অনলাইন মার্কেটিং জবঃ প্রযুক্তি এবং ক্যারিয়ারের এক অপূর্ব মেলবন্ধন
ইন্টারনেটের প্রসার বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। আপনি যদি বাংলাদেশে বাস করে থাকেন তবে অনলাইনে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন বিকল্পগুলো খতিয়ে দেখাটা অনেক বেশি উপভোগ করবেন। এছাড়াও বিপণনের ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা থাকলে আপনি পছন্দের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন বিকল্পের সুবিধা পাবেন।
দেশের বাজারে বহু ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সেগুলোর যে কোনোটিতে পরবর্তী চাকুরি হিসেবে আপনি আপনার কাঙ্খিত পদটি লুফে নিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকাটা বেশ দরকারি। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রযুক্তি নীর্ভর ক্যারিয়ার কেমন হতে চলেছে এবং বাংলাদেশে কিভাবে অনলাইন মার্কেটিং জব খুঁজে নিতে পারবেন।
অনলাইন মার্কেটিং কি এবং কেন?
যেসব কোম্পানীর ওয়েবসাইট রয়েছে তাদেরকে সহায়তাদানের জন্য অনলাইনে চাকুরির সুযোগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণভাবে, মূলধারার ব্যবসাকে জোরদার করার জন্য বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেরই একটি করে ওয়েবসাইট রয়েছে। বৃহৎ কর্পোরেশন থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পর্যন্ত সকলেই অনলাইনে আধুনিক উন্নয়ন পরিস্থিতি আর পণ্যের প্রচারের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে অনলাইনের সুযোগটিকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
তাদের ব্যবসার উন্নয়ন ও প্রসার ব্যবস্থাপনায় তাদের এমন একজন ব্যক্তির প্রয়োজন হয় যিনি অনলাইন মার্কেটিং বোঝেন। এই ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের কাজে আপনি কোনো প্রসারমান নেটওয়ার্কে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, হতে পারে সেটা বিদেশী অথবা আপনার নিজ অঞ্চলের।
বিপণন সহায়তার জন্য অনলাইন মার্কেটিং জবগুলো বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশকিছু চুক্তিভিত্তিক কাজ যেখানে আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন এবং বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যোগযোগ রাখতে পারবেন। এই বিকল্পটিতে আপনি একাধিক উদ্যোক্তা অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বিপণন সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দেয়ার সুবিধাটি ভোগ করতে পারবেন।
আপনি বাংলাদেশেও চাকুরি খুঁজে দেখতে পারেন যেখানে ক্রমবর্ধমান কোনো কোম্পানীতে আপনি পূর্ণকালীন কর্মজীবি হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন। এর অর্থ হলো, অনলাইন মার্কেটিংয়ে খন্ডকালীন অথবা পূর্ণকালীন কর্মজীবি হিসেবে নিয়োজিত হতে হলে আপনাকে সুনির্দিষ্ট কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হবে।
অনলাইন মার্কেটিং জব এর প্রকারভেদ
বাংলাদেশে পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে হলে আপনাকে দক্ষতাভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। বেশিরভাগ বিপণনকারি শুধুমাত্র এক ধরনের মার্কেটিং বোঝেন এবং সেটি নিয়েই কাজ করে থাকেন। বাঁকী অল্প সংখ্যকেরই বিপণনকর্মে প্রয়োজনীয় বিস্তৃত অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে।
আপনি যখন বিভিন্ন পদের জন্য আবেদন করবেন তখন আপনাকে খেয়াল করতে হবে যে, সেখানে কোন ধরনের পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে এবং সেই পদটির জন্য কী কী যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে। আপনার জানা থাকা দরকার এমন কিছু দক্ষতা ভিত্তিক ক্ষেত্রের বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো।
১. এসইও জব
বাংলাদেশ সহ বৈশ্বিক পর্যায়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর তালিকায় শীর্ষে থাকা একটি অগ্রাধিকার। এসইও জবগুলোতে নির্দিষ্টভাবে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে কোম্পানীর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আপনাকে হিসেব নিকেশ করে এবং সার্চ ইঞ্জিন অ্যালগরিদমের ভিত্তিতে অনলাইনে কোম্পানীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হবে এবং গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের অনুসন্ধান তালিকার শীর্ষে রাখতে হবে।
২. পিপিসি জব
অনলাইন মার্কেটিংয়ের অনেক কৌশলই পিপিসি বা পে পার ক্লিক (pay per click) এর মাধ্যমে করা হয়। এর অর্থ হলো, গুগল এবং আমাদের দেশের আঞ্চলিক অনুসন্ধানে শীর্ষে থাকার জন্য আপনাকে হিসেব নিকেশ ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবে। পিপিসি জবগুলোতে আপনার কাজ হলো নির্দিষ্ট কোনো সার্চ ইঞ্জিনের হিসেব নিকেশ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে বেশি বেশি ক্লিক অর্জনের ব্যবস্থা করা যাতে করে তা বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে, অধিক ট্রাফিক (পরিদর্শনকারী) আকর্ষণ করতে এবং চূড়ান্ত বিক্রয়ে সহায়তা করতে পারে।
৩. কন্টেন্ট মার্কেটিং
আপনার যদি ভাষাদক্ষতা ভালো থাকে তবে আপনি ঢাকায় বা দেশের অন্যান্য জায়গায় কন্টেন্ট মার্কেটিং জবের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং (search engine ranking) বাড়াতে আর্টিকেল বা নিবন্ধ লেখার (article writing) কাজ করা হয়। ক্রেতার নিকট পাঠানোর জন্য প্রত্যক্ষ বিক্রিয়পত্র অথবা ই-মেইল ভিত্তিক বিষয়বস্তু লেখার কাজও রয়েছে। কন্টেন্ট মার্কেটিং এমন একটি দক্ষতাভিত্তিক ক্ষেত্র যেটি ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটিতে কর্মসংস্থানে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওয়েব ২.০
অনলাইন মার্কেটিংয়ে আগ্রহীদের অনেকেই সচল (Dynamic) কন্টেন্টের মাধ্যমের যোগাযোগ করতে চান। আপনার যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগিং, কমেন্ট রাইটিং এবং চলমান কন্টেন্টগুলোর অন্যান্য লিংক সম্পর্কে জ্ঞান থাকে তবে আপনি চাকুরির জন্য ওয়েব ২.০ তে দক্ষতা অর্জন করতে চাইতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আপনি সক্রিয় ও চলমান কন্টেন্ট, ছবি এবং অন্যান্য ধারার কর্মকান্ডের মাধ্যমে ব্যবসার সুনাম ও যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ পাবেন।
৫. প্রত্যক্ষ বিপণন
অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই লিড (leads) এবং সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং (search engine ranking) বাড়াতে মনোযোগ দিয়েছে। যাহোক, তারা তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রয়েও আগ্রহী। বিক্রয় বাড়াতে প্রত্যক্ষ বিপণন, ই-মেইল লেখা, কৌশল প্রণয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষ হওয়ার মাধ্যমেও আপনি ঢাকায় চুক্তিভিত্তিক অথবা পূর্ণকালীন চাকুরির অনেক সুযোগ পেতে পারেন।
অনলাইন মার্কেটিং জব পেতে করণীয়
অনলাইন মার্কেটিংয়ের যেকোনো একটি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করলে তা আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট ধরনের চাকুরি পেতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশে সহজলভ্য কর্মসংস্থান সুযোগগুলোর সাথে সমন্বয় করে আপনি আপনার নিজ দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রগুলোকে বাছাই করে নিতে পারেন। এমন অনেক কোম্পানী রয়েছে যারা তাদের ওয়েবসাইট ও ব্যবসাকে গড়ে তোলা ও তাতে সাফল্য লাভের পথে বিভিন্ন সমাধান দেয়ার জন্য পেশাদার বিপণনকারি খুঁজছে।
আপনি যখন উপলভ্য কোনো চাকুরির ব্যাপারে ভাববেন তখন আপনার উচিত হবে আপনার কাঙ্খিত চাকুরিটির গতিধারা (track record) সম্পর্কে ভাল ধারণা অর্জন করে নেয়া। এতে করে আপনি উপলভ্য সবগুলো বিকল্পেরই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন এবং পাশাপাশি একই চাকুরির জন্য অন্যান্য প্রার্থীর চাইতে এগিয়ে থাকতে পারবেন। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার বিশ্বাসযোগ্যতা বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করতে আপনাকে সহায়তা করবে পাশাপাশি আপনাকে অনেক বেশি সুযোগ এনে দেবে।
আপনি আপনার জীববৃত্তান্তটি এমনভাবে লিখবেন যেন তা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট অন্যন্যরূপে দেখা দেয়। প্রতিটি চাকুরির ক্ষেত্রে যাকিছু চাওয়া হয়ে থাকে সেগুলো খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করাটাও দরকার। বিভিন্ন ধরনের পদের উপযোগী করে আপনার কভার লেটার এবং জীবনবৃত্তান্তকে পরিবর্তন করে নিলে তা আপনার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে আগ্রহী চাকুরিদাতাদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
আপনি চাইলে আপনার অনলাইন জীবনবৃত্তান্তও তৈরি করে নিতে পারেন যেটিকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপলোড করা যেতে পারে যাতে করে বাংলাদেশে মার্কেটিং জব এর চাকুরিদাতারা আপনাকে খুঁজে পায়। সুতরাং যেসমস্ত কাজ আপনাকে চাকরি পেতে সহায়তা করবে সেগুলো সম্পর্কে আবেদন করার পূর্বেই স্পষ্ট ধারণা নিয়ে রাখতে হবে।
শেষকথা
আপনার কাঙ্খিত ক্ষেত্রে পেশাগত ভবিষ্যত নির্মাণে সমর্থ হতে হলে প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে কীভাবে সঠিক জায়গাটিতে পৌঁছতে হয়। আপনি যদি বাংলাদেশে বাস করে থাকেন তবে আপনি অনলাইন মার্কেটিং-এর পেশাজীবন শুরু করার এই নির্দিষ্ট কৌশলগুলো জানতে চাইতে পারেন।
পাশাপাশি মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন দক্ষতাভিত্তিক পদের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কীভাবে জীবনবৃত্তান্ত লিখতে হবে তা জানাটা আপনার প্রিয় পছন্দের চাকুরি পাওয়ার জন্য সহায়ক হবে।