স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ ও এস৭ এজ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সবকিছুই জেনে নিন
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস সিরিজের স্মার্টফোনগুলো যখনই বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে তখনই এগুলো সকলের কাছেই অনেক বেশি প্রত্যাশিত এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ২০১৬ সালে স্পেনের বার্সেলোনাতে স্যামসাং তাদের নতুন দুটি স্মার্টফোন অবমুক্ত করেছে (বাজারে এনেছে)। নতুন মোড়ক উন্মোচন হওয়া ফোন দুটি হলো স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ এবং এরচেয়ে বড় গ্যালাক্সি এস৭ এজ। নতুন এই দুটি স্মার্টফোন দেখতে অনেকটা গত বছর বাজারে আসা গ্যালাক্সি এস৬ ও গ্যালাক্সি এস৬ এজ এর মতোই। দারুন এই যুগল পণ্যের অফারের ক্ষেত্রে স্যামসাং তাদের আগের সফল সূত্রগুলোকেও পরিশীলিত করেছে। সদ্যই বাজারে আসা নতুন এই পণ্য সম্পর্কে আপনার যা জানা প্রয়োজন তার সবই নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই ডিজাইন, কিন্তু অনেক বেশি ভাল:
গত বছর স্যামসাং যেসব মডেলের মোবাইল বাজারে এনেছিলো সেগুলোর বিষয়ে তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই নতুন বছরে (২০১৬ সালে) কোম্পানটি নতুন দু’টি মডেলের মোবাইল বাজারে এনেছে। আগের মোবাইলগুলোর মতো একই রকম হলেও স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ (Galaxy S7) ও গ্যালাক্সি এস৭ এজ (Galaxy S7 Edge) আরও বেশি ভাল মানের এবং সবকিছুর সমন্বয়েই বাজারজাত করা হচ্ছে। গ্যালাক্সি এস৭ ফোনটির বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে এর পেছনের দিকটি বাকানো যেন এক হাতে খুব সুন্দরভাবে এটি ধরা যায় এবং ব্যবহার করতে সুবিধা হয়। আগের হ্যান্ডসেটগুলোর মতো এটিও একইরকম মজবুত মেটালের (ধাতু) চেসিস ও গ্লাসদিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি এস৭ এর পেছনের দিকটি সামান্য বাকানো রয়েছে। স্যামসাং গতবছর ডিজাইনকেই তাদের প্রধান লক্ষ্য নির্ধারন করেছিল এবং এর প্রতিই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিল। এটি করতে গিয়ে তাদের ফোনগুলোর কর্ণারগুলো কিছুটা কেটে সৌন্দর্য্য বাড়ানো হয়েছিল। নতুন উদ্ভাবিত ডিভাইসগুলোতেও একইরকম ডিজাইন থাকছেই আর এখানেই এর শেষ নয়, নতুন স্মার্টফোনগুলো আইপি৬৮ (IP68) ধূলা এবং পানি প্রতিরোধী। স্মার্টফোনগুলো ১.৫ মিটার পানিতে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখলেও কোন সমস্যা হবেনা এবং এর স্টোরেজ মাইক্রো এসডি কার্ডের মাধ্যমে ২ টেরাবাইট পর্যন্ত মেমোরি বর্ধিত করা যাবে।
এছাড়াও গতবছরের আলোচিত এস৫ এর ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা গিয়েছিল এস৭ এর ডিভাইসগুলোও একই রকম পানি প্রতিরোধক, তা সত্ত্বেও ভালো সার্ভিসের জন্য পানিতে পড়ার পর কোন ক্ষতি বা অপ্রয়োজনীয় কিছু (কোন কিছুর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে) ঠেকাতে প্রয়োজনে ভিতরের ডিভাইসগুলো খুলে ফেলতে হবে। স্যামসাংয়ের সর্বশেষ স্মার্টফোনে ইউএসবি টাইপ সি ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়নি এবং গিয়ার ভিআর এর মাধ্যমেই এটিকে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। আমাদের মতে স্যামসাং এক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছে। এই ফোনটির সবচেয়ে সুন্দর উদ্ভাবন হলো হ্যান্ডসেটের ভিতরে একটি নতুন ডিভাইস অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, যেখানে স্যামসাংয়ে একটি ক্ষুদ্র তাপের পাইপের মতো রয়েছে যেটি ইনস্টল করলে আপনি ল্যাপটপকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য যেমন ডিভাইস ব্যবহার করে থাকেন তেমনি সব সময় এটি আপনার স্মার্টফোনটির ডিভাইসগুলোকে সুন্দর ও ঠাণ্ডা রাখতে পারবে।
স্যামসাংয়ে গান ও কথা শোনার জন্য প্রায় সকলেই গ্যালাক্সি এস৭-এ বড় ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি প্রত্যাশা করছেন। আর গ্রাহকদের কথা চিন্তা করেই স্যামসাং তাদের এস৭ স্মার্টফোনটির ব্যাটারি এস৬ এর চেয়ে ১.১ মিলিমিটার পুরু এবং এর কার্য ক্ষমতা ২৫৫০ মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ার (mAh) থেকে ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিায়ার আওয়ার (mAh) পর্যন্ত উন্নীত করেছে। এখন বাজারে অধিকাংশ ফ্যাবলেটই বড় ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির মাধ্যমে আনা হচ্ছে, স্যামসাং কিভাবে এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে এবং ছোট ডিভাইসের (ব্যাটারি) মধ্যেই সীমিত থাকে? স্যামসাং তাদের নতুন উদ্ভাবনীতে ব্যাটারির আকৃতি বড় করার চাইতে বরং এর ঘনত্বের (শক্তির) পরিমান বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়ার মতো একটি বুদ্ধিমানের কৌশল গ্রহণ করেছে। এছাড়া নতুন এই ফোনের সাথে একটি সুপার ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জারও নিয়ে আসা হয়েছে। এস৬ ফোনটি যারা ব্যবহার করেছিলেন এর ব্যাপারে তাদের অন্যতম প্রধান অভিযোগ ছিল ব্যাটারির স্থায়ীত্ব নিয়ে এবং এটা দেখে এবং জেনে আপনাদের ভালো লাগবে, স্যামসাং সেসব অভিযোগ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে ও তা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করেছে। যা নতুন দুটি স্মার্টফোনেই সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
সর্বদায় ডিসপ্লে অন থাকে:
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ ফোনটি এলজির জি৫ এর মতো ফিচারগুলো সব সময় ডিসপ্লেতে অন থাকে। ডিভাইসটি ব্যবহারের সময় লাইট এবং প্রোক্সিমিটি সেন্সর ব্যবহার করবে আবার যখন এটি পকেটে কিংবা ফ্লিপার ওভার হবে তখন আর থাকবে না। এরকম একটি প্রযুক্তি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে স্যামসাং-এ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাছাড়া ডিসপ্লেটি যখন একটি জায়গায় স্থিতিশীল থাকে তখন ডিসপ্লেটিতে আলো থাকে এবং ইউজার এটি দেখতে পারে। এস৭ এর সুপার এ্যামোলিড ডিসপ্লে সুনির্দিষ্ট পিক্সেলে আলো দেয় এবং এটিকে অনেক বেশি কার্যকরী ও দক্ষ করেছে। একনজরে সময় এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোও অন ডিসপ্লেতে সবসময় নোটিফিকেশন প্রদর্শন (সো) করে। ফোনটিকে কয়েকবার আনলক করতে এবং দীর্ঘ সময় ব্যাটারির কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে এটি কাজ করে। তবে নতুন সিরিজের ফোনটি অনেক উপর থেকে পড়ে গিয়ে ডিসপ্লে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিনা এখন সেটিই দেখার বিষয়।
কম মেগাপিক্সেলে ভালো মানের ছবি:স্যামসাংয়ের নতুন দুটি স্মার্ট ফোনেই ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা রয়েছে। যদিও গত বছর বেস্ট ক্লাস ক্যামেরা ছিল ১৬ মেগাপিক্সেলের। যা স্যামসাং তাদের এস৬ ও এস৬এজ এ ব্যবহার করেছিল। এবার মেগাপিক্সেল কিছুটা কমানো হয়েছে। মেগাপিক্সেল কমানোর বিষয়টিকে আপনি ডাউনগ্রেড (মর্যাদা হ্রাস) মনে করতে পারেন। মানের দিকটি বিবেচনায় এই ইউনিটটি তাত্ত্বিক দিক দিয়ে পূর্বসূরিদের কাছে শতগুণে সঠিক। তবে মনে রাখতে হবে নতুন ফোনে স্যামসাং প্রতি পিক্সেলের সাইজ ১.৪ মাইক্রোনস পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া এটি ছবি নেয়ার সময় এস৬ এর চেয়ে ৯৫ ভাগ বেশি আলো দিতে সক্ষম। একটি এফ১.৭ নি¤œ অ্যাপাচারের সমন্বয়ে স্যামসাং কম আলোর মধ্যেও সেরা পারফরমেন্সের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। নতুন ফোনটির উদ্ভাবনী সম্পর্কে আরও বলা যায়, এর ক্যামেরার প্রতি পিক্সেলে ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ডুয়েল পিক্সেল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত: এই ক্যামেরা সর্বোচ্চ এবং দ্রুত অটোফোকাসিং এর মাধ্যমে কাজ করে থাকে, বিশেষ করে কম আলোতেও এর ছবির মান অত্যন্ত ভালো হয়ে থাকে।
আমেরিকাতে (ইউএস) নতুন ডিভাইসটির পাওয়ারিংয়ে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে এবং অন্যান্য অধিকাংশ অঞ্চলের জন্য স্যামসাং এর নিজস্ব প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এস৬ এর চেয়ে এস৭ এর সিপিইউ ৩০ ভাগ দ্রুত কাজ করে। একইভাবে এর জিপিইউ ৬৪ ভাগ দ্রুত কাজ করে। নতুন ডিভাইসটিতে রয়েছে ৪জিবি র্যাম। ২০১৬ সালের বেশিরভাগ ফ্ল্যাগশিপের বৈশিষ্ট্যসমূহ একইরকম হবে। তবে এই সময়ে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে যে প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে তাতে বিজয়ী হবে তারাই যারা আশাবাদী এবং বাস্তব বিশ্বে কর্মদক্ষতা প্রমান করতে পারবে। স্যামসাং তাদের এস৭-এ গেমিংকে বেশ গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। প্রথমবারের মতো এই ডিভাইসটিতে নতুন ভুলকান এপিআই গেইমটি সাপোর্ট করছে। আর এস৭ এর এই বৈশিষ্ট্যটিই প্রমান করছে যে, এই ডিভাইসটি সর্বশেষ সংস্করণ এবং ভুলকান এপিআই গেইমটি অতি দ্রুত একটি গেইম।
মূল্য এবং প্রাপ্তিস্থান:
স্যামসাং তাদের সর্বাধুনিক ও নতুন এই ডিভাইসটির মূল্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। তবে আমরা ধারণা করছি তাদের এই ডিভাইসটির দাম আগের পণ্যগুলোর মতো একইরকম মূল্যের হবে। এস৭ ও এস৭ এজ দুটিই ব্লাক অনিক্স (কালো), পিয়ারল হোয়াইট (মুক্তার মতো), গোল্ড প্লাটিনাম (সোনালি) এবং সিলভার টাট্যানিয়াম (সিলভার ধূসর) রংয়ের পাওয়া যাবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, থেকেই আমেরিকাতে এই ডিভাইসটির প্রি-অর্ডার করা যাবে। এই মূহুর্তে প্রি-অর্ডার করলে আপনি হ্যান্ডসেটের সাথে পাবেন একটি ফ্রি গিয়ার ভিআর হেডসেট এবং ৬টি ফ্রি গেম যার মূল্য ১৫০ ডলার।