কীভাবে হিসাবরক্ষণ (Accountancy) বা অর্থব্যবস্থাপনা (Finance) সংক্রান্ত চাকুরি পাবেন?
যারা গণিত পছন্দ করেন কিংবা যারা ব্যাংকি বা অর্থব্যবস্থাপনার বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন তাদের জন্য অ্যাকাউন্টেন্সি বা ফিন্যান্স সংক্রান্ত পদে নিয়োগ পাওয়াটা স্বপ্নের চাকুরি হতে পারে যেখানে তারা সুখে শান্তিতে পেশাজীবন চালিয়ে যেতে পারবেন। এ ব্যাপারে আসল সত্যিটা হলো, টাকা পয়সার হিসেবের ক্ষেত্রে সবাই দক্ষ হয় না, যে কারনেই তাদেরকে তাদের অর্থসংক্রান্ত হিসাবপত্র রাখতে অন্যদেরকে নিয়োগ দিতে হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম অথবা এদেশের যেকোনো জায়গায় ফিন্যান্স সংক্রান্ত চাকুরি খুঁজে পাওয়াটা মোটেও কঠিন নয়, তবে চাকুরিতে নিয়োগ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সঠিক পথে অগ্রসর হতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, যার অর্থ হলো অনেক বেশি মানুষ টাকা পয়সার মালিক হচ্ছে। কিন্তু টাকা পয়সার সঠিক ব্যবস্থাপনা কীভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে তারা ঠিক বুঝতে পারবেন না যে, তাদের টাকাপয়সা কোথায় নিরাপদে কাজে খাটানো যাবে। আর এটাই হলো হিসাবরক্ষক এবং অর্থ-উপদেষ্টাদের কাজের ক্ষেত্র। অ্যাকাউন্টেন্সি বা ফিন্যান্স যেখানেই চাকরি করুন না কেন, আপনার পছন্দসই চাকরি খুঁজতে সাহায্য নিন! ভিজিট করুন Bikroy.com/jobs
অ্যাকাউন্টেন্সি বা ফিন্যান্স সংক্রান্ত পদে নিয়োগপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার।
আপনার ভূমিকা কী হবে তা ঠিক করে নিন
ফিন্যান্স বা অ্যাকাউন্টেন্সি খাতের চাকুরি খোঁজার সময় প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হলো কোম্পানীতে আপনার ভূমিকা কী হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া। এ খাতটিতে চাকুরির বিভিন্ন ধরণ রয়েছে এবং একেক ধরনের কাজের জন্য একেক ধরনের বেতন ও সুযোগ সুবিধা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একজন অর্থ-উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে চান তবে আপনার কাজ হবে লোকজনকে তাদের অর্থ সংক্রান্ত ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা এবং তাদের অর্থকড়ির সর্বোত্তম ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করা। আরেকটি সুলভ চাকুরি হলো পরিসংখ্যানবিদের চাকুরি যেখানে আপনার কাজ হবে তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে অধিক মুনাফার জন্য সঠিক বিনিয়োগের উপায় খুঁজে বের করা।
এই খাতটির বিভিন্ন দাপ্তরিক পদে আরও অনেক চাকুরি রয়েছে যা আপনাকে আকৃষ্ট করতে পারে। দাপ্তরিক পদে চাকুরির মজা হলো, আপনার যদি সরাসরি অ্যাকাউন্টেন্সি বা ফিন্যান্স বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা না থেকে থাকে তবে এই খাতের নিম্নস্তরের কোনো চাকুরিতে যোগদানের সুযোগ আপনার রয়েছে এবং সেখানে অবস্থান করেই আপনি ধীরে ধীরে অনেক কিছু শিখে নিতে পারবেন। আপনি কোনো একটা অ্যাকাউন্টেন্সি/নিরীক্ষণ ফার্মের সাথেও কাজ করতে পারেন, যারা আপনার কঠোর পরিশ্রমের মূল্যায়ন করবে এবং তাতে করে ভবিষ্যতে সেখানেই আপনার একটা চাকুরির ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে।
আপনি কোথায় বসবাস করতে চান সে সিদ্ধান্ত নিন
আপনি কোথায় বসবাস করতে চান সে সিদ্ধান্তটি আপনার সুখশান্তির উপর বেশ খানিকটা প্রভাব রাখে, ফলতঃ তা কর্মক্ষেত্রে আপনার দক্ষতার উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মোটের উপর, আপনাকে যদি পরিবার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতে হয় অথবা এমন কোনো স্থানে অবস্থান করতে হয় যেখানে আপনি সুখি বোধ করেন না, তাহলে খুব সম্ভবতঃ প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতে আপনার মন চাইবে না এবং সেখানে আপনি আপনার সেরাটা করে দেখাতে পারবেন না। সুতরাং যখন চাকুরি অনুসন্ধান করবেন তখনই এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা জরুরি যে, চাকুরিকালীন আপনি কোথায় বসবাস করতে চান। আপনি চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় চাকুরি খুঁজে পেতে পারেন। তাই আপনি সত্যিই পছন্দ করেন এমন কোনো স্থান বেছে নিন। আপনার যদি পরিবারের দেখাশুনা করার ব্যাপার থাকে তবে আপনার জন্য স্থান পছন্দ করাটা কঠিন হতে পারে। যাহোক, আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যস্নাতক হয়ে থাকেন তাহলে হয়ত আপনি যেখানে ইচ্ছা চাকুরিস্থল বেছে নিতে পারবেন। ঘটনা যা ই হোক না কেনো, আপনি যেখানে অবস্থান করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন তেমন কোনো জায়গাতেই চাকুরিস্থল বেছে নেয়াটা নিশ্চিত করুন। এটা আপনাকে প্রতিটি কর্মদিবসে কর্মস্থলে নিজেকে উজাড় করে দিতে সহায়তা করবে। এই সম্পর্কিত আমাদের একটি টিপস দেখে নিন যেসব কারণে ঢাকায় আপনার কর্মস্থলের কাছাকাছি বাসা নেবেন?
দরকারি শিক্ষা গ্রহণ করুন
যে কোনো খাতে চাকুরি করার মত যত শিক্ষাই আপনার থাকুক না কেনো আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সেই খাতে নিজেকে আপনি একটি সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বক্ষণিক ক্রমবর্ধমান যোগ্যতায় ভূষিত করতে পারছেন কি না। সুতরাং, একজন সেরা হিসাবরক্ষক, অর্থ-উপদেষ্টা, পরিসংখ্যানবিদ, দপ্তর সহকারি অথবা আপনি যে পদেই থাকুন না কেনো, সেই পদের একজন সেরা কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে যা কিছু জ্ঞান অজর্ন করা দরকার তা সবই করতে আপনি সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন কি না তা নিশ্চিত করুন।
দরকারি শিক্ষাগ্রহণ শুধু যে আপনার নিয়োগকর্তার কাছেই আপনাকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরবে তা ই নয়, বরং তা আপনাকে আপনার গ্রাহকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে তুলবে। লোকজন আসলে তাদেরকেই বিশ্বাস করে যাদেরকে তারা সংশ্লিষ্ট খাতের সুশিক্ষিত এবং জ্ঞানী কর্মী হিসেবে জানে। তাই, আপনার শিক্ষাগত উচ্চতর ডিগ্রী এবং বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত জ্ঞান আপনাকে আরও বেশি গ্রাহক এনে দেবে।
চাকুরির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন
চাকুরি অনুসন্ধানের জন্য আপনি ইতোমধ্যে দরকারি যোগ্যতা অর্জন করে থাকলে যত বেশি সম্ভব চাকুরির আবেদন এখন থেকেই পাঠাতে শুরু করুন। ইন্টারনেটকে ধন্যবাদ এজন্য যে, এর মাধ্যমে আপনি আপনার সুবিধাজনক জায়গায় আপনার কর্মদক্ষতার উপযোগী বহুবিচিত্র পছন্দনীয় চাকুরির জন্য আবেদন পাঠাতে পারেন। যাহোক, আপনি বিভিন্ন ধরনের চাকুরির জন্য আবেদন করবেন বটে; কিন্তু আবেদন পাঠানোর সময় প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন চাকুরির জন্য আপনার আবেদনপত্রটিকে নিয়োগদাতার চাহিদামাফিক ঠিকঠাক নেবেন। তাতে করে আপনার আবেদনপত্রটি অধিক ফলপ্রসূ হবে এবং আপনার কাঙ্খিত চাকুরিটি পাওয়া সহজ হবে। এর সাথে যেকোনো চাকরিতে আবেদন করার আগে দেখে নিন চাকরির জন্য সিভি তৈরির সঠিক নিয়ম।
নিয়োগদাতা যদি আপনাকে ফোন না করেন তবে আপনি নিজেই তাদেরকে ফোন করতে দ্বিধা করবেন না
আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনি যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো ফোনকল না পান তবে আপনি নিজেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পিছপা হবেন না। কিছু কিছু চাকুরিদাতা দিনে অসংখ্য আবেদনপত্র পেয়ে থাকেন, তাই তারা হয়ত আপনারটি এখনও খুলে দেখার সময়ই পান নি। যাহোক, আপনি যদি তাদেরকে ফোন করেন এবং আপনার আগ্রহ প্রকাশ করেন তবে তারা তাৎক্ষণিকভাবে এটাই ধরে নেবেন যে চাকুরিটি আপনি সত্যিই পেতে চান। শুধু খেয়াল রাখবেন যে, তাদের সাথে একবার ফোনে কথা হওয়ার পর যেন বারবার যোগাযোগের চেষ্টা না করেন। তাদেরও অনেক কাজ রয়েছে, আপনার আবেদপত্রটি দেখার পর এবং আপনি পদটির উপযুক্ত কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তারা অবশ্যই যথাসময়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন।
আপনাকে যতটুকু সুযোগ দেয়া হয় ততটুকুর জন্যও কৃতজ্ঞ থাকুন। এখান থেকে জেনে নিন কীভাবে ইন্টারভিউ এর জন্য নিজেকে ভালো মত প্রস্তুত করবেন?
আপনি চাকুরিটি পান বা না পান, সকল ক্ষেত্রেই চাকুরিদাতার সাথে যোগাযোগ করে আপনাকে সময় দেয়ার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো আপনার উচিত। এতে করে, আপনি তাদের মনে তাদের দেয়া সুযোগের কারনে কৃতজ্ঞ একজন ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবেন। তাছাড়া, তাদের নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে দিয়ে যদি একান্তই কাজ না হয় সেক্ষেত্রে তারা ভবিষ্যতের জন্য আপনার কথা মনে রাখবেন। আপনি যত ভালোভাবে ব্যক্তিগত যোগাযোগের আওতা বাড়াতে ও ধরে রাখতে পারবেন, অ্যাকাউন্টেন্সি ও অর্থসংক্রান্ত খাতে আপনার চাকুরির সম্ভাবনা ততই বাড়বে।