সাইক্লিংঃ জেনে নিন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাইকেল চালানোর উপকারিতা সম্পর্কে
কিছু বছর আগে শহর কিংবা গ্রাম প্রায় সবখানেই সাইকেল চালানোর চল থাকলেও, আজকাল অনেকেই সাইকেল চালানোকে বেছে নিয়েছেন ফিট থাকার একটি মাধ্যম হিসেবে। শহরাঞ্চলে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সুরক্ষাই নয়, সাইকেল ব্যবহার করে অনেক তরুণ-তরুণী স্টান্টও করছেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস – বিক্রয় ডট কম-এর পক্ষ থেকে আজকের আলোচনায় আমরা সাইকেল চালানোর উপকারিতার বিভিন্ন দিক এবং যারা সাইকেল কিনতে আগ্রহী তাদের জন্য সাইকেলের দাম নিয়ে আলোচনা করেছি।
কেন চালাবেন সাইকেল?
স্বল্প দূরত্বের যাত্রায় আপনার সঙ্গী হওয়ার পাশাপাশি সাইকেল চালানোর রয়েছে নানাবিধ সুবিধা। সাইকেল চালানোর সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন মাংস পেশীগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে, ফলে পেশীর গঠন আরও দৃঢ় হয়। এছাড়াও অন্যান্য খেলাধুলার মতো সাইক্লিং করার জন্য তেমন শারীরিক দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। একবার সাইকেল চালানো শিখে ফেললে সহজে তা ভোলা কঠিন।
বারবার অনুশীলন করার প্রয়োজন নেই বলেই সাইকেল চালানো অন্যান্য ব্যায়াম বা সাঁতার কাটার চেয়ে সহজ। সাইক্লিং শরীরের আকার ঠিকঠাক রাখে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেয় না। এছাড়াও সাইকেল দীর্ঘদিনের শারীরিক অক্ষমতা বা আঘাত থেকে সেরে ওঠার ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে।
জন্ম থেকে শারীরিকভাবে অক্ষম এমন অনেকের ক্ষেত্রে সাইক্লিং পুনরায় স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্লাব এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সাইকেল স্টান্ট সহ নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যা আমাদেরকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে উজ্জীবিত রাখার মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাইক্লিং
সাইকেল চালানোর সময় আমাদের ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, এবং শিরা একসাথে কাজ করে, যার কারণে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সামগ্রিক ভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়। এছাড়াও নিয়মিত সাইক্লিং এর মাধ্যমে অন্যান্য যেসকল সুবিধা পাওয়া যায়ঃ
- সাইক্লিং শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং মনকে সতেজ রাখে।
- প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় সাইক্লিং করা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ও উচ্চ-রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
- সাইক্লিং এবং জগিং-এ প্রায় একই পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয়। সাইক্লিং-এ প্রতি ঘণ্টায় শরীর থেকে প্রায় ৩০০ ক্যালরি ঝরে শরীর থেকে।
- যাদের বয়সজনিত, অথবা হাঁটুতে বা স্পাইনে সমস্যা আছে, এমন কেউ জগিং-এর বিকল্প হিসেবে সাইক্লিং করার মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন।
- সাইক্লিং ওজন কমাতে সাহায্য করে, যারা নিয়মিত সাইক্লিং করে থাকেন তারা সচরাচর শারীরিকভাবে ফিট থাকেন।
- সাইক্লিং মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।
সাইকেল চালানোর পূর্বে
কিশোর এবং তরুণদের ক্ষেত্রে সাইকেল চালানোর কোনো বিধি নিষেধ নেই, স্বল্প দূরত্বের গন্তব্য কিংবা শহরের জ্যাম ঠেলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হতে পারে সাইকেল। তবে যারা কিছুটা বয়স্ক বা যাদের শারীরিক কিছু জটিলতা রয়েছে, তাদের জন্যঃ
- সাইকেল চালানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- আস্তে-ধীরে শুরু করুন, যেমন সপ্তাহে দুই-তিন দিন, এরপর তা পাঁচ-ছয় দিন পর্যন্ত বাড়িয়ে নিন।
- আপনার বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক সাইকেল বেছে নিন।
- ধীরে ধীরে চালানোর গতি বাড়ান।
- সাইকেলে চড়ার আগে হেলমেট, নিপ্যাড, এলবোপ্যাড পরে নিন।
- প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে বের হবার আগে সাইকেলের পাম্প, টায়ার, ও গিয়ারগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা যাচাই করে নিন।
সাইক্লিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসরিজ
আপনি যদি সাইক্লিং করবেন বলে মনঃস্থির করে থাকেন, তাহলে যেসকল জিনিসের প্রয়োজন হতে পারেঃ
- গরমের সময়ে সাইকেল রাইডের জন্য খোলা হেলমেট সবচেয়ে উপকারী।
- লং রাইডিং করতে চাইলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে হালকা বা সাদা রং এর জামা ব্যবহার করতে পারেন।
- রাস্তায় সাইকেলের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় টুলস।
- রোদের হাত থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন সাথে রাখতে পারেন।
- এনার্জি ড্রিংক বা এনার্জি পাউডার সাথে রাখা যেতে পারে।
- এছাড়াও অনেকেই ইমার্জেন্সি কিটস এবং প্রয়োজনীয় স্ন্যাক্স সাথে রাখেন রাইডে যাওয়ার সময়।
গ্রীষ্মকালে সাইক্লিং
উষ্ণ আবহাওয়ায় সাইকেল চালানোর অন্তরায় রয়েছে তীব্র রোদ। প্রচণ্ড তাপমাত্রার পাশাপাশি রাইডারদের সেসময়ে খরচ করতে হয় প্রচুর ক্যালরিও! তাই গরমের সময় সাইকেল চালানোর সময় পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন না করলে ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। তাই গরমে সাইকেল চালানোর সময় যা যা আপনার প্রয়োজন হতে পারেঃ
- পর্যাপ্ত পানিঃ গরমের সময় রাইডে যাওয়ার আগে, রাইডের সময়, এবং রাইডের পরে এই তিন সময়েই পানি প্রয়োজন। রাইডে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে পানি পান করতে হবে এবং এই সময়ে স্যালাইনও সাথে রাখা যেতে পারে। গরম আবহাওয়ায় সাইকেল চালানোর সময় স্যালাইন আপনার শক্তি বাড়ায়।
- রোদ থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত সুরক্ষাঃ রাইডে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে হিট ও রেডিয়েশন। তাই রোদ থেকে সুরক্ষিত থাকতে ভালো সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে, পাশাপাশি প্রতিরক্ষামূলক পোশাক, টুপি ইত্যাদি পরতে হবে।
- ধীরে ধীরে শুরু করুনঃ উল্লিখিত সাবধানতাগুলো মেনে চলার পরেও আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন যদি আপনার বেশি তাপমাত্রায় সাইক্লিং-এর অভিজ্ঞতা না থাকে। তাই সপ্তাহে কোনো একদিন যখন তাপমাত্রা বেশি এমন সময় ঘর থেকে বের হন। এসময় ঘেমে যাওয়া শরীর আপনাকে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় সাইকেল চালাতে সাহায্য করবে। প্রথম পর্যায়ে এই অভ্যাসটি বিরক্তিকর মনে হলেও, পরবর্তী সময়ে এগুলোই কাজে লাগবে।
- ছায়াতে বিশ্রাম নিনঃ শহরের রাস্তায় রাইডিং করার সময় যদি রাস্তায় গাছ থাকে ও ছায়ায় চালানোর সুযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন। এছাড়াও মধ্যবর্তী বিশ্রামের সময় ছায়া আছে এমন জায়গা বেছে নিন।
শেষ কথা
সাইক্লিং করার অনেক গুণ রয়েছে, যার মধ্যে থেকে কয়েকটি আমরা উল্লেখ করেছি মাত্র। আশা করছি এসব উপকারিতা এবং টিপস আপনার সাইক্লিং-কে করে তুলবে আরও উপভোগ্য এবং আনন্দদায়ক।
তাহলে আর দেরি কেন? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস থেকে কিনে নিন আপনার পছন্দের সাইকেল, আর রাস্তায় নিয়ম মেনে সাইক্লিং শুরু করুন।
হ্যাপি সাইক্লিং!