এবার সহজেই ভাড়া দিন আপনার অ্যাপার্টমেন্ট
আজকের দিনে সবাই যেন ছুটছে নাগরিক যান্ত্রিকতার দিকে। জীবিকার সন্ধান কিংবা থাকার আশ্রয়- শহরমুখী মানুষের সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছেন ফ্ল্যাট এবং বাসার মালিকেরা, পাশাপাশি একই সাথে ক্রমাগত বিস্মৃত হচ্ছে ভাড়া দেওয়া এবং নেওয়ার এই ইন্ডাস্ট্রি।
একজন বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের মালিক বর্তমানে কিভাবে ভাড়াটিয়া খুঁজে নিচ্ছেন এবং বাসা ভাড়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন তা কারোরই অজানা নয়। সংক্ষেপে বলতে হলে, বাসা ভাড়া দেওয়ার এই ইন্ডাস্ট্রি ক্রমশ বর্ধমান এবং একজন বাড়ির মালিক হিসেবে আপনিও সহজেই ভাড়া দিতে পারেন আপনার অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্ল্যাট।
আপনিও কি বাংলাদেশে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চিন্তিত? চলুন দেখে আসা যাক বাসা বা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক কিছু টিপস।
কেন দিবেন বাসা ভাড়া?
কেন আপনি বাসা ভাড়া দিতে চাইছেন সে সম্পর্কে প্রাথমিক ভাবে আপনাকে ভালো একটি ধারণা রাখতে হবে। তবে এর পেছনে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হলোবাসা বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া উপার্জনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।
যদি আপনি আবাসিক উপায়ে আপনার বাসা কিংবা ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে চান তাহলে তা দ্রুত এবং সহজেই অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রদানের মধ্যমে সম্ভব।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার সুবিধাগুলোর মধ্যে থাকছে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি এবং প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু দিনের অ্যাডভান্স ভাড়া পাওয়ার সুযোগ। এছাড়াও বাণিজ্যিক পর্যায়ে বাসা ভাড়া দিলে আবাসিকের তুলনায় ভাড়ার পরিমাণও বেশি পাওয়া যেতে পারে।
ভাড়াটের জন্য তৈরি রাখুন আপনার অ্যাপার্টমেন্ট
মন্দার সময়ে আপনি ঠিক যে অবস্থায় আপনার ফ্ল্যাট বা বাসাটি রয়েছে ঠিক সে অবস্থাতেই সেটি ভাড়া নাও হতে পারে। অনেকাংশেই ভাড়াটিয়ারা বাসার ভেতরের ফিটিংস এবং পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন থাকেন, মূলত তারা কম ভাড়ার ভালো একটি বাসার খোঁজে থাকেন বেশিরভাগ সময়েই। বিশেষকরে করোনা পরবর্তী সময়ে এরকম একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে।
ভাড়া দেওয়ার পূর্বে আপনার ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টটি পরিষ্কার এবং যাবতীয় ফিটিংস ও যন্ত্রাংশগুলো ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা যাচাই করে রাখুন। ভাড়ার অংশের ফ্ল্যাটটি আপনার নিজস্ব থাকার জায়গা থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করুন সর্বদা।
আপনি চাইলে ফ্ল্যাটের ইন্স্যুরেন্স করিয়ে রাখতে পারেন। কারণ একবার ভাড়ার চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ভাড়াটের হাতে চলে যাবে। তাই ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে যতটুকু ড্যামেজ কভারেজ পাওয়া যায় সেদিকে লক্ষ রাখুন।
বাসা ভাড়ার পরিমাণ কত এবং কিভাবে নির্ধারণ করবেন?
একবার বাসা ভাড়া দেওয়ার কারণ এবং বাসা ভাড়া দেওয়ার উপযুক্ত করে নেওয়ার পরপরই যে বিষয়টি সামনে চলে আসে তা হলো ভাড়ার পরিমাণ কত হবে এবং তা কিসের নিরিখে নির্ধারিত হবে।
বাংলাদেশের বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত হবে সমস্ত প্রপার্টি এবং ১৫ শতাংশ জমির দামের উপরে ভিত্তি করে। পাশাপাশি বাড়ির মালিক হিসেবে অন্যান্য যেসমস্ত কারণে ভাড়ার পরিমাণ আলাদা হতে পারে তা আপনার জেনে রাখলে সুবিধা হবে, যেমনঃ বাসার লোকেশন, আশেপাশের যাতায়াত ব্যবস্থা সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
নিজ উদ্যোগে বাসা বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও ভাড়া দেওয়ার পূর্বে একজন রিয়েল এস্টেস্ট বিশেষজ্ঞের সাথে আপনার কর সম্পর্কিত আইনী কাজ এবং স্থানীয় হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের রীতিনীতি সম্পর্কে আলোচনা করে নেওয়া ভালো।
বাংলাদেশে বাসা ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণের জন্য আশেপাশের অন্যান্য হাউজিং বা বাসার মালিকদের সাথে কথা বলে তা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
কোথায় খুঁজবেন আপনার ভাড়াটিয়া?
ঠিক কিভাবে আর কোথায় খুঁজে পাবেন আপনার বাসার জন্য ভাড়াটিয়া? এক্ষেত্রে বেশ কিছু উপায় রয়েছে। এর মধ্যে বাসা ভাড়া দেওয়ার অনলাইন পোর্টালগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমেই শুরু করা যেতে পারে এই যাত্রা।
তবে আপনি যদি অভিজাত কোন ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা বাংলো ভাড়া দিতে চান, সেক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ প্রপার্টি কনসালটেন্ট এর সাহায্য নিতে পারেন।
ভাড়াটিয়ার প্রদান করা সমস্ত তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন
অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেওয়ার পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা নেই? প্রথমবার হোক কিংবা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, ভাড়া দেওয়ার পূর্বে ভাড়াটিয়া সম্পর্কে সমস্ত তথ্য যাচাই করে নিতে হবে।
আপনার বাসা কিংবা ফ্ল্যাটে যদি ব্যাচেলর না উঠাতে চান তাহলে তা বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করে দিতে হবে। একইসাথে হাউজিং সোসাইটির ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত কোন নিয়মনীতি থাকলে তা আগে থেকেই ভাড়াটিয়াকে জানিয়ে রাখুন।
পাশাপাশি ভাড়াটের কাছ থেকে “ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম” সংগ্রহ করে আপনার কাছে এক কপি এবং নিকটস্থ থানায় এক কপি জমা দিন।
ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তিপত্র
নিরাপদ ভাবে বাসায় থাকতে এবং বাসা বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে বাসার মালিক এবং ভাড়াটের জন্য যে চুক্তিনামা হয় সেটিই মূলত ফ্ল্যাট ভাড়ার চুক্তিপত্র।
মালিক পক্ষ এবং ভাড়াটে, দুই পক্ষের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় এই চুক্তিপত্র। যার মধ্যে স্পষ্ট ভাবে বাসা ভাড়ার পরিমাণ, অগ্রীম বাসা ভাড়ার পরিমাণ, বাসা ভাড়া নেওয়ার কারণ ইত্যাদি উল্লেখ করা থাকে। এর পাশাপাশি ইউটিলিটি বিলের পরিমাণ (বিদ্যুৎ, পানি, অন্যান্য) এবং সেগুলো কে পরিশোধ করবে সেটিও বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্রে থাকা উচিত।
ফ্ল্যাট বা বাসার চুক্তিপত্র রেজিস্টার করবেন যেভাবে
বাসা ভাড়া সংক্রান্ত আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, এক বছরের উর্ধে বাসা ভাড়ার যেকোনো চুক্তি রেজিস্টার বা নিবন্ধনের আওতাভুক্ত।
অর্থাৎ আপনি আপনার ভাড়াটের সাথে একবছর বা দীর্ঘমেয়াদি কোন চুক্তিবদ্ধ হলে তা অবশ্যই কোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধিত করে নিতে হবে। যদি কোন বাসা ভাড়ার চুক্তি নিবন্ধিত না হয় তাহলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য সেই চুক্তিনামা কোর্টে উপস্থাপন করা যাবে না।
বাসা ভাড়ার অন্যান্য কিছু খরচ
বাসা ভাড়ার অগ্রীম পরিশোধযোগ্য টাকা এবং মাসিক ভাড়া ছাড়াও ইউটিলিটি বিলের একটা খরচ থাকে, যা মূল ভাড়ার সাথে যোগ হয় আবার কিছুক্ষেত্রে নাও হতে পারে। ইউটিলিটি চার্জের পরিমাণ এবং কোন খাতে কত পরিশোধ করতে হবে তা শুরুতেই আপনার ভাড়াটের সাথে আলোচনা করে নিতে পারেন।
আমাদের দেশে ব্যয়বহুল কিছু হাউজিং সোসাইটিতে মূল ভাড়ার সাথে সংযোজিত কিছু চার্জ পরিশোধ করতে হয়, যেমনঃ সিসিটিভি, সিকিউরিটি, বা ইন্টারকম সুবিধা ব্যবহার। তবে আপনি যদি ঢাকার কোন খরুচে জায়গায় যেমনঃ গুলশান অথবা উত্তরায় বাসা ভাড়া দিতে চান তাহলে এ জাতীয় খরচ আপনাকে প্রতিমাসেই বহন করতে হতে পারে।
বাসার মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি একটি সম্পর্ক গড়ে উঠাটা বেশ স্বাভাবিক তবে এক্ষেত্রে সেটি একটি ব্যবসায়িক সম্পর্ক হলে ভালো হয়। যেখানে সকিছুই লিখিত আকারে থাকবে যার মাধ্যমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সুবিধা হয়।
শেষকথা
বাসা কিংবা ফ্ল্যাট ভাড়া সম্পর্কিত টিপস ছাড়াও আপনি মাঝেমাঝে আপনার ফ্ল্যাটে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কারণ বাসাভাড়া দেওয়া মানেই বাসার দেখভালের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া নয়। বরং ভাড়াটিয়া কি অবস্থায় রেখেছে আপনার ফ্ল্যাট, বা তাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, এই ব্যাপারেও সচেতন থাকাটা প্রয়োজন।
একটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া এবং নেওয়া দুপক্ষ থেকেই লাভজনক হতে পারে। মোটকথা, আপনাকে খুব ভালো ভাবে জানতে হবে আপনি কি চাইছেন এবং কিভাবে চাইছেন। যদি সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে হয়ে থাকে, তাহলে বাসা ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমেই আপনি উপার্জন করতে পারেন একটি ভাল অংক।
Flats for rent in Dhaka | Flats for rent in Chattogram |
Flats for rent in Dhaka Division | Flats for rent in Khulna Division |
Flats for rent in Sylhet | Flats for rent in Chattogram Division |