বিক্রির জন্য বাংলাদেশী বাড়ী সফলভাবে সাজিয়ে তুলুন

বিক্রির জন্য ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাড়ী ও সম্পত্তি অন্য কোনো জায়গার বাড়ি বা সম্পত্তি থেকে আলাদা কিছু নয়। বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বসে থাকার চাইতে দ্রুত স্থান পরিবর্তনের জন্য অফিস ও বাড়ী প্রস্তুত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কেনো সাজাবেন?
একটি বাড়িকে ঠিকভাবে সাজানোর মানে হচ্ছে জায়গাটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করা এবং তাকে দর্শনীয় করে তোলা। যদিও ক্রেতা জানেন যে, তিনি যখন বাড়ীটিতে উঠবেন তখন বাড়ীটি সম্পূর্ণ খালি থাকবে, তাই বলে এর উপস্থাপন সাদামাটা হতে হবে এমনটি নয়। বিক্রির জন্য কোনো কিছু না করার চাইতে কিছু আসবাবপত্র এবং সরঞ্জাম বাড়ীটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
এর জন্য কী করতে হবে?
বাড়ী বা অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোর প্রথম ধাপ হচ্ছে জায়গাটি পরিষ্কার করা এবং এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা। একটি সাধারণ বাসযোগ্য বাড়ীতে দৈনন্দিন ব্যাবহারের অনেক জিনিসপত্র পড়ে থাকে, এতে জায়গাটি অগোছালো লাগতে পারে। বরং, বাড়ী বা অ্যাপার্টমেন্ট দেখতে সুন্দর করার জন্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে হবে এবং তা সংরক্ষণ করতে হবে।
এরপর, যদি সম্ভব হয় পুরো বাড়ী খালি করে ঝাড়ু দিতে হবে এবং দেয়াল রং করতে হবে। একটি পরিচ্ছন্ন রঙের আস্তরণ, দেয়াল ও কোনার জায়গাগুলোর দাগ, ময়লা ঢেকে দিতে পারে। একটি ছুটির দিনে বা অল্প কয়েক দিনে এবং অল্প খরচে এটা করা সম্ভব এবং বাড়ীটির চেহারায় এর ছাপ দেখতে পাবেন।
দ্বিতীয়ত, সাজানোর জন্য যে আসবাবপত্র ব্যাবহার করা হবে তা হতে হবে নতুন ও অক্ষত। সেগুলো টোল খাওয়া বা পুরনো হলে চলবে না। নতুন চেহারা দেয়ার জন্য জিনিসগুলো নতুন বা নতুনের মতো হতে হবে। নতুন আসবাবপত্র না থাকলে, আসবাবপত্র ভাড়া নেয়া যেতে পারে। পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে, কোন মূল্যহ্রাসের দোকান থেকে নতুন আসবাবপত্র কিনে তা পরবর্তীতে বিক্রি করে দেয়ার চিন্তা করতে পারেন। এই খরচ আপনার বাড়ী বা অ্যাপার্টমেন্টের দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন যাতে আপনার কোন ক্ষতি না হয়।
সাজানোর ক্ষেত্রে রং ও অঙ্গবিন্যাসের পাশাপাশি সঠিক স্থানে সঠিক জিনিস রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। মূলত, সঠিক সমন্বয় আপনার সম্পত্তির চেহারা ফুটিয়ে তুলতে পারে, যা দর্শনার্থীদের কাছে বাড়ীটিকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। এই ধরণের উপস্থাপনার জন্য কিছুটা ইন্টেরিয়র ডিজাইন জানা প্রয়োজন। এই ব্যাপারে জ্ঞান না থাকলেও খারাপ লাগার কিছু নেই। ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং এমন একটি দক্ষতা যার সূক্ষ্ম দ্যোতনা ও ভালো চেহারা দেয়ার জন্য কোন জিনিস কোথায় বসাতে হবে তা সম্পূর্ণরুপে বুঝতে অনেক সময় দরকার। তাই সময়ের স্বল্পতা থাকলে একজন ডেকোরেটর ডাকুন এবং সেরা সজ্জাটি ঠিক করুন। এক্ষেত্রেও, এই খরচ আপনার বাড়ী বা অ্যাপার্টমেন্টের দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দিন এবং ঠিকভাবে সমঝোতা হলে পরবর্তী ক্রেতা তা বহন করবেন।
তৃতীয়ত, যখন বাড়ী বিক্রির জন্য প্রস্তুত, তখন সবকিছু বাইরে বের করে দিন, যদি না ক্রেতা সেগুলো কিনতে আগ্রহী হোন। এগুলো নতুন হলে, এই লেনদেনের মাধ্যমে আরও কিছু মুনাফা করা যাবে। মনে রাখবেন, একটি বাড়ীর মূল্য, বাড়ীর মূল্যই। এর কোনো “সঠিক” দাম হয় না। ক্রেতা বিক্রেতা যেই দামে রাজি হোন ও উভয়েই সন্তুষ্ট থাকেন সেই দামেই লেনদেন হয়?
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবেন কীভাবে?
বিভিন্ন আকার ও আকৃতির বাড়ী বিক্রি হয়, তাই বিক্রির জন্য অনেক সম্পত্তি থাকলে অতিমাত্রায় প্রতিযোগিতা হতে পারে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আপনার সম্পত্তিকে অন্যদের থেকে আলাদা হতে হবে। একই ডিজাইনের পাঁচটি বাড়ী থাকলে সেটিই ক্রেতা পছন্দ করবেন যেটা ভেতরে দেখতে ভালো। ভালো সাজসজ্জার যে বেশ বড় একটা প্রভাব রয়েছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভালো জায়গায় একটি বাড়ী থাকা বর্তমানে অনেক কঠিন ব্যাপার। সেই সুবিধাটুকু সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে যদি আপনার বাড়ীর ভেতরের চেহারা তার আশপাশের এলাকার সাথে মানানসই না হয়, বিশেষ করে এমন একটি বাজারে যেখানে আগ্রহী ক্রেতারা একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ চাইছেন।
কীভাবে একজন ভালো ইন্টেরিয়র ডিজাইনার খুঁজে পাবেন?
আগেই বলা হয়েছে, আপনি না পারলে, ঘরের সাজসজ্জা নিয়ে অযথা চেষ্টা করে লাভ নেই। বরং, পরিচিত লোকের মাধ্যমে বা যারা এর আগে পেশাদার সাজসজ্জার মাধ্যমে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করেছেন তাদের মাধ্যমে একজন ভালো ইন্টেরিয়র ডিজাইনার খুঁজে বের করুন। আসলে, ভালো পেশাদার লোক খুঁজে পাওয়ার একটি সহজ উপায় হচ্ছে, বিভিন্ন বিক্রির জায়গায় ঘুরে দেখতে পারেন এবং তাদের সাজানো দেখে জেনে নিতে পারেন তা কে করেছেন। এভাবে আপনি তাদের কাজ দেখতে পারেন এবং তাদেরকে কাজে লাগানোর আগে তাদের দক্ষতাও যাচাই করতে পারবেন। এতে আপনার অনেক সময়, অর্থ ও শ্রম বাঁচবে, বিশেষ করে যদি আপনি ডিজাইনারদের কাজ না বোঝেন। আপনার নিজস্ব মতামতকে গুরুত্ব দিন; যদি সাজানো বাড়ী যদি পছন্দ না হয় তার মানে তা পছন্দ হওয়ার মত নয়। এগিয়ে যান, এবং আরেকজনকে খুঁজে বের করুন।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশী বাড়ী সাজানো খুব বড় বা দুঃসাধ্য কোনো কাজ নয়। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে ও একটু ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে কাজটি বেশ সহজে করা সম্ভব। পড়তি বাজারে যখন প্রতিযোগিতা বেশী থাকে তখন সাজানো গোছানো বাড়ী, বিক্রির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, এমনকি বাজারে যখন একাধিক ক্রেতা থাকে তখন তা আপনার বাড়ীর দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই ব্যাপারটিকে কখনোই খাটো করে দেখবেন না এবং মনে রাখবেন, বাড়ী সাজানোর জন্য খরচ হলেও তা আপনি সহজেই বিক্রয়মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দিতে পারেন, অর্থাৎ মোটের উপর আপনার কোনো অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে না। শুধুমাত্র বাড়ী বিক্রির আগ পর্যন্ত নগদ কিছু অর্থের প্রয়োজন হতে পারে।