ফ্রিজ কেনার সময় যা যা মাথায় রাখতে হবেঃ ফ্রিজের দাম, আকার এবং বৈশিষ্ট্য
দীর্ঘ ৯ বছর অনলাইন কেনাবেচা এবং অগণিত বিজ্ঞাপনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ফ্রিজ কেনার ব্যাপারে একটি বা দুটি বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছি। বাজারে প্রাপ্ত বেশিরভাগ ফ্রিজই আপনাকে তার মূল কাজ অর্থাৎ খাবার ঠান্ডা রাখার মত সেবা প্রদানে সক্ষম তবে ফ্রিজের আকার ও আয়তন অনুযায়ী আপনাকেই আপনার জন্য সঠিক ফ্রিজটি নির্ধারণ করতে হবে।
অনেক বছর ধরেই ফ্রিজ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি ব্যয়সাপেক্ষ হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে এবং স্বল্প কিছু ব্র্যান্ড থেকে নিজের চাহিদানুযায়ী পছন্দসই ফ্রিজ কেনাটাও ছিল কষ্টসাধ্য একটি কাজ। তবে দিন বদলেছে, সময়ের সাথে ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর এখন প্রতিটি বাড়ির অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।
বাজারে নানা ধরণের ফ্রিজ এখন সহজেই পাওয়া যায়। নানান ধরণের নকশা, আকার, এবং প্রযুক্তিগত ফিচার সমৃদ্ধ ফ্রিজ শুধু কাঁচা বাজার সংরক্ষণই নয় বরং আপনার রান্নাঘরকে করে তুলবে আরও নান্দনিক এবং আকর্ষনীয়।
আজকের আলোচনায় আমরা আপনার নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে এবং দামের মেলবন্ধনে কীভাবে সঠিক ফ্রিজটি কিনবেন এবং বর্তমান বাজারে ফ্রিজের দাম নিয়ে আলোচনা করবো যাতে করে আপনি থাকতে পারেন নিশ্চিন্তে।
১. বৈশিষ্ট্য ভেদে ফ্রিজ যাচাই
ফ্রিজের ধরণ | ধারণ ক্ষমতা | যাদের জন্য প্রযোজ্য | বৈশিষ্ট্য |
সিঙ্গেল ডোর | ১২০- ১৩০ লিটার | ১-৩ জনের জন্য | মাঝারি সাইজ, ডিরেক্ট কুলিং ক্ষমতা, আলাদা ফ্রিজার |
ডাবল ডোর | ২৩০- ৫০০ লিটার | ৩- ৬ জনের জন্য | ফ্রস্ট ফ্রি, আলাদা ফ্রিজার |
ট্রিপল ডোর | ২৪০- ৩৫০ লিটার | ৩-৫ জনের জন্য | ফ্রস্ট ফ্রি, আলাদা ফ্রিজার, পর্যাপ্ত জায়গা |
সাইড বাই সাইড ডোর | ৫০০ লিটার | ৫+ জনের (বড় পরিবার) জন্য | পর্যাপ্ত জায়গা, একাধিক ফ্রিজ সেকশন, সবজি রাখার জায়গা, ওয়াই-ফাই এবং অন্যান্য প্রযুক্তি |
২. ফ্রিজের ধারণ ক্ষমতা বা ক্যাপাসিটি
ফ্রিজের ধারণ ক্ষমতা সচরাচর লিটারে নির্ধারণ করা হয় এবং প্রযুক্তির কল্যাণে তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে আপনার জন্য সঠিক ধারণ ক্ষমতা বা সাইজের ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
যেমন ৩ থেকে ৪ জনের পরিবারের জন্য ১৫০ থেকে ২৫০ লিটারের ফ্রিজ পর্যাপ্ত হতে পারে, আবার অন্যদিকে আরও বড় পরিবারের জন্য সেটি ক্ষেত্রবিশেষে ২৫০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও ৫ জনের অধিক সদস্য হলে কেনার সময় ৫৫০ লিটারের বেশি ধারণ ক্ষমতা র ফ্রিজ দেখতে পারেন।
৩. আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন
ফ্রিজ কেনার সময় বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ আনুষাঙ্গিক। শুরুতেই আপনার সাধ এবং সাধ্যের মাঝে মিল রাখার চেষ্টা করুন। দেশের বাজারে সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজগুলো সাধারণত ১০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়, যেখানে সাইড বাই সাইড একটি ফ্রিজের জন্য আপনার খরচ হতে পারে প্রায় ৭০,০০০ টাকা।
দীর্ঘদিন ব্যবহার্য হিসেবে ফ্রিজ কেনার আগে বাজেটের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই ভালো।
৪. ডিরেক্ট কুলিং এবং ফ্রস্ট ফ্রি ফ্রিজ
ডিরেক্ট কুলিং ফিচার সাধারণত বাহ্যিক সাহায্য ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে ফ্রিজের ভেতরের বাতাস সঞ্চালন করে। তবে এক্ষেত্রে অসুবিধা হলো বাতাস সব জায়গায় সমান ভাবে পৌঁছাতে পারে না অনেক সময়, যার কারণে ফ্রিজের ভেতরে বরফ জমে যেতে পারে।
তাই ডিরেক্ট কুলিং ফ্রিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে মাঝেমাঝে আপনাকে ফ্রিজ খুলে বরফ পরিষ্কার করতে হবে তবে এই জাতীয় ফ্রিজের একটি বিশেষ সুবিধা হলো এগুলো বাজেট এবং ইলেক্ট্রিসিটি বান্ধব ফ্রিজ।
অথবা আপনি ফ্রস্ট ফ্রি ফ্রিজ কিনতে পারেন। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই ধরণের ফ্রিজে বরফ জমার কোনো ব্যাপার নেই এবং আলাদা কুলিং ফ্যানের সাহায্যে ফ্রিজের সকল অংশে নির্ধারিত তাপ সঞ্চালন হয়ে থাকে। তবে ফ্রস্ট ফ্রি ফ্রিজ তুলনামূলক ভাবে কিছুটা দামী এবং ইলেক্ট্রিসিটির দিক দিয়েও বেশি খরুচে হয়।
৫. দরজার আকার অনুযায়ী ফ্রিজ
ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে পরবর্তী অনুষঙ্গ হলো ফ্রিজের দরজার আকার ও সংখ্যা। যদি আপনি কিছুটা হালকা গড়নের ফ্রিজ খুঁজে থাকেন তাহলে ফ্রেঞ্চ ডোর ফ্রিজগুলো দেখতে পারেন, অপরদিকে কিছুটা প্রশস্ত এবং ড্রয়ার আছে এমন ফ্রিজ চাইলে সাইড বাই সাইড ফ্রিজগুলো হতে পারে আপনার গন্তব্য।
মোটাদাগে দরজার আকার অনুযায়ী বাজারে ৫ প্রকার ফ্রিজের দেখা মেলে, যাদের মধ্যে রয়েছেঃ
- সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজঃ এই জাতীয় ফ্রিজগুলো সাধারণত দুই জনের পরিবারের জন্য সবথেকে ভালো সেবা দিয়ে থাকে। এখানে রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার এই দুই সেকশনের জন্যেই একটি দরজা থাকে। দেখতে কিছুটা ছোট এবং সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজের ধারণ ক্ষমতা সচরাচর ভেতরের শেলফ অনুযায়ী ১৫০ থেকে ২৮০ লিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দেশের বাজারে সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজ পাওয়া যাবে ১২,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে।
- ডাবল ডোর ফ্রিজঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিজ ক্যাটাগরির তালিকায় সর্বপ্রথমেই আছে ডাবল ডোর ফ্রিজ। এই ক্যাটাগরির ফ্রিজে ফ্রিজার সেকশনটি উপরের অংশে থাকে যেখানে আপনি আপনার কাঁচাবাজার সংরক্ষণ করতে পারবেন। ৫ জনের পরিবারের জন্য এই ধরণের ফ্রিজে পর্যাপ্ত খাবার রাখার জায়গা থাকে।
২৩৫ থেকে ৪২০ লিটার অব্দি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডাবল ডোর ফ্রিজ সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজগুলোর তুলনায় বেশি ইলেকট্রিক পাওয়ার খরচ করে।
দেশের বাজারে ডাবল ডোর ফ্রিজ পাওয়া যাবে ১৮,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকার মধ্যে।
- মিনি ফ্রিজঃ বাজারে পাওয়া যাবে বিভিন্ন নকশা, রং বৈশিষ্ট্যের সমাহার অনুযায়ী আধুনিক সব মিনি ফ্রিজ। বিশেষত যারা ভাড়া থাকেন বা মেসে উঠে থাকেন তাদের জন্য মিনি ফ্রিজ অনেক সুবিধাদায়ক হতে পারে। বিভিন্ন স্ন্যাক্স, ড্রিংকস, এবং অল্পবিস্তর খাবার রাখার জন্য ব্যবহার করা যায় এসব ফ্রিজ। ৫০ থেকে ৯০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মিনি ফ্রিজ হয়ে উঠতে পারে আপনার বাজেটবান্ধব একটি হোম অ্যাপ্লায়েন্স।
দেশের বাজারে ডাবল ডোর ফ্রিজ পাওয়া যাবে ৭,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকার মধ্যে।
- সাইড বাই সাইড ফ্রিজঃ এই ফ্রিজগুলো দুই অংশে বিভক্ত হয়ে থাকে, যার ডান পাশের অংশে ফ্রোজেন ফুড এবং বাম পাশে কাঁচা বাজার রাখতে পারবেন। যদিও কিছু ফ্রিজে দুই অংশেই সমান জায়গা থাকে তবে অনেক ইউনিটে ফ্রিজার অংশে কিছুটা জায়গা বেশি রাখা হয়।
দেশের বাজারে ডাবল ডোর ফ্রিজ পাওয়া যাবে ৭০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকার মধ্যে।
- ফ্রেঞ্চ ডোর ফ্রিজঃ ফ্রেঞ্চ ডোর ফ্রিজগুলোতে ফ্রিজার অংশটি উপরের অংশে থাকে এবং দুই পাশে সমান ভাবে দরজা খুলতে হয় যা কিছুটা ড্রয়ারের মত মনে হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং ডিজাইন সমৃদ্ধ ফ্রেঞ্চ ডোর ফ্রিজে ঠান্ডা বাতাস বাইরে বের হওয়ার পরিমাণও তুলনামূলক অনেক কম।
দেশের বাজারে ফ্রেঞ্চ ডোর ফ্রিজ পাওয়া যাবে ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকার মধ্যে।
৬. কোন কম্প্রেসর কিনবেন?
কম্প্রেসর ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে ছোট ফ্রিজগুলো জেনারেল কম্প্রেসরের সাথে বাজারে আসে সেখানে অপেক্ষাকৃত বড় ফ্রিজগুলোতে থাকে ইনভার্টার কম্প্রেসর।
- জেনারেল কম্প্রেসরঃ জেনারেল কম্প্রেসর খুব দ্রুত গতিতে চালু হয় এবং ফ্রিজ যতক্ষণ চালু অবস্থায় থাকে কম্প্রেসরও চালু থাকে। এক্ষেত্রে কুলিং লস না হলেও কম্প্রেসর চালু থাকে তবে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
- ইনভার্টার কম্প্রেসরঃ ইনভার্টার কম্প্রেসর প্রাকৃতিকভাবে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বুঝে চালু হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় চালু হওয়ার পর কুলিং তাপমাত্রা অনুযায়ী স্পিড পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যা এই ইনভার্টারকে করেছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
শেষকথা
ফ্রিজ কেনার পরে ওয়ারেন্টির মেয়াদ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। অনেক ফ্রিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই বাড়তি কিছু চার্জের মাধ্যমে ওয়ারেন্টি সেবার মেয়াদ বাড়িয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি সেভাবেও মেয়াদ বাড়িয়ে তাদের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
এছাড়াও Bikroy.com-এ রয়েছে ফ্রিজ এবং রেফ্রিজারেটর এর বিশাল অনলাইন সমাহার যেখান থেকে আপনি খুঁজে নিতে পারবেন ফ্রিজ ছাড়া বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্স। ভিজিট করুন এবং খুঁজে নিন আপনার বাজেট, কালার, বৈশিষ্ট্য, এবং আকার অনুযায়ী ফ্রিজ কিংবা রেফ্রিজারেটর।
আমরা আপনাদের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত।