কীভাবে আপনার ছোট বাসাটি দারুণ সব আসবাবপত্র দিয়ে সাজাবেন?
এক সময় ঢাকা শহরের বাসা মানেই ছিলো নিজস্ব ছিমছাম একটি বাসা, বিশাল খোলামেলা লিভিং রুম, বেড রুম, আর পরম শান্তির খোলা বারান্দা। ভাবতেও অবাক লাগে, মাত্র বছর পনেরো আগেও ঢাকা শহরের বাসা গুলোর চেহারা কতটা অন্য রকম ছিল, কিন্তু এখন তা শুধুই স্মৃতি। পরিবার গুলো যেমন দিন দিন ছোট হয়ে আসছে, তেমনি সংসারে স্বামী স্ত্রী দুইজনই এখন চাকরি করছেন। এখনকার দিনে এমন ছোট ও স্বাধীন পরিবারের জন্য বড়সড় আকারের এপার্টমেন্ট তৈরি করাটা ব্যবসায়িক দিক থেকেও বেশ অসঙ্গত বলা চলে; যেখানে ঢাকার মত ব্যস্ত ও ধুলোবালির শহরে বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারেরই বড় বাসা সামলানো ও চালানোর মত সময় কিংবা সামর্থ্য কোনটাই নেই।
আর তাই বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির প্রজেক্ট ও লম্বা লম্বা দালানের ভিড়ে ঢাকার মত মেগাসিটির আকাশ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করল, যেগুলোর মধ্যে মৌচাকের মত ছোট খোপ খোপ এপার্টমেন্টে ঠাসা। এই ছোট খাটো এপার্টমেন্ট গুলো পরিষ্কার রাখা যেমন সহজ, তেমনি শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি থাকার সুবিধাগুলো এতে পাওয়া যায়; ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার, যানবাহন সুবিধা, হাসপাতাল ইত্যাদি সব কিছুই হাতের নাগালে চলে আসায় ছোট বাসাগুলোর উপযোগীতাও বেশি। এছাড়াও এই ছোট বাসাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই সাধারণত গুলশান, বারিধারা, বনানী এই এলাকাগুলোর মধ্যে পড়ে, ঢাকা শহরের ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র যাকে বলা চলে। ঢাকার ট্রাফিকের দুর্দশার কথা মাথায় রেখে আমাদের তরুণ প্রজন্মের পেশাজীবীদের জন্য কর্মস্থলের কাছাকাছি থাকাটা বেশ কার্যকরী ও ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সহায়ক।
ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এদেশের আসবাবপত্র নির্মাতারা দিন দিন ছোট হয়ে আসা এই স্পেস গুলোর চাহিদা ও বৈশিষ্ট্যের সাথে তাল মিলিয়ে নানা রকম পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের পণ্যগুলোকে অল্প জায়গার মধ্যে সাজানোর চেষ্টা করছেন। তবুও এই ছোট স্পেস গুলোকে একই সাথে কার্যকরী অথচ নান্দনিক ও রুচিসম্মত উপায়ে ঘর সাজানোটা আজও বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। তবে আপনার স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের ছোট্ট স্পেসটিকে সাজিয়ে তোলার ব্যাপারে আমাদের আজকের কিছু টিপস বেশ কাজে লাগতে পারে:
শেলফ এবং ঝুড়ি হতে পারে আপনার সেরা বন্ধু
বেতের তৈরি রঙ্গিন ঝুড়ি আজকের বাজারে নানা রকম আকার ও ডিজাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো গুনগত ভাবে শুধুমাত্র মজবুতই নয়, আপনার রুমে এক চিলতে রঙের ছোঁয়াও এনে দিতে পারে এই সুন্দর ঝুড়িগুলো। কাপড় থেকে শুরু করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা রকম ছোট বড় জিনিস একটি ঝুড়িতে ভরে রাখা যায়। এমনকি রান্নাঘরেও কাঁচা শাকসবজি, ফল, শুকনো পেয়াজ, রসুন ইত্যাদি রাখার জন্যও দারুণ এক সমাধান এই ঝুড়িগুলো।
এছাড়াও বড় সড় কাপবোর্ড বা বন্ধ কেবিনেটের বদলে খোলামেলা শেলফ বা তাক তৈরি করে এবং তাতে নানা ধরণের রঙিন বক্সে প্রয়োজনীয় ছোট বড় জিনিস সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এতে ঘরের মধ্যে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ভালো চলাচল করতে পারে আর দেখতেও লাগে দারুণ!
যত কম আসবাব, তত বেশি স্বাচ্ছন্দ্য
আসবাবপত্র হোক কিংবা মালামাল, সেগুলো হালকা ওজন ও রঙের হলে একটি ছোট ঘরের সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুণে। বাসার সব কিছু সাধাসিধা ও যৎসামান্য রাখুন। এমন কিছু আসবাব রাখার চেষ্টা করুন যেগুলো একাধিক কাজে আসে। আজকাল বাজারে নানা রকম বহুমুখী আসবাব পাওয়া যায়।
ডাইনিং টেবিল বেশি বড় না হলেও চলে
ডাইনিং টেবিলের সাইজ কমিয়ে আনুন। লিভিং রুম এ সোফার সাথে খাটো বক্স টেবিল কিনে নিতে পারেন। বন্ধুরা এলে তাতে নাস্তা, খাবারও পরিবেশন করতে পারবেন, আবার লিভিং রুমের সৌন্দর্যও বেড়ে যাবে।
পুরনো বা ব্যবহৃত আসবাবও দারুণ কাজে আসে
আপনার এপার্টমেন্ট এর সাজসজ্জা করার জন্য অনলাইনে পুরনো জঞ্জাল (অন্যদের জন্য) খোঁজ করে দেখতে পারেন! Bikroy -এ রয়েছে বিপুল পরিমাণ রুচিসম্মত ব্যবহৃত ও নতুন আসবাবপত্রের সংগ্রহ, যেগুলো ঘরে বসে খুব সহজেই কিনে ফেলতে পারবেন অল্প কিছু ক্লিক করেই। কে জানে? হয়ত অল্প কিছুক্ষণ ব্রাউজ করেই আপনার ঘরের কোনায় রাখার জন্য পারফেক্ট বইয়ের শেলফ বা শোকেসটি দারুণ একটি সেকেন্ড হ্যান্ড দামে পেয়ে যেতে পারেন! আপনার মনের মত একটা জিনিস খুঁজে পাওয়ার জন্য সারা শহরে দিনের পর দিন নানা রকম আসবাবপত্রের দোকান ঘুরে ঘুরে হয়রান হওয়ার চেয়ে এটাই কি ভালো না?
স্মার্ট আসবাব কিনুন
দ্বিমুখী কাজের সোফার পেছনে বিনিয়োগ করুন। রাতে মেহমান থাকবে বাসায়? Bikroy -এ পাওয়া যাচ্ছে নানা রকম আসবাবপত্রের বিশাল এক রেঞ্জ, যেগুলোর মধ্যে সোফা থেকে টেনে বিছানা বানিয়ে নেয়া যায় এমন আসবাবও অন্যতম।
সৃজনশীল হউন এবং সাশ্রয় করুন
ছোট এপার্টমেন্টের আরো একটি দারুণ ব্যাপার হচ্ছে যে এগুলো আপনাকে আপনার স্বল্প স্পেস নিয়ে সৃজনশীল ভাবে ভাবতে শেখায়, আর সাজানোর সময় শুধুমাত্র বিশেষ প্রয়োজনীয় অল্প কিছু জিনিস কেনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। শেষমেষ আপনার এপার্টমেন্টটি এমন একটি স্পেসে পরিণত হয়ে ওঠে যা একই সাথে অর্থনৈতিক ভাবে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব।
বেডরুমেও জায়গা বাঁচান
ছোট বেডরুম গুলোতে স্টোরেজ এর জন্য নানা রকম বাক্স আপনার স্পেসের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। ড্রয়ার এবং খোলা শেলফ সহ একটি নাইট-স্ট্যান্ড স্টোরেজের জন্য বাড়তি কিছু জায়গা তৈরি করে দিতে পারে। ঝুড়ি এবং দেয়ালে আঁটা শেলফও স্টোরেজের পরিমাণ বাড়ায় এবং ডিসপ্লে হিসেবেও এদের ব্যবহার করা সম্ভব। এখানে মূল উদ্দেশ্যটি হচ্ছে আপনাদের আরামের দিকটা ঠিক রাখার পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণ জায়গাকে আরো বেশি কার্যকরী করে তোলা। অতএব বেডরুমে ছোট খাটো আসবাবপত্র রাখার চেষ্টা করুন এবং বিছানাটি এমন একটি মাপে নিন যা দিয়ে কাজ চালানো সম্ভব।
বেডরুমকে করে তুলুন স্মার্ট
বিছানার নিচের স্টোরেজ এবং দেয়ালে আঁটা শেলফ আপনার জন্য অতিরিক্ত স্পেস উন্মুক্ত করে দিতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে এবং বেডরুমটি তুলনামূলক বড়ও দেখায়। কিন্তু এ ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করার ব্যাপারে আপনার বাসার বাড়িওয়ালার সম্মতি থাকাটা আবশ্যক। আর তা যদি না হয়, তাহলে দ্বিমুখী আসবাবপত্র কেনার পরিকল্পনা করে ফেলা ভালো, যেমন এমন একটি সাইড টেবিল রাখা যায় যেটি শেলফের মতও কাজ করতে পারে। এই সম্পর্কে আরও দেখে নিন কিভাবে খুব সুন্দর করে আপনার শোবার ঘরটি সাজানো যায়?
ড্রেসিং টেবিলের বিকল্প লম্বা আয়না
বিশাল ওজনের ভারী একটা ড্রেসিং টেবিলের বদলে লম্বা পূর্ণ দৈর্ঘ্যের আয়না সহ ছোট একটি ড্রেসার কেনার কথা ভাবুন। প্রতিদিন ব্যবহারের গহনা ও কাজের জিনিসগুলো দেয়ালে বোর্ড টানিয়ে ঝুলিয়ে দিন। এতে তাড়াহুড়োর সময় যেমন সহজে সব কিছু খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনি বেডরুমে হালকা একটা আকর্ষণও চলে আসে।
ছোট বাক্স বা ট্রে ব্যবহার করুন
পারফিউম, বই খাতা, রান্নাঘরের মশলা এবং এরকম অন্যান্য জিনিসগুলো রাখার জন্য ট্রে এবং ছোট বাক্স একেবারে পারফেক্ট। নির্দিষ্ট করে আলাদা ট্রে বা বক্সে যদি আপনার জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে রুমের আবর্জনা তৈরি হওয়ার কোন সুযোগই থাকে না। মনে রাখবেন যে এখানে আপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার স্বল্প জায়গাকে প্রশস্ত ও কার্যকরী করে তোলা। কেননা যদি একটা রুম বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে সেটিতে আবর্জনা বা অপ্রয়োজনীয় জিনিসের স্তুপ তৈরি হওয়াটা বেশ সহজ। নানা রকম ট্রে এবং বাক্স আপনার ছোট্ট স্পেসটি গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।
বারান্দা কিংবা জানালার সদ্ব্যবহার করুন
একটি এপার্টমেন্ট যতই ছোট হোক না কেন, তাতে অন্তত পক্ষে একটি বারান্দা থাকেই। যদি আপনার এপার্টমেন্টে অন্তত একটি বারান্দা থাকে, তাহলে দারুণ স্পেসটিতে সামান্য কিছু সবুজের ছোঁয়া নিয়ে আসার সুযোগ পাওয়া যায়। বারান্দার ছোত এক কোনায় কিছু রসালো গুল্ম, ক্যাকটাস কিংবা বনসাই জাতীয় গাছ রাখলে আপনার এপার্টমেন্টটি আপাত দৃষ্টিতে বেশ বড় বলে মনে হয়। আপনার বারান্দায় যদি কিছুটা ঝোলা বারান্দা বা বাড়তি ঝুলন্ত শেড থাকে, তাহলে প্রচলিত পদ্ধতির পাটি এবং অল্পকিছু কুশন কিনে নিতে পারেন। সেই যায়গায় বৃষ্টির দিনে সন্ধ্যায় বসে এক কাপ চা কিংবা মনের মত একটি ভালো বই নিয়ে বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সময় পার করতে পারবেন। আর যদি আপনার বাসায় বারান্দা না থাকে তাহলে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার বেডরুমের জানালার নিচ বরাবর একটি ছোট স্পেসে পাটি অথবা খাটো বেঞ্চ এবং কিছু কুশন বা বালিশ রেখে ব্যবহার করলেও প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
ছোট এপার্টমেন্টের ব্যাপারে প্রায়ই মানুষের মধ্যে এক ধরণের ভুল ধারণা কাজ করে, তা হলো যে মানুষ এগুলো শুধুমাত্র আশ্রয় ও সাশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কার্যকরী ও সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি একটি ছোট এপার্টমেন্ট একজন ব্যক্তির জীবনে একটি নান্দনিকতার ভূমিকাও রাখতে পারে, যদি আপনি সঠিক আসবাব ও স্মার্ট উপায়ের সাহায্যে ঘরটি সাজিয়ে নেন।
অতএব, আজকের জন্য আমরা আপাতত এটুকুই পরামর্শ দিতে পারি। অতিরিক্ত আইটেম সরিয়ে ফেলুন, আবশ্যক নয় এমন আসবাবকে ছোট করে নিন, রুচিশীল ও কৃত্রিম ডিভাইডারের সাহায্যে রুমগুলোকে আলাদা করুন এবং নিজের একান্ত ব্যক্তিগত প্রাইভেসি তৈরি করে নিন। কিছু ভালো ও দ্বিমুখী আসবাবপত্রে বিনিয়োগ করুন, বেত ও প্লাস্টিকের বাক্স এবং ট্রে এর সদ্ব্যবহার করুন এবং আপনার দেয়ালের সর্বোচ্চ সুবিধা নিন। ফলস্বরূপ আপনি এমন একটি বাসার অধিকারী হবেন যেটি বাসা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর, সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি দেখার জন্যও বেশ আকর্ষণীয় ও সুন্দর। হয়ত এখানে আমাদের পরামর্শ নেয়ারও আপনার তেমন প্রয়োজন নেই, কিন্তু আপনার স্বপ্নের বাসাটি নিজের করে পাওয়ার জন্য নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। ঢাকা দিন কে দিন বৈশ্বিক মার্কেটের সাথে আরো গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে চলেছে এবং বর্তমানে অনলাইনে ও বাস্তবে নানা রকম দোকান রয়েছে যেখানে ছোট এপার্টমেন্ট এর জন্য সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র বিক্রি করা হয়। যদি আপনার বাজেট কিছুটা দুর্বল থাকে তাহলে Bikroy.com এর মত সাইটগুলোয় আপনাদের জন্য রয়েছে কম দামের মধ্যে বিভিন্ন সেকেন্ড হ্যান্ড অপশন। আপনার বাসা হওয়া উচিত এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি বিশ্রাম করতে, নিজেকে হালকা করতে ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চান। তাই নিজের কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করে সেই স্বপ্নের বাসাটি সাজিয়ে তুলুন, আর এই ব্যাপারে স্পেস এর আকার ছোট হওয়ার মত তুচ্ছ ব্যাপারকে বাঁধা হয়ে দাড়াতে দিবেন না। ঘরকে সাজিয়ে নিন মনের মত করে!