নিউজ ও রিভিউযানবাহন

ইলেকট্রিক যানবাহন প্ল্যান্টঃ অপার সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

মহামারি পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু শব্দ আমাদের খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে, যেমনঃ ‘নিউ নর্মাল’, ‘অনলাইন শপিং’, ‘আউটব্রেক’, ‘কোয়ারেন্টাইন’ এবং আরও অন্যান্য। এই শব্দগুলোর পাশাপাশি আরও একটি শব্দ আমরা হরহামেশাই শুনছি, আর তা হলো ইলেকট্রিক কার। 

পরিবেশ রক্ষায় বৈদ্যুতিক যানবাহন আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও গত বছর থেকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমাদের দেশে বর্তমানে এটি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

আজকের লেখায় আমরা বাংলাদেশে ইলেকট্রিক যানবাহন প্রকল্প এবং দেশের বাজারে গাড়ির দাম সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

ইলেকট্রিক যানবাহন প্রকল্পের প্রতি সরকারি উদ্যোগ

দেশীয় সরকারি পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) দীর্ঘ রুটে যাতায়াত সুবিধার জন্য ৫০টি ইলেকট্রিক বাস চালু করতে চলেছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে।

এছাড়া আরেকটি সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট রেগুলেটরি এজেন্সি (বিআরটিএ) দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের জন্য একটি খসড়া নীতিতেও কাজ করছে। যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির জ্বালানি স্টেশন ও শুল্ক নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। 

অন্যদিকে, শিল্প মন্ত্রণালয় অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০২১-এর খসড়া তৈরি করেছে। যেই নীতির লক্ষ্য হবে দেশের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক অটোমোবাইল শিল্প গড়ে তোলা এবং শীঘ্রই এই খাতে উৎপাদন শুরু করা।

বাংলাদেশে ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইলেকট্রিক যানবাহন প্রকল্প প্রতিনিয়তই মূলধারায় পরিণত হচ্ছে। খরচ কমার পাশাপাশি প্রচলিত গাড়ি থেকে সুইচ করার জন্য থাকছে বিস্তৃত সুবিধা।

পরিবেশগত প্রভাব থেকে জ্বালানি, শক্তি এবং ট্যাক্স খাতে আপনার খরচ কমাতে এ ধরণের বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো আপনাকে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যান্য যেসকল সুবিধা ব্যবহার করা যেতে পারেঃ

  • বৈদ্যুতিক যানবাহনের খরচঃ ইলেকট্রিক যানবাহন ব্যবহার একটি দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল দিতে পারে যা চালকদের জন্য চমৎকার একটি সুবিধা বিশেষত যারা কিছুটা কম বাজেটের মধ্যে যানবাহন খুঁজছেন। দেশের অন্যান্য প্রচলিত গাড়ির (পেট্রোল বা ডিজেল চালিত) মতো, বৈদ্যুতিক যানবাহনও তাদের মডেল, বৈশিষ্ট্য এবং ধরণের উপর ভিত্তি করে বিক্রি করা হবে। সুতরাং, প্রচলিত গাড়ির মতো, সেগুলোও বিভিন্ন প্রাইস রেঞ্জের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে।
  • সহজ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণঃ যদিও কিছু ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক যানবাহন কেনার খরচ প্রচলিত যানবাহনের মতোই হতে পারে, তবে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে সস্তা হতে পারে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচ (পেট্রোল এবং ডিজেল) এর বিপরীতে, ইলেকট্রিক যানবাহন আপনাকে কম কর প্রণোদনা, জ্বালানি দক্ষতা এবং সস্তা রক্ষণাবেক্ষণের মতো প্রয়োজনীয় কিছু সুবিধা প্রদান করতে পারে।
  • পরিবেশ বান্ধবঃ টেলপাইপ নির্গমন বন্ধ হবার কারণে, ইলেকট্রিক যানবাহনগুলো আরও গ্রিন, পরিষ্কার এবং পরিবেশবান্ধব হবে।
  • শক্তি সাশ্রয়ীঃ অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ইঞ্জিনের তুলনায়, ইলেকট্রিক যানবাহনগুলো আরও বেশি দক্ষ। অর্থাৎ আরও কম শক্তি এবং অর্থের মাধ্যমেই আপনার প্রিয় জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে পারবেন।
  • সহজ চার্জিং ব্যবস্থাঃ আপনার ইলেকট্রিক কারের চার্জ করা সহজ, দ্রুত এবং কম খরচে সম্ভব হবে। চার্জিং মেশিন স্থাপন করার পরে আপনি গাড়ি প্লাগ-ইন করে সেটি চার্জ করতে সক্ষম হবেন। বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক গাড়ি ৪-৫ ঘন্টা সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ চার্জ নিতে পারে যাতে আপনি সহজেই আপনার কাজের জায়গাগুলোতে গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। 
  • শব্দহীন গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাঃ ইলেকট্রিক গাড়ি চালানোর সময়, চালকরা একটি পরিপূর্ণ শব্দহীন অনুভূতি পাবেন যা তাদেরকে অনেক বেশি আরামদায়ক ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

বাংলাদেশে ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারের অসুবিধা

বেশ কিছু সুবিধার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও থাকবে। তাদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ্যঃ

  • প্রাথমিক খরচঃ একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির মালিকানার প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ খরচ সাপেক্ষ হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার করার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে এটি ভালো ফলাফল দিতে সক্ষম। এর কারণ ইলেকট্রিক গাড়ির স্বল্প রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার খরচ।
  • অবকাঠামোগত সমস্যাঃ এখানেই ইলেকট্রিক গাড়ি প্রচলিত যানবাহনের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকছে। যেখানে শহুরে এলাকায় চার্জিং ষ্টেশন হিসেবে ইলেকট্রিক চার্জিং অবকাঠামো থাকবে, সেখানে গ্রামাঞ্চলে এবং হাইওয়েতে তা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আবার এখানে চার্জিং পিরিয়ডও লক্ষণীয়, গাড়ির চার্জ দেওয়ার জন্য হাইওয়েতে হয়তো অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে চাইবেন না।
  • বিক্রয়োত্তর সেবাঃ বাংলাদেশে আসন্ন ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে বিক্রয়োত্তর কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ইলেকট্রিক গাড়ি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদদের প্রয়োজন হবে। আবার চার্জিং পয়েন্টগুলো এমন জায়গায় ইনস্টল করতে হবে যাতে বেশিরভাগ ড্রাইভার সেগুলো সহজেই ব্যবহার করতে পারে।

ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার আগে টিপস

লঞ্চ করার পর ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন? আপনার জন্য এখানে রয়েছে কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ

  • আপনার কি একটি নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনা উচিত নাকি ব্যবহৃত? আপনি হয়তো কম দামের মধ্যে একটি ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক গাড়ি পাবেন কিন্তু কেনার পর কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তবে নতুন প্রযুক্তি হিসাবে আমরা নতুন গাড়ি কেনারই পরামর্শ দিয়ে থাকি।
  • আপনি কোন ধরণের ফিচার বা বৈশিষ্ট্য খুঁজছেন? আধুনিক ইলেকট্রিক গাড়িগুলো দারুণ কিছু ফিচার নিয়ে বাজারে আসছে, তবে এগুলো আপনার খরচ বাড়িয়ে তুলবে। তাই নতুন ব্যবহারকারী হিসাবে শুধুমাত্র আপনার প্রয়োজনীয় ফিচারগুলোর জন্যই খরচ করুন৷
  • আপনার প্রয়োজনীয় পরিসরটি জানুনঃ স্বাভাবিকভাবেই বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিগুলো বেশ ব্যয়বহুল হবে, তাই আপনি প্রতিদিন যে কয় ঘণ্টার গাড়ি ব্যবহার করতে যাচ্ছেন কেনার আগেই তা পরিকল্পনা করে নিন।
  • একটি রিচার্জ প্ল্যান করুনঃ গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করার জন্য আপনাকে নিকটতম চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করতে হতে পারে। সুতরাং, বাংলাদেশে একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটি রিচার্জ প্ল্যান নিন।

শেষ কথা

গাড়ি চালানোর ভবিষ্যৎ যে ইলেকট্রিক তা বলাই বাহুল্য।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে ড্রাইভিং এর নতুন যুগে পা রাখাটা এখন দেশের গাড়ির বাজার এর জন্য শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। আমরা আশা করি যে এই লেখাটি আপনাকে বাংলাদেশে একটি ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে সক্ষম হবে।

হ্যাপি শপিং!

বিক্রির জন্য গাড়ি in Dhakaবিক্রির জন্য গাড়ি in Chattogram
বিক্রির জন্য গাড়ি in Dhaka Divisionবিক্রির জন্য গাড়ি in Khulna Division
বিক্রির জন্য গাড়ি in Sylhetবিক্রির জন্য গাড়ি in Chattogram Division
Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close