হোম এবং লিভিং

বাসায় অফিসের মজাদার এক নকশা

বাসায় অফিস কাজের জন্য একটি আনন্দদায়ক জায়গা যদি আপনি নিজেই প্রতিষ্ঠানটির মালিক হোন অথবা কাজের পাশাপাশি আপনার কিছু শখ আছে যার জন্য আপনার অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন। কাজের এবং পারিবারিক জীবনের ব্যস্ততায় এই ধরনের একটি বিশেষ স্থান থাকা হতে পারে আপনার জন্য একটি চমৎকার সমাধান; যেখানে আপনি কোন ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়াই কাজে যেতে পারেন ও নীরবতা এবং শান্তি পেতে পারেন।

আপনি যখন আপনার বাসার অফিসটির নকশা করেন, আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ মতো তা সাজানোর সুযোগ থাকে। আপনি সত্যিই এটা আপনার নিজের ব্যক্তিগত ছোঁয়া দিয়ে সম্পূর্ন করতে পারেন। শুধুই কাজের অথবা মজার, যেকোন জন্যেই আপনার বাসার অফিসটি হোক না কেনো নিচে আপনার জন্য কিছু টিপস দেওয়া হল যা আপনার অফিসটিকে মজাদার করে তুলবেঃ

একটু ভিন্ন প্রকৃতির ফার্নিচার পছন্দ করুনঃ

বাসায় অফিসের জন্য আপনি যেই ফার্নিচার পছন্দ করবেন তা আপনার ব্যক্তিত্বের স্বরূপ হওয়া উচিত। এটি খুব সহজেই করা যেতে পারে ব্যবহৃত অফিস ফার্নিচার নিয়ে এবং তা আপনার পছন্দ মতো পরিবর্তন করে।

প্রথমে, বিক্রয় হবে এমন আসবাবপত্র খুঁজে নিন এবং পছন্দ করুন অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরন। সম্ভবত, আপনি একটি ডেস্ক, অন্তত একটি চেয়ার এবং কিছু শেলফ্ চাচ্ছেন। নিশ্চিত করুন তা যেনো আপনার পছন্দের অফিসটিতে সহজেই সাজানো যায়।

আপনি যদি আপনার অফিসের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ফার্নিচার যেমন আপনার পছন্দনীয় একটি ডেস্ক খুঁজে না পান তাহলে আপনি যা খুঁজে পেতে পারেন তা দিয়েই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরী করে ফেলুন। যেমন, আপনি একটি পুরাতন কাঠের বাক্স থেকে একটি ডেস্ক করতে পারেন। অথবা, আপনি যেকোন পুরাতন টেবিল ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার কাঙ্ক্ষিত ডেস্কের আয়তনের সমান কিংবা তার কাছাকাছি। গতানুগতিক চিন্তা থেকে একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করে ফার্নিচার পছন্দ করুন এবং শীঘ্রই আপনি আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু একত্র করে ফেলবেন।

প্রয়োজনীয় সব উপকরনগুলো একত্রিত হয়ে গেলে, ছোট ছোট অংশগুলো একত্র করতে শুরু করুন। রঙ পছন্দ করুন এবং ফার্নিচারগুলোকে আপনার পছন্দের রঙ্গে রঙ্গিন করুন। অথবা, ফার্নিচারের উপর বিভিন্ন গ্লু ব্যবহার করে আপনার অফিসের বিভিন্ন কোডকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। অনলাইনে এই বিষয়ে প্রচুর ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন।

সম্ভাব্য সব কিছু নিয়ে আপনার ফার্নিচারগুলোকে অনন্য করে তুলুন। আপনার বাসার অফিসটি আপনার পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ত্ব দিয়ে মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারেন। আপনার অফিসটকে অবশ্যই আপনার এবং অফিসের অন্নান্যদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাজান। বস্তুত, আপনিই হয়তো অফিসে সবচাইতে বেশী সময় ব্যায় করবেন।

রং তুলি আর দেয়াল প্রস্তুতকরনঃ

রঙ আর দেয়ালের প্রস্তুতি আপনার অফিসকে দিতে পারে একটু বাড়তি মজাদার অনুভূতি। পছন্দ করুন ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রঙ এবং নমুনা যা আপনার ব্যক্তিগত রুচি এবং ফার্নিচারের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ন হয়।

অফিসটির দেয়ালকে শুধুমাত্র একটি রঙ দিয়ে সাজাতে পারেন অথবা আপনি তাতে বিভিন্ন নকশার ছাপ দিয়ে কারুকার্য্যপূর্ন করতে পারেন। এমনকি, যেকোন একটি দেয়ালে দৃশ্য অঙ্কন করা যেতে পারে, যেমন বনের পশুপাখি অথবা সমুদ্রে পালতোলা নৌকা। যদি আপনার এমন কোন বন্ধু থাকে যে অঙ্কনে পারদর্শী, তাকে ডেকে নিতে পারেন এই ব্যপারে সহযোগীতার জন্য।

যদি আপনি আপনার অফিসের দেয়ালেকে রঙ্গিন কাগজে ঠেকে দিতে চান তাহলে আপনার কাছে আছে অফুরন্ত উপায়। বাসাবাড়ির সাজসঞ্জ্যা এবং হার্ডওয়্যারের দোকানগুলোতে আপনি এই ধরনের দেয়াল সাজানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের বিপুল রঙ্গিন কাগজ পাবেন।

আপনি বিভিন্ন ভিন্টেজ দেয়াল চিত্রের ব্যপারটি বিবেচনা করতে পারেন। প্রায়ই অনলাইনে নিলামের বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে আপনি এইগুলো পেতে পারেন। এই সমস্ত ভিন্টেজ দেয়াল চিত্রে আপনি বিভিন্ন মজাদার এবং প্রচলিত কিন্তু প্রাচীন ধারার নকশা পেতে পারেন যা আধুনিক দোকানের বিভিন্ন সংগ্রহ থেকে সম্পূর্ন আলাদা।

আপনার অফিসের দেয়ালকে সাজানোর অন্য আরেকটি উপায় হচ্ছে ফার্নিচারে ব্যবহৃত কারুকার্য্যপূর্ন ছাপ যা আপনি দেয়ালেও ব্যবহার করতে পারেন। আপনি পত্রিকা থেকেছবি, পুরাতন গ্রিটিংস কার্ড, স্টিকার, ডাকমাসুল স্ট্যাম্প এবং পোষ্টকার্ড দিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

মূল্যবান উপকরন দিয়ে সাজানঃ

অফিস কক্ষের ফার্নিচার এবং দেয়াল সাজানো হয়ে গেলে, আপনি আপনার অতি মূল্যবান উপকরন দিয়ে কক্ষটি সাজানোর কাজ শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের জিনিস পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনি অফিসটিকে সাজাতে পারেন, হয়তো তার অধিকাংশই আপনার কাছে ইতিমধ্যেই আছে।

আপনার কোন বিশেষ সংগ্রহ আছে কি?কেন এইগুলো ব্যবহার করে অফিসে আপনার ব্যক্তিত্ত্বের একটি ছোয়া দিচ্ছেন না? ছোট পুতুল, পুরাতন অলংকার অথবা মূল্যবান দ্রব্যের বাক্স আপনার বইয়ের শেলফে, ডেস্কে কিংবা গোবরাটে চমৎকার দেখাবে।

এছাড়া, ক্যা্মেরায় তোলা ছবি অথবা হাতে আঁকা ছবি ফ্রেমে বাঁধিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার যদি কোন বিশেষ ছবি থেকে থাকে আপনার বন্ধুর সাথে অথবা পরিবারের সদস্যদের সাথে, রেখে দিন সেগুলো আপনার ডেস্কে অথবা অন্য উঁচু কোন স্থানে। ছবির ফ্রেমগুলো ঢেকে দিতে পারেন রঙ করে অথবা বোতাম এবং অল্প মূল্যের অলংকারের সাথে সংযোজন করে দিতে পারেন যাতে সেগুলো আরো আকর্শনীয় দেখায়।

আপনার বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী ব্যবহার করেও আপনি আপনার অফিসকে ভিন্ন একটি চেহারা দিতে পারেন। এই ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করা যথোপযুক্ত হবে যদি আপনার বাচ্চারা বড় হয়ে থাকে কিন্তু আপনি তাদের ছোটবেলার খেলার সামগ্রীকে সাজিয়ে রাখতে চান। আপনি আপনার ছেলেমেয়েদের অনুমতি নিয়ে তা অফিস সাজানোর কাজে যোগ করতে পারেন। আপনার অফিসকে ভিন্ন মাত্রা দিয়ে সাজানোর কাজে সহযোগীতা করতে পেরে তারা হয়তো গর্বিত হবে।

আপনার কাছেই আছে এরকম অল্প অথবা বেশী দামী অলংকার এবং আরো বিভিন্ন কল্পনা দিয়ে সাজাতে পারেন আপনার অফিসটিকে। এইভাবে চিন্তা করবেন না যে, আপনি যা দিয়ে অফিস সাজাচ্ছেন তা সাধারনত অফিস সাজানোর কাজে ব্যবহার হয়না। সবচাইতে প্রধান্য পাবে যেই ব্যপারটি তা হচ্ছে আপনার ইচ্ছা।

গৃহস্থালি কোমল সরঞ্জামের সংযোজনঃ

বাড়ির সাজ-সঞ্জ্যায় ব্যবহৃত কোমল উপকরন বাসার অফিসে আপনার ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে আরেকটু বাড়িয়ে দিবে। আপনি রঙ, তাতে বৈচিত্রতা এবং গৃহস্থালি ছোয়া দিতে পারেন পর্দা, রাগস এবং চেয়ারের গদি সংযুক্ত করে।

এই ধরনের সামগ্রী আপনি নতুন অথবা পুরাতন কিনতে পারেন। কোমল গৃহ সাজসজ্জ্যার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন নিলামের সাইটগুলো একটি চমৎকার মাধ্যম। তাছাড়া, এইগুলো ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দোকানে কিংবা আপনার নিজের মতো করেও বানিয়ে নিতে পারেন।

ছোট কোমল বালিশগুলো আপনার ডেস্কের চেয়ারে, ছোট ছোফায় অথবা ফ্লোরের সাথেও যুক্ত করা যেতে পারে যদি বড় ফ্লোরের বালিশ সংগ্রহ করতে পারেন। এইগুলো অফিসে আপনার অতিথিদেরকেও আরামদায়ক অনুভূতি দিবে। যদি আপনার কাজের ফাঁকে কিছু সময় থাকে যা আপনি অফিসে বন্ধুদের সাথে কাঁটাতে চান অথবা দুপুরের খাবারটি যদি পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে একসাথে অফিসে করতে চান, প্রত্যেকেই কোমল বালিশগুলো নিয়ে বাসার আরামদায়ক অনুভূতি পেতে পারে।

জীবনের কিছুটা স্পর্শ দিয়ে দিনঃ

বিভিন্ন উপায়ে আপনি আপনার অফিসে জীবনের ছোঁয়া দিতে পারেন। মাছের চৌবাচ্চা যুক্ত করতে পারেন। গ্রীষ্ম মন্ডলীয় এলাকার মাছ আপনার কক্ষটিতে রং এবং জীবনের স্পন্দন তৈরী করবে। এটি বলা হয়ে থাকে যে, মাছের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখের জন্যে আরামদায়ক যা কাজের চাপের ফাঁকে আপনাকে প্রশান্তি দিবে।

আপনি অন্যান্য পোষা পশু-পাখিকেও আপনার অফিসে জায়গা করে দিতে পারেন।একটি ছোট খাঁচা কেন নয়? অথবা আপনার পোষা প্রানীটি যদি তুলনামূলক ভাবে বড় হয়ে থাকে যেমন বিড়াল কিংবা কুকুর, তাদেরকে অফিসে আসতে দিতে পারেন যাতে তারা আপনার কাজের ফাঁকে আপনাকে কিছুটা সঙ্গ দিতে পারে অথবা বিরক্ত করতে পারে যখন কাজের চাপ থেকে আপনার কিছুটা শান্তি প্রয়োজন হয়।

অফিসটিকে সম্পূর্ন করবে আলোকসঞ্জ্যার সঠিক নির্বাচনঃ

আলোকসজ্জার নির্বাচন যেকোন অফিসের পরিবেশে গুরুত্তপূর্ন ভূমিকা রাখে। দিনের বেলা কাজের জন্য মাথার উপর উজ্জ্বল আলো আদর্শস্বরূপ, বিশেষকরে আপনার কক্ষে প্রাকৃতিক আলোর উপস্থিতি যখন খুবই কম। কিন্তু, ছোট ল্যাম্প যেগুলো কোমল আলো বিকিরন করে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষকরে যখন আপনি রাতেও কাজ করতে চান অথবা অফিসের নির্দিষ্ট কিছু স্থান যেখানে আপনি অতিরিক্ত আলোর প্রয়োজন মনে করছেন।

প্রদীপ আলোর উপস্থিতি বিভিন্ন রঙের এবং ধরনের হয়ে থাকে। এমন কিছু মজাদার এবং ভিন্ন আঙ্গিকের ল্যাম্প খুজে বের করুন যা আপনার অফিসের আসবাবপত্র এবং কোমল সাজসজ্জ্যার সাথে সংগতিপূর্ন।

আপনি এইক্ষেত্রে রং করা বাতির সুবিধা নিতে পারেন যা আপনার বাসার অফিসকে আরো মজাদার আবহাওয়া দিতে পারে। আঁঠাল উজ্জ্বল আলোর উপকরনের ব্যবহার আপনার অফিস কক্ষটির ব্যক্তি স্বাতন্ত্র বাড়িয়ে তুলতে সহযোগীতা করবে।

অসংখ্য উপায়ের মধ্যে এইগুলো হচ্ছে কয়েকটি উপায় মাত্র যা আপনার অফিসে জীবন আনবে আনন্দদায়ক এবং মজাদার সাজসজ্জা মধ্য দিয়ে। অফিসটি তৈ্রীতে আপনি আপনার নিজের ধারনারও সমারোহ ঘটাতে পারেন এবং তাতে আপনার জন্য এমন একটি স্থান তৈ্রী হবে যেখানে আপনি প্রতিদিন সময় কাটাতে ভালোবাসবেন।

 

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close