয়ে গবেষনা করতে পারেন।  প্রার্থীর  কাংখিত পদে চাকরি পাবার জন্য ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটের সিভির মডেল দেখে ন্ওেয়া যায়। 
 
অফিসিয়াল কিংবা শিক্ষকতা পেশায় চাকরি করতে আগ্রহী হলে প্রার্থীর উচিত অনেক আনুষ্ঠানিক বা ফরমাল সিভি জমা দেওয়া যেটি খুব বেশি রঙ-চঙা হবেনা।  ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সিভি ফরম্যাট করাতে হবে। এতে করে ঐ পজিশনের জন্য আবেদন কারী অন্যান্য প্রার্থী যারা খুব গতানুগতিক ধারার সিভি দিবে তাদের থেকে আপনাকে বিশেষ বৈশিষ্ট দিবে।
 
সিভি টেমপ্লেট ব্যবহার করা:
সিভিকে দেখতে আরো আকর্ষনীয় করতে বিভিন্ন ধরনের সিভি টেমপ্লেটও ব্যবহার করা যায়।  অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহার উপযোগী এমন অনেক সিভি বিনামূল্যে প্ওায়া যায়। এক্ষেত্রে শেফ হিসাবে কিংবা কোন সংগীতাঙ্গনে কাজ করতে চান না কেন যে কোন ধরনের পেশায় আবেদনের জন্য হাজার হাজার সিভির টেমপ্লেট পাওয়া যায়। 
কোন নির্দিষ্ট পদের জন্য আবেদনের পূর্বে সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গবেষণা করে নিতে হবে যাতে করে বোঝা যায় যে তারা বেশি ফরমাল নাকি ক্যাজুয়েল ষ্টাইলে সিভি আশা করে। 
ইন্টারনেট থেকে এই ধরনের সিভির টেমপ্লেট ডাউনলোড করে র্প্রাথী সেখানে নিজের তথ্যাবলী সংযুক্ত করে দিতে পারে কিংবা নিজেই  কোন টেমপ্লেট অনুসরণ করে দরকারী তথ্য দিয়ে তৈরি করে নিতে পারে।
 
আলাদা প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা সিভি তৈরি করা:
প্রতিবার আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য আলাদা আলাদা সিভি তৈরি করাটা বাধ্যতামূলক। অনেক সময় ব্যয় করে প্রতিটি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা সিভি তৈরি করা সে প্রতিষ্ঠান এবং পদে চাকরির জন্য প্রার্থীর নিজের প্রয়েজনীয়তা এবং প্রচেষ্টাকেই প্রমান করে। অনেক সময় ব্যয় করে ধৈর্য ধরে সিভি তৈরি করলে সেটি আপনাকে হাজারো প্রার্থীর ভেতরে চাকরিদাতার কাছে অনন্য করে তুলবে। এবং ভবিষ্যতে এটি আপনার ইপিসত পজিশনে পৌছাতে সাহায্য করবে। 
 
পেশাদারী সিভির টেমপ্লেট ব্যবহার করলেও, এতে প্রার্থী তার ব্যক্তিত্ব এবং কোন বিষয়গুলো তাকে অন্যের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে এবং এই পদের জন্য তার যোগ্যতা বিচক্ষণতার সাথে সন্নিবেশিত করতে পারে। নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশের চেষ্টা করা উচিত। নির্দিষ্ট পদের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলাটা সৃষ্টিশীলতার মধ্যেই পড়ে এবং এতে করে চাকরিদাতার কাছে নিজের উপযোগীতা তুলে ধরা যায়।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিজের জানা-শোনার প্রমান দেওয়া:
যখনই আপনি কোন জায়গায় সিভি পাঠাবেন, এটা প্রমাণ করুন যে আপনি  সেই চাকরি সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে জানেন, কারন এতে চাকরিদাতার কাছে আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারনা তৈরি হবে যা আনেকদিন তার মাথায় থাকবে। যখন আপনি ঐ পদ সম্পর্কে বলবেন, খুবই র্সষ্টিশীলতা এবং বিস্তারিতভাবে বলবেন।  চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হয় এ ধরনের কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করুন যাতে আপনি তাদের কাছে নিজেকে আরো বেশি গ্রহনযোগ্য করে তুলতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ আলোচিত বিষয় জানা থাকলে সে প্রতিষ্ঠান  সম্পর্কে যে আপনি ওয়াকিবহাল সেটাই প্রমাণ করে। 
 
আপনি প্রতিষ্ঠানের শূণ্য পদটি সম্পর্কে লিখতে এবং পুরো সিভির পেছনে যত বেশি সময় ব্যয় করবেন তত বেশি নিজেকে হাজারো প্রার্থীর ভেতর অনন্য করে তুলতে পারবেন।  প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে সিভি পাঠাতে সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরো একটু বেশি লিখুন নিজেকে প্রতিদ্বন্দিদের থেকে আরো একটু এগিয়ে নিতে।
 
প্রাসঙ্গিক রেফারেন্স দিন :
কোন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে সিভি পাঠানোর আগে সেটিতে কমপক্ষে দুই জনের রেফারেন্স দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐ পদের জন্য বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রাসঙ্গিক ব্যক্তির রেফারেন্স দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিটা রেফারেনসই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনাকে ঐ পদ এবং দায়িত্বের জন্য যোগ্য বলে বিবেচনা করতে সহায়তা করে।
 
আপনি সিভি তৈরির জন্য যত বেশি সময় এবং শ্রম দিবেন তত বেশি চাকরি পাবার জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারবেন। এমনকি অনেক বেশি যোগ্য প্রার্থীর ভিতর থেকেও আপনি নিজেকে অনন্য করে তুলতে পারবেন।  কিভাবে একটি চাকরির জন্য উপযুক্ত সিভি তৈরি করতে হয় সেটি জানতে পারলে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আরো অনেক সুযাগ সামনে চলে আসে।
 
Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close